Saturday, December 3, 2016

জাল হাদিসের দ্বারা হযরত বেলাল রাযিঃ ব্যাপারে লা মাযহাবী শায়খের অপপ্রচারের ধিক্কার জানাই!

আমাদের সমাজে মুখরোচক বক্তায় ছড়াছড়ি। এক দিকে বিদআতী, মাযারপূজারী, শিন্নীখোর বক্তা রয়েছে! যারা কিনা বানোয়াট কেস্‌সা, কাহিনীতে ভরপুর বয়ান করে বিদআতের সম্প্রসারণ ঘটায়! অপরদিকে আরেক শ্রেণির বক্তারা সহীত্বের নামে গলতের, হেদায়াতের নামে গোমরাহর পথে আহ্বানে রত!
.
বানোয়াট কেস্‌সাওয়ালাদের গোমরাহী অতি সহজেই ধরা যায়! কিন্তু সহীহ, সহীহ করে যারা গোমরাহী মতবাদ ছড়াচ্ছে, অনেকেই তাদের অপকৌশল বুঝতে না পেরে এই পথের পথিক হচ্ছেন! কেননা, এরা সহীহ হাদীসের নাম নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে! অথচ নিজেদের স্বার্থে জঘন্য বানোয়াট, মিথ্যা, জাল বর্ণনার আশ্রয় নেয়! এগুলো সাধারণ মানুষ বুঝে না! কারণ তাদের তো ঐ সকল কথিত শায়খরা নিজেদের মুকাল্লিদ বানিয়ে ফেলেছে!
.
অবাক হলাম, যখন দেখলাম, এই কথিত আহলে হাদীস, লা-মাযহাবী শায়খরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একজন সাহাবীর বিরুদ্ধেও অপপ্রচার ও কটুক্তি করতে ছাড়ে না!
.
বাংলাদেশ আহলেহাদীছ আন্দোলনের নেতা, পিস টিভি বক্তা শায়খ ইসমাঈল মাদানী সাহেব! যিনি গর্বের সাথে নিজেকে সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবি করেন। মুহাক্কিক উলামাদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে সাধারণ লোকদের আলেম বিমুখ করেন। যিনি টুপি, দাড়ি, পাগড়ি, জুব্বা নিয়ে কটুক্তি করেন। তিনি জালীলুল কদর সাহাবী, যাঁর পায়ের আওয়াজ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং মে’রাজে গিয়ে জান্নাতে শুনেছেন, সেই বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)’র বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছেন! তাঁর নামে মিথ্যাচার করেছেন। জাল, ভিত্তিহীন হাদীস প্রচার করেছেন।
.
তাদের শায়খ আব্দুর্ রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব সহীহ ভাবে কুরআন পাঠ করতে পারেন না, সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারেন না! সেই আব্দুর্ রাযযাক সাহেবের অজ্ঞতার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বেলাল (রা.)’র শানে অগ্রহণযোগ্য কথা বলেছেন তিনি।
.
বেলাল (রা.)-কে নিগ্র মাতার কালো সন্তানসহ আরো অনেক কিছু বলার পর, তিনি একটি মওযূ, জাল, বানোয়াট, ভিত্তিহীন বর্ণনাকে হাদীস হিসেবে চালানোর অপচেষ্টা করেছেন।
.
কথিত আহলে হাদীস শায়খ ইসমাঈল মাদানী সাহেবের বক্তব্য হলো,
বেলাল(রা.)নাকি আযান দেয়ার সময় আরবী অক্ষর শীন ش উচ্চারণ করতে পারতেন না! তাই শীনের স্থলে এর পূর্বের অক্ষর সীন س উচ্চারণ করতেন। অর্থাৎ “আশ্‌হাদু” বলতে পারতেন না, তাই “আসহাদু” বলতেন। আর তাই নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
سين بلال عند الله تعالى شين
.
অর্থাৎ “বেলালের সীন বলা, আল্লাহ তাআলার নিকট শীন হিসেবে গণ্য।”
.
এই বক্তব্য দেয়ার পর ইসমাঈল মাদানী সাহেব হাদীসটির কোনো রেফারেন্স দেন নাই। কোন কিতাবে আছে, কোন রাবী বর্ণনা করেছেন এসব কিছুই বলেন নাই।
.
অথচ তাদের অনুসারীরা বড় গলায় ফুটানি করে যে, তাদের শায়খরা নাকি প্রতিটি কথায় কথায় রেফারেন্স দিয়ে কথা বলে! হাহ্! এই তার নমুনা!
.
.
এবার আসি এটি কোনো হাদীস কিনা এই আলোচনায়ঃ
.
এই বর্ণনাটি জাল, বানোয়াট ভিত্তিহীন। সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ একমত এ বিষয়ে।
.
ইমাম শাফেয়ীর ছাত্র প্রসিদ্ধ ইমাম ইসমাঈল ইবনে ইয়াহইয়া আল মুযানী (রহ) বলেন,
.
إنه اشتهر على ألسنة العوام ولم يرد في شيء من الكتب
.
অর্থাৎ “এটি মানুষের মুখে প্রচলিত একটি কথা মাত্র। এটির ব্যাপারে কিছুই হাদীসের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয় নি।
.
[কাশফুল খাফা, ১ম খণ্ড, পৃ ২৫৮, রেওয়ায়াত ৬৯৫]
.
আল্লামা হাফিয ইবনে কাছীর (রহ.) বলেন,
.
ليس له أصل ولا يصح
.
এই রেওয়ায়াতের কোনো ভিত্তি নেই। এটি ভিত্তিহীন। সহীহ নয়।
.
[কাশফুল খাফা, ১ম খণ্ড, পৃ ৫৩০, রেওয়ায়াত, ১৫২০]
.
মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন,
.
ليس له أصل
.
এটার কোনো ভিত্তি নেই।
.
[কাশফুল খাফা, ১ম খণ্ড, পৃ ২৫৮, রেওয়ায়াত ৬৯৫]
.
এরকম একটা জাল বক্তব্যকে কীভাভে ইসমাঈল মাদানী সাহেবের মতো গাইরে মুকাল্লিদ আলেম উল্লেখ করলেন? তিনি কীভাবে কোনো ইমামের তাকলীদ না করে নিজে নিজে হাদীসের উপর আমল করেন?
.
.
এটি সহীহ হাদীস বিরোধী কথাঃ
.
সহীহ হাদীস কী বলে?
.
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয়, বেলাল (রা.) শুদ্ধভাষী এবং সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন।হাদীসে আছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়দ (রা.) রাতে স্বপ্নে আযানের বাক্যগুলো শোনেন। পর দিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকত এসে তার স্বপ্নের কথা বলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
.
فقال : إنها لرؤيا حق إن شاء الله ، فقم مع بلال فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ
.
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটি সত্য স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ। এখন তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও। বেলালের আওয়াজ তোমার চেয়ে উঁচু এবং দীর্ঘ।”
.
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ করেন বেলাল (রা.)-কে আযানের শব্দগুলো বলতে, যা তিনি স্বপ্নে দেখেছেন।
.
[সুনানে আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত (নামায অধ্যায়), অনুচ্ছেদঃ কাইফাল আযান (আযান কীভাবে হবে?), ১/১৩৫, হাদীস নম্বর ৪৯৯, মুহিউউদীন আব্দুল হামীদের তাহকীকে মাকতাবাতুল আসরিয়া থেকে প্রকাশিত; শায়খ শুআইব আরনাউতের তাহকীকে দারুর রিসালাহ আল আলামিয়া থেকে প্রকাশিত সুনানে আবূ দাউদের ১/৩৭১-৩৭২ পৃ; সুনানে তিরমিযী, কিতাবুস্ সালাত, আবওয়াবুল আযান, বাবু মা জা আ ফী বাদইল আযান; ১/৩৫৮, হাদীস নম্বর ১৮৯; দারে কুতুবুল ইলমিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত; সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আযান ওয়াস্ সুন্নাহ ফীহ (আযান অধ্যায় এবং আযানের সুন্নাত), অনুচ্ছেদঃ বাদইল আযান (আযানের সূচনা), ১/২৩২, হাদীস নম্বর ৭০৬, মুহাম্মাদ ফাওয়ায়েদ আব্দুল বাকী’র তাহকীকে মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ, বৈরূত লেবানন থেকে প্রকাশিত; মুসনাদে আহমাদ, হা ১৬০৪৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নম্বর ১৬৩; সুনানে দারেমী, হা ১১৮৭; ফাতহুল বারী, ৭৮৬ নম্বর হাদীসের আলোচনায়; আত্ তালখীসুল হাবীর, ইবনে হাজার আসকালানী, ১/৩৫৫; নাসবুর রায়াহ ফী তাখরীজিল আহাদীস আল হেদায়া, ১/৩৬৫]
.
ইমাম তিরমিযী (রহ.) হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন,
.
قال أبو عيسى حديث عبد الله بن زيد حديث حسن صحيح
.
অর্থাৎ “হাদীসটি হাসান সহীহ।”
.
সুনানে আবূ দাউদের মুহাক্কিক শায়খ শুআইব আল আরনাউত্ব (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
.
إسناده حسن
.
অর্থাৎ “হাদীসটির সনদ হাসান।”
.
[সুনানে আবূ দাউদের ১ম খণ্ডের ৩৭২ পৃষ্ঠার টীকা, প্রকাশনায়ঃ দারুর রিসালাহ আল আলামিয়া]
.
লা-মাযহাবী, কথিত আহলে হাদীসদের সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহ.) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন
.
[সহীহ সুনানে আবূ দাউদ, ১/১৪৭; হা ৪৯৯ মাকতাবাতুল মাআরেফ, রিয়াদ।]
.
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল (রা.)-কে আযান দেয়ার দায়িত্ব দেন, তাকে ইসলামের প্রথম মুয়াযযিনের মর্যাদা দান করে, তার উচ্চ ও দীর্ঘ কণ্ঠের জন্য। সুতরাং আযানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঁচু ও দীর্ঘ কণ্ঠ নির্বাচিত করেছেন। তাহলে কি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহীহ ভাবে উচ্চারণ যিনি করেন, এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবেন না? অবশ্যই তিনি তা-ই করেছেন।
.
আসুন দেখি, মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় কী লিখেছেন,
.
আল্লামা হাফিয ইবনে কাছীর (রহ.) এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, বেলাল (রা.) খুব স্পষ্টভাষী, উঁচু আওয়াজ ও সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুয়াযযিন হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
.
আল্লামা ইবনে কাছীর (রহ.) বলেন,
.
“একাধিক জীবনী লেখক লিখেছেন যে, বেলাল (রা.) উঁচু আওয়াজ, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর এবং সহীহভাবে স্পষ্টভাবে কথা বলতেন।আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযানের স্বপ্নদ্রষ্টা আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়দ (রা.)-কে বলেন, বেলালকে আযানের শব্দগুলো বলো। কেননা সে তোমার চেয়ে উঁচু ও দীর্ঘ আওয়াজের অধিকারী।”
.
[কাশফুল খাফা, ১ম খণ্ড, পৃ ৫৩০, রেওয়ায়াত, ১৫২০ এর আলোচনায়]
.
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহাম্মাদ আল ক্বারী [মোল্লা আলী ক্বারী] (রহ.) মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ যা তাঁর রচিত, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতুল মাসাবীহ-তে লিখেছেন,
.
ইমাম রাগেব আসবাহানী (রহ.) (মৃত্যু ৫০২ হি) বলেন, النداء শব্দটি এসেছে الندى থেকে। যার অর্থ الرطوبة অর্থাৎ শীতল। صوت ندي দ্বারা বুঝানো হয়েছে উচ্চ কণ্ঠ। আর আযানের জন্য এমন স্বর আওয়াজ প্রয়োজন যা বুঝানো হয়েছে, যার কণ্ঠ শীতল, উঁচু আর মুখে সুন্দর কথা বলে।
.
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এই হাদীস দ্বারা এটা পাওয়া যাচ্ছে যে, মুয়াযযিনের আওয়াজ উঁচু এবং সুন্দর হওয়া মুস্তাহাব।
.
[মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ২/৩২১-৩২২; হাদীস নং ৬৫০ এর আলোচনায়, প্রকাশনায়ঃ দারুল কুতুবুল ইলমিয়া, বৈরূত, লেবানন]
.
লা-মাযহাবী, কথিত আহলে হাদীস ভাইদের খুব আস্থাভাজন আলেম আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী আশ্ শাওকানী (রহ.) এই হাদীসের আলোচনায় লিখেছেন,
.
“হাদীসে এটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে, বেলালের আওয়াজ তোমার চেয়ে উঁচু।আর এটা দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়, আযানে আওয়াজ উঁচু করা।”
.
[নাইলুল আওতার, ২/৪৫]
হযরত বিলাল রাঃ এর উপর অমার্জনীয় অপবাদ  আরোপ এই হল তার ভিডিও লিংক।
http://youtu.be/UBPm5cz31nw
আল্লাহ তাআলা আমাদের লা মাযহাবি বিদআতি মিথ্যাবাদী ধোঁকাবাজ কথিত নামধারী শায়েখদের ধোঁকাবাজি থেকে হেফাজত করেন। আমীন ইয়া রব,,,,,

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!