Thursday, March 23, 2017

হায়াতুন্নবী সাঃ বিষয়ক বাহাসের সারসংক্ষেপ!! ৫ মে ২০১৫

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

বাহাসের আলোচ্য বিষয়– আকিদায়ে হায়াতুন্নবী সাঃ।

আহলে হাদীস মুনাজির– শায়েখ আকরামুজ্জামান, শায়েখ মুখলেসুর রহমান, শায়েখ মুরাদ বিন আমজাদ।

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মুনাজির– মাওলানা তাহমীদুল মাওলা, মাওলানা আবু হাসসান রাইয়্যান, মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী।

স্থান– শায়েখ আকরামুজ্জামান সাহেবের নিজের মাদরাসা, কাজিবাড়ি উত্তরা ঢাকা।

তারিখ-৪ই মে ২০১৫ ঈসাব্দ রোজ সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা।

আলহামদুলিল্লাহ! অবশেষে আমরা শায়েখ আকরামুজ্জামান সাহেবের মাদরাসায় প্রবেশ করেই বাহাসে শরীক হলাম!

“কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা বিষ খেয়ে মরে যেতে রাজি কিন্তু আমাদের সাথে বসতে রাজি নয়” মর্মে ষ্ট্যাটাস দিলে অনেক কষ্ট পান হয়তো কতিপয় শায়েখগণ। সেই হিসেবেই হঠাৎ করে মেসেজে পেলাম শায়েখ আকরামুজ্জামান সাহেবের ছেলের। আামি কুৎসা রটাই, আমি দলীলের নামে গোঁজামিল দেই, আহলে হাদীস নামধারীদের বিরোধিতা করার জন্যই আমার জীবন উৎসর্গ করেছি ইত্যাদি আরো অনেকগুলো অপবাদ আমার উপর আরোপ করে বাহাস করার জন্য আমার কাছে জানতে জানতে চাওয়া হয়।

রাজি হয়ে যাই সানন্দে। তারিখ জানিয়ে দেই প্রথমে ২৮ তারপর ২৯ ই এপ্রিল।

প্রথমে যদিও আমাদের দেয়া তারিখেই বসার আহবান করা হয়ে থাকে, কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের তারিখে বসতে পারবেন না বলে ৪ ই মে তারিখে বসার কথা বলেন নিজের পক্ষ থেকে।

আমরা এতেও রাজি হয়ে গেলাম।

আমরা প্রস্তাব করলাম-

বিষয়বস্তুও আমাদের পক্ষ থেকে কয়েকটি জানিয়ে দিচ্ছি।

ক) হায়াতুন্নবী সাঃ কে তালাক প্রদানকারী মুসলমান থাকে কি না?

খ) নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মাসআলায় আমাদের ও আকরামুজ্জামান সাহেবের মতামত ও আমল পূর্ণ উল্লেখ পূর্বক দলীল প্রমাণ পেশ করা হবে।

বাহাসে আহবানকারী পক্ষ শর্ত দেয়-

১। আপনার শর্তানুযায়ী, ২ জন ক্যামেরাম্যান, আপনি নিজে, ২ জন সহকারি মুনাজির, মোট ৫ জনের বেশি লোক সমগম করা যাবেনা।

২। শর্তানুযায়ী, আপনারা ভিডিও করতে পারবেন। তবে তা প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষের কোনো মুনাজিরের বক্তব্যকে বিন্দুমাত্র এডিট বা কাটছাট করে মূল বিষয়বস্তুর বিকৃতি সাধন করা যাবেনা। তাছাড়া এটা একজন মুমিনের আমানতদারিতরও প্রশ্ন, তবুও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

এরপর আহলে হাদীস ভাইয়েরা নতুন শর্ত জুড়েন-

আমরা ৫জন ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবো না। তারাও ৫জনের উর্দ্ধে থাকবে না।

আরো একটি শর্ত- বাহাস হবে তাদের নিজেদের মাদরাসায়। অন্য কোথাও নয়।

তারপর বিষয়বস্তু অনেক ও সময়সাপেক্ষ আলোচনার বিষয় হওয়াতে আমরা প্রস্তাব করলাম-

“বিষয় অধিক হওয়ায় একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে প্রথম বৈঠক তথা আগামী ৪ই মে ২০১৫ ইং তারিখের প্রথম আলোচনা হবে শুধু হায়াতুন্নবী প্রসঙ্গে। হায়াতুন্নবী সাঃ কে তালাক প্রদানকারীর হুকুম কী?

তারপর পরবর্তী বৈঠক থেকে শুরু হবে নামাযের তাকবীরে তাহরীমা থেকে নিয়ে সালাম পর্যন্ত মাসআলা বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনা। এক বৈঠক শেষে পরবর্তী বৈঠকের তারিখ ও বিষয় এবং সময় আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে।”

আমরা তাদের দেয়া সব শর্ত নির্দ্ধিধায় মেনে নিলেও তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো মানতে অস্বিকৃতি জানান। যেমন তারপর জানানো হয়-

একাধিক বৈঠক হতে পারবে না। সব আলোচনাই একদিনে শেষ করতে হবে। [অথচ যা ছিল অসম্ভব]

নিজেদের প্রতিষ্ঠান ও নিজেদের জায়গা হওয়া সত্বেও সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জুড়তে চাইলেন নতুন দু’টি শর্ত। যথা-

১) ভলান্টারিং এর জন্য থাকবে তাদের পক্ষ থেকে কয়েকজন।

২) একজন থাকবে সঞ্চালক।

তারপর কথিত আহলে হাদীসদের পক্ষ থেকে বাহাসের মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়-

১। কুর’আনের সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী দলিল গ্রহন।

২। সহিহ হাদিসের সঠিক নির্দেশনা ও বুঝ অনুযায়ী দলিল গ্রহন।

বাহাসের বিষয়াবলী আমরা যা নির্ধারণ করতে চাচ্ছি, তা আপনার দেয়া বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে। তা হল-

১। কুর’আন ও সহিহ সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকিদাহ।

২। সন্নাত ও বিদ’আত এর জ্ঞানের আলোকে ইসলামী আমল ইবাদত।”

আশা করি একজন সাধারণ বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিই উপরোক্ত বক্তব্যগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন এসবের কোনটিই বাহাস অনুষ্ঠিত হবার প্রতি আগ্রহী শর্ত নয়। পরিস্কার ভাষায় দেখুন-

ক)

আমরা যাবো কেবলি ৫জন। আর তাদের নিজেদের স্থান ও ও মাদরাসা হওয়া সত্বেও ৫ জন ছাড়া বাড়বে আরো ভলান্টার, বাড়বে মাঝখানে তাদের নিজেদের মনমত একজন সঞ্চালক। যিনি ইচ্ছে করে বাহাসের মোড় ঘুড়ানোর অপচেষ্টা করবেন। [করেছেনও যা সামনে বলা হবে ইনশা্আল্লাহ]

খ)

কুরআনের সঠিক বুঝ অনুপাতে দলীল গ্রহণ আর হাদীসের সঠিক বুঝ অনুপাতে দলীল গ্রহণ। এটি একটি ধোঁয়াশা বক্তব্য। বুঝতো নেয়া হবে কুরআন ও হাদীস থেকে কিন্তু দলীলটা কোত্থেকে গ্রহণ করা হবে তা নির্ণয় করা নেই। দুই নাম্বার বিষয় হল এই বুঝের কথা বলা হচ্ছে এটা কার বুঝ? আমরা বলবো এটাই কুরআন থেকে বুঝ পাওয়া যায় তাই এভাবে দলীল হবে। তারা বলবে অন্যটা। এভাবে বুঝকে এক করা কিভাবে সম্ভব?

তাহলে এটি একটি ধোঁয়াশা শর্ত ছাড়া আর কী? এমন জখাখিচুরী শর্ত নিয়ে কি করে বাহাসে অংশগ্রহণ করা যায়?

গ)

কুরআন ও সহীহ সুন্নার আলোকে ইসলামী আকিদাহ। একটি ব্যাপক ও বিশাল আলোচ্য বিষয়। আরেকটি তথা সন্নাত ও বিদ’আত এর জ্ঞানের আলোকে ইসলামী আমল ইবাদত ও একটি বিশাল ও বিস্তর বিষয়।

যেকোন একজন সাধারণ মুসলমানও বুঝবেন এ শর্ত দিয়ে কেউ আলোচনায় বসা মানেই ধুম্রজাল সৃ্ষ্টি করা।

কারণ এত আম বিষয়ে কথা বলতে গেলে কোন বিষয় থেকে কোন বিষয়ে যাবে তার কোন ঠিকঠিকানা নেই। ইবাদতে আছে নামায রোজা, হজ্ব যাকাতসহ সহ অসংখ্য বিষয়। আকিদায়ও আছে অসংখ্য শাখাপ্রশাখা। তাহলে এরকম আম বিষয়কে বাহাসের বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা মানে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা নয় কি? অপরপক্ষকে আপত্তি তুলে বাহাস থেকে অস্বিকৃতি জানাতে প্রলুব্ধ করা নয়কি?

কিন্তু মজার বিষয় হল। এসব শর্তগুলো যদিও আমাদের জন্য আত্মঘাতি ও বিপদজনক। তবু আমরা সহাস্য বদনে তা মেনে নিলাম। জানিয়ে দিলাম বিষয়বস্তু তথা কুরআন ও সহীহ সুন্নার আলোকে ইসলামী আকিদা। ইসলামী ইবাদত। তবে শর্ত হল প্রথমে আমরা প্রথমে আলোচনা করবো হায়াতুন্নবী বিষয়ে। তারপর বাকি আকিদার উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন তুললাম ভলান্টার ও সঞ্চালক নিয়ে। মাত্র তিনজন বাহাসকারীর জন্য কিসের ভলান্টার লাগবে? তিন তিন ছয়জনের আলোচনার মাঝে  কোন সঞ্চালকের প্রয়োজন নেই। যেহেতু ভিডিও হবে, সেই সাথে তা সরাসরি সম্প্রচার হবে। সেখানে অতিরিক্ত মানুষের কোন প্রয়োজন নেই। যা হবার তাতো সবাই দেখতেই পাবে। তাই আহলে হাদীস নামধারী ভাইদের পক্ষ থেকে যতজন লোক থাকবে আমাদের পক্ষ থেকেও ততজন লোকই রাখতে হবে। তাই তাদের পক্ষ থেকে সঞ্চালক থাকলে আমাদের পক্ষ থেকেও সঞ্চালক থাকবে।

কিন্তু আমাদের এ শর্ত তারা মানতে অস্বিকৃতি জানান। ভলান্টারটি বাদ দিলেও সঞ্চালক রাখবেনই মর্মে সাফ জানিয়ে দেন।

তখন আমরা প্রস্তাব করলাম- আগে না বলা সত্বেও নতুন করে জোড়পূর্বক যদি আপনারা সঞ্চালক রাখার শর্ত করেই থাকেন, তাহলে আমাদের শর্ত হল আমরা মোট ৭ জন আসবো। আপনারাও সাতজন থাকবেন। এ সাতজনের মাঝে একজন সঞ্চালক ও একজন মুনাজির হবে।

কিন্তু আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের মত একজন সঞ্চালক বাড়ানোর কথা মেনে নিলেও একজন মুনাজির বাড়ানোর আমাদের শর্তকে প্রত্যাখ্যান করে দেন। সেই সাথে পরিস্কার জানিয়ে দেন যে, যিনি সঞ্চালক হবেন, তিনি কোন কথা বলবেন না। তিনি শুধুই সময়কে মেন্টেন করবেন। সময় দেখা ছাড়া তার আর কোন ভূমিকা থাকবে না।

আমরা রাজি হয়ে গেলাম। আমরা  চাচ্ছিলাম যেকোনভাবে তাদের সাথে বসতে। এসব শর্ত ফর্তের ফাঁদে পড়ে বসাটা যেন বাদ কিছুতেই না যায়। তাই রাজি হয়ে গেলাম আমরা।

একথাগুলো হয় ১ তারিখ। আমাদের জানানো হয় পরদিন তথা ২ তারিখ সকাল আগারটা মাঝে আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হবে শর্তগুলো বিষয়ে।

কিন্তু পরদিন এগারটা বেজে গেলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি তাদের। তখন আমরা তাদের আবার নক করলাম। এখনো জানানো হচ্ছে না কেন?

জানানো হল জোহরের পর জানানো হবে। কিন্তু তখনো জানানো হয়নি। আবার নক করলাম। তখন বলা হলো আসরের পর তারা বসবেন তারপর জানানো হবে। কিন্তু মাগরিবের পর হবার পরও কোন কিছুই জানানো হয়নি।

বাধ্য হয়ে বাদ মাগরিব প্রায় এক ঘন্টা পর কল দিলাম। তখন তারা বলেন ঠিক আছে চুক্তিনামা পাঠিয়ে দিন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আরেকটি শর্ত দলীল হবে শুধুই কুরআন ও হাদীস। ইজমা ও কিয়াস দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না।

আমরা বললাম- দেখুন যদি আপনারা ইজমা ও কিয়াসকে দলীল মানতে অস্বিকৃতি জানান, তাহলে আগে বাহাস হবার দরকার দলীল কয়টি? দু’টি না  চারটি? আমরা কিন্তু আপনাদের সাথে আলোচনায় বসতে চাই। এ কারণেই আপনাদের মাদরাসায় বলার পরও রাজি হয়েছি। মাত্র ছয়জন যেতে পারবো তা বলার পরও রাজি হয়েছি। একের পর এক শর্ত বাড়াচ্ছেন তবু রাজি হচ্ছি। এখন যদি নতুন করে শর্ত বাড়ান যে, দলীল দু’টি। তাহলে কিন্তু বিপদে আপনারাই পড়বেন। তখন কিন্তু আমরা আপনাদের ঊসুলে হাদীসের কোন পরিভাষা ব্যবহার করতে দিবো না, কারণ উসূলে হাদীসের পরিভাষা কোনটিই কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এসবই মুহাদ্দিসদের কিয়াস্ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। তখন আলোচনা হবে না বরং আপনারা প্রতিটি পদে পদে ধরা খাবেন।

তারপর আমরা জানালাম। ২০০৩ সালে আল্লামা আব্দুল মালিক সাহেব দা.বা. এর সাথে যখন আকরামুজ্জামান সাহেব বসেছিলেন তখন কিন্তু তিনি নিজেই তার প্রবন্ধে দলীল চারটি সাব্যস্ত করেছেন দু’টি নয়। সেই সাথে তার অনূদিত এবং ব্যাখ্যা করা বিতর্কিত বাংলা বুখারীতে তিনি দলীল হিসেবে চারটিকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেখানে এখন কেন দু’টির কথা বলছে?

যাইহোক, অবশেষে কুরআন ও সুন্নাহের সেবক হিসেবে ইজমা ও কিয়াসকে দলীল মেনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে মর্মে সম্মতি দান করা হয়।

আরো একটি মজার কথা হল, আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করলাম- আপনারাতো বিষয় দিলেন আকিদা ও ইবাদতের সব বিষয় নিয়ে কথা হবে তো এখনো এতে সম্মততো?

জবাব দেয়- একদিনে সব বিষয়ে কথা বলতে পারবেনতো?

আমরা জানালাম- আপনাদের মতামত কি?

বলে- একদিনে সব বিষয়ে কথা বলা যাবে না, তাই শুধু হায়াতুন্নবী বিষয়ে আলোচনা হবে কাল।

মনে মনে হাসি পেল। তাহলে আগে এরকম জগাখিচুরী মার্কা বিষয়বস্তু তাহলে কেন তারা দিয়েছিলেন? নিশ্চয় আমরা যাতে ভয় পেয়ে বাহাসে বসতে অস্বিকৃতি জানাই। কিন্তু বিষয়বস্তু জগাখিচুরী হলেও যখন আমরা রাজি হয়ে গেলাম, তখন নিজে নিজেই বিষয়বস্তু কমিয়ে একটিতে নিয়ে এল। হাস্যকর কাজকর্ম!

অবশেষে চলে এল ৪ তারিখ। আমরা তথা মাওলানা তাহমীদুল মাওলা এবং মাওলানা আবু হাসসান রাইয়্যান এবং আমি অধম উপস্থিত হলাম আকরামুজ্জামান সাহেবের মাদরাসায়।

বাহাস শুরু হতে হতে সময় লেগে গেল প্রায় এগারটা। তখন আকরামুজ্জামান সাহেব শর্ত জুড়ে দেন আলোচনা যোহরের আগেই শেষ করতে হবে। আমরা বলেছিলাম যোহরের পরও চলতে। কিন্তু আমাদের কথা মানা হয়নি।

যাইহোক, শুরুতেই শর্ত ভঙ্গ দিয়ে শুরু হয় বাহাস। কথা ছিল সঞ্চালক কোন কথা বলবেন না। তিনি শুধুই সময়কে নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু আলোচনার শুরুতেই আহলে হাদীস ভাইদের সঞ্চালক মাওলানা সানাউল্লাহ নিজেই বাহাসকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নানাভিদ বিষয়ের অবতারণা করতে চান। যা ছিল খুবই দৃষ্টকটু। আমরা শর্তের কথা বলে তাকে থামিয়ে দেই। অবশেষে আবারো শর্ত ভঙ্গ করে সঞ্চালক সানাউল্লাহ সাহেব দীর্ঘ বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর তাকে শর্ত ভঙ্গ করছেন কেন? জানতে চাইলে তার কথা থামিয়ে বাহাস শুরু করেন। এভাবে পুরো বাহাস জুড়েই তিনি শর্ত ভঙ্গ করে বারবার কথা বলতে চেষ্টা করেছেন মুনাজিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে।

প্রথমেই আমাদের পক্ষ থেকে মাওলানা তাহমীদুল মাওলা উপস্থাপন করেন হায়াতুননবী বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা। উপমহাদেশে একমাত্র আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সঠিক মতও পথের ধারক উলামায়ে দেওবন্দের প্রায় আটটি কিতাব দেখিয়ে তিনি জানান- আমাদের আকিদা হল- রাসূল সাঃ ইন্তেকাল করেছেন। আর মৃত্যুর পর তিনি বিশেষ হালাতে জীবিত। যা পরিস্কার হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তারপর তিনি এ বিষয়ে পরিস্কার সহীহ হাদীস পেশ করেন। সেই সাথে এর স্বপক্ষে ইবনে তাইমিয়া, আল্লামা সাখাবী, আলবানীসহ আরব শায়েখদেরও মত উল্লেখ করেন। সময়ের স্বল্পতার কারণে আরো অনেক দলীল পেশ করতে পারেননি।

তারপর লা-মাযহাবীদের পক্ষ থেকে আকরামুজ্জামান সাহেব দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন। আপনাদের সাথে আমাদের প্রায় মিল আছে। একটু অংশ ছাড়া। সেটি হল কবরের জীবিত থাকার সাথে আপনারা বলেছেন কিছুটা মিল আছে। আমাদের মত হল কোন মিল নেই। আপনাদের প্রমাণ দেয়া নবীরা কবরে জীবিত তারা সেখানে নামায পড়ে মর্মের হাদীসটি সহীহ আমরাও মানি।আর কুরআনে এসেছে আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন না। তাই তারা শুনতে পায় না। তারা মৃত।

এরপর সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে আকরামুজ্জামান সাহেব ফাজায়েলে আমলসহ আমাদের আকাবীরদের কিতাবে বর্ণিত বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত কারামত সম্পর্কিত ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, এসব ঘটনা হায়াতুন নবীর আকিদার কারণে হয়েছে। নবী জীবিত তাই তিনি যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। ঘটনা শুনান সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ সালাম দিলে কবর থেকে সালামের জবাব আসার।

এরপর আমি অধম বললাম- তাহলে আপনি স্বীকার করে নিলেন নবীরা কবরে জীবিত। কিন্তু আমরা যে বললাম দুনিয়ার জীবনের সাথে কিছুটা মিল আছে সেটিকে অস্বিকার করলেন। অথচ হাদীসটি মানার পর একথা বলাটা আর যৌক্তিক থাকে না। কারণ হাদীসেই এসেছে তিনি সেখানে নামায পড়েন, আর এ নামাযটা দুনিয়ার কাজ। কুরআনে এসেছে শহীদগণকে রিজিক দেয়া হয়, সেই হিসেবে নবীগণও এ মর্যাদা প্রাপ্য। তাহলে কুরআন্ ও হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক আছে। রিজিক খাওয়া, নামায পড়া এসব কি দুনিয়ার কর্ম নয়? তাহলে কোন সম্পর্ক নয় একথা বলা কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে?

আর আপনি রাসূল সাঃ  বিষয়ে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলেন। এসবতো কারামতের ঘটনা। এসবের সাথে হায়াতুন্নবী আকিদার কী সম্পর্ক? আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত মত হল ওলীদের কারামত সত্য। এসব কারামত হয়েছে নবীগণ কবরে জীবিত থাকার করণে এটি একটি অযৌক্তিক কথা। হায়াতুন্নবী আকিদার সাথে কারামতের ঘটনাকে ঘুলিয়ে ফেলা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় ছাড়া আর কিছু নয়। দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এক করার কোন সুযোগ নেই।

শেষ দিকে বললেন- কবরে থাকা ব্যক্তি শুনে না। কারণ আল্লাহ নবীকে বলেছেন আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন না। এ আয়াত দ্বারা আপনি বলতে চাচ্ছেন তাই মৃত শুনে না। এটিও অযৌক্তিক কথা। আমাদের আপনারা আজ নাস্তা করাতে পারেননি, তাই বলে কি আমরা নাস্তা খাইনি? আমাদের কাঁধের দুই ফেরেশতাকে আমরা কথা শুনাতে পারি না। তাই বলে কি তারা শুনে না?

আর আপনি পুরো আয়াত কেন দেখেননি? আয়াতেতো কাফেরদের সম্পর্কে এ তাশবীহ দেয়া হয়েছে। যাদের নবী শুনাতে পারেন না। এর মানে কাফেররা শুনে না? যদি না’ই শুনে তাহলে তারা কাফের হল কিভাবে? ঈমানের দাওয়াত না শুনলে কোন ব্যক্তি কাফির হতে পারে? তাহলে শুনাতে পারবেন না মর্মের বক্তব্য নির্ভর আয়াত দিয়ে কবরে থাকা ব্যক্তি শুনে না দাবি করা দলীলহীন বক্তব্য নয়কি?

আবার আসলেন শায়খ আকরামুজ্জামান সেই পুরনো বুলি নিয়ে। আবারো কারামতের ঘটনা উদ্ধৃত করে ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে চাইলেন।

তারপর আমাদের পক্ষ থেকে মাওলানা তাহমীদুল মাওলা সাহেব দাড়িয়ে বললেন- আমরা আমাদের আকাবীরদের কিতাব থেকে তাদের আকিদা পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করে দিয়েছি। সেখানে আপনি তাদের কিতাবে বর্ণিত ঘটনা উল্লেখ করে আপনার মনমত একটি আকিদা দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। আকিদা বিষয়ে পরিস্কার বক্তব্য থাকার পর কিতাবে বর্ণিত ঘটনার কারণে কারো আকিদা প্রমাণিত হলে আমি আপনাকে এরকম একই ঘটনা আমি ইবনে তাইমিয়া, শায়েখ উসাইমিন, ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ এর কিতাব থেকে দেখাতে পারবো। যা হুবহু ফাযায়েলে আমলের ঘটনার মতই। তাহলে যে ঘটনার কারণে আমাদের আকাবীরদের বাতিল আকিদা আপনি বলতে চান, ঠিক একই আকিদা আপনাদের কাছে মান্যবর ব্যক্তিদের কিতাব থেকেও আমি দেখাতে পারবো। আসলে এটি আমাদের আলোচ্য বিষয়ই নয়। শুধু ঘটনা দিয়ে কারো আকিদা প্রমাণিত হয় না। বিষয় হল নবীগণ কবরে জীবিত কি না? আপনি পরিস্কার ভাষায় আমাদের দলীল দেয়া হাদীসটি মেনে নিয়েছেন যেখানে বলা হয়েছে নবীগণ কবরে জীবিত তারা সেখানে নামায পড়েন। আর একই কথা বলেছেন শায়েখ ইবনে তাইমিয়াসহ প্রায় সকল মুহাক্কিক আলেমগণ। সেখানে কবরে জিন্দা নবীকে তালাক প্রদান এবং তাদের মহা শয়তান বলে ইবনে তাইমিয়াসহ আরো কাদেরকে আপনার শয়তান বলছেন তা খেয়াল আছে কি?

আরেকটি বিষয়- আপনি বলেছেন মৃত ব্যক্তি শুনে না। অথচ হাদীসে এসেছে নবীদের কাছে সালাম পৌছানো হয়। আর কাছে গিয়ে সালাম দিলে তারা শুনতে পান। হাদীসের রেফারেন্স ও কিতাব দেখিয়ে মাওলানা তাহমীদুল মাওলা তা উপস্থাপন করেন।

এবার আকরামুজ্জামান সাহেব সালাম দিলে শুনতে পান মর্মের হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করলেন। আর জীবিত আছে ঠিক আছে। কিন্তু তাদের জিন্দা নবী বলতে হবে একথা কোথায় আছে মর্মে প্রশ্ন ছুড়ে দেন।

কিন্তু মজার বিষয় হল তাহমীদুল মাওলা সাহেব যখন বলে দেন, আপনি যে সনদকে জাল বলছেন সেই সনদকে জাল বলছেন সেটিকে ইবনে তাইমিয়া কোন সমস্যা নেই বলেছেন। অথচ তার কাছে আমাদের দলীল দেয়া সনদটি ছিল না। আর আমরা যে সনদটির কথা বলেছি সেটিকে আল্লামা সাখাবী, ইবনে হাজার আসকালানী জায়্যিদ বলে মন্তব্য করেছেন। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি আমাদের দেয়া সনদকে কিছুতেই আপনি জঈফ বা জাল প্রমাণ করতে পারবেন না।

একথা শুনে শায়েখ মুখলেসুর রহমান সাহেব আকরামুজ্জামান সাহেবের জাল বলা হাদীসটিকে সঠিক বলে মেনে নেন।

মুরাদ বিন আমজাদ সাহেব পরিস্কার ভাষায় বলে দেন, আসলে মহা শয়তান বলে আমরা আপনাদের উদ্দেশ্য নেইনি। এর দ্বারা আসলে আমাদের বেরেলবী বিদআতিরা উদ্দেশ্য। উলামায়ে দেওবন্দ নয়। আর আমরাও ভুল করেছি। ভুল হওয়া স্বাভাবিক।

অবশেষে মাওলানা তাহমীদুল মাওলা বলেন- আমরা মুরাদ বিন আমজাদকে ধন্যবাদ জানাই তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য। আর আকরামুজ্জামান সাহেব নিজেই শর্ত দিয়েছিলেন সালাফের বুঝ অনুপাতে কুরআন ও হাদীসের দলীল দিতে হবে। তো সেই হিসেবে আমরা ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যুমের বক্তব্য নকল করেছিলাম, কিন্তু তিনি কি করে ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়্যুমকে মানেন না বলে জানালেন?

আর তিনি আরেকটি কথা বলেছেন নবী কবরে জীবিত ঠিক আছে, কিন্তু তাকে জিন্দা বলতে হবে একথা কোথায় আছে? আমরা বলি একথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে জিন্দা তাকে জিন্দা বলতে। যেমন কুরআনে এসেছে যাদের কতল করা হয়েছে তাদের তোমরা মৃত বলো না। তাদের বল তারা জীবিত। যেখানে আল্লাহ যিনি জীবিত তাকে জিন্দা বলতে বলেছেন, সেখানে জিন্দা বলা যাবে না জিন্দা বলা নাজায়েজ একথা তিনি কিভাবে বলেন?

আর কবরে  জীবিত ও নামায পড়ার বিষয়টি মানার পর জিন্দা বলা ও হায়াতুন্নবী শব্দের ক্ষেত্রে আপত্তির কোন কারণ আমরাদের বুঝে আসছে না।

এর কোন জবাব আকরামুজ্জামান প্রদান করতে পারেননি। সালাফদের কথা অনুপাতে কুরআন ও হাদীস মানার দাবি শর্তে উল্লেখ করার পরও “সালাফদের মানেন না” কি হিসেবে বললেন তা’ও তিনি পরিস্কার করতে পারেননি।

আর আমাদের আকাবীরদের কিতাবে বর্ণিত ঘটনা নিয়ে আপনাদের আপত্তির হুবহু আপত্তিকর কথা ও ঘটনা ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যুম ইবনে উসাইমিন এর গ্রন্থাবলীতে আছে। আপনারা চাইলে অন্য  কোন মজলিসে আপনাদের সাথে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি আছি।

এভাবেই শেষ হয় ৪ই মে ২০১৫ ইং ঈসাব্দের বাহাসটি। যার বিস্তারিত ভিডিও অচিরেই আপলোড হবে আহলে হক মিডিয়ার ওয়েব সাইটে ইনশাআল্লাহ।

এভাবে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আমরা আরো বসতে চাই। প্রতিটি মতভেদপূর্ণ বিষয়কে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই।

কালেক্ট_আহলে_হক_মেডিয়া


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!