Thursday, March 23, 2017

পিতা মাতার উপর সন্তানের অধিকার(পর্ব-০৩)

পৃথিবীতে আগমনের পরবর্তী অধিকার সমূহ :
শিশুরা হচ্ছে জীবনের কিশলয়, আশার ফসল, মানুষের চোখ জুড়ানো ধন, উম্মাহর প্রস্ফূটিত ফুল, মানবতার ভবিষ্যত, সত্যিকার প্রভাতের উদয়, ঝলমলে আগামী দিন, গৌরবময় অতীতের প্রত্যাবর্তন এবং উম্মাহর কীর্তিমান মর্যাদার শাসন সংরক্ষিত রাখার একটি মাধ্যম। সন্তান মানুষের ইপ্সিত আশার প্রতীক। তাই সন্তান জন্মগ্রহণ করার পরেই কতগুলি মৌলিক দায়িত্ব পিতাকে পালন করতে হয়। এই গুরু দায়িত্ব হ’তে অমনোযোগী হ’লে তাকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।
সন্তানকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করা ও তাদের নৈতিকতার উন্নয়নে পিতা যত্নবান না হ’লে অথবা অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠে দুর্বিসহ। কাজেই একজন পিতা সন্তানের সঙ্গে বৈরী মনোভাব পরিহার করে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন। সর্বদা সন্তানের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করবেন, আদর ও স্নেহ করবেন এবং প্রয়োজনে নছীহত করবেন।
১. একত্ববাদের আহবান শুনানো :
শিশু মায়ের গর্ভ হ’তে পৃথিবীতে আগমনের পরক্ষণেই তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে কানে আযান দিতে হয়। আবু রাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি যে, ফাতিমা (রাঃ)-এর গর্ভ থেকে হাসান (রাঃ)-এর জন্ম হ’লে রাসূল (ছাঃ) তাঁর কানে ছালাতের আযানের মত আযান দিয়েছিলেন।[12]
একজন শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার মন থাকে সম্পূর্ণরূপে পূতপবিত্র ও নিষ্পাপ। সে সময় তাকে সর্বপ্রথম যে বাক্য শুনানো হবে, সেটাই হবে তার সারাজীবনের চলার পাথেয়। ইসলাম স্বভাবজাত আদর্শ। এ আদর্শের বাণী তার কর্ণকুহুরে প্রবেশ করলে, সে নিজেকে এ পথের অনুসারী বানাবার প্রয়াস চালাবে সারাটি জীবন।
কুরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে, فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُوْنَ- ‘এ হচ্ছে আল্লাহর ঐ ফিৎরাত (প্রকৃতিজাত আদর্শ) যার উপর সমস্ত মানবগোষ্ঠীকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সঠিক-সুন্দর দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (রূম ৩০)।
মা এ সময় অবচেতন অবস্থায় থাকেন, তাই এ ব্যাপারে বাবাকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আর আল্লাহর বান্দা হিসাবে পৃথিবীর আলোয় পা রেখে প্রথম আল্লাহর একত্ববাদের কথা পিতার নিকট থেকে শুনবে এটি তার শাশ্বত অধিকার।
২. তাহনীক করা :
খেজুর চিবিয়ে সেই চর্বিত খেজুর নবজাতকের মুখে দেয়াকে তাহনীক বলে। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, وُلِدَ لِىْ غُلاَمٌ فَأَتَيْتُ بِهِ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمَّاهُ إِبْرَاهِيْمَ فَحَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ وَدَعَا لَهُ بِالْبَرَكَةِ وَرَفَعَهُ إِلَىَّ. ‘আমার একটি শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে পেশ করলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম আর খেজুর দ্বারা তার তাহনীক করলেন এবং তার জন্য বরকতের দো‘আ করে তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিলেন’।[13]
৩. সুন্দর নাম রাখা :
নামের মধ্যেও মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। আর মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়েও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ভাল নামের বদৌলতে সন্তানের অনাগত দিনগুলো হ’তে পারে সুন্দর ও মঙ্গলময়। তাই পিতার কর্তব্য হ’ল সন্তানের সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা। ইসলামের দেয়া পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে পিতা পুত্রের উত্তম নাম রাখবেন। অর্থহীন ও সুন্দর নয় এমন নাম রাখলে এর প্রভাব শুধু তার উপরেই নয়; বরং পরবর্তী বংশধরদের উপরেও পড়ে। ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর পিতা নবী (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, ‘হায্ন (কর্কশ)। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, বরং তোমার নাম ‘সাহ্ল’ (নম্র)। তিনি বললেন, مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ إسْمًا سَمَّانِيْهِ أَبِىْ. ‘আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন, তা অন্য কোন নাম দিয়ে বদলাব না’। ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন, فَمَا زَالَتْ فِيْنَا الْحُزُوْنَةُ بَعْدُ. ‘এরপর থেকে আমাদের বংশে চিরকাল রুক্ষতা বিদ্যমান ছিল’।[14]
অর্থহীন ও মন্দ নাম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পরিবর্তন করে মাধুর্য ও শ্রুতিপূর্ণ নাম রাখতেন। হাদীছে বর্ণিত আছে, إِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُغَيِّرُ الْإِسْمَ الْقَبِيْحَ. ‘নবী করীম (ছাঃ) খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন’।[15] রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীর নাম পরিবর্তন করে মুনযির রেখেছিলেন।[16] তাছাড়া তিনি (ছাঃ) ‘আছিয়া’ নাম্নী এক মহিলার নাম পরিবর্তন করে ‘জামীলা’ এবং ‘বার্রাহ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘যায়নাব’ রেখেছিলেন।[17]
আল্লাহ তা‘আলার বহু গুণবাচক নাম আছে, ঐ সমস্ত নামের সাথে ‘আবদ’ শব্দ যোগ করে নাম রাখা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ: عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَانِ ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান’।[18]
শিশু জন্মগ্রহণ করার পর পরই শিশুর নাম রাখা যায়।[19] তবে সবচেয়ে উত্তম হ’ল শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা।[20]
৪. আক্বীক্বা :
নবজাত শিশুর মাথার চুল অথবা সপ্তম দিনে নবজাতকের চুল ফেলার সময় যবেহকৃত বকরীকে আক্বীক্বা বলা হয়।[21] শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা উত্তম। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রতিটি শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করবে, মাথার চুল মুন্ডন করবে এবং নাম রাখবে’।[22]
নবজাতক পুত্র সন্তান হ’লে দু’টি ছাগল এবং কন্যা হ’লে একটি ছাগল আক্বীক্বা হিসাবে প্রদান করতে হবে। উম্মে কুরয্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সন্তান ছেলে হ’লে দু’টি ছাগল আর মেয়ে হ’লে একটি ছাগল আক্বীক্বা করবে’।[23] তবে পুত্র সন্তানের জন্য একটি ছাগলও আক্বীক্বা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য একটি করে ছাগল আক্বীক্বা করেছিলেন।[24]
৫. খাৎনা :
সন্তানের পিতার নিকট আরো কটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হ’ল, তিনি যথাসময়ে তার খাৎনা করাবেন। পুত্র সন্তানের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের বাড়তি চামড়া কেটে ফেলাকে খাৎনা বলে। খাৎনা করা একটি উত্তম পন্থা ও ইসলামের বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘স্বভাব সম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে খাৎনা করা একটি’।[25] আধুনিক বিজ্ঞানেও খাৎনার উপকারিতা স্বীকৃত।
৬. জীবনের নিরাপত্তা ও বিকাশ সাধনে লালন পালন করা :
পিতা হৃদয় নিংড়ানো ঐকান্তিক দরদ, ভালবাসা ও স্নেহ-মমতার কোমল পরশে সন্তানকে লালন-পালন করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের (সন্তান ও জননীর) ভরণ-পোষণের ভার পিতার উপরই ন্যস্ত’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)। পিতার নিকট হ’তে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ সন্তানের প্রাপ্য অধিকার। সন্তানের এ সমস্ত প্রয়োজন পূরণে পিতা অমনোযোগী হ’লে অবশ্যই তাকে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই আপন আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[26] সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যবান রূপে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে পিতাকে যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনে খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জন্ম হবার পর সাধারণতঃ প্রথম ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুরা মায়ের বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল থাকে। এ সময় পিতাকে মায়ের খাদ্যের প্রতি সুদৃষ্টি দিতে হবে। ছয় মাস পার হ’লে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুর উপযোগী অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করবেন। এভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে খিচুড়ি, ভাত, রুটি ও অন্যান্য খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেন টাটকা শাক-সবজি থাকে সেদিকেও পিতাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও আয়োডিনযুক্ত লবণ ও বিশুদ্ধ পানির যোগান দিতে হবে। এতে খাদ্যের মৌলিক ছয়টি গুণ সংগৃহীত হবে। আর এর দ্বারা শরীরের গঠন ও ক্ষয়পূরণ নিশ্চিত হবার সাথে সাথে রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
হাদীছে নিজ পরিবারের জন্য ছওয়াবের আশায় ব্যয় করার ফলস্বরূপ একটি ‘ছাদাক্বা’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে’।[27] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَفْضَلُ دِيْنَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ. ‘সর্বোত্তম ব্যয় হচ্ছে ঐ অর্থ (দিনার) যা কোন ব্যক্তি ব্যয় করে নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য’।[28]
৭. আদব–কায়দা শিক্ষা দান :
আজকের শিশু আগামী দিনে সুস্থ পরিবার, সুন্দর সমাজ ও জাতি গঠনের মৌলিক স্তম্ভ। শিশুর মন অত্যন্ত কোমল। এ সময় তাকে সুশিক্ষা দিলে ভবিষ্যত জীবনে তা তার পাথেয় হিসাবে কাজ করবে। সেজন্য তার চরিত্র, মন-মানসিকতা, মানবিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে ইসলামের উন্নততর আদর্শ ও নীতিমালার রং-রূপ-গন্ধে ভরে দেয়া পিতার অবশ্য করণীয়। সততা, পরোপকারিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, দানশীলতা, জীবে দয়া, বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ ইত্যাদি সৎগুণাবলী শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে। অপরপক্ষে অহংকার, মিথ্যা, ধোঁকাবাজী, গীবত, চোগলখোরী, মূর্খতা, উদাসীনতা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা ইত্যাদির প্রতি তাদের হৃদয়ে ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে।
পিতাকে শিশুর আচার-আচরণের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন সে বিকৃত স্বভাব, অপসংস্কৃতি ও কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে বিপথে পরিচালিত না হয়। বৃহত্তর বিশ্বের চলমান চাকা তলে পিষ্ট হয়ে তার ব্যক্তিত্ব যেন গোড়াতেই বিধ্বস্ত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
৮. ইসলামের অনুশাসনে জ্ঞান দান ও অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা :
প্রতিটি শিশু ফিতরাত তথা ইসলাম গ্রহণের যোগ্যতা সহ জন্মগ্রহণ করে।[29] সুন্দর চরিত্রে চরিত্রবান হবার যোগ্যতা প্রতিটি শিশুর মধ্যেই বিদ্যমান আছে; যদি পিতা এ ব্যাপারে যত্নবান হন এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকে। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আসমান-যমীন সব কিছুতেই আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান এ ধারণাটি শিশুদের মনের মধ্যে বদ্ধমূল করে দিতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা, অতঃপর রাসূল, ফেরেশতা, কুরআন মাজীদ সহ অন্যান্য ইলাহী গ্রন্থ সমূহ, কবর, হাশর-নশর, আখেরাত ইত্যাদির উপর ঈমান আনয়নের ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে। শিরক ও বিদ‘আতের অকল্যাণ ও ভয়াবহতার কথা তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
পিতা শিশুকে লোকমান (আঃ)-এর ছেলেকে প্রদত্ত নছীহতের অনুসরণে উপদেশ প্রদান করবেন এবং তা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন। লোকমান স্বীয় সন্তানকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক কর না। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম’। ‘হে বৎস! কোন বস্ত্ত যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা ভুগর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত। ‘হে বৎস! ছালাত প্রতিষ্ঠা করবে। সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করবে। এটাই দৃঢ় সংকল্পের কাজ। অহংকারবশতঃ তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করবে না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে চলাফেরা করবে না। কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পসন্দ করেন না। তুমি চলাফেরা করবে সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু করবে। নিশ্চয়ই গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’ (লোকমান ৩১/১৬–১৯)।
ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একজন শিশুকে আদর্শ মানুষের মূর্তপ্রতীক হিসাবে বিশ্বদরবারে পেশ করার জন্য লোকমান (আঃ)-এর উপদেশ ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসাবে গৃহীত। এই মডেল তৈরী করার জন্য পিতাকে যত্নবান হওয়া অবশ্যই দরকার।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন
,مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ وَاضْرِبُوْهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِسِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ
তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বৎসর বয়সে ছালাত আদায়ের জন্য আদেশ করবে এবং দশ বৎসর বয়সে ছালাত আদায় না করলে প্রহার করবে, আর তাদের শয্যা পৃথক করে দিবে’।[30]
সন্তানকে জীবনের ঊষালগ্ন হ’তে বিলাসিতা ও অলসপ্রবণ করে গড়ে তুললে তার ভবিষ্যত হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। তাই সন্তানকে কষ্টসহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল এবং পরিস্থিতির মোকাবিলা করার উপযুক্ত হিসাবে গড়ে তোলা পিতার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পালন করলেই সন্তান যেন তার অধিকার পিতার নিকট থেকে বুঝে পেল। (চলবে ইনশাআল্লাহ)

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!