হযরত মূসা (আঃ) একবার কোন কারণে একজন কিবতীকে হত্যা করেন। গ্রেপ্তার ও নিহত কিবতীর হত্যার বিনিময়ে হত্যা করার ফেরআউনী পরিকল্পনার কথা অবহিত হয়ে মূসা (আঃ) মিসর ছেড়ে অন্যত্র গমনের সিদ্ধান্ত নেন। তাই অতি সংগোপনে তিনি শহর থেকে বের হয়ে পড়েন। ফেরআউনের প্রহরীরা ঘুর্ণক্ষরেও জানতে পারল না, তিনি কোন্ পথে কিভাবে শহর ত্যাগ করেছেন। শহর ছেড়ে ফেরআউনের লোকদের দৃষ্টিসীমার বাইরে এসে তিনি স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন এবং আল্লাহ পাকের শোকর আদায় করেন। এখন যদিও তার গ্রেপ্তার হবার ভয় তিরোহিত হয়েছে, কিন্তু এখন চিন্তা, কোথায় যাবেন! এর আগে তিনি মিসরের বাইরে কোথাও যান নাই। অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে সিরিয়াস্থ মাদইয়ানে গমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মাদইয়ান ফেরআউনের আয়ত্তের বাইরে। তদুপরি তথায় বনী ইসরাঈলী কিছু লোকও বসবাসরত রয়েছে। সুতরাং সেখানে গমন করাই নিরাপদ ভাবলেন। কিন্তু মাদইয়ানে যাবার রাস্তা সম্পর্কে তিনি অনবহিত। এ পরিস্থিতিতে কারো থেকে পথের সন্ধান চাওয়া ও নিরাপদ নয়। উপরন্তু মাদইয়ান পর্যন্ত পথ চলার কষ্ট। এতদিন রাজপ্রাসাদে রাজকীয় পরিবেশে কাটিয়েছেন। কদাচিত কোথায়ও যেতে হলে ঘোড়ায় চড়ে গেছেন। সুতরাং দীর্ঘ পথ চলার কষ্ট কখনও তাকে স্পর্শ করে নাই। সমগ্র পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা ভাবনা ভেবে অবশেষে তিনি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করে দোয়া করলেন-
رب نجني من القوم الظالمين
অর্থঃ আমার রব আমাকে জালেমদের থেকে মুক্তি দান করম্নন।
স্বীয় অসহায় অবস্থা, পথ চলার ক্লান্তি , অপরিচিতিজনিত পরিস্থিতি প্রভৃতি সম্পর্কে মহান আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নির্ভর করে বললেন-
عسي ربي ان يهديني سواء السبيل
অর্থঃ আমি আশা করি আমার রব আমাকে সোজা সরল পথ প্রদর্শন করবেন।
আল্লাহ তা’য়ালা মূসা (আঃ) এর দোয়া কবুল করলেন এবং আপন কুদরতে এমন এক সোজা সরল পথে তাঁকে উঠিয়ে দেন, যেখানে উঠার পর তাঁর মনের সব ভয় চিন্তা, শংকা অস্থিরতা দূরীভূত হয়ে যায়। তিনি নিজেকে নিরাপদ ভাবছিলেন। শূন্য হাতে কোনরকম পাথেয় ছাড়াই মাদইয়ানের পথে চলছেন। পথ চলার ক্লান্তি ও ক্ষুদা-তৃষ্ণায় তিনি দূর্বল অবসান্ন। মাদইয়ানে তার পূর্বে পরিচিত কেউ নেই। সেখানে গিয়ে কোথায় উঠবেন, কে এ ভীনদেশী অপরিচিত যুবককে আশ্রয় দিবে? ইত্যাদি ভাবছিলেন; আর ক্লান্ত, অবসান্ন দেহে পথ চলছিলেন। প্রচন্ড গরম, উত্তপ্ত বালুকাময় পথ, কিন্তু তবু তাঁর বিশ্রাম বিরতি নাই। চলছেন তো চলছেনই। মিসর থেকে মাদইয়ানের দূরত্ব দশ ক্রোশ, মতান্তরে সাত দিনের পথ। অবশেষে তিনি মাদইয়ানে উপনীত হন। মাদইয়ান নামে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর এক পুত্র সন্তান এ এলাকায় বসবাস করেছিলেন। তাই এ এলাকা মাদইয়ান নামে পরিচিতি লাভ করে। মূসা (আঃ) যখন মাদইয়ানে উপনীত হন তখন সে অঞ্চলের নবী ছিলেন হযরত শোআইব (আঃ)। তিনি ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)- এর পুত্র মাদইয়ানের অধীনস্ত বংশধর। ঐতিহাসিকগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে মাদইয়ানে হিজরত কালে মূসা (আঃ)- এর বয়স ছিলো ত্রিশ বছর।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!