Thursday, March 23, 2017

নামাযের যে সকল মাসআলায় কথিত আহলে হাদীস লা মাযহাবি ভাইদের দলিল নেই।[পর্ব-০৯]

কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, প্রচার করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।

কথিত আহলে হাদীস ওরফে লা-মাযহাবি ভাইয়েরা! কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন!

৯৫
পাকিস্তান ও ভারতে ইসলাম আগমণের ১৩ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ১২শত বছর ধরে এখানের সকল কুরআন হাদীস, খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবাদের আমলের অনুরূপ আমীন আস্তে বলে আসছে। এ ১২শত বছরের মধ্যে এখানে না কেউ আমীন আস্তে বলার বিরুদ্ধে পুস্তক লিখেছে। না কেউ এ ব্যাপারে বাহাসের চ্যালেঞ্জ করেছে।
১২শত বছর পর মুহাদ্দিস, আলেম বা সুফী কেউ নয়, বরং ফাখের ইলহাবাদী সর্বপ্রথম এ উপমহাদেশে আমীন জোরে বলা সংস্কৃতি শুরু করে।
প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ ঐতিহাসিক ইমাম খান নওশহারয়ী সাহেব লিখেন যে, “মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ফাখের ইলহাবাদী সর্বপ্রথশ দিল্লি জামে মসজিদে আমীন জোরে বলে তাকলীদের গোঁড়ামী দূরিভূত করেন। {নকুশে আবুল ওয়াফা-৩৪}
লক্ষ্য করুন! কুরআন হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের মতকে কিভাবে তাকলীদের গোঁড়ামী বলে কুরআন ও সুন্নতের সাথে বিদ্রোহ করে নিজেদের ভদ্রতার মুখোশ উন্মেচিত করছে।

কে এই মাওলানা ফাখের ?

তার ব্যাপারে মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী সাহেব লিখেনঃ
না জানে দ্বীনে হক, মাযহাবও কি তাও জানে না,
জুব্বা পরে পাগড়ি বেঁধে পরিচয় দেয় মাওলানা। [ফাতাওয়া সানাইয়্যাহ-১/১০৩}
দ্বিতীয়বার জোরে আমীন ইংরেজ সরকারের চাকরিজীবি হাফেজ ইউসুফ দিয়েছেন। {নুকুশে আবুল ওয়াফা-৪২}
এ লোক পরবর্তীতে কাদিয়ানী হয়ে যায়। ইশাআতুস সুন্নাহ এর ২১ নং খন্ডের ১১৪ নং পৃষ্ঠায় এসেছে যে, আমরতাসর এ সর্ব প্রথম হাদীসের উপর আমল শুরুকারী ডেপুটি কালেক্টর হাফেজ মুহাম্মদ ইউসুফ সাহেব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সহকারী হয়ে যায়।
এমনিভাবে ইংরেজ আমলে এ মাসআলাকে মুসলমানদের মাঝে প্রচার করা শুরু হয়।
গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে প্রশ্নঃ আপনারা ইংরেজ আমলের আগে উপমহাদেশের একটি মসজিদ দেখান যেখানে ইংরেজরা আসার আগে আমীন জোরে বলা হত।
৯৬
কুরআনে পাকের নীতি, সহীহ হাদীস, খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত এবং সাহাবাগণের আমলের বিপরীত জোরে আমীন বলার যে দুর্বল হাদীস গায়রে মুকাল্লিদগণ উপস্থাপন করে থাকেন, সে ব্যাপারে খোদ ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ ব্যাখ্যা করে বলেনঃ ما أراه إلا ليعلمنا তথা শুধুমাত্র নামায শিখানোর জন্য উঁচু আওয়াজে বলা হয়েছে। {কিতাবুল আসমায়ি ওয়াল কুনা-১/১৯৬}
আমাদের মাদরাসাগুলোতেও যখন বাচ্চাদের নামায শিখানো হয়, তখন সামনের বাচ্চাও উঁচু আওয়াজে আমীন বলে, তখন পিছনের বাচ্চাগুলোও একসাথে উঁচু আওয়াজে আমীন বলে।
আমীন জোরে বলার দুর্বল হাদীসের উপরও আমাদের আমল বিদ্যমান আছে। আমাদের কোন আয়াত বা হাদীসের বিরোধীতার ভয় নেই।
৯৭
গায়রে মুকাল্লিদ মিস্ত্রি নূর হুসাইন সাহেব লিখেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ সর্বদা আমীন জোরে বলতেন। আর অন্যদের বলতেন যে, আমীন জোরে জোরে বল। {বুখারী-১/১০৮, রেসালায়ে আমীন বিলজেহের-১৮}
এ কথাটি বুখারীর উপর একটি সরাসরি মিথ্যাচার। বুখারীতে জোরে বলার শব্দই নেই।
৯৮
হাকীম সাদেক শিয়ালকুটি একটি হাদীস লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ইহুদীরা যত আমীন [জোরে] বলার কারণে যতটুকু ক্ষিপ্ত হয়, এত ক্ষীপ্ত অন্য কোন আওয়াজে হয় না। {ইবনে মাজাহ} যদি কেউ উঁচু আওয়াজে আমীন বলে, তাহলে রাসূল সাঃ এর এ পাক সুন্নতের কারণে ক্ষীপ্ত হইয়ো না। অপছন্দও করো না। কেননা, আমীন জোরে বলার দ্বারা ইহুদীরা ক্ষীপ্ত হয় এবং অপছন্দ করে। আর আমাদের ইহুদীদের বিরোধীতা করা উচিত। {সালাতুর রাসূল-২৪২}
দেখুন! কিভাবে সারা উম্মতকে ইহুদী বানিয়ে দিল। অথচ প্রথমত হাদীসটিই সহীহ নয়। খোদ আব্দুর রউফ গায়রে মুকাল্লিদ এর টিকায় লিখেছেন যে, এ হাদীসের সনদ জঈফ। কেননা, তালহা বিন ওমর জঈফ এ ব্যাপারে সবাই একমত। {২৪১}
তারপর এ জঈফ হাদীসেও উঁচু [جهر] শব্দ একদম নেই। উঁচু শব্দ মিলানো রাসূল সাঃ এর উপর পরিস্কার মিথ্যাচার।
৯৯
গায়রে মুকাল্লিদ পুরুষ মহিলারা যখন একাকী নামায পড়ে, আর জোহর, আসর এর নামাযে যখন ইমাম এবং মুক্তাদী উঁচু আওয়াজে আমীন না বলে, তখন কি তারা ইহুদী হয়ে যায়?
১০০
যেহেতু উঁচু আওয়াজে আমীন বলার হাদীস সহীহ নয়, তাই তারা সাধারণ্যের সামনে একটি আশ্চর্য প্রকার ফর্দ প্রকাশ করে থাকে ওরা।
গায়রে মুকাল্লিদদের আজীব চালাকী
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর জোরে আমীন বলা সংক্রান্ত একটি হাদীস লিখে এ ব্যাপারে হাপেজ আব্দুল্লাহ রূপরী সাহেব লিখেন যে, এ হাদীস সুনানে দারা কুতনীতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন এর সনদ সহীহ। আর হাকেম ও বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন যে, বুখারী মুসলিম এর শর্ত এর উপর আছে এ হাদীস। আর বায়হাকীও বর্ণনা করেছেন। তিনি এটাকে হাসান বলেছেন। {আহলে হাদীস কা মাসায়েল ইমতিয়াজী-৭৯}
অথচ তিন কিতাবের কোথাও এ হাদীস নেই। মুহাদ্দিসগণের সহীহ বলাতো দূরে থাক।
১০১
মৌলবী ইউসুফ জিপুরী “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এর ১৯৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ হেদায়া ১/৩৬৫ এবং শরহে বেকায়া-৯৭ এ জোরে আমীন বলার হাদীসসমূহ বিদ্যমান।
অথচ এটি একেবারেই মিথ্যাচার। সত্য হলে হেদায়া ও শরহে বেকায়ার আরবী ইবারত প্রকাশ করুন।
১১২
রাসূল সাঃ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। {সহীহ বুখারী-১/৩৫}
হায়েজা স্ত্রীর গায়ে হেলান দিয়ে কুরআন পড়েছেন। {সহীহ বুখারী-১/৪৪} এ হাদীসে ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে।
রাসূল সাঃ হায়েজা স্ত্রীর সাথে মুবাশারাত তথা শারিরিকভাবে একান্ত স্পর্শ করতেন। {সহীহ বুখারী-১/৪৪} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে।
রাসূল সাঃ রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করতেন। হাদীসের শব্দ হল كان يقبل তথা তিনি চুম্বন করতেন। {বুখারী-১/২৫৮} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ ব্যবহৃত।
রাসূল সাঃ নামাযের পূর্বে স্ত্রীকে চুম্বন করতেন। {বুখারী-১/৪২} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ ব্যবহৃত।
এই সকল কর্ম রাসূল সাঃ থেকে ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ দিয়ে প্রমাণিত। এসব থেকে নিষেধ করা বা রহিত হওয়া সম্বলিত কোন হাদীস থাকলে পেশ করুন। নতুবা এসবের উপর সুন্নতে মুআক্কাদার মত আমল করুন। আর এসবকে পরিত্যাগকারীকে সুন্নত পরিত্যাগকারী বলে চ্যালেঞ্জবাজী করতে শুরু করে দিন।
১১৩
ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দকে মূলত একবারের কর্মের ক্ষেত্রে। শরহে নববী-১/২৫৪} মাজমাউল বিহার-৩/২৩৫, মাসকুল খিসাম-১/৫৬৭}
এর দ্বারা নস হিসেবে স্থায়িত্ব প্রমাণিত হয় না। হ্যাঁ, মুজতাহিদ তার ইজতিহাদী যোগ্যতা দিয়ে “ক্বরিনা” তথা আলামত দেখে কোথাও স্থায়িত্ব উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন। আবার কোথাও স্থায়িত্ব উদ্দেশ্য নেন না।
হানাফীদের কাছে সকল “ক্বরিনা” তথা আলামতের চেয়ে বড় “ক্বরিনা” হল খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল। অথবা খাইরুল কুরুন তথা রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিদের আমল।
যদি রাসূল সাঃ এর আমল ماضى استمرارى দিয়েও প্রমাণিত হয়, তারপর যদি এর আমল জারী হয়, তাহলে এ আমলের “ক্বরিনা” স্থায়িত্বকে বুঝায়। আর যদি উক্ত কাজের উপর আমল জারী না হয়, তাহলে এটি ছেড়ে দেয়ার উপর স্থায়িত্বের “ক্বরিনা” হিসেবে ধর্তব্য হবে। যেমন ১১২ এ বর্ণিত বলা মাসায়েলগুলি।
কিন্তু প্রাজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে হারাম বলা ব্যক্তিদের কী দশা হবে? শব্দের অর্থ তাদের যা বলছে তা ছেড়ে দেয়া তাদের জন্য নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী জায়েজ হয় না। কিন্তু নিজেদের ফাতওয়ায় নিজেরাই নাজায়েজ কাজগুলো করে বেড়ান।
১১৪
রুকুর তাকবীর একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি এবং মুক্তাদী আস্তে আস্তে বলে। আর ইমাম জোরে বলে। এ ব্যাপারে সহীহ সরীহ দেখান। এমনটি কোন সহীহ সরীহ হাদীসের ভিত্তিতে করা হয়?
১১৫
প্রথম তাকবীরের সাথে হাত উঠানোর হুকুম তাবরানীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিষেধ কোথাও নেই। ফেলী হাদীস তাওয়াতুর স্তরে বর্ণিত। যার বিপরীত কোন জঈফ হাদীসও নেই। আর উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল বিদ্যমান রয়েছে।
এ তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সারা উম্মত তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত উঠানোকে সুন্নত বলে থাকেন।
১১৬
চার রাকাত নামাযে ২২টি তাকবীর হয়। {বুখারী-১/১১০}
ওমায়ের বিন হাবীবের বর্ণনা, ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাদীস {ইবনে মাজাহ-৬২} জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ এর হাদীস {মুসনাদে আহমাদ} ইবনে ওমর রাঃ এর হাদীস {মাশকিুল আসার লিততাহাবী} আবু হুরায়রা রাঃ এর হাদীস {কিতাবুল ইলাল, দারা কুতনী}
এ পাঁচটি হাদীসে ماضى استمرارى রয়েছে। কিন্তু শিয়ারা এর উপর আমল করে আর গায়রে মুকাল্লিদরা এসব হাদীসের সাথে বিদ্রোহ করে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!