Monday, March 27, 2017

নামাযের যে সকল মাসআলায় কথিত আহলে হাদীস লা মাযহাবি ভাইদের দলিল নেই।[পর্ব-১২]

কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, প্রচার করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।

কথিত আহলে হাদীস ওরফে লা-মাযহাবি ভাইয়েরা! কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন!

১৫১
দুই সেজদার মাঝে জিকির বলা কি ফরজ, না ওয়াজিব না সুন্নত? যদি কেউ না পড়ে তাহলে তার নামায হবে কি? না বাতিল হবে?
১৫২
ইমাম বায়হাকী ২/২২২ এবং ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীস ২/১৪৮ এ আহাদীস ও চার ইমামের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে পার্থক্য আছে। গায়রে মুকাল্লিদরা এসকল হাদীস ও ইজমার বিপরীত শুধু কিয়াসের উপর নির্ভর করে বলে যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। হাদীসের চেয়ে তাদের কাছে কিয়াস এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? অথচ কিয়াসকে হারাম বলে ফাতাওয়া দিতেই পারঙ্গম তারা।
১৫৩
রুকু সেজদার তাসবীহ আরবীতে বলা জরুরী? যদি কেউ আরবীতে না বলে অন্য ভাষায় বলে তাহলে তার নামায হবে কি?
১৫৪
এক ব্যক্তি এক সেজদার পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেছে, দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে স্মরণ হয়েছে, এখন সে নামায কিভাবে পূর্ণ করবে? স্পষ্ট সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ দিন।

গায়রে মুকাল্লিদগণ সুন্নত বিরোধী

ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীসের ৪ নং খন্ডের ৩০৬ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করার হাদীস নিঃসন্দেহে সহীহ। এটা রাসূল সাঃ এর শেষ বয়সের আমল। নিঃসন্দেহে এর উপর আমলকারী মৃত সুন্নতকে জিন্দাকারী। তাই একশত শহীদের সওয়াব পাবে।
গায়রে মুকাল্লিদরা এ সুন্নতের বিরোধী। তাই এর উপর আমল করে না।
১৫৫
বিতর নামাযে রুকু থেকে উঠে দুআর মত হাত উঠিয়ে দুআয়ে কুনুত পড়া, আর মুখে হাত বুলিয়ে সেজদা করা কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
জলসায়ে ইস্তারাহাত তথা সেজদা থেকে দাঁড়ানোর আগে কিছুক্ষণ বসা ও গায়রে মুকাল্লিদদের ধোঁকা

১৫৬
কোন সহীহ সরীহ হাদীসে একথা আছে কি যে, জলসায়ে ইস্তিরাহাত সুন্নতে মুআক্কাদা?
১৫৭
জলসায়ে ইস্তিরাহাতে কোন জিকিরও আছে কি? এটা اقم الصلاة لذكرى এর খেলাফ নাকি না?
১৫৮
জলসায়ে ইস্তিরাহাতের পর আল্লাহু আকবার বলে উঠাও কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? যখন তাকবীর প্রমাণিত নয়, তাই এটি সুন্নত বা মুস্তাহাব হতে পারছে না। কেননা, ইস্তিরাহাতের পর তাকবীর থাকলে তাকবীরের সংখ্যা দাঁড়ায় কত? অথচ রাসূল সাঃ তাকবীরে সংখ্যা বলেছেন ২২টি। তাহলে এ অতিরিক্ত কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
১৫৯
রাসূল সাঃ সেজদার পর সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়ার হুকুম দিয়েছেন। {সহীহ বুখারী-১/৯৮৬}
হযরত আবূ মালেক আশআরী রাঃ যখন তারা পুরো কওমকে রাসূল সাঃ এর নামাযের পদ্ধতি শিখালেন, তখন তিনি প্রথম তাকবীরের পর রফয়ে ইয়াদাইন তথা হাত উঠানো শিখিয়েছেন। কিন্তু জলসায়ে ইস্তিরাহাত শিখাননি। {মুসনাদে আহমাদ-৫/৩৪৩}
ইমাম শা’বী বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর সাহাবাগণ জলসায়ে ইস্তিরাহাত করতেন না।
হযরত নুমান বিন আবী আইয়্যাশ বলেনঃ আমিঅনেক সাহাবার সাথে সাক্ষাৎ করেছি, তাদের কাউকে জলসায়ে ইস্তিরাহাত করতে দেখিনি।
আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাঃ, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ, আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা রাঃ, হযরত ইবনে ওমায়ের রাঃ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ কেউই জলসায়ে ইস্তিরাহাত করতেন না। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৯৪}
আইয়ুব সাখতিয়ানী রহঃ বলেনঃ আমি এক বুড়ো ওমর বিন সালামাকে ছাড়া কাউকে জলসায়ে ইস্তিরাহাত করতে দেখিনি। {বুখারী-১/১১৩}
ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহঃ বলেনঃ ইমাম মালিক রহঃ, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ, ইমাম আওযায়ী রহঃ, ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহঃ ও জলসায়ে ইস্তিরাহাত এর প্রবক্তা ছিলেন না। {তামহীদ,কিতাবুল হজ্জ্ব-১/৩১৭}
ইমামে আজম বলেনঃ সুন্নত এটাই যে, জলসায়ে ইস্তিরাহাত না করে সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়া। হ্যাঁ বার্ধক্যজনিত কারণে বা এ জাতীয় ওজরের কারণে যদি কেউ সোজা উঠতে না পারে, তাহলে ওজরের কারণে জলসায়ে ইস্তিরাহাত করে উঠবে। {তামহীদ, কিতাবুল হজ্জ্ব-১/৩১৫}
গায়রে মুকাল্লিদ নাসীরুদ্দীন আলবানী যার উল্লেখ ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীস এর ৩ নং খন্ডের ১৭৬ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে, তিনি বলেন যে, জলসায়ে ইস্তিরাহাত শরীয়ত সম্মত নয়। শুধু প্রয়োজনের জন্য। {আরদাউল গলীল–২/৮৩}
১৬০
মৌলবী ইউসুফ জিপুরী “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এর ১৯৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, জলসায়ে ইস্তিরাহাত না করার হাদীস জঈফ। [শরহে বেকায়া-১০১]
এ বক্তব্য শরহে বেকায়ার উপর প্রকাশ্য মিথ্যাচার। এরকম কোন কথা শরহে বেকায়ায় নেই।
১৬১
শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী গায়রে মুকাল্লিদ লিখেনঃ প্রতিটি রাকাত আওজুবিল্লাহ দিয়ে শুরু কর। {সীফাতু সালাতুন্নবী-১৩৭}
এ কথা রাসূল সাঃ এর কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
১৬২
দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ফরজ, ওয়াজিব না সুন্নত? যদি কেউ ভুলে দাঁড়িয়ে যায়,তাহলে সেজদায়ে সাহু করবে? না নামায বাতিল?
মাঝখানের বৈঠক ও শেষ বৈঠক নিয়ে একটু ভাবুন!
১৬৩
যে সমস্ত গায়রে মুকাল্লিদরা বেতের নামাযে দুই রাকাতের পর তাশাহুদ পড়ে না তারা কি ফরজ তরক করে, না ওয়াজিব না সুন্নত?
১৬৪
হাকীম সাদেক শিয়ালকুটি বেতের সম্পর্কে لا يقعد ওয়ালা যে হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এর রাবীর মাঝে শাইবান হল জঈফ, আবান মুনফারিদ আর কাতাদা হল মুদাল্লিস। আর মুস্তাদরাকে অধিকাংশ নুসখায় এ বর্ণনা বিদ্যমান নয়। এ কারণেই মৌলবী আব্দুর রউফ গায়রে মুকাল্লিদও এ কথা স্বীকার করেছেন যে, এ বর্ণনাটি এ শব্দে বর্ণনা করা দোষমুক্ত নয়। {হাশিয়ায়ে সালাতুর রাসূল-৩৯১}
ইমাম বায়হাকী রহঃ এটাকে ভুল সাব্যস্ত করেছেন। {সুনানে বায়হাকী-৩/২৮}
আলবানী সাহেবও এটাকে “শাজ” বলে মন্তব্য করেছেন। {আরদাউল গলীল}

(চলবে ইনশাআল্লাহ)


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!