Saturday, May 27, 2017

আমাদের সমাজের আজ কেন এই অধঃপতন?

একটু সময় নিয়ে পুরোটা লিখা পড়ুন।
আর নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করুন,
আমরা কি আমাদের হক্ব আদায় করতেছি?
আমাদের সমাজের আজ কেন এই অধঃপতন? 

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে শুরু করে সংশয়বাদী এমনকি আজকের এই আধুনিক যুগের মানুষের ধারণা,
আমাদের রাসূল (সাঃ) এর জীবনটাও তাদের দেখা আজগুবি হলিউড মুভির মত কিছু একটা!!!

সেখানে গল্পের চরিত্রের মত প্রিয় নবী (সাঃ) এর জীবনটাকেও তারা ফ্যান্টাসি মনে করে।
কিন্তু বাস্তবতা আমাদের এই হলিউড মুভির মত ফ্যান্টাসিতে ভরা ছিলনা।

আমাদের রাসূল (সাঃ) একজন মানুষই ছিলেন।
তিনি কোন যাদুকর ছিলেননা।
সব সময় জায়নামাজে উড়ে বেড়াতেননা।
তিনি শুধু অলৌকিকতা দেখিয়ে বেড়াতেননা।
তিনি একজন মানুষই ছিলেন।

কেমন মানুষ ছিলেন তিনি?

তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
যার জন্মের আগেই পিতাকে হারিয়েছেন!
৬বছর বয়সে মাতাকে হারিয়েছেন!
যাকে আল্লাহ তা'আলা আগে পরের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়ার পরেও দিনে শতবার তওবা করতেন!
যিনি মাঝরাতে তাঁহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়াতেন!
এই দাঁড়ানো এতই দীর্ঘ হতে যে,
তার পাঁ ফুলে যেত।
তখন উনার স্ত্রী উনাকে জিজ্ঞেস করতেন,
আপনার এত কষ্ট করার কি প্রয়োজন?আপনার তো আগে-পরের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে!!!

তিনি বিনয়ের সাথে উত্তর দিতেন,
আমি কি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হবোনা?

তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
যিনি সন্তানের মৃত্যুতে কেঁদেছেন!
স্ত্রীদের সাথে অভিমান করে ঘরছাড়া হয়েছেন!
যিনি নিজের ছেড়া জামা নিজেই সেলাই করেছেন!
তিনি যুদ্ধ করেছেন!
যুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া সাহাবীদের লাশ মাথায় নিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন!
তিনি নিজের হাতে তাদের কবরস্থ করেছেন!
কিশোরী স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন!
প্রিয়তম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যুতে ব্যাথিত হয়েছেন!
মাঝরাতে তার কবরের পাশে গিয়ে ধুকরে কেঁদেছেন!

তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ!

তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
দিনের পর দিন যার চুলায় আগুন জলতোনা!
খেজুর আর পানি খেয়েই মাসের পর মাস চলে যেতো!
ক্ষুদার জালায় সাহাবীরা এসে পেটের পাথর দেখালে তিনি জামা তুলে দেখাতেন তার নিজের পেটে এরচেয়ে বেশি পাথর বাঁধা!
যিনি এক তরকারির বেশি দিয়ে আহার করেননি!
যার ঘর ছিল মাটির!
বালিশ ছিল খেজুরের ছোবলা!

আল্লাহর কসম!

তিনিই আমাদের রাসুল (সাঃ),
যিনি বদরের যুদ্ধে সামান্য কিছু আল্লাহর বান্দা নিয়ে জিহাদে গিয়েছেন!
তায়েফের মাঠে প্রস্তরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়েও বলেছিলেন,
হে আল্লাহ্‌, তারা অবুঝ!
তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও!

তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
যিনি নিজের পিতামাতার জন্য দোয়া করার অনুমতি পাননি!
যিনি অফাতের সময় অবচেতন অবস্থায় বারবার আওড়িয়ে যাচ্ছিলেন,
উম্মতি, উম্মতি বলে!

সাহাবীদের সাথে চলতে গিয়ে হঠাত তিনি কেঁদে উঠলেন,
সাহাবীরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
আমি আমার ভাইদের জন্য কাঁদতেছি!
সাহাবীরা বললেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নই?
তিনি বললেন,
তোমরা তো আমার সাথী,
আমার ভাই তারা যারা আমার পরে আসবে, আর আমাকে না দেখেই আমার উপর ঈমান আনবে!

হ্যাঁ, তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
যিনি আমার আপনার জন্মের আগেই আমাদের জন্য চোঁখের জল ফেলে গেছেন!

তিনিই আমাদের রাসূল (সাঃ),
যার আত্মীয়-সজনরাই তাকে হত্যার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল!
যিনি আল্লাহর দ্বীনের জন্য ঘরবাড়ি,আত্মীয়-সজন ত্যাগ করে দেশছাড়া হয়েছেন!
যিনি সজাতির হাত থেকে বাচতে পাহাড়ে পাহাড়ে,গোহায় গোহায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন!
মুশরিকরা যখন একের পর এক ক্ষমতা,সম্পদ,নারীর লোভ দেখাচ্ছিল,
তখন তিনি তাদের বলেছিলেন,
আমার একহাতে চন্দ্র,আরেক হাতে সুর্য এনে দিলেও আমি সত্য প্রচার থেকে বিরত হবোনা!
হয় এই পথেই বিজয় লাভ করবো, নাহয় এই পথেই শাহাদত বরণ করবো!

হ্যাঁ,তিনিই তো আমাদের রাসূল (সাঃ),
যার জন্য সাহাবীরা আপন পিতা-ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন!
যুদ্ধলব্ধ গরিমা না পেয়ে মন খারাপ করা আনসারদের যখন তিনি বললেন,
এটাই কি তোমাদের জন্য বেশি নয় যে,
তারা দুনিয়া পেল, আর তোমরা তোমাদের রাসূলকে পেলে?
তখন চারিদিকে কাঁন্নার রোল পড়ে গিয়েছিল!

তিনিই তো আমাদের রাসূল (সাঃ),
যিনি অমুসলিমদের কাছেও আস্থার প্রতিক ছিলেন,
অমুসলিমরা তার কাছে বিচার চাইতে আসতো!
তারা জানতো, মুহাম্মদ আর যাই কিছু হোক অবিচার করবেনা!
যিনি হাশরের মাঠে আমাদের জন্য শাফায়ত করবেন!
আমাদেরকে হাউজে কাউছারের পানি পান করাবেন!
তিনি আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

কিন্তু সে প্রিয় নবীর সাথে কি আমরা ইনসাফ করতে পেরেছি?

কি তার প্রতি আমাদের হক্ব আদায় করতে পেরেছি?

আজ আমরা,আমাদের সন্তানরা কাদের দেখে বড় হচ্ছে?

কাদেরকে তার জীবনের রোলমডেল বানাচ্ছে?

কোথায় আজ প্রিয় নবীর সুন্নত?
আর কোথায় নবীর আদর্শ?

আমাদের প্রজন্ম আজ আচার-আচরণে,পোশাকে,আদর্শে কাদের অনুসরণ করছে?

তারা অনুসরণ করছে খেলোয়াড়,অভিনেতা গায়কদের মত জাহেলিয়াতের পথে আহ্বানকারীদের!!

আমাদের প্রজন্ম আজ গ্যাংস্টার হতে চায়!
একে অপরকে কুপিয়ে মারে!
তারা আজ নিজের জীবনকে উপভোগ করতে চায় নিজের পিতামাতাকে নিজের হাতেই হত্যা করে!!!

কিন্তু কেন তারা রাসূল (সাঃ) কে অনুসরণ করতে চায়না?

কেন প্রিয়নবীকে তার জীবনের আদর্শ বানাতে চায়না?

কারণ,
আমরা আমরা আমাদের প্রজন্মের কাছে সেই মহান ব্যাক্তিটির জীবনী তুলে ধরতে পারিনি!

রক্ত,ঘাম আর অশ্রুময় সে জীবনটা পড়ে আছে আজ অযত্নে অবহেলায়!!!

তাই আসুন,
রাসূলের আদর্শকে ছড়িয়ে দেই সবার মাঝে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে,,,,,

আসুন, প্রিয় নবীর প্রতি আমাদের হক্ব আদায় করি।

আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বুঝার এবং সত্য প্রচার করার তাওফিক দান করুন।আমীন।


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!