Saturday, December 3, 2016

নবীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করা মুসলমানদের নয় খৃষ্টানদের আক্বিদা

হাজির নাজির মানে কি?

হাজির ও নাজির উভয় শব্দই আরবী। হাজির অর্থ হল উপস্থিত। আর নাজির অর্থ হল দ্রষ্টা। তথা যিনি দেখেন।

আল্লাহ তাআলা কি হাজির নাজির না রাসূল সাঃ?

রেজাখানী মতাদর্শী বেদআতি গ্র“পের আক্বীদা হল আল্লাহ তাআলা হাজির নন।

পাকিস্তানের রেজাখানী বেরেলবী গ্রুপের আলেম আহমাদ ইয়ারখান গুজরাটী তার রচিত জাআল হক্ব গ্রন্থে লিখেন-“প্রতি স্থানে হাজির হওয়া এটা আল্লাহ তাআলার সিফাত কখনোই নয়। আল্লাহ তাআলা স্থান থেকে পবিত্র। {জাআল হক্ব ওয়া যাহাক্বাল বাতিল-১৬১}

আহমাদ ইয়ারখান সাহেব এর পর লিখেন-“আল্লাহ তাআলা প্রতিটি স্থানে বিদ্যমান মানাটা বদ্বিনী। প্রতি স্থানে বিদ্যমান হওয়াটা এটা রাসূল সাঃ এরই শান। {জাআল হাক্ব ওয়াযহাক্বাল বাতিল-১৬২}

সহীহ আক্বিদা

আল্লাহ তাআলা সর্বত্র বিরাজমান তথা হাজির। কিন্তু কিভাবে হাজির তা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বত্র হাজির থাকার উপর কুরআনে কারীমে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যেমন-

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ [٢:١٨٦]

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। {সূরা বাকারা-১৮৬}

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ [٥٠:١٦

আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। {সূরা কাফ-১৬}

فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لا تُبْصِرُونَ (85

অতঃপর যখন কারও প্রাণ কন্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক, তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না। (সূরা ওয়াকিয়া-৮৭, ৮৪, ৮৫)

وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٢:١١٥]

পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা-১১৫}

قوله تعالى  { وَهُوَ مَعَكُمْ  أَيْنَمَا كُنتُمْ } [ الحديد : 4

তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন {সূরা হাদীদ-৪}

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَىٰ ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَىٰ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [٥٨:٧]

আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মুজাদালা-৭)

উদাহরণত কিছু আয়াত উপস্থাপন করা হল। এরকম আরো অনেক আয়াতে সরাসরি প্রমাণ করে যে,আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু বিরাজমানতার অবস্থা কি? এটা আমাদের জানা নেই। এটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।

সুতরাং বুঝা গেল সর্বত্র বিরাজমানতা তথা হাজির থাকাটা এটা আল্লাহর সিফাত। এ সিফাত অন্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত করা সুষ্পষ্ট শিরকী আক্বিদা।

নবী হাজির নাজির হওয়া মুসলমানদের নয় খৃষ্টানদের আক্বিদা

খৃষ্টানদের আক্বিদা হল হযরত ঈসা আঃ সর্বত্র বিরাজমান, তথা হাজির নাজির। যেমনটি লিখেছেন খৃষ্টান পাদ্রী ইমাদুদ্দীন তার রচিত “তাফতীশুল আওলীয়ায়। তিনি লিখেন- ঈসা আঃ প্রত্যেক স্থানে হাজির ও নাজির। {তাফতীশুল আওলিয়া-১০৮}

খৃষ্টানদের আক্বিদা হল যে মজলিস ঈসা আঃ এর নামে করা হয়, সেখানে ঈসা আঃ উপস্থিত হন।

ঈসা আঃ বলেন-“কেননা যেখানে দুই অথবা তিনজন আমার নামে একত্র হয়, সেখানে আমি তাদের মাঝে উপস্থিত হই”। {ইঞ্জিল, মথি, অধ্যায় ১৮, পরিচ্ছেদ-২০}

কোন সৃষ্টিকে সর্বত্র হাজির নাজির বিশ্বাস করা এটা খৃষ্টানদের আক্বিদা মুসলমানদের আক্বিদা নয়।

শরীয়তের দৃষ্টিতে সর্বত্র হাজির নাজির হওয়া এবং সর্বত্র বিদ্যমান হওয়া এটা শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথেই খাস। সৃষ্টিজীবের মাঝে এ সিফাত কখনোই নেই।

একটি উদ্ভট যুক্তি ও তার খন্ডন

মাওলানা আহমাদ ইয়ারখান রেজাখানী বেরেলবী বলেন-“হাজীর হওয়া আল্লাহ তাআলার সিফাত নয়। কারণ হাজির অর্থ হল যিনি আগে ছিলেন না, এখন এসেছেন, আর এমন বিশ্বাস আল্লাহ তাআলা ক্ষেত্রে বলা কিছুতেই জায়েজ নয়, আর নাজির হল দ্রষ্টা। আল্লাহ তাআলারতো কোন চোখই নাই, তাই তিনি আমাদের মত দেখবেন কিভাবে? তাছাড়া হাজির নাজির যদি আল্লাহর সিফাতই হইতো, তাহলে আল্লাহর নিরান্নবই নামের মাঝে এ সিফাতের কথা থাকতো। অথচ তা নেই। সুতরাং বুঝা গেল যে, এটা আল্লাহ তাআলার সিফাত নয়। বরং এটি মাখলুকের সিফাত। তাই এ সিফাতের অধিকারী হলেন রাসূল সাঃ ও বুজুর্গানে দ্বীন। {দ্রষ্টব্য-জাআল হক্ব ওয়া জাহাক্বাল বাতিল-১৫৩}

প্রথম জবাব

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তাআলা কোন স্থানের মুখাপেক্ষি নন, সেই সাথে আল্লাহ তাআলার প্রসিদ্ধ নাম হল ৯৯টি।

কিন্তু কথা হল এ ৯৯ নাম ছাড়া আল্লাহ তাআলার কি আর কোন নাম নেই? একটু চোখ খুলে দেখুন-

১-

আল্লামা নববী রহঃ শরহে মুসলিমের ২ নং খন্ডের ৩২২ নং পৃষ্ঠায়, আল্লামা খাজেন রাহঃ তাফসীরে খাজেনের ২ নং খন্ডের ২৬৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেন যে, “সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ তাআলা সকল নাম কেবল এ ৯৯টিই নয়, বরং এছাড়াও আছে।

২-

(একথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম নববী রহঃ লিখেন) ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী রহঃ আল্লাহ তাআলা এক হাজার নাম একত্র করেছেন। এর পর তিনি স্পষ্টই লিখেছেন যে, وهذا قليلতথা “এটাও অনেক অল্প”।

৩-

ইমাম রাজী রহঃ লিখেন যে, ওলামায়ে কেরামের নিকট আল্লাহ তাআলার এক হাজার নাম প্রসিদ্ধ ও পরিচিত। যা কিতাবুল্লাহ ও হাদীসে পাওয়া যায়। {তাফসীরে কাবীর, মুকাদ্দামা-১/৩}

৪-

হাফেজ ইবনে কাসীর রহঃ বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলার ৫ হাজার নাম আছে। যা কুরআনে কারীম, সহীহ হাদীস ও পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে বলা হয়েছে। {তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/১৯}

যখন সকল ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর সিফাতী নাম শুধু এ নিরান্নব্বই নামে সীমাবদ্ধ নয়, সেখানে ৯৯ নামে হাজির নাজির সিফাতী নাম না থাকাতে তা বাতিল বলাটা কতটা আহমকীর পরিচয় একটু ভেবে দেখবেন কি?

দ্বিতীয় জবাব

যদি আপনাদের কথা দু’মিনিটের জন্য মেনেও নেই যে,আল্লাহর সিফাতী নাম এ ৯৯ নামে সীমাবদ্ধ। তাহলে আপনাদের কাছে প্রশ্ন যে, আল্লাহর নামসমূহকে কি সহজতার জন্য অন্য ভাষায় অনুবাদ করে বলা  জায়েজ আছে? যদি বলেন জায়েজ নেই। তাহলে প্রশ্ন হল যে, আল্লাহ এর অনুবাদ তাহলে খোদা বলা কিভাবে জায়েজ? এটাতো ৯৯ নামের অন্তর্ভূক্ত নয়। অথচ এ অনুবাদ বেরেলবী গ্র“প অহর্নিশি করে বেড়ায়।

যদি বলা হয় যে, আরবীতে ইয়া রব, ইয়া মালিক এর অনুবাদ ফার্সিতে করা হয় খোদা বলে। তাতে কোন সমস্যাতো নেই।

তাইতো আমরা বলি যে, এটা যেমন, তেমনি এখানে দেখে নিতে পারেন যে, ৯৯ নামের মাঝে কোন নামের অনুবাদ হাজির নাজির হয় কি না?

চোখ খুলে মেশকাত শরীফের ১ নং খন্ডের ১৯৯ নং পৃষ্ঠায় দেখুন ইবারতের নিচে শহীদ অর্থ লিখা হয়েছে হাজির। আর প্রসিদ্ধ ডিকশনারী “সাররাহ”এ লিখা হয়েছে যে, শহীদ মানে হাজির ও স্বাক্ষ্য।

এমনিভাবে “বাসীর”এর অর্থ লিখা হয়েছে যে, দ্রষ্টা,তথা নাজির। দেখুন-“সাররাহ”-১৬০।

এখন বলুন! আল্লাহ শহীদ ও বসীর নয় কি? আর শহীদের অনুবাদ হাজির, আর বাসীরের অনুবাদ নাজির জায়েজ আছে কি নেই?

এবার তাহলে বেরেলবী রেজাখানী গ্র“পের ব্যক্তিরা হাদীস ব্যাখ্যাতা ও অভিধানবীদদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে নামতে পারেন কেন তারা শহীদের অনুবাদ হাজির করলেন? কারণ হাজিরতো আপনাদের পরিভাষা অনুযায়ী কেবল ঐ ব্যক্তিই হতে পারে, যিনি প্রথমে ছিলেন না, তারপর এসে গেলেন।

সুতরাং বুঝা গেল যে, তাদের এ যুক্তিটি একটি অজ্ঞতাসূচক খোড়া যুক্তি।

তৃতীয় জবাব

রেজাখানী বেদআতিতের যুক্তি হল যে, নাজির তথা দ্রষ্টা হওয়ার জন্য শারিরিক চোখ থাকা আবশ্যক। আর আল্লাহ তাআলা যেহেতু শারিরিক চোখ থেকে মুক্ত, তাই আল্লাহ তাআলা নাজির নন।

এ সকল হযরাতদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ হল নিম্নোক্ত আয়াতের মানে কি? আমাদের আমাদের একটু কষ্ট করে বুঝিয়ে দিন। যেমন-

১-

কুরআনে কারীমে হযরত মুসা আঃ এর ঘটনা যাতে হযরত মুসা আঃ তার জাতিকে নিম্নোক্ত শব্দে নসিহত করেন-

قَالُوا أُوذِينَا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَنْ يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ [٧:١٢٩

তারা বলল, আমাদের কষ্ট ছিল তোমার আসার পূর্বে এবং তোমার আসার পরে। তিনি বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার শীঘ্রই তোমাদের শক্রদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর। {সূরা আরাফ-১২৯}

রেজাখানীদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা যে, যদি দেখার জন্য শারিরিক চোখ লাগে, তাহলে আয়াতে فَيَنْظُرَতথা তিনি ”দেখবেন”কথাটার মানে কি? আমাদের মত শারিরিক চোখ নেই বলে আল্লাহ তাআলা কি দেখেন না? তিনি কি দ্রষ্টা নয়?

২-

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অন্যত্র ইরশাদ করেন-

ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِنْ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ [١٠:١٤

অতঃপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর। {সূরা ইউনুস-১৪}

এ আয়াতেও নজর শব্দ বিদ্যমান। এর মানে কি একটু বলবেন কি?

৩-

عن أبي سعيد الخدري قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إن الدنيا حلوة خضرة و إن الله مستخلفكم فيها فناظر كيف تعلمون فاتقوا الدنيا و اتقوا النساء

অনুবাদ- হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনযে, নিশ্চয় দুনিয়া হল মিষ্টান্ন আর সবুজ শ্যামলিমা। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের এতে খলীফা বানাবেন, তারপর দেখবেন তোমরা কি কাজ কর? তাই দুনিয়া থেকে দুরে থাক, আর মহিলা থেকে (চক্রান্ত থেকে) বেঁচে থাক। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-১০৩০১}

এ হাদীসে সুষ্পষ্ট নাজির শব্দ এসেছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শানে। এ নাজির মানে কি? একটু বলবেন কি?

৪-

হযরত ইয়াজ বিন হিমার রাঃ থেকে বর্ণিত। এক দীর্ঘ হাদীসের একাংশে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-

وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلاَّ بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ

অনুবাদ- নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ভূমিবাসীদের দিকে নজর দিয়ে দেখে সকল আরব আজমের লোকদের উপর অসন্তুষ্ট হলেন। তবে আহলে কিতাবীদের মধ্য থেকে কতিপয় লোক আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি থেকে বেঁেচ যায়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭৩৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৪৮৪, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-১০৭৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২০০৮৮}

এ হাদীসে নজর দিয়ে দেখে মানে কি?

৫-

অন্য হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের বাহ্যিক সুরত দেখেন না, (তথা কে কালো, কে সুন্দর) এবং তোমাদের সম্পদ দেখেন না। বরং তিনি তোমাদের মন ও আমলের অবস্থা দেখেন। {সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৬৭০৮, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৯৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৮২৭}

এ দুটি হাদীসে স্পষ্ট নজর শব্দ এসেছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শানে। আগের বর্ণিত শুয়াবুল ঈমানের হাদীসেতো সরাসরি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে নাজির বলা হয়েছে।

সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর “নাজির”হওয়াকে অস্বিকার করাতো সরাসরি কুরআন হাদীস অস্বিকার করা। রেজাখানী গ্র“প যদি একথার ইলান করে দেন যে, তারা কুরআন ও হাদীস মানেন না, শুধু রেজাখানী ধর্মগুরুর কথাই মানেন,তাহলেতো আর কোন কথাই নেই। কিন্তু কুরআন হাদীস মানেন বলে প্রচার করেও এসব আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য সাব্যস্ত করা নাজির আক্বিদা অস্বিকার করেন কেন?

দৃষ্টি আকর্ষণ

একটি কথা ষ্পষ্ট করে জেনে রাখা দরকার যে, আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাজির, কিন্তু তাঁর আমাদের মত শরীর নেই। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার স্বীয় শান অনুযায়ী হাজির সর্বত্র। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নাজির,তথা সর্বদ্রষ্টা। কিভাবে সবকিছু দেখেন। সেটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই ভাল জানেন। এটাও তার শান অনুযায়ী প্রযোজ্য। এটার আর কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাওয়াটা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এসব বিষয়ে যত বিতর্ক এড়িয়ে চলা যায়, ততই মঙ্গলজনক।

কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার চিত্র

উল্লেখিত কুরআন ও হাদীসের দলীল দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাজির ও নাজির। তবু রেজাখানী বেরেলবী বেদআতি আলেম মাওলানা সৈয়দ আহমাদ সাঈদ কাজেমী আমরূহী মুলতানী কী বলেন দেখুন-

“আল্লাহ তাআলার আসমায়ে হুসনার মাঝে হাজির নাজির কোন নাম নেই। আর কুরআন ও হাদীসে কোথাও হাজির নাজির শব্দ আল্লাহ তাআলার জন্য ব্যবহৃত হয়নি। সালাফে সালেহীনের কেউ আল্লাহর শানে এ শব্দ বলেন নি। কোন ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত একথা প্রমাণ করতে পারবে না যে, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ অথবা তাবেয়ীগণ অথবা আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনগণ আল্লাহর শানে হাজির নাজির শব্দ ব্যবহার করেছেন। {তাসকীনুল খাওয়াতীর-৩}

কাজেমী সাহেব স্বীয় দিলের উপর হাত রেখে (যদি দিল বলে কিছু থাকে) বলুন- উপরে বর্ণিত শুয়াবুল ঈমানে ১০৩০১ নং হাদীসে আল্লাহর শানে বলা ”নাজির”শব্দটি কি আপনার গোচরিভূত হয়নি? কি এটা হাদীস নয়।

আবু সাঈদ খুদরী রাঃ সাহাবী নয়, যিনি আল্লাহর শানে নাজির শব্দসহ হাদীস বর্ণনা করছেন?

আবু নাজরাহ রহঃ কি তাবেয়ী নয়, যিনি এ হাদীস বর্ণনা করেছেন?

তাহলে কাজেমী সাহেবের কাছে আমাদের প্রশ্ন হল-এরকম ভুল দাবি সাহাবী ও তাবেয়ী কি করে করলেন? না জেনে না বুঝে? (নাউজুবিল্লাহ)

কাজেমী সাহেবের আরো আগ্রাসী মন্তব্য

“এমনিভাবে মুতাআখখিরীনর জামানায় যখন কিছু লোক আল্লাহ তাআলাকে হাজির নাজির বলতে শুরু করা হল, তখনকার ওলামারা এটাকে বাঁধা দেন। এমন কি কিছু ওলামাগণতো এভাবে বলাকে কুফরী মন্তব্য করেছেন”। {তাসকীনুল খাওয়াতের}

কাজেমী সাহেব অতি চাতুরতার সাথে কোন জমানায় এমন ঘটনা ঘটেছিল, আর কোন আলেমরা এমন ফাতওয়া দিয়েছিলেন, কিংবা কোন কিতাবে এমন উদ্ভট কথা আছে তার কোন কিছুই উল্লেখ না করে একটি হাস্যকর মন্তব্য করে দিলেন। আসলে মনে হয় তিনি এমনটি স্বপ্নে পেয়েছিলেন!

যাইহোক! কথা হচ্ছে, রেজাখানী বেরেলবী বেদআতি গ্র“পকে যদি বলা হয় যে, আপনারা রাসূল সাঃ কে কেন হাজির নাজির বিশ্বাস করেন, অথচ আল্লাহ হলেন হাজির নাজির। তখন তাদের জবাব হল যেহেতু ৯৯ নামের মাঝে হাজির নাজির শব্দ নেই, আর দেখার জন্য শারিরিক চোখ লাগে আর আল্লাহ এসব থেকে পবিত্র তাই, আল্লাহ তাআলা দেখেন না।

পাঠকদের কাছেই বিচার রইল এমন যুক্তি ও উদ্ভটতার।

চতুর্থ জবাব

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ [٧:٧

অনুবাদ-অতঃপর স্বজ্ঞানে তাদের কাছে অবস্থা বর্ণনা করব। বস্তুত আমি অনুপস্থিত তো ছিলাম না। {সূরা আরাফ-৭}

এক হাদীসে এসেছে যে, সাহাবাগণ একবার জোরে জোরে জিকির করতেছিলেন। তখর রাসূল সাঃ তাদের জোরে জোরে জিকির করতে নিষেধ করে বলেন-

فإنكم لا تدعون أصم ولا غائبا إنه معكم إنه سميع قريب

অনুবাদ-নিশ্চয় তোমরা বধীর বা গায়েব তথা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। নিশ্চয় তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। নিশ্চয় তিনি শুনেন, তিনি তোমাদের নিকটে। (তারপরও জোরে আওয়াজে কেন জিকির করছো?) {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৮৩০, ৩৯৬৮, ৬০২১, ৬০৪৬, ৬২৩৬, ৬৯৫২}

আরেকটি যুক্তি ও তার খন্ডন

নবীজী সাঃ কে গায়ের জোরে হাজির নাজির বানানোর পায়তারাকারীদের আরেকটি হাস্যকর যুক্তি হল- হযরত আজরাঈল আঃ যদি একসাথে অনেক মানুষের জানকবচ করতে পারেন, তাহলে রাসূল সাঃ কেন এক সাথে সর্বত্র উপস্থিত হতে পারবেন না?

উত্তর-১

হযরত আজরাঈল আঃ কি একা একা জান কবচ করেন? না তার সাথে আরো ফেরেস্তা থাকেন? নিশ্চয় আরো অনেক ফেরেস্তা থাকেন। তাহলে একা রাসূল সাঃ সর্বত্র হাজির হওয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে হাজার হাজার সাথি বেষ্টিত আজরাঈল আঃ এর উদাহরণ দেয়াটা কি যৌক্তিক হয়েছে?

উত্তর-২

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দেন তাকে সেই কাজ করার ক্ষমতাও দিয়ে দেন। আজরাঈল আঃ কে আল্লাহ তাআলা সকল মানুষের জান কবচের দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই কিভাবে করতে হবে, একসাথে অনেকের জান কবচের ক্ষমতাও আল্লাহ পাক তাকে দিয়েছেন। আর রাসূল সাঃ কে যেহেতু আল্লাহ তাআলা সারা পৃথিবীতে ঘুরে ঘুরে উম্মতীদের অবস্থা দেখার দায়িত্ব দেন নাই। তাই তাকে এ ক্ষমতাও দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

উত্তর-৩

আজরাঈল আঃ একই সাথে একাধিক স্থানে রুহ কবচ করতে পারেন। তাই কি তিনিও হাজির নাজির? যদি বলা হয় যে, হ্যাঁ এ অর্থে আজরাঈল আঃ ও হাজির নাজির। তাহলে হাজির নাজির হওয়াটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট রইল কোথায়? অন্যের মাঝে যা আছে তা থাকার নামতো বৈশিষ্ট নয়, বৈশিষ্ট বলাইতো হয় ঐ বস্তুকে যাতে ঐ ব্যক্তি খাস। যেটি অন্যের মাঝে নেই।

যদি বলা হয় যে, না আজরাঈল আঃ হাজির নাজির নয়, তাহলে আজরাঈল আঃ এর উদাহরণ দিয়ে রাসূল সাঃ এর হাজির নাজির প্রমাণিত হয় কি করে?

রাসূল সাঃ কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা রাসূল সাঃ এর সম্মানকে খাটো করা

আমরা জানি যে, কোন সম্মানী ব্যক্তির দরবারে গিয়ে তাকে হাদিয়া দেয়াটা তাকে সম্মান জানানো। কিংবা কোন সম্মানিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হাদিয়া পাঠানো সম্মানজনক।

কিন্তু হাদিয়া দেয়ার জন্য খবর দিয়ে ডেকে আনা যত্রতত্র এটা উক্ত সম্মানী ব্যক্তির জন্য সম্মানজনক নয়।

রাসূল সাঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পর তামাম সৃষ্টিজীবের মাঝে শ্রেষ্ট। সর্বোত্তম। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তার মত উত্তম চরিত্রের অধিকারী কেউ ছিল না। কখনোও হবে না। তার মত এমন সম্মানিত ব্যক্তিত্বের কাছে হাদিয়া পাঠানোটা সম্মানের। তাকে জান্নাতের বাগান মদীনা মুনাওয়ারার রওজা মুবারক থেকে তুলে এনে মদখোর, দাড়িহীন, টুপিহীন, সুন্নাতহীন মানুষের হালুয়া-রুটির মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত করা হাজির নাজির বিশ্বাস করে কতটা সম্মানজনক বিবেকবান পাঠকরা একটু ভেবে দেখবেন।

অথচ রাসূল সাঃ একাধিক হাদীসে ইরশাদ করেছেন যে, তার উপর কেউ দরূদ পড়লে তা তার কাছে ফেরেস্তার মাঝে পৌঁছানো হয়। একদল ফেরেস্তা সর্বদা পৃথিবীব্যাপী ঘুরে দরূদপাঠকারীর দরূদ রাসূল সাঃ এর দরবারে পৌঁছানোর জন্য।

যদি রাসূল সাঃ হাজির নাজির হতেন, তাহলে ফেরেস্তা কেন দরূদ পৌঁছে দিতে নিযুক্ত থাকবে, রাসূল সাঃ নিজেইতো নাকি উক্ত মজলিসে উপস্থিত হয়ে যান!

দেখুন রাসূল সাঃ হাদীসে কী ইরশাদ করেছেন

عن أبي هريرة قال في رواية الحنفي قال : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : من صلى علي عند قبري سمعته و من صلى علي نائيا أبلغته

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি আমার কবরের পাশে গিয়ে দরূদ পাঠ করে তা আমি নিজেই শুনব। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দরূদ পাঠ করে তা আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। {সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং-১৫৮৩, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল ওকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদিস নং-১৫৮৩}

আরেক হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-

عن عبد الله بن مسعود قال قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : ان لله ملائكة سياحين في الأرضيبلغوني عن أمتي السلام

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্র্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিয়োজিত কতিপয় ফেরেস্তা জমীনে ঘুরে বেড়ায়, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছায়। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৯১৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৩২০}

হাজির নাজিরের বিশ্বাস রাসূল সাঃ এর হিজরত ও মিরাজ অস্বিকার

হিজরত মানে হল ছেড়ে দেয়া। আর রাসূল সাঃ এর হিজরত মানে হল, মক্কা ছেড়ে মদীনায় গমণ করা। এখন প্রশ্ন হল, যদি রাসূল সাঃ হাজির নাজিন হন সর্বত্র। তাহলে রাসূল সাঃ মক্কা ছেড়ে মদীনায় গিয়েছিলেন? না মদীনায় ছিলেন? হাজির নাজির হলেতো মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়া প্রমাণিত হয় না। বরং তিনিতো মদীনায় হাজিরই ছিলেন। তাহলে হিজরত হল কি করে?

মিরাজ হল বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে সপ্ত আকাশ ডিঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরসে গিয়ে পৌছা। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সাঃ কি আল্লাহর আরসে গিয়েছিলেন? না ওখানে ছিলেন নাউজুবিল্লাহ। যদি হাজির নাজির হয়ে থাকেন, তাহলেতো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনিতো সেখানেই হাজিরই ছিলেন। তাহলে মিরাজ আর রইল কোথায়?

তাই রাসূল সাঃ কে হাজির নাজির বলাটা বাহ্যিকভাবে সম্মানজনক মনে করা হলেও আসলে চূড়ান্ত পর্যায়ের অপমানজনক বক্তব্য। এর দ্বারা রাসূল সাঃ এর হিজরত এবং মিরাজকে অস্বিকার করা হচ্ছে। আর হিজরত আর মিরাজ অস্বিকারকারীর নাম আশেকে রাসূল হতে পারে না, হবে আশেকে শয়তান।

শেষ কথা

রাসূল সাঃ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ মাখলুক। সবচে’সম্মানী আল্লাহর পর। তার মত কেউ নেই। হবেও না কোনদিন। কিন্তু তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সমকক্ষও সাব্যস্ত করা যেমন যাবে না। তেমনি তার যথোপযুক্ত সম্মান ও বৈশিষ্ট অস্বিকার করাও যাবে না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদা।

তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের খাস বৈশিষ্ট হাজির নাজির হওয়াটি রাসূল সাঃ এর জন্য সাব্যস্ত করাটা একটি শিরকী আক্বিদা ছাড়া কিছু নয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল বাতিল আক্বিদা, শিরক-বেদআত থেকে বেঁচে সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয়ভাজন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

[উক্তিঃ Md Moimur Sk তোমাদের নবী হাজির নাজির নয় তোমাদের নবী আলাদা তোদের নবী মরে গেচে আমাদের নবী হায়তুন নবী হাজির ও নাজির নবী]

[জবাবঃ মাহফুজুর রহমান সজিব ]

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা হল, মৃত্যুর পর সকল নবীদের কবরে পুনরায় বিশেষ জীবন দান করা হয়েছে। ইমাম বাইহাকী রাহ. তাঁর ‘আলই‘তিকাদ’গ্রন্থে বলেন-
والأنبياء عليهم الصلاة والسلام بعدما قبضوا ردت إليهم أرواحهم، فهم أحياء عند ربهم كالشهداء.
“সকল নবীর রূহ কবজ করার পর তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা শহীদদের ন্যায় তাদের রবের কাছে জীবিত”।-আল ইতিকাদ পৃ.৪১৫ দারুল ফযীলাহ রিয়াদ; আত-তালখীছুল হাবীর ২/২৫৪; আল বাদরুল মুনীর ৫/২৯২
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন,
وقد تمسك به من أنكر الحياة في القبر، وأجيب عن أهل السنة المثبتين لذلك بأن المراد نفي الموت اللازم من الذي أثبته عمر بقوله: "وليبعثه الله في الدنيا ليقطع أيدي القائلين بموته" وليس فيه تعرض لما يقع في البرزخ، وأحسن من هذا الجواب أن يقال: إن حياته صلى الله عليه وسلم في القبر لا يعقبها موت بل يستمر حيا، والأنبياء أحياء في قبورهم، ولعل هذا هو الحكمة في تعريف الموتتين حيث قال :لا يذيقك الله الموتتين أي المعروفتين المشهورتين الواقعتين لكل أحد غير الأنبياء. (فتح الباري، باب لو كنت متخذا خليلا لتخذت أبا بكر خليلا)
“যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জীবিত থাকাকে অস্বীকার করে তারা হযরত আবু বকর রা.-এর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়-‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না’। আর আহলুস সুন্নাহ-যারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেন, এদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, হযরত আবু বকর রা.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা.-এর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন ...’। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবু বকর রা.-এর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, কবরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেন, আর নবীগণ কবরে জীবিত। ...।”-ফাতহুল বারী, আবু বকরের ফযীলত অধ্যায় ৭/৩৩
শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার এ বক্তব্যে স্পষ্টই বলেছেন, আহলুস-সুন্নাহর বিশ্বাস হল, নবীগণ কবরে জীবিত।

*আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা
.
১. নির্ধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সকল নবীগণের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
২. মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেছেন। তাই তাঁরা কবরে জীবিত। তাঁদের কবরের জীবনের ধরণ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিশ্বাস হল:
ক. আলমে বারযাখে সাধারণ মুমিনের জীবনের চেয়ে শহীদদের জীবন পূর্ণাঙ্গ। আর শহীদের জীবন থেকে নবীদের জীবন আরো পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর।
খ. দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।(১) যেমন কবরে তাঁদের দেহ মোবারক সুসংরক্ষিত রয়েছে। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন। যারা কবরের নিকট গিয়ে ছালাত ও সালাম পেশ করে তাঁরা তা সরাসরি শুনেন এবং যারা দূর থেকে সালাম পাঠান তা ফেরেশতা তাদের কাছে (কবরে) পৌঁছে দেন এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন।
গ. কবরের জীবনের ধরণ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না সে বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করি।
৩. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের কবর-জীবন হুবহু দুনিয়ার জীবনের মত নয়। কবর থেকে স্বাভাবিকভাবে যথা ইচ্ছা গমনাগমন করা, মৃত্যু-পূর্ববর্তী সময়ের মত আদেশ নিষেধ ও পরামর্শ দেওয়া, কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ, কথোপকথন ও মুসাফাহা করা ইত্যাদি বিষয়ে শরয়ী কোনো দলিল নেই। তবে যদি স্বপ্ন, কাশফ বা কারামাতের মাধ্যমে এমন কোনো কিছু ঘটা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়। হায়াতুল আম্বিয়ার আকীদার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

(নবীগন কবরে জিবিত এব্যপারে অনেক হাদিস রয়েছে। আমি এখানে দু'একটি হাদিস পেশ করব।)

(এক) হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّون.
‘নবীগণ কবরে জীবিত, নামায আদায় করেন’।(৭) -মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৩৪২৫; হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, হাদীস১-৪
যারা এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন:
১. ইমাম বাইহাকী রাহ. (হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৫)
২. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী ৬/৬০৫)
৩. হাফেজ ইবনুল মুলাক্কিন রাহ. (আল-বাদরুল মুনীর ৫/২৮৫)
৪. হাফেজ নূরুদ্দীন হাইসামী রাহ. [এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত] (মাজমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১, হাদীস ১৩৮১২)
৫. আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (ইম্বাউল আযকিয়া বিহায়াতিল আম্বিয়া, আল-হাবী, পৃ. ৫৫৫)
৬. আল্লামা মুনাবী রাহ. (ফায়জুল কাদীর, হাদীস ৩০৮৯)
৭. শাওকানী রাহ. (তুহফাতুয যাকিরীন পৃ. ২৮; নাইলুল আউতার, ৩/২৪৭)
৮. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ., সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস৬২১; সহীহুল জামিইস সাগীর; আলজানাইয; আত-তাওয়াসসুল ইত্যাদি)
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসকে কোনো মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী রাহ.-এর যে বক্তব্য রয়েছে তার ভিত্তি ছিল ভুল ধারণার উপর। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ‘লিসানুল মিযান’গ্রন্থে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং হাদীসটি সর্বসম্মতিক্রমে সহীহ। এমন হাদীসকে সহীহ বলতে অস্বীকার করা মুর্খতা ও হঠকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।(৮)
হাদীস থেকে স্পষ্ট হল যে, “নবীগণ তাঁদের কবরে জীবিত। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন”। যদিও কোন নামায ও কত রাকাত পড়েন তা জানা যায় না, তবুও নামায আদায় করা দুনিয়ার জীবনের সাথে সাদৃশ্যের একটি উদাহরণ। পরবর্তী হাদীসে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা হয়েছে।

(দুই) হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي، عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ.
‘আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির কাছে মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তখন তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন’।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৪৭
হাদীস থেকে জানা গেল, ‘আল্লাহর কাছে’নয় বরং মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর কবরে নামায আদায় করছেন। রূহের জগতে নয় বরং তিনি স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। নবীজী কবরের অবস্থানটিও উল্লেখ করে দিয়েছেন-লাল বালুর ঢিবির কাছে। তাই এখানে সালাত বা নামাযের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে না’।

(তিন) হযরত আউস ইবনে আউস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".
‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’।(৯)
অর্থাৎ কবরে নবীগণের দেহ দুনিয়ায় জীবিত মানুষের মতই অক্ষত থাকে। এর সাথে রূহের গভীর সম্পর্কও থাকে। ফলে কবরে থেকেও সালাত ও সালাম পাওয়াতে কোনো অসুবিধা হবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৩/১১৮ হাদীস ১৭৩৩; মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৭৮, হাদীস ১০২৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৬২

হাদীসটিকে যারা সহীহ বলেছেন
১. ইমাম হাকেম নিশাপুরী রাহ. বলেন, হাদীসটি বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১০২৯)
২. ইমাম যাহাবী রাহ. হাকেমের সমর্থন করেছেন। (তালখীসুল মুসতাদরাক লিল ইমাম আয-যাহাবী, আলমুসতাদরাক, হাদীস ১০২৯)
৩. ইমাম নববী রাহ. (আল-আযকার, হাদীস ৩৩২)
৪. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (নাতাইজুল আফকার ৪/১৮)
৫. হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রাহ.। তিনি বলেন, যে এ হাদীসের সনদে গভীর দৃষ্টি দেবে, তার মধ্যে এটি সহীহ হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকবে না। কেননা এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ, ইমামগণ তাঁদের হাদীস গ্রহণ করেছেন।(১০) -জালাউল আফহাম পৃ.৮১-৮৫; যাদুলমা‘আদ১/৩৫৪
৬. হাফেজ ইবনে কাসীর রাহ. (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আহযাব, ৩/৫১৪)
৭. হাফেজ ইবনে আব্দুল হাদী (আছছারিমুল মুনকী পৃ. ২১০) (১১)
৮. শায়খ শুআইব আরনাউত (এর সনদ সহীহ, মুসনাদে আহমদের টীকা, ২৬/৮৪ হাদীস ১৬১৬২)
৯. ড. মুছতাফা আজমী (সহীহ ইবনে খুযাইমার টীকা হাদীস ১৭৩৩)
১০. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ. (সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস ১৫২৭; সহীহু আবি দাউদ, সহীহুত তারগীব, তাখরীজুল মিশকাত ইত্যাদি)
১১. গাইরে মুকাল্লিদ আলেম উবাইদুর রহমান মোবারকপুরী (মিরআতুল মাফাতীহ) (১২)
১২. শাওকানী রাহ. (তুহফাতুয যাকিরীন)
১৩. শায়েখ বিন বায (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১/৯৩)
১৪. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. হাদীসটি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (৪/২৯৬, ২৬/১৪৭)
উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো মুহাদ্দিস একটি ভুল ধারণা বশত হাদীসটিকে মা‘লূল তথা দুর্বল আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু এর ভিত্তি ছিল ভুল তাই এ হাদীস বিষয়ে তাদের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, ইবনুল কায়্যিম, ইবনু আব্দিল হাদী, শায়খ শুআইব আরনাঊত, শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী ও গাইরে মুকাল্লিদ আলেম উবাইদুর রহমান মুবারকপুরী প্রমুখ।

সুতরাং বলা যায় এ হাদীসটিও মুহাদ্দিসীনে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে সহীহ।
হাদীসের অর্থ ও মর্ম
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন,
فأخبر أنه يسمع الصلاة والسلام منا لقريب وأنه يبلغه ذلك منا لبعيد.
এ হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, তিনি নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে সালাত ও সালাম শুনেন, আর দূরবর্তী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সালাত ও সালাম তাঁর কাছে পৌঁছে। -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৬/১৪৭
সৌদী আরবের শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কাসেম আন-নাজদী রাহ. (মৃত্যু. ১৩৯২) ইবনে তাইমিয়া রাহ-এর এ বক্তব্যটিই সমর্থনপূর্বক উল্লেখ করেছেন। -আর-রাউজুল মুরবি এর টীকা ৪/১৯৩
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি যথার্থ। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম মনে করলেন, যার কাছে সালাত ও সালাম পেশ করা হবে তাঁকে তো স্বশরীরে জীবিত থাকতে হবে। আর মৃত্যুর পর তো সকলের ন্যায় নবীও মাটির সাথে মিশে যাবেন। তাহলে কীভাবে তাঁর কাছে সালাম পেশ করা হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নবীদের দেহ মাটির জন্য হারাম’। অর্থাৎ আমি স্বশরীরেই জীবিত থাকব। কারণ যদি নবীজীর উদ্দেশ্য হত রূহের জগতে রূহের কাছে সালাম পেশ করা হবে, তাহলে তিনি বলতেন, সালাম তো রূহের কাছে পাঠানো হবে, দেহ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার সাথে এর সম্পর্ক কী? তাছাড়া কবর থেকে সালাত ও সালাম শুনতে পাওয়ার বিষয়টি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত অন্য একটি শক্তিশালী হাদীস দ্বারাও।

(চার) হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيّ َنَائِيًا مِنْهُ أُبْلِغْتُه.
“যে আমার কবরের পাশে আমার উপর সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে দূরে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়”।(১৪)
(কিতাবুস সওয়াব, আবু হাইয়ান ইবনু আবিশ শায়খ ইছফাহানী, ফাতহুল বারী ৬/৬০৫, আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০)
যারা এ হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন-
১. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী ৬/৬০৫)
২. হাফেজ সাখাবী রাহ. (আল-কওলুল বাদী পৃ.১৬০)
৩. আল্লামা সুয়ূতি রাহ. (আল-লাআলিল মাছনূআহ ১/২৮৫)
৪. ইবনু র্আরাক্ব আল-কিনানী (তানযীহুশ্ শরীয়াহ, হাদীস ৫৪০)
৫. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. সম্ভবত এ শক্তিশালী সূত্রটি পাননি। তাই অন্য একটি দুর্বল সূত্র উল্লেখ করে বলেন : হাদীসের এ সূত্রে দুর্বলতা সত্তে¡ও বর্ণনাটির বিষয়বস্তু প্রমাণিত। অন্যান্য হাদীস দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়। (মাজমূউল ফাতাওয়া ২৭/১১৬-১১৭, আর-রাদ আলাল আখ্নাঈ, হিদায়াতুর রুওয়াত ফি তাখরীজিল মিশকাত-এরটীকা, আলবানী রাহ. ১/৪২১) (১৫)
৬. আল্লামা ইবনু আব্দিল হাদী। তিনিও ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর মত অন্যান্য হাদীস দ্বারা এ হাদীসের বিষয়বস্তু প্রমাণিত সাব্যস্ত করেছেন। (১৬)
৭. মাহমূদ সাঈদ মামদূহ (রাফউল মানারাহ লিতাখরীজি আহাদীসিত তাওয়াসসুল ওয়ায্ যিয়ারাহ)
কোনো কোনো মুহাদ্দিস এ হাদীসের একটি সূত্রকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে মারওয়ান-এর দুর্বলতার কারণে। আর উপরোল্লিখিত হাদীসটি ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এটি আ‘মাশ থেকে বর্ণনা করেছেন হাফেজে হাদীস আবু-মুআবিয়া মুহাম্মদ ইবনে খাযেম। এতে দুর্বল বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে মারওয়ান নেই। তাই এ সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে জাল বলার কোনই প্রমাণ নেই এবং কোনো মুহাদ্দিস এ বর্ণনাকে জাল বলার দুঃসাহস দেখানওনি। সুতরাং যারা মুহাম্মাদ ইবনে মারওয়ান সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন তাদের বরাতে পূর্বোল্লিখিত মুহাম্মদ ইবনে খাযেম সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে দুর্বল বলার কোনো সুযোগ নেই।
তাছাড়া এ হাদীসে উল্লিখিত সালাত ও সালাম শুনতে পাওয়ার বিষয়টি হযরত আউস ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত তৃতীয় নম্বরে আলোচিত হাদীসটি দ্বারা সমর্থিত। আর দূরে থেকে সালাত ও সালাম পৌঁছার বিষয়টি অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত।

[ উক্তি md Moimur sk মুফতি হাককানি নয় মুফতি ফাককানি তুই সুরা ফিলের প্রথম আয়েতটা ব্যাখকা কর]

জবাব নাম্বার ---------১

তাফসীর : (১) أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيْلِ ‘তুমি কি শোনো নি তোমার প্রভু হস্তীওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন’? أَلَمْ تَرَ অর্থ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, أَلَمْ تَسْمَعْ ‘তুমি কি শোননি?’ ফার্রা বলেছেন ألم تُخْبَر ‘তুমি কি খবর পাওনি?’ মুজাহিদ র. বলেছেন أَلَمْ تَعْلَمْ ‘তুমি কি জানো না?’ কোন নিশ্চিত বিষয় জানানোর জন্য এরূপ বাকরীতি প্রয়োগ করা হয়। শব্দটি প্রশ্নবোধক হ’লেও বক্তব্যটি নিশ্চয়তাবোধক। আবরাহার কা‘বা অভিযান ও আল্লাহর গযবে তার ধ্বংসের কাহিনীটি আরবদের মুখে মুখে প্রচারিত ছিল। যদিও রাসূল (সা.) সে ঘটনা দেখেননি, তবুও তা ছিল প্রশ্নাতীত একটি নিশ্চিত ঘটনা। أَصْحَابُ الْفِيْلِ বলতে আবরাহা বাহিনীকে বুঝানো হয়েছে। অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর শক্তি-মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বান্দাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, এত বড় নিদর্শন দেখার পরেও فَمَا لَكُمْ لاَ تُؤْمِنُوْنَ؟ ‘তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা ঈমান আনো না?’ (তাফসীরে কুরতুবী)।

কার ব্যখ্যা মানব বিশিষ্ট সাহাবী রইসুল মুফাস্সির ইবনে আব্বাস রা. এবং তার ছাএ বিশিষ্ট তাবেয়ি মুজাহিদ র. উক্ত আয়াত সম্পর্কে যাদের বক্তব্য  ইমাম কুরতুবী র. তার বিক্ষাত তাফসীরে ব্যক্ত করেছেন।

না আপনাদের মনগড়া কথা মনব কোনটা। (জানাবেন আশা করি)

জবাব নাম্বার-----২

ওহে দিকভ্রান্ত আহলে বাতিল রেজভি বন্ধুরা! যদি সামর্থ্য থাকে তো নিচের লেখাটির জবাবটা দিয়ে যান। যেহেতু আপনাদের দাবি হল, সূরা ফীল এর ১নং আয়াতে এসেছে,
الم تر كيف فعل ربك باصحاب الفيل
অর্থ আপনি কি দেখেননি…? এখানে “আপনি কি দেখেননি” মানে আপনি অবশ্য দেখেছেন। এ হিসেবে প্রমাণিত হয় যে, নবীজি আসহাবে ফীলের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। অর্থাৎ তিনি হাজির নাজির।(নাউযুবিল্লাহ) এ হল আপনাদের [রেজভিদের] বক্তব্য ও আকিদা।

খণ্ডন,
১ ।
কুরআনে এসেছে, ﺃَﻟَﻢْ ﻳَﺮَﻭْﺍ ﻛَﻢْ ﺃَﻫْﻠَﻜْﻨَﺎ ﻗَﺒْﻠَﻬُﻢ ﻣِّﻦْ ﺍﻟْﻘُﺮُﻭﻥِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻻَ ﻳَﺮْﺟِﻌُﻮﻥَ

“তারা কি প্রত্যক্ষ করে না, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না। (ইয়াসিন ৩১)।

২।
সূরা ইয়াসিন-৭৭ নং আয়াতের ভাষ্য হল
اولم ير الانسان انا خلقناه من نطفة الخ

“মানুষ কি দেখে নাই যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে।”

শানে নুযুল, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াত প্রখ্যাত কাফির আস ইবনে ওয়ায়েল সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

একটু খেয়াল করুন! আয়াতটির শানে নুযুল হল, আস ইবনে ওয়ায়েল সে একদা এক খণ্ড পোড়া হাড্ডি নিয়ে রাসূল সাঃ এর পাক দরবারে হাজির হয় এবং পরকালীন জীবন অস্বীকার করে বলে যে, এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর কে তাকে পুণর্জীবন দান করবে?

রাসূল সাঃ বলেন, আল্লাহপাক তোকে পুণর্জীবন দান করবেন এবং দোজখে নিক্ষেপ করবেন। আর তখনি উপরি উক্ত আয়াতটি নাযিল করা হয়।

আয়াতের মর্মকথা হল, আল্লাহপাক মানুষকে সর্বপ্রথম শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তার জন্য দ্বিতীয়বার তাকে সৃষ্টি করা আদৌ কঠিন নয়।

{সূত্র, মাযহারী ৯/৫৬৭, ইবনে কাসির ৩/৬৩০-৪০, দুররে মানসূর ৫/২৬৯}।

লক্ষ্য করুন- কাফেরদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাকের বাণী, “তারা কি প্রত্যক্ষ করে না, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি”। তো এবার আপনাদের মতলব সিদ্ধ ব্যাখ্যা মতে এ আয়াত দ্বারা কাফিরগ্ণও হাজির নাজির সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে নয় কি?

আবার লক্ষ্য করুন-
প্রখ্যাত কুরাইশ কাফির আস ইবনে ওয়ায়েল তার সম্পর্কে যেহেতু আয়াতটি নাযিল হয়েছে এবং তার দিকেই “মানুষ কি দেখেনি?” এ রকম শব্দ চয়ন হয়েছে। তো সে জন্য আস ইবনে ওয়ায়েলকে কী বলবেন? সেও কি মানব সৃষ্টি প্রাক্কালে সরে জমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ছিল?

লক্ষণীয় যে, আচ্ছা, আমরা যারা নোতফা থেকে সৃষ্টি হয়েছি, তারা কি কখনো নোতফা থেকে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা নিজ চোখে দেখতে পেরেছে , নাকি শুধুই জানতে পেরেছে?

নাকি দেখতে পারাও বুঝেন না, জানতে পারাও বুঝেন না! আপনি কি নোতফা থেকে সৃষ্টি নন? তো নোতফা কি আপনার পক্ষে দেখা সম্ভব ছিল? অবশ্যই না। এ ভাবে কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে “মানুষ কি দেখেনি” একথার অর্থ কী? নতুবা সে একই রকম শব্দ চয়নকে কেন্দ্র করে আপনারা তালগোলপাকিয়ে বিশ্বনবী সাঃ -কে হাজির নাজির সাব্যস্ত করে শিরিক করছেন কেন?

***
সাইয়েদুল মুরসালিন হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক সাঃ সম্পর্কে রেজভি/রযবি তথা বিদয়াতিদের উক্ত আকিদাখানা কতটা অসার, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট তা নিচের কয়েকটা ঘটনা দ্বারা প্রমাণ করে দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

এখানে একটি কথা খুব ভাল ভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, নবীজি সাঃ কখনো নিজেকে আলেমুল গায়েব (অদৃশ্য জ্ঞানী) বলে যেমন দাবি করেননি, ঠিক তেমনি নিজেকে হাজির নাজির বলেও দাবি করেননি। ভ্রষ্ট রাফেজি, খারেজি ও মুতাযিলাদের ন্যায় অভিশপ্ত পথহারা রেজভি সম্প্রদায়ের প্ররোচনায় মুসলিম সমজে একটি ভূঁইফোড় মুর্খ শ্রেণি গজে ওঠে।

তারা অতি উৎসাহী আশেকে রাসূল সাজতে গিয়ে কখনো কখনো নবীজির সাঃ প্রতি অতিরঞ্জনমূলক মুহব্বত জাহির করে বলে যে, "রাসূল খোদা থেকে জূদা নন"।

এভাবে বলার মাধ্যমে তারা আল্লাহ এবং রাসূল (সাঃ) দু'জনকে একীভূত করে ফেলে।অর্থাৎ, যিনি খোদা তিনিই রাসূল!! যা সুস্পষ্ট শিরিক। নাউযুবিল্লাহ।

এ ধরণের মূর্খ শ্রেণির কথিত আশেকরাই নবীজি সাঃ -কে কখনো বলে "আলেমুল গায়েব" আবার কখনো বলে "নবীজি সাঃ পৃথিবীর সবখানে বিরাজমান ও সর্বদ্রষ্টা"। যাকে আরবী করলে হয় 'হাজির নাজির'। (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ তাদের এরূপ আকিদা বিশ্বাস সম্পূর্ণ বানোয়াট ও কুসংস্কার।

যারা নবীজি সাঃ সম্পর্কে মনগড়া ভাবে হাজির নাজির আকিদা রেখে নিজের অজান্তে শিরিক-আকিদায় ডুবে আছেন, তাদের নিকট নিম্নোক্ত ঘটনার কী জবাব?

এর দ্বারা নবীজি সাঃ কি হাজির নাজির সাব্যস্ত হল, নাকি হাজির নাজির নয়-সাব্যস্ত হল! জবাবটা দিবেন কি???????????????

ঘটনা-১।

সূরা আল হুজুরাত, আয়াত নং ৬-৮।

আয়াতটির শানে নুযূল হল, হযরত উম্মে সালমাহ রাঃ হতে বর্ণিত আছে যে, অত্র আয়াতটি ওলীদ ইবনে ওকবা সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। রাসূল সাঃ একদা তাঁকে বনূ মুস্তালিকের নিকট জাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের গ্রহণের পূর্বে ওলীদের সাথে বনূ মুস্তালিকের শত্রুতা ছিল। ওলীদের আগমণের সংবাদ পেয়ে তাঁরা তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে এসেছিল।

কিন্তু ওলীদ তাঁদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করে ভেবেছিলেন, হয়তো বা তারা পূর্বশত্রুতার দিকে এগিয়ে আসছে। তাই তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ফিরে এসে রাসূল সাঃ -কে বললেন, বনূ মুস্তালিকের লোকেরা আমার কাছে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। এমনকি তারা আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

এটা শুনে রাসূল সাঃ তাদের ওপর ক্রোধান্বিত হলেন।এমনকি রাসূল সাঃ বনূ মস্তালিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন।ঘটনাটি বিরাট।সংক্ষেপে এতটুকু বললাম।

{বিস্তারিত দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, যিলালুল কুরআন;সূরা হুজুরাত আয়াত নং ৬-৮ এর শানে নুযূল}।

এখন প্রশ্নটি হল, রাসূল সাঃ যদি হাযির নাযির হতেন কিংবা গায়েব জাননেওয়ালা হতেন তাহলে উপরোক্ত ঘটনাটিরও প্রত্যক্ষদর্শী হতেন এবং ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত থাকতেন। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ওহী আসার জন্য তাঁর অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল না।

অথচ তিনি বনূ মুস্তালিক সম্পর্কে জনৈক লোকের অসত্য খবর সত্য মনে করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মত বিশাল একটি পদক্ষেপ নিতেও দেরি করেননি!

এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে তিনি কি হাযির নাযির কিংবা গায়েব জাননেওয়ালা এসবের কোনো একটিও সাব্যস্ত হয়? কী জবাব দিবেন??

এবার বুঝে থাকলে বলুন, তথাকথিত সুন্নী তথা রেজভি ভাণ্ডারীদের আকিদার সাথে একমত হয়ে রাসূলেপাককে হাযির নাযির বলবেন, নাকি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আকিদা মেনে রাসূলেপাক সম্পর্কে রেজভিদের উপরোক্ত আকিদা বিশ্বাসকে চরম ভ্রান্ত ও গোমরাহী বলবেন?

অবশ্য চরম ভ্রান্ত ও গোমরাহী বলবেন।

***
যারা প্রিয়নবী সাঃ -কে গায়েব জাননে ওয়ালা বলে আকিদা রাখে তাদের নিকট একটি প্রশ্ন-

ইবনে কাসির গ্রন্থকার বলেন, একদা কুরাইশ মুশরিকরা রাসূল সাঃ এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাঁর নিকট প্রশ্ন করল-

১। রূহ কী?

২। যুলকারনাইনের ঘটনা কী?

৩। আসহাবে কাহাফ এর বৃত্তান্ত কী?

তাৎক্ষণিক প্রিয়নবী সাঃ বলেন, আগামীকাল এসব প্রশ্নের উত্তর দেব। তিনি ভুলবশত "ইনশা আল্লাহ" বলেননি। অসতর্কতামূলক এ বে-খেয়ালির জন্য আল্লাহপাক কিছু দিনের জন্য ওহী নাজিল বন্ধ রাখেন এবং কাফেরদের উত্তর দিতে বিলম্ব করছিলেন।

ইবনে জারির, তাবারানী ও ইবনে মারদুবিয়া বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস রাঃ এর মতে ২৫ দিন, ইবনে যোবায়েরের মতে ১২ দিন, হযরত কলবী বলেন ১৫ দিন ওহী বন্ধ ছিল।

ফলশ্রুতিতে কুরাইশগণ বিদ্রুপ করে বলতে লাগল, তোমার প্রভু তোমাকে ত্যাগ করেছে। অতপর আল্লাহপাক ওহী নাযেলের মাধ্যমে কাফেরদের প্রশ্নের জবাব দিলেন। (সংক্ষেপে)।

আমার #প্রশ্ন হল, যারা অজ্ঞতার কারণে প্রিয়নবীকে আল্লাহপাকের সমকক্ষ বানিয়ে আল্লাহপাকের মত তাঁকেও গায়েব জাননে ওয়ালা বলে আকিদা পোষণ করছে, তাঁরা কি উক্ত শানে নুযূল দ্বারা একথা বুঝতে পারেনা যে, প্রকৃতপক্ষে গায়েব জাননেওয়ালা হলেন একমাত আল্লাহই। নচেৎ কী জবাব?

***
যারা হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক সাঃ -কে মনগড়া ভাবে হাজির নাজির বলে আল্লাহপাকের সিফাতের সাথে শিরিক
করছেন, তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন-

পবিত্র কুরআন যেখানে শিক্ষা দিচ্ছে যে,
নবীপাক সাঃ হাজির নাজির নন, সেখানে কুরআনের বিপরীতে আহমদ রেজাখানের
শিরিকি মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে নবীজি সাঃ -কে হাজির নাজির বলার দ্বারা "সুন্নী" হওয়া যায় কিভাবে?

অথচ কুরআন বিরুধী আকিদা রাখার
কারণে মুসলিম থেকেও তার নাম বাদ পড়ার দাবি রাখে।


এবার পবিত্র কুরআনের আলোকে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় দলিল দেখুন-

দলিল-

আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম সাঃ-কে হযরত মূসা (আঃ) এর ঘটনা সম্পর্কে অবগত করার পর ইরশাদ করেন,

ﻭﻣﺎ ﻛﻨﺖ ﺑﺠﺎﻧﺐ ﺍﻟﻐﺮﺑﻰ ﺍﺫ
ﻗﻀﻴﻨﺎ ﺍﻟﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻻﻣﺮ ﻭﻣﺎ ﻛﻨﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﺎﻫﺪﻳﻦ

অর্থাৎ, তুমি (তূর পর্বতের) পশ্চিমপার্শ্বে উপস্থিত ছিলে না, যখন আমি মূসা (আঃ) এর কাছে হুকুম প্রেরণ করি । আর তুমি তার
প্রত্যক্ষকারী ছিলে না ।

(সূরা কাসাস ৪৪)

সুতরাং বোঝা গেল-
হযরত মূসা (আঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির
সময় মহানবী সাঃ তূর পর্বতের
পশ্চিম পার্শ্বে হাজিরও ছিলেন না নাজিরও ছিলেন না।

তাহলে নবীজি সর্বত্র হাজির নাজির এ কথা সঠিক হয় কি করে?

জবাব দিতে পারবেন! নচেৎ প্রমাণিত হবে যে, আপনারা ভুল করতেছেন।


২য় দলীল সূরা তওবায় আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,

ﻭﻣﻤﻦ ﺣﻮﻟﻜﻢ
ﻣﻦ ﺍﻻﻋﺮﺍﺏ ﻣﻨﻔﻘﻮﻥ ﻭﻣﻦ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻣﺮﺩﻭﺍ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﻔﺎﻕ ﻻﺗﻌﻠﻤﻬﻢ ﻧﺤﻦ ﻧﻌﻠﻤﻬﻢ অর্থাৎ,
তোমার আশপাশের পল্লীবাসী ও মদীনাবাসীর
মাঝে এমন কিছু মুনাফিক রয়েছে যারা মুনাফেকিতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে জান না । আমি তাদেরকে জানি । {সূরা তাওবা ১০১}

দেখা গেল রাসূল সা. মদীনার আশপাশের অনেক লোক সম্পর্কে জানতেন না।

তিনি সর্বত্র হাজির-নাজির থাকলে তো অবশ্যই সকলের সম্বন্ধে অবগত থাকতেন ।

তাহলে রাসূল সাঃ সর্বত্র হাজির- নাজির এ দর্শন সঠিক হয় কি করে ?

কোনো জবাব আছে কি ???


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!