Saturday, February 25, 2017

সে একজন শিক্ষিত নারী ! এজন্য সে বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়!

বাসে উঠে একটা খালি সীট পেলাম।
জানালার পাশে আমি
বসলাম, আর পাশের সীটটা খালি।

একটু পরেই দেখি আমার বয়সী একটা সুন্দরী মেয়ে উঠলো । বোরকা পড়া , মাথায় হিজাব দেয়া । মেয়েটাকে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় খুবই ভদ্র ও অবস্থা সম্পন্ন ঘরের মেয়ে । এদিক ওদিক সিট খুজে শেষে আমার পাশে এসে বসলো । হাতে একটা মোবাইল।
দেখে বোঝা যায় অনেক দামী
একটা মোবাইল ।

কিছুদূর যাবার পর বাস জ্যামে
পড়লো । মেয়েটা বলে উঠলো, অসহ্য
জ্যাম ! আমিও হুম বলে সম্মতি
জানালাম । এরপর টুকটাক কথা হতে লাগলো । বাসও চলতে শুরু করলো।
কথায় কথায় জানলাম, ইংরেজিতে
অনার্স করছে । খুবই ফ্রী ভাবে কথা
বলছিলাম আমরা ।

কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও জ্যামে পড়লো বাস।
বিরক্তিকর জ্যাম! জ্যামের মধ্যেই
বাসে ওঠলো সাদা শার্ট পড়া
কালো চেহারার মধ্যে বয়সী একটা
লোক । অনেক দিনের পুরনো বোধহয় শার্ট টা । ময়লা হয়ে আছে। তার হাতে অনেক গুলো নামাজ শিক্ষা
বই।
কাধে কালো রঙের একটা ব্যাগ।
লোকটা নামাজ শিক্ষা বই বিক্রি
করছে । লোকটা অনেক্ষণ যাবত , বইতে কি কি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া , সূরা, মাসলা
ইত্যাদি আছে তা বর্ননা করলো ।
কিন্তু বাসের কেউ একটা বইও
কিনলো না ।

আমার খুব খারাপ লাগলো । ইচ্ছে
করছিল লোকটাকে কিছু টাকা
দিয়ে সাহায্য করি । কিন্তু
লোকটাকে টাকা দিতে চাইলে
যদি কিছু মনে করে! তাই দিলাম না ।
একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম লোকটা
বাসে ওঠার পর থেকে মেয়েটি
আমার সাথে একটা কথাও বলেনি ।
মাথা নিচু করে মোবাইল টিপছে ।
বাড়িতে নামাজ শিক্ষা বই থাকা
সত্বেও শুধু মাত্র লোকটিকে সাহায্য
করার ইচ্ছায় বিশ টাকা দিয়ে দুইটা
বই কিনলাম । লোকটিকে পঞ্চাশ
টাকার নোট দিলে সে ত্রিশ টাকা
ফেরত দিল ।টাকা ফেরত দেবার
পরেও দেখি সে পকেট থেকে আরও
টাকা বের করছে । একটা একশ টাকার নোট আর কয়েকটা দশ টাকার নোট।

আমার দিকে এগিয়ে ধরলো ! আমি
তো অবাক ! আমাকে টাকা দেবেন
কেন উনি ! আমার ভুল ভাঙলো তার
ডাক শুনে । তিনি আমাকে না
মেয়েটিকে টাকা দিচ্ছেন ! তিনি
বললেন , ‘সোমা টাকাটা রাখো ।
কিছু কিনে খেয়ে নিও । তোমার মা
বললো, তুমি সকালে না খেয়েই
ভার্সিটিতে চলে আসছো‘ ।

মেয়েটি লজ্জায় মরে যাচ্ছিল, সে
অত্যন্ত রেগে লোকটার দিকে
তাকালো । বললো , লাগবে না ।
লোকটি জোর করে টাকাটা তার
হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে
গেল । মেয়েটার দিকে তাকানো
যাচ্ছিল না! রেগে টং হয়ে আছে!
আমি কৌতুহল সামলাতে পারলাম
না ।
জিজ্ঞেস করলাম ,যে আপনাকে
টাকা দিল উনি কে? মেয়েটা
বললো,আমাদের বাড়ির পাশে
থাকে ! আমি বললাম, কিছু মনে
করবেন না ।
একটা কথা বলি, উনি কি আপনার বাবা?

মেয়েটি রেগে তাকালো আমার
দিকে! জবাব দিলো না ! এমন ভাব
করলো যেন আমি মহা অপরাধ করে
ফেলেছি ! আমি বুঝতে পারলাম
তার রাগের কারন ! তার বাবা একজন ভ্রাম্যমাণ হকার । বাসে বাসে ঘুরে
বই বিক্রি করে। আর সে দামী
পোশাক পড়ে ভার্সিটিতে যায় !
সে একজন শিক্ষিত মানুষ ! এজন্য সে বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়! এই
ময়লা শার্ট পড়া লোকটাকে বাবা
বলে স্বীকার করাটাকে সে ঘৃনার
চোখে দেখে! সে চায় না দুনিয়ার
কেউ জানুক এই হকার তার বাবা !

কত বড় বিবেক সম্পন্ন মানুষ সে ! যে
লোকটা রাত দিন পরিশ্রম করে
বাসে বাসে মানুষের দ্বারে
দ্বারে ঘুরে বই বিক্রি করে
মেয়েটাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত
করে তুলছে । তাকে লেখা পড়া
শেখাচ্ছে । নিজে কয়েক বছরের
পুরনো একটা শার্ট পড়ে অথচ
মেয়েটিকে দামী পোশাক ,ব্যাগ
,দামী মোবাইল কিনে দিয়ে তার
সমস্ত চাওয়া পূরন করেছেন । সেই
মানুষটাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে
লজ্জা করছে মেয়েটির ! কত বড়
নির্লজ্জ ! যে মানুষটা তাকে লালন
পালন করে এত বড় করলো , যারটা
খেয়ে বেচে আছে তাকে বাবা
বলে পরিচয় দিতে সমস্যা !

মেয়েটি হয়তো শিক্ষিত হচ্ছে ,
কিন্তু তার ভেতরে বিবেক ও মানুষত্ব
তৈরি হয়নি । হকার লোকটির প্রতি
শ্রদ্ধায় মনটা ভরে উঠলো । লোকটা
হাজার কষ্টের মাঝেও পরম মমতায়
নিজের মেয়েটিকে উচ্চশিক্ষিত
করে তুলছেন । আদর্শ বাবা মনে হয়
একেই বলে! অন্য কেউ হলে হয়তো
অনেক আগেই মেয়েটিকে কোন
শ্রমিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত ।
সেটাই বোধহয় ভাল হত! তাহলে তখন হয়তো মেয়েটি বাবার পরিচয়
অস্বীকার করতো না!(fb Forhad Wasi)


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!