সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কাজী শাওকানী ও নওযাব সিদ্দিক হাসান খানের জঘন্য বক্তব্য:
এ পর্বে আহলে হাদীসদের বিখ্যাত দুই গুরুর বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
হযরত ত্বলহা ও যোবায়ের রা. এর ব্যাপারে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ:
কাজী শাওকানী ওবালুল গামাম নামে একটি কিতাব লিখেছেন। কিতাবটি তাহকীক করেছেন, মুহাম্মাদ সাবহী হাসান হাল্লাক। এটি প্রকাশ করেছে, মাকতাবাতুল ইলম, জিদ্দা ও মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কায়রো। প্রথম প্রকাশ, ১৪১৬ হি:
ওবালুল গামামের দ্বিতীয় খন্ড, পৃ.৪১৪-৪১৫ পৃষ্ঠায় হযরত ত্বলহা ও হযরত যুবায়ের রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানী লিখেছে,
أما طلحة والزبير ومن معهم , فلأنهم قد كانوا بايعوه , فنكثوا بيعته بغياً عليه , وخرجوا في جيوش من المسلمين , فوجب قتاله
অর্থ: ত্বলহা, যোবায়ের ও তাদের সাথীরা যেহেতু হযরত আলী রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, অত:পর তার সাথে বিদ্রোহ করে তার বাইয়াত ভঙ্গ করেছে এবং মুসলমানদের একটি সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছে, সুতরাং তাদের সাথে হযরত আলী রা. এর যুদ্ধ করা ওয়াজিব হয়ে গেছে।
হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানীর জঘন্য বক্তব্য:
কাজী শাওকানী ওবালুল গমাম বইয়ে সিফফীনের যোদ্ধাদেরকেও রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যায়িত করেছে। অথচ সিফফীনের যুদ্ধে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর সাথে আরও অনেক সাহাবীও ছিলেন। এছাড়া হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছে, এতে আমাদের গা শিউরে উঠে। কাজী শাওকানী লিখেছে,
وأما أهل صفين , فبغيهم ظاهر , ولو لم يكن في ذلك إلا قوله صلى الله عليه وآله وسلم لعمار: ((تقتلك الفئة الباغية)) , لكان ذلك مفيداً للمطلوب , ثم ليس معاوية ممن يصلح لمعارضة علي , ولكنه أراد طلب الرياسة والدنيا بين فوم أغتام , لا يعرفون معروفاً ولا ينكرون منكراً , فخادعهم بأنه طالب بدم عثمان , فنفق ذلك عليهم , وبذلوا بين يديه دماءهم وأموالهم , ونصحوا له
অর্থ: সিফফীনের যোদ্ধাদের রাষ্ট্রদ্রোহীতা সুস্পষ্ট। বাস্তবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী না হলেও হযরত আম্মারের সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণে যথেষ্ঠ ছিলো। রাসূল স. বলেছেন, তোমার সাথে একটি রাষ্ট্রদ্রোহী দল যুদ্ধ করবে। এছাড়া মুয়াবিয়া হযরত আলীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যও ছিলো না। বরং সে শামের মূর্খদের মাঝে নেতৃত্ব ও সম্পদের আকাংখী ছিলো। এই মূর্খরা সৎকাজকে সৎ ও নিকৃষ্ট কাজকে নিন্দনীয় মনে করতো না। মুয়াবিয়া এই শামের অধিবাসীদেরকে এই বলে ধোকা দিয়েছে যে, সে হযরত উসমান রা. এর রক্তের বদলা নিতে চায়। এভাবে তাদের সাথে সে মুনাফেকী করেছে। ফলে শামের অধিবাসীরা তার সামনে তাদের রক্ত ও সম্পদ বিসর্জন দিয়েছে, তার কল্যাণ কামনা করেছে।
কাজী শাওকানী শুধু হযরত মুযাবিয়া রা. এর সমালোচনা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, মুয়াবিয়া রা. এর সহযোগী অন্যান্য সাহাবাযে কেরাম সম্পর্কে তার বক্তব্য দেখুন,
وليس العجب من مثل عوام الشام , إنما العجب ممن له بصيرة ودين , كبعض الصحابة المائلين إليه , وبعض فضلاء التابعين , فليت شعري أي أمرٍ اشتبه عليهم في ذلك الأمر , حتى نصروا المبطلين وخذلوا المحقين , وقد سمعوا قول الله تعالى: ((فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ)) , وقد سمعوا الأحاديث المتواترة في تحريم عصيان الأئمة ما لم يروا كفراً بواحاً , وسمعوا قول النبي صلى الله عليه وآله وسلم لعمار: انها تقتله الفئة الباغية . ولولا عظيم قدر الصحبة ورفيع فضل خير القرون , لقلت : حب الشرف والمال قد فتن سلف هذه الأمة كما فتن خلفها
অর্থ: শামের সাধারণ মানুষের ব্যাপারে এতোটা বিস্মিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু সেসব লোকদের ব্যাপারে বিস্মিত হই, যাদের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো, যারা বিচক্ষণ ছিলেন, যেমন, মুয়াবিয়ার পক্ষ অবলম্বনকারী কিছু সাহাবী, বিশিষ্ট কিছু তাবেয়ী। হায়, আমি বুঝতে পারি না, কী কারণে তারা এজাতীয় সন্দেহের আবর্তে নিমজ্জিত হলেন; এমনকি তারাবাতিলের সাহায্য করলেন এবং সত্যকে লান্ছিত করলেন? অথচ তারা আল্লাহর এই বাণী শুনেছিলো: [অর্থ] যদি তাদের একদল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে সেই দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে বাড়াবাড়ি করে, যতক্ণণ না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।(হুজুরাত-৯)
তারা হযরত আম্মার বিন ইয়াসি রা. এর উদ্দেশ্যে রাসূল স. এর এ উক্তিও শুনেছিলো, [অর্থ:] তোমার সাথে রাষ্ট্রদ্রোহী একটি দল যুদ্ধ করবে। যদি সাহাবীদের উচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ তিন যুগের উচ্চ ফজিলত না থাকতো, তাহলে আমি বলতাম: সম্পদ ও পদের লোভ এই উম্মতের পূর্ববর্তীদেরকে যেমন ফেতনায় ফেলেছে, তেমনি পরবর্তীদেরকেও। [শাওকানীর বক্তব্য শেষ হলো]
বিজ্ঞ পাঠক: কাজী শাওকানী সাহাবীদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ রেখে (?) যা বলেছে তাতে এই অবস্থা, যদি তিনি এই মর্যাদার প্রতি লক্ষ না করতেন, তাহলে না জানি কত কী বলতেন? আল্লাহ পাক সাহাবাদের সম্পর্কে এধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ থেকে আমাদেকে হেফাজত করুন।
হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে যেসব জঘন্য বক্তব্য কাজী শাওকানী লিখেছে,
১. পদ ও সম্পদের লোভ
২. হযরত উসমান রা. রক্তের বদলা নেয়ার কথা বলে ধোকাবাজি।
৩. বাতিল।
কাজী শাওকানীর ওবালুল গামাম এর লিংক:
http://www.almeshkat.net/books/archive/books/kmaam3.rar
আহলে হাদীস আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান:
কাজী শাওকানী আদ-দুরারুল বাহিয়্যা নামে একটি কিতাব লেখেন। কাজী শাওকানীর ছাত্র আহলে হাদীসদের বিশিষ্ট আলেম নওযাব সিদ্দিক হাসান খান এই কিতাবের একটি ব্যাখ্যা লেখেন। সিদ্দিক হাসান খানের এই ব্যাখ্যার নাম হলো, আর-রওজাতুন নাদিয়্যা। কিতাবটি আহলে হাদীসদের সিলেবাসভুক্ত একটি কিতাব। সালাফীদের শেইখ আলবানী দীর্ঘ দিন এই কিতাবের দরস দিয়েছে। শায়খ আলবানী আর-রওজাতুন নাদিয়্যার সংক্ষিপ্ত একটি ব্যাখ্যা লিখেছে।আলবানীর এই ব্যাখ্যার নাম হলো, আত-তা’লিকাতুর রজিয়্যা।
কিতাবটির প্রথম সংস্করণ ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। দারু ইবনিল কাইয়্যিম ও দারু ইফফান নামক দু’টি লাইব্রেরী এটি প্রকাশ করেছে। কিতাবটি তাহকীক করেছে, আলবানী সাহেবের বিশিষ্ট ছাত্র আলী আল-হালাবী। আমাদের আলোচ্য বিষয় এ কিতাবের তৃতীয় খন্ডের ৫০১ পৃষ্ঠা থেকে পরবর্তী আলোচনায় রয়েছে। নিচের স্ক্রিনশট লক্ষ্য করুন। যারা আরও বিস্তারিত অনুসন্ধানে আগ্রহী, তারা মূল কিতাবটি নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিবেন।
কিতাবের লিংক:
http://www.waqfeya.com/book.php?bid=336
আর-রওজাতুন নাদিয়্যাতে নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানও কাজী শাওকানীর উক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখ করেছে। নওয়াব সাহেব এসব বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ করেননি। বরং এগুলো তিনি যত্নসহকারে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্যগুলো মূলত: সিদ্দিক হাসান খানের উস্তাদ কাজী শাওকানীর। মূল কিতাব আদ-দুরারুল বাহিয়্যাতে এই বক্তব্যগুলো ছিলো না। নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান তার ব্যাখ্যায় এই বক্তব্যগুলো উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম ও হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানী ও নওযাব সিদ্দিক হাসান খানের বক্তব্য একই। উস্তাদ ও শাগরেদ একই পথের পথিক। আসলে তারা কোন পথের পথিক ছিলো? শিয়াদের পথের পথিক ছিলো। কাজী শাওকানী নিজে যায়দী শিয়া ছিলো। তার অনুসারী আহলে হাদীস নওয়াব সিদ্দিক হাসানও এর বাইরে যেতে পারেনি।
উক্ত বক্তব্য উল্লেখের পর শায়খ মুহাম্মাদ আহমাদ শাকের সাহেব নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সম্পর্কে লিখেছে,
و قد غلب علي الشارح ما يغلب علي الأعجام من التشيع
“ব্যাখ্যাকার নওয়াব সিদ্দিক হাসানের মাঝে মূর্খ অনারবীদের মতো শিয়াদের প্রভাব জেকে বসেছে”
নিচের স্ক্রিনশট দেখুন,
এই বক্তব্যগুলো সম্পর্কে আলবানী সাহেবের কোন মন্তব্য আত-তা’লীকাতুর রজিয়্যাতে নেই। এর কারণ আমাদের অজানা।
আল্লাহ পাক আমাদের সাহাবায়ে কেরামের সমালোচক ও সাহাবা-বিদ্বেষীদের থেকে হেফাজত করুন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সাহাবা বিদ্বেষীদের থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!