Thursday, March 23, 2017

নামাযের যে সকল মাসআলায় কথিত আহলে হাদীস লা মাযহাবি ভাইদের দলিল নেই।[পর্ব-০৮]

কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, প্রচার করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।

কথিত আহলে হাদীস ওরফে লা-মাযহাবি ভাইয়েরা! কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন!

আমীন বলা বিষয়ে পর্যালোচনা

৭৩
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা যখন একাকি নামায পড়ে, তখন সর্বদা আমীন আস্তে বলে। একটি সহীহ সরীহ হাদীস পেশ করতে বলুন যাতে একাকি নামায আদায়কারীর জন্য আমীন আস্তে বলতে বলা হয়েছে।
৭৪
কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা ইমামের পিছনে সর্বদা এগার রাকাত নামাযে আমীন আস্তে বলে থাকে। যথা জোহরের চার রাকাত ফরজে, আসরের চার রাকাত ফরজে, মাগরিবের ফরজ নামাযের শেষ রাকাতে এবং ইশার শেষ দুই রাকাতে।
এ এগার রাকাতে আস্তে পড়ার বিধান কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এতে জোরে আমীন বলা নিষেধ কোন হাদীসের ভিত্তিতে?
৭৫
যে ৬ রাকাত নামাযে ইমাম জোরে কিরাত পড়ে থাকে, [ফজরের ফরজ দুই রাকাত, মাগরিবের ফরজের প্রথম দুই রাকাত ও ইশার ফরজের প্রথম দুই রাকাত] উক্ত ছয় রাকাত যদি ইমামের পিছনে মুক্তাদী কোনক্রমে না পায়, তাহলে উক্ত ছয় রাকাত যখন একাকী পূর্ণ করে তখনও তারা জোরে আমীন বলে না? কেন? কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে এতে জোরে আমীন বলার নিষেধাজ্ঞা এসেছে? আস্তে আমীন বলার আদেশও বা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
৭৬
যে ছয় রাকাতে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে থাকে, উক্ত ছয় রাকাত নামাযে যদি কোন মুসল্লি দেরী করে শরীক হওয়ার কারণে এসে দেখে যে, ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা অর্ধেক পড়ে ফেলেছে, আর মুক্তাদী মাত্র সূরা ফাতিহার শুরুর الحمد لله رب العلمين বলেছে, এমন সময় ইমাম সাহেব وَلَا الضَّالِّينَ
বললেও মুক্তাদী সূরা ফাতিহা শেষ না করলেও আমীন জোরে বলে তারপর বাকি সূরা ফাতিহা পূর্ণ করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল পূর্ণ সূরা ফাতিহা শেষ না করে শুধু الحمد لله رب العلمين পড়ে এভাবে আমীন বলা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? দয়া করে জানাবে কি?
৭৭
রাসূল সাঃ কোন সহীহ হাদীসে এ হুকুম দিয়েছেন যে, ইমামের পিছনে ছয় রাকাতে জোরে আমীন বলবে, আর এগার রাকাতে আমীন আস্তে বলতে হবে?
৭৮
রাসূল সাঃ মুক্তাদী হয়ে সারা জীবনে কোন নামাযে জোরে আমীন বলেছেন এমন একটি সহীহ হাদীস দয়া করে পেশ করুন।
৭৯
রাসূল সাঃ এর ২৩ বছরের নবুওতী জীবনে রাসূল সাঃ এর পিছনে কোন সাহাবী অন্তত এক রাকাতেও জোরে আমীন বলেছেন এমন কোন সহীহ সরীহ হাদীস আছে?
সাহাবীগণ আমীন জোরে বলার কারণে মসজিদে গুঞ্জন উঠে যেত মর্মে সুনানে ইবনে মাজাহ এর যে হাদীস উপস্থাপন করা হয়, সেটা দুর্বল হাদীস। এ কারণেই সালাতুর রাসূল কিতাবের টিকায় গায়রে মুকাল্লিদ আলেম আব্দুর রউফ সাহেব লিখেন যে, “এর সনদ দুর্বল”। কারণ এতে বিশর বিন রাফে জঈফ। আর আব্দুল্লাহ মাজহুল। {সালাতুর রাসূল-২৩৯} এছাড়া ইবনে হিব্বান রঃ উক্ত হাদীসকে মওজু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম আলবানী রহঃ ও এটাকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫৩}
তাহলে এ হাদীস দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসওয়ালা ভাইরা দলিল দেন কি করে?
৮০
এ হাদীস দুর্বল ইবনে হিব্বান রহঃ এর মতে মওজু হওয়া সত্বেও এটি কুরআনে কারীমের আয়াতেরও বিপরীত। কেননা কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে যে, নবীজী সাঃ এর আওয়াজের উপর কারো আওয়াজ উচু হওয়া জায়েজ নয়। এমন করলে সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। {সূরা হুজুরাত-২}
অথচ এ হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ এর কেরাত কেবল প্রথম কাতারে থাকা সাহাবাগণই শুনতো, আর মুক্তাদী সাহাবাগণের আওয়াজ রাসূল সাঃ এর আওয়াজের তুলনায় এতটাই উঁচু ছিল যে, পুরো মসজিদে গুঞ্জরিত হয়ে যেত। তাহলেতো নবীজী সাঃ এর আওয়াজের উপর সাহাবাগণের আওয়াজ উঁচু হওয়ায় কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সাহাবাগণের নামায বাতিল সাব্যস্ত হয়। [নাউজুবিল্লাহ]
৮১
জঈফ ও কুরআনের খেলাফ হওয়ার সাথে এটি সাহাবাগণ ও তাবেয়ীগণের ইজমার ও বিপরীত। কেননা, এই হাদীসেই হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর ফরমান ترك الناس التأمين তথা “লোকেরা আমীন [জোরে] বলাকে ছেড়ে দিয়েছেন”।
আর একথাতো স্পষ্ট যে, সে জমানায় লোক বলতে সাহাবা তাবেয়ীগণকেই বুঝানো হয়েছে।
৮২
জঈফ, খেলাফে কুরআন, ইজমার খিলাফ হওয়ার সাথে সাথে এটি আমলের খেলাফ। কেননা প্রতিধ্বনি উঠার বিষয়তো বিল্ডিংয়ে সৃষ্টি হয়। আর নবীজী সাঃ এর জমানায়তো মসজিদ ছিল কাঁচা ইটের। খেজুরের ডালও পাতা দিয়ে মসজিদ বানানো হতো। এতোতো প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতেই পারে না।
দেখুন গায়রে মুকাল্লিদরা কিভাবে কুরআনের খেলাফ, হাদীসের খেলাফ, ইজমার খেলাফ, যুক্তির খেলাফ দুর্বল বর্ণনা নিয়ে দেশব্যাপী ফিতনা বিস্তার করে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এদের হাত থেকে জাতিকে হিফাযত করুন।
৮৩
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম সাহেব ১১ রাকাতে আস্তে আমীন বলে থাকে। এ কর্ম কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিকে করা হয়?
৮৪
তাদের ইমাম নামাযের ছয় রাকাতে আমীন আস্তে বলে। একথা কোন সহীহ সরীহ হাদীসে স্পষ্টাক্ষরে উল্লেখ আছে?
৮৫
সুবিশাল হাদীস ভান্ডারে খুলাফায়ে রাশেদীনের ব্যাপারে একটি বর্ণনাও এমন নেই যে, যাতে প্রমাণিত যে, খলীফায়ে রাশেদীনরা ইমাম বা মুক্তাদী হয়ে আমীন জোরে জোরে বলেছেন। আছে?
৮৬
একটি হাদীসও নেই যাতে একথা আছে যে, খুলাফায়ে রাশেদীনদের জামানায় কোন একজন মুসল্লিও একদিনের কোন নামাযের কোন রাকাতে আমীন জোরে জোরে বলেছেন।
৮৭
আবু ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর যে হাদীস আবু দাউদ থেকে পেশ করা হয় উক্ত হাদীস একেতো সহীহ নয়। কারণ এর সনদে থাকা সুফিয়ান মুদাল্লিস। আলী বিন সালেহ শিয়া, মুহাম্মদ বিন কাসীর জয়ীফ। এছাড়া এ হাদীসে সর্বদা আমীন জোরে বলার কোন কথা নেই।
৮৮
আর উম্মুল হুসাইন এর হাদীসের মাঝে নজর বিন শুমাইল মুতাআসসিব, হারুনুল আওয়ার শিয়া, ইসমাইল বিন মুসলিম মক্কী জঈফ, আবু ইসহাক মুখতালাত, ইবনে উম্মুল হুসাইন মাজহুল।
এরকম হাদীস গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে গ্রহণীয়?
৮৯
কুরআনে পাকের সূরায়ে ইউনুসে হযরত ঈসা আঃ এর দুআর পর আল্লাহ তাআলার ফরমান হল- قد اجيبت دعوتكما তথা তোমাদের উভয়ের দুআ কবুল করে নেয়া হয়েছে।
সমস্ত মুফাসসিরীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, মুসা আঃ এর সাথে হারুন আঃ ছিলেন। তিনি দুআ করছিলেন শুধু আমীন আমীন বলে। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে হারুন আঃ এর উক্ত আমীন বলাকে দুআ বলে সম্বোধন করেছেন। আর সহীহ বুখারীর প্রথম খন্ডের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় এসেছে যে, وقال عطاء آمين الدعاء তথা আতা বলেছেন যে, আমীন হল দুআ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আমীন যে দুআ তা অস্বিকার করে আল্লাহর বাণী, মুফাসসিরীনদের ইজমা অমান্য করে।
৯০
দুআর নিয়ম কুরআনে এসেছে যে, ادعوا ربكم تضرعا وخفية তথা তোমরা তোমাদের রবের কাছে দুআ কর বিনয়ের সাথে ও আস্তে আওয়াজে। {সূরা আরাফ- ৭}
إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاءً خَفِيًّا [যাকারিয়া আঃ] স্বীয় রবের কাছে দুআ চান আস্তে আস্তে। {সূরা মরিয়ম-৩}
হাদীসে দুআর মূলনীতি হল যে, আস্তে আওয়াজে দুআ করা উঁচু আওয়াজে ৭০বার দুআ করার সমান। [اخرجه ابو الشيخ عن انس مرفوعا بسند صحيح ] {ফাতহুল কাদীর}
সুতরাং একথা প্রমাণিত যে, আমীন হল দুআ। আর দুআর মাঝে আসল হল আস্তে আস্তে বলা। এ কারণে ইমাম হোক বা একাকী নামায আদায়কারী হোক কিংবা মুক্তাদী হোক আমীন আস্তে বলাই উচিত।
৯১
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে আমাদের চাওয়া হল, তারা কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে একথা প্রমাণ করে দিন যে, আমীন দুআ নয়। আর একথাও প্রমাণ দিন যে, দুআর মাঝে আস্তে নয় জোরে বলা উত্তম।
৯২
হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর বর্ণনা হল- রাসূল সাঃ ولا الضالين বলার পর আমীন আস্তে বলেছেন। [দ্রষ্টব্য- মুসনাদে আহমদ-৪/৩১৬, হাদীস নং-১৮৮৪৩, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪৮, মুস্তাদরাকে হাকেম-২/২৩২}
قال الحاكم على شرطها واقره الذهبى
৯৩
হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ও আস্তে আস্তে আমীন বলতেন। {তাহাবী, তাবারানী}
৯৪
যুক্তিও এটা বলে যে, আমীন কুরআনে নেই। এজন্য যে, কুরআন উঁচু আওয়াজে পড়া হবে, আর আমীন আস্তে আওয়াজে পড়া হবে, যেন কারো এ ব্যাপারে সন্দেহ না হয় যে, আমীন কুরআনের অন্তর্ভূক্ত। (চলবে ইনশাআল্লাহ)


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!