Monday, May 29, 2017

আমরা আহলে হাদীস না হয়ে আহলে সুন্নাহ কেন হাদীস ও সুন্নাহের মাঝে পার্থক্য কি?

মুসলিমরা হাদীস নয় বরং সুন্নাহ্‌ অনুসরণ করবে।
সব হাদীস সুন্নাহ্‌ নয়, কিন্তু সব সুন্নাহ হাদীস।
হাদীস বলতে, ফকীহ গণের পরিভাষায় নবী করীম (সঃ) আল্লাহ্‌র রাসূল হিসাবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমুতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাঁকে হাদীস বলা হয়।
কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন।
অন্যদিকে সুন্নাহ শব্দটি শুধু অনুসরণ বৈধ কর্যাবলীকে বা হাদীসকে বলা হয়।
উল্লেখ্য নবী করীম (সঃ) - এর সব হাদীস অনুসরণযোগ্য নয়।
হাদীস বিশারদগণের অভিমত অনুযায়ী - রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) - এর নবুওয়াতী জীবন দু'প্রকার।
যথা -  ০১. জায়িযুল ইত্তিবা' (অনুসরণ বৈধ)
   এবং ০২. হারামুল ইত্তিবা (অনুসরণ অবৈধ)
অনুসরণ বৈধ প্রকারটি মুস্‌তাহাব, সুন্নাহ, ওয়াজিব বা ফরয - এই চতুষ্টয়ের যে কোনো এক পর্যায়ের হয়ে থাকে।
এ জন্য মুস্‌তাহাব, সুন্নাহ, ওয়াজিব বা ফরয হওয়ার আগে ঐ বিষয়টি অবশ্যই বৈধতার স্তরে হতে হবে।
কারণ, কোনো কাজ অবৈধ হয়ে সুন্নাহ, মুস্‌তাহাব ইত্যাদি হতেই পারে না।
অন্যদিকে অনুসরণ অবৈধ দ্বারা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) - এর খুসূসিয়াত তথা স্বাতন্ত্রসমূহকে বুঝানো হয়ে থাকে।
যেমনঃ একসাথে নয়জন স্ত্রী রাখা, উঠের পিঠে চড়ে তাওয়াফ করা, ইফতার না করে রাতদিন লাগাতার রোযা রাখা, সন্তান কোলে নিয়ে নামায পড়া, তেমনিভাবে দাঁড়িয়ে পেসাব করা, মাগরিবের নামাযের পূর্বে নফল পড়া সুন্নত নয় বরং যাওয়া মাত্র যদি এর দ্বারা মাগরিবের নামায বিলম্বিত না হয় । তবে কেও পড়তে চাইলে পড়তে পারে
এবং যে সমস্ত বিষয়াদি অনুসরাণ করতে নবী কারীম (সাঃ) নিষেধ করেছেন। উল্লেখ্য, এ জাতীয় বৈশিষ্ট্যাবলীর অনুসরণ করা উম্মতের জন্য বৈধ নয়। হাদীস শব্দটি উক্ত উভয় প্রকার কার্যাবলী নির্দেশ করে ।
কারণ, হাদীসের সংজ্ঞাতে আক্বওয়ালুন নবী ওয়া আফ্‌য়ালুহু ( নবী কারীম (সাঃ) - এর কথামালা এবং কার্যাবলী) শব্দসমূহ উল্লেখ আছে।
যার অর্থ ব্যাপক এবং এতে অনুসরণযোগ্য - অনুসরণ অবৈধ সবই অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু সুন্নাহ শব্দটি শুধু অনুসরণ বৈধ কর্যাবলীকে বলা হয়। সুতরাং নবী কারীম (সাঃ) - এর স্বকীয়তাসমূহ,
যেমন - একসাথে নয়জন সহধর্মিণী রাখা ইত্যাদি যদিও রাসূল (সাঃ) - এর কর্মাবলী হয়ে হাদীস সাব্যস্ত হবে; কিন্তু উম্মতের জন্য আমলের উপযোগী সুন্নাহ্‌ নয়।
কারণ সুন্নাহ্‌ শুধু সেটিই, যেটি আমলের উপযোগী।
সুতরাং সব হাদীস সুন্নাহ্‌ নয়, কিন্তু সব সুন্নাহ হাদীস।
যেহেতু প্রতিটি হাদীস আমলের উপযোগী নয়, আর সন্নাহ্‌ আমলের আমলের উপযোগীতাকে বলা হয়, তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন
"আমি তোমাদের মধ্যে দু'টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দু'টি আঁকড়ে ধরে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ। "
(মিশকাত, হাদীস: ১৮৬)।
এখানে তাঁর রাসূলের হাদীস বলা হয়নি।
নবী কারীম (সাঃ) আরো বলেছেন,
" তোমরা আমার সুন্নাহ্‌কে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো "
(সুনান আবু দাউদ, কিতাব আস-সুন্নাহ, অধ্যায় ৪২, হাদিস ৪৬০৭ )
এ কারণে আহ্‌লুল হক - কে আহ্‌লুস সুন্নাহ বলা হয়, আহলে হাদীস বলা হয় না।
কেননা, প্রতিটি হাদীস আমলের উপযোগী (অনুসরণযোগ্য) নয়।
► আহলে সুন্নাত ও আহলে হাদীসের সংজ্ঞা
ইসলামী ইতিহাসে একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদের ‘আহলে কুরআন’ বলে আরেক গোষ্ঠী দাবী করে তারা ‘আহলে হাদীস’ আর আমরা বলি আমরা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’।
যারা ‘আহলে কুরআন’ তারা কুরআনের পরে অন্য কিছু মানে না তাই তারা হাদীসও মানে না।
যারা ‘আহলে হাদীস’ তারা কুরআন ও হাদীস পর্যন্ত মানে সুন্নাহ-সাহাবা ইজমা কিয়াস মানে না।
আর আমরা কুরআন সুন্নাহ, সুন্নাতে সাহাবা তাবেঈন, ইজমা, কিয়াস মানি বিধায় আমরা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ”।
আমরা সবাই কুরআন ও হাদীসের পার্থক্য জানি বুঝি কিন্তু অনেকে আমরা হাদীস ও সুন্নাহর মাঝে কী পার্থক্য তা জানি না।
এ বিষয়টি জানার উপরই নির্ভর করে যেকোনো মুসলমান ‘আহলে হাদীস’ হতে পারে না । হ্যাঁ, আহলে সুন্নাহ হওয়া অপরিহার্য।
► হাদীস ও সুন্নাহর পার্থক্য
হাদীস: চারটি বিষয়ের সমন্বয় হলো হাদীস-
১। রাসূল সা. তাঁর জীবনে যা কিছু বলেছেন।
২। রাসূল সা. তাঁর জীবনে যা কিছু করেছেন।
৩। রাসূল সা. যে সকল বিষয়কে সমর্থন করেছেন।
৪। রাসূল সা. এর ব্যক্তিগত অবস্থা ও গুনাবলী।
এ চারটি বিষয়ের সমন্বিত রূপকে পরিভাষায় হাদীস বলা হয়।
সুন্নাহ: সুন্নাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ। কুরআন, হাদীস, ফিকহের পরিভাষায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকলেও হাদীসের পরিভাষায় সুন্নাহ শব্দের অর্থ হলো-الطريقة المسلوكة في الدين. মুসলমানদের জন্য অনুস্মরণীয় দীনের পথের নাম সুন্নাহ।
কুরআনে কারীমে এসেছে- قل هذه سبيلي ادعو الي الله. বলুন এটা আমার পথ আমি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি। (ইউসুফ:১০৮)
সারকথা উম্মতের জন্য অনুসরণীয় রাসূল সা. এর পথকে হাদীসের ভাষায় সুন্নাহ বলা হয়েছে।
সুতরাং হাদীস এবং সুন্নাহ শব্দ দুটি পরস্পর পরিপূর্ণরূপে স্বতন্ত্র বা বিরোধী নয় আবার সমার্থকও নয় ; বরং উভয় শব্দ কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিন্ন অর্থাৎ কোনো কোনো জায়গায় হাদীস পাওয়া যায় কিন্তু সুন্নাহ থাকে না, আবার কখনো সুন্নাহ পাওয়া যায় কিন্তু হাদীস থাকে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাদীস ও সুন্নাহ একই সাথে বিদ্যমান। 
অথচ তথকথিত গায়রে মুকাল্লিদরা
নিজেদের জামায়াতের নাম রেখেছে আহলে হাদীস। সুতরাং তাদের এই নাম রাখাই সঠিক হয়নি।
(মুকাদ্দমায়ে তানযীমুল আশ্‌তাত, পৃ. ০৫-০৬)
খোলাফায়ে রাশেদীনের পথ কর্ম সিদ্ধান্তসমূহ এগুলো সুন্নাত তবে হাদীস নয় কারণ হাদীসতো রাসূল সা.-এর ‘কথা, কাজ, সমর্থন’ কে বলে এগুলোতো সাহাবায়ে কিরামের ‘কাজ, কথা’ এ অর্থে হাদীস বলা যায় না কিন্তু সকল উম্মতের জন্য এগুলি অনুস্মরনীয় বিধায় এর অন্তর্ভুক্ত তাই এগুলো সুন্নাত।
এমর্মে রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
তোমাদের (উম্মত) উপর আমার সুন্নাত এবং সত্য পথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের অনুস্মরণ অবশ্য কর্তব্য। তোমরা এ সুন্নাতকে শক্তভাবে আকড়ে ধর।
মোট কথা, চার খলীফার সিদ্ধান্ত ও কর্মগুলো শুধু সুন্নত হাদীস নয়।
যেমন:
# খলীফা আবু বকরের সুন্নত: যেমন-
* যেসব মুসলমান কেন্দ্রীয় সকরারকে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন কেননা যে সকল বিষয় ইসলামের প্রতীক যদিও তা সুন্নাতের স্তরে পড়ে। যদি তা কোনো গোষ্ঠী একসাথে বর্জন করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ এটা সুন্নতে সিদ্দিক রা.।
* যেমন খৎনা করা, আযান দেয়া সুন্নত তবে ইসলামের নিদর্শন হওয়ায় কোনো গোষ্ঠী তা একসাথে বর্জন করলে সরকার যুদ্ধ করে হলেও তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
* তেমনিভাবে জিবদ্দশায় পরবর্তী খলীফা নির্বাচন করা সিদ্দিকী সুন্নাত।
# খলীফা ওমর রা. এর সুন্নত: যেমন-
* এক মজলিস বা একই শব্দে প্রদত্ত তিন তালাক তিন তালাক বলেই বিবেচিত হবে যদিও তা তাকীদের নিয়তে বলার দাবী করা হোক।
* ইরাক যুদ্ধের পর সে জমি-জমা মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন না করে বাইতুলমালে জমা করে এতিম দুস্থদের প্রদানের সিদ্ধান্ত।
* মুসলিম রাষ্ট্রে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের কর বা জিযিয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করণ।
* তারাবীর নামায জামাতের সাথে বিশ রাকাত পড়ার সিদ্ধান্ত এসবগুলো সুন্নতে ওমরী। তবে হাদীস নয়।
# খলীফ উসমান রা. এর সুন্নাত: যেমন-
* জুমআর নামাযের পূর্বে একটি আযান বৃদ্ধি করণ।
* কুরআনুল কারীম কুরাঈশদের ভাষায় এ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভিন্নতা ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় উসমান রা. আবার সকলকে কুরাইশী ভাষার উপরে দাঁড় করিয়েছেন। এগুলো উসমানী সুন্নত।
# খলীফা হযরত আলী রা. এর সুন্নত: যেমন-
* যেমন মুসলামানদের মধ্যে যদি পরস্পরে লড়াই বাধে তাহলে বিজিতদের সম্পদ গনীমতের সম্পদ বলে বিবেচিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং বন্দিরাও হবে না দাস-দাসী যেমনটি কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হলে তাদের মাল হয় গণীমতের অন্তর্ভুক্ত বন্দিরা হয় দাস- দাসী। এবং এ বিধানটি জামাল যুদ্ধের ঘটনাতে পরাজিতদের মধ্যে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত হয়।
মোটকথা: খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা এই উম্মতকে এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে সুশৃংখল ও সুগঠিত করার লক্ষে নেয়া হয়েছিলো যা ছিলো হাদীসের দৃষ্টিতে অপরিহার্য।
► আহলে হাদীস ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পার্থক্য
এই দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণ হয় যে, রাসূল সা.-এর এ ধরনের বর্ণনা প্রচুর। আবার অনেক বর্ণনা শুধু হাদীস তবে তার বিধান পালন রহিত, বৈশিষ্ট্য বিশেষ কারণে হওয়ায় তা হাদীস হলেও সুন্নাত নয়। আর বহু বিষয় সুন্নাত সকল উম্মতের জন্য অনুস্মরণযোগ্য যেমন- চার খলীফার সুন্নাত এগুলো শুধু সুন্নাত তবে হাদীস নয়।
উপরোক্ত বিশ্লেষণ বুঝে নিলে একথা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, ‘আহলে হাদীস’ ও ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের’ মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধাান। যেমন:
(১) আহলে হাদীস যেকোনো একটি হাদীস পেলেই আমল শুরু করে তা রহিত হোক বা নবিজীর বৈশিষ্ট্য হোক বা কোনো বিশেষ কারণে তা রহিত হোক অথচ এগুলো পালনিয় বিষয় নয়। আর আহলে সুন্নাত বিশ্বাস করে সব হাদীস কে কিন্তু মান্য করে যা মানার আদিষ্ট বা অনুস্মরণ অনুকরণ যোগ্য।
(২) আহলে হাদীস সাহাবা মানে না কারণ সাহাবাদের ‘কথা, কাজ’ হাদীস নয় বরং সুন্নাত অথচ তাঁরা হলেন আহলে হাদীস। চার খলীফার সব সিদ্ধান্তকে তারা একই কারণে অমান্য করে। 
বর্তমান আহলে হাদীসগণের তারাবীর নামায ৮ রাকাত বলা তিন তালাক দিলে এক তালাক হবে বলা। জম’আর প্রথম আযানকে বিদ‘আত বলা। আমীন স্বশব্দে-চিৎকার করে বলা ইত্যাদীর মূল রহস্য এটাই যে তারা সুন্নতই মানে না। পক্ষান্তরে রাসূল সা. এর সাথে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাদীসগুলো আমল করার দুঃসাহস করেন। অন্যদিকে তারা জঈফ হাদীস ও মাউজু হাদীসকে একাকার করে সব অগ্রহণযোগ্য বলে উক্তি করে।
এসব কারণে কোনো খাঁটি মুসলমানের ক্ষেত্রে ‘আহলে হাদীস’ হওয়াও সম্ভব নয়।
কিন্তু “আহলে সুন্নাত (তথা নবীর অনুস্মরণযোগ্য হাদীস) ওয়াল জামাত”, খলীফা সহ সকল সহাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে যারা পরিচালিত তাঁরা খাটি মুসলমান নাজাতপ্রাপ্ত উম্মত।
এ সব কারণে রাসূলের হাদীসে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরে আহলে সুন্নাত হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তবে হাদীসের উপর আমল বা অনুসরণ করার কথা কোথাও বলা হয়নি।
যেমন:
১) হাদীসে এসেছে- من تمسك بسنتي عند فساد امتي..الخ “যে আমার সুন্নাতকে মজবুত করে ধরবে যখন উম্মতের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি হবে...”।
২) تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله.
৩) عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
আহলে হাদীস ভাইগণ একটি হাদীস পেশ করতে পাবেন না যে রাসূল সা. উম্মতকে হাদীস মজবুত করে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন।
► ভ্রান্ত ‘আহলে হাদীসের’ অপতৎপরতার প্রতিকার
যেকোন বিষয়ে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হলে সে বিষয়ে পূর্ণরূপে জ্ঞাতি লাভ করতে হবে। কেননা, গভীরে না পৌঁছে কোন বস্তুর ইতিবাচক বা নেতিবাচক দিক আলোচনা-পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান তথাকথিত ‘আহলে হাদীস’ নামধারী হাদীসের যথেচ্ছা অপব্যাখ্যাকারী ও স্বার্থান্বেষী ভ্রান্ত ও গোমরাহ দলটি সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। আর সচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমত- আমাদেরকে এ ভ্রান্ত দলটির বিশ্লেষণ পূর্বক তাদের নীতিমালা, মতাদর্শ, কার্যপ্রণালী, সমাজে তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া, অপব্যাখ্যা সম্বলিত দলীলসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাতি লাভ করতে হবে। দ্বিতীয়ত- ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’-এর মতাদর্শ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা অর্জন করা এবং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সহীহ আকীদা সুবিন্যস্তভাবে জেনে ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস গুলোর যথাযথ জবাব দেয়া।
কেবল তখনই ভ্রান্ত দলগুলোর মুখোশ উন্মোচন ও তাদের ভ্রান্তিগুলো এবং সঠিক মতাদর্শ আপামর জনতার সামনে তুলে ধরা সহজ হবে। (ইন-শা আল্লাহ)
► ভ্রান্ত দলগুলোর ভ্রান্তি নিরসনে নিম্নের ধাপগুলো যথোপযোগী
ক.
বক্তৃতা, লিখনী ইত্যাদীর মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি। শহরে-বন্দরে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে দীনের সঠিক বাণী পৌঁছে দেয়ার নিমিত্তে ওয়াজ-মাহফিল, বক্তৃতা-সেমিনার, বই-পুস্তক, প্রবন্ধ-স্মারকলিপি, পত্রিকা-ম্যাগাজিন,ব্যানার-ফেস্টুন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে দীনি মাসআলা-মাসাইল, ঈমান-আকাইদ বিষয়গুলো প্রচার-প্রসার করা। বিশেষ করে সময়োপযোগী কার্যকরী পদক্ষেপ স্বরূপ ফেসবুক, ওয়েবসাইট ইত্যাদীও ব্যবহার করা যেতে পারে।
খ.
ভ্রান্ত দলগুলোর মতাদর্শ বিচক্ষণতার সাথে বুঝে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তার জবাব দেয়া। বাতিল যেভাবে ভ্রষ্টতা বিস্তার করছে ঠিক সেভাবে আমাদেরও দলীল ভিত্তিক ভ্রষ্টতা দূরীকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা অপরিহার্য। দলীল বিহীন শুধু যুক্তি ও প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে তাদের সাথে লড়া কোনো বিবেকবানের কাজ নয়।
গ.
সম্ভব হলে ভ্রান্ত দলগুলোকে আলোচনার সম্মুখিন করে লোকালয়ে তাদের মতাদর্শ শুনে কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্যমতে ভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করে শুধরে নেওয়ার পন্থা বাতলে দেওয়া। প্রয়োজনে বিতর্ক অনুষ্ঠান, মুনাযারা, মুবাহাসা, শিক্ষা সেমিনার ইত্যাদীর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।
ঘ.
সর্বস্তরে গণজাগরণ সৃষ্টি করা। সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে সরকারী পর্যায়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’-এর মাপকাঠি ও ভ্রান্ত দলগুলোর ভ্রষ্টতা তুলে ধরা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাতিল যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ স্বীকৃতি প্রদান, এমনকি বয়কট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সময়ের দাবী। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ দাবী উত্থাপনের জন্য সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায়ও এগুনো যেতে পারে। যেমন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য, যোগ্য মুফতি, মুহাদ্দিস, ফকীহগণের সমন্বয়ে গঠিত ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত পরিষদ বাংলাদেশ’ নামে একটি ঈমান-আকীদা সংরক্ষণকারী সংগঠন রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা সঠিকভাবে অনুধাবন করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন।(আমীন)

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!