Monday, March 27, 2017

আহলে বিদয়াত রেজভিদের ধুম্রজাল সৃষ্টির…জবাব

উলামায়ে দেওবন্দের দৃষ্টিতে মিলাদুন্নবী উদযাপন, নাকি মিলাদুন্নবী আলোচনা....? কোনটি বিদআত আর কোনটি জায়েজ.....?
.
১৩২৪ হিজরীতে হারামাইন শারীফাইনের উলামায়ে কেরাম দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের কাছে যে ২৬টি প্রশ্ন করেছিলেন তন্মধ্যে একটি ছিল মীলাদুন্নাবী সাঃ এর সম্পর্কে।
.
হারামাইনের উলামায়ে কেরামের জওয়াবে উলামায়ে দেওবন্দের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ ও “বাজলুল মাজহূদ ফী শারহে আবি দাউদ” কিতাবের লেখক, মাওঃ খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ “ আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ” পুস্তক আরবী ভাষায় লিখে যে জওয়াব দিয়ে ছিলেন তার আলোকে জবাব নিম্নে দেয়া হল-
প্রশ্ন –
.
ﺍﻟﺴﻮﺍﻝ : ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﻭﺍﻟﻌﺸﺮﻭﻥ ” ﺃﺗﻘﻮﻟﻮﻥ ﺃﻥ ﺫﻛﺮ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﺷﺮﻋﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺎﺕ ﺍﻟﺴﻴﺌﺔ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﺃﻡ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ –
.
প্রশ্নকারীর প্রশ্নের ধরণের দিকে খেয়াল করুন-
.
ﺃﺗﻘﻮﻟﻮﻥ ﺃﻥ ﺫﻛﺮ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﺷﺮﻋﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺎﺕ ﺍﻟﺴﻴﺌﺔ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﺃﻡ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ –
.
অনুবাদঃ হযরত নবীয়ে পাক সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম আলোচনাকে আপনারা বিদআতে সাইয়্যিআ মুহাররামা (নিন্দনীয় বিদাত যা হারাম) অথবা অন্য কিছু বলে থাকেন কি না.....?
.
দেওবন্দের তরফ থেকে উত্তরদাতা উক্ত প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরের ভাষ্যের দিকে এবার গভীর ভাবে লক্ষ্য করুন –
.
ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ : ﺣﺎﺵ ﺃﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ
ﻓﻀﻼ ﺍﻥ ﺗﻘﻮﻝ ﻧﺤﻦ ﺍﻥ ﺫﻛﺮﻭﻻﺩﺗﻪ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﺑﻞ ﻭﺫﻛﺮ ﻏﺒﺎﺭ ﻧﻌﺎﻟﻪ ﻭﺑﻮﻝ ﺣﻤﺎﺭﻩ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺎﺕ ﺍﻟﺴﻴﺌﺔ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ
.
অনুবাদ , হযরত নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারাক জন্মের আলোচনা এমন কি তাঁর পাদুকা সংশ্লিষ্ট ধূলি অথবা তাঁর বাহন গাধাটির প্রশ্রাব-পায়খানার আলোচনাকে আমরা কেন, কোন সাধারণ মুসলমানও বিদআতে মুহাররমা বা হারাম বলতে পারেনা।”
.
কিন্তু উনাদের জবাব এতটুকুর ভেতর শেষ হয়ে যায়নি। বরং সে সাথে উনাদের আরো একটি বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য ছিল। আর তা হল এই-
লক্ষ্য করুন –
.
ﺑﺸﺮﻁ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻘﺮﻭﻧﺎ ﺑﺼﺪﻕ ﺍﻟﻨﻴﺔ ﻭﺍﻻﺧﻼﺹ ﻭﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﻛﻮﻧﻪ ﺩﺍﺧﻼ ﻓﻰ ﺟﻤﻠﺔ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ ﻏﻴﺮ ﻣﻘﻴﺪﺑﻮﻗﺖ ﻣﻦ ﺍﻷﻭﻗﺎﺕ ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻛﺬﻟﻚ ﻻﻧﻌﻠﻢ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺃﻥ ﻳﺤﻜﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻜﻮﻧﻪ ﻏﻴﺮ ﻣﺸﺮﻭﻉ ﺃﻭﺑﺪﻋﺔ ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮﺍﻟﻔﺘﻮﻯ
.
অনুবাদ – তবে শর্ত হল, বিশুদ্ধ নিয়্যাত ও পরিশুদ্ধ আকিদা মাফিক হতে হবে এবং রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কোনো অতিউত্তম আলোচনা যদি দিন ও দিবসের সাথে সীমাবদ্ধ না করা হয় (অর্থাৎ খাসভাবে কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য করে না হয়), তো এমন কাজের ব্যাপারে কোনো মুসলিম শরীয়ত বিরুধী এবং বিদআতের হুকুম লাগায় বলে আমাদের জানা নেই।”
.
এরপর উনাদের বক্তব্যের আরো একটি অংশ খেয়াল করুন –
.
ﻭﻓﻰ ﻓﺘﺎﻭﻯ ﻣﺸﺎﺋﺨﻨﺎ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﻓﺘﻮﻯ ﺃﺣﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ ﺍﻟﺴﻬﺎﺭﻧﻔﻮﺭﻯ ﺗﻠﻤﻴﺬ ﺍﻟﺸﺎﻩ ﻣﺤﻤﺪ ﺇﺳﺤﻖ ﺍﻟﺪﻫﻠﻮﻯ ﺛﻢ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮ ﺍﻟﻤﻜﻰ ﻧﻨﻘﻠﻪ ﻣﺘﺮﺟﻤﺎ ﻟﺘﻜﻮﻥ ﻧﻤﻮﻧﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺳﺌﻞ ﻫﻮﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻦ ﻣﺠﻠﺲ ﺍﻟﻤﻴﻼﺩ ﺑﺄﻯ ﻃﺮﻳﻖ ﻳﺠﻮﺯﻭﺑﺄﻯ ﻃﺮﻳﻖ ﻻﻳﺠﻮﺯ ﻓﺎﺟﺎﺏ ﺑﺄﻥ ﺫﻛﺮﺍﻟﻮﻻﺩﺓ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ﻟﺴﻴﺪﻧﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺮﻭﻳﺎﺕ ﺻﺤﻴﺤﺔ ﻓﻰ ﺃﻭﻗﺎﺕ ﺧﺎﻟﻴﺔ ﻋﻦ ﻭﻇﺎﺋﻒ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻮﺍﺟﺒﺎﺕ ﻭﺑﻜﻴﻔﻴﺎﺕ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻣﺨﺎﻟﻔﺔ ﻋﻦ ﻃﺮﻳﻘﺔ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻭﺃﻫﻞ ﺍﻟﻘﺮﻭﻥ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﺍﻟﻤﺸﻬﻮﺩ ﻟﻬﺎ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮ ﻭﺑﺎﻹﻋﺘﻘﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﺘﻰ ﻣﻮﻫﻤﺔ ﺑﺎﻟﺸﺮﻙ ﻭﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻭﺑﺎﻻﺩﺍﺏ ﺍﻟﺘﻰ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻣﺨﺎﻟﻔﺔ ﻋﻦ ﺳﻴﺮﺓ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟﺘﻰ ﻫﻰ ﻣﺼﺪﺍﻕ ﻗﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﺎﺍﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻰ
.
অনুবাদ – আমাদের পূবর্সুরীগণ তাদের ফাতাওয়ায় যেমন মাওঃ আহমদ আলী সাহরানপুরী রহঃ যিনি শাহ মোহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী রহঃ এর শিষ্য এবং ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃ এর শিষ্য আহমদ আলী সাহরানপুরীর ফাতওয়া আমরা অনুবাদ করে প্রকাশ করেছি। যা আমাদের সকল লিখনীর মডেল বলে মনে করি।
মাওঃ সাহেবকে কেউ প্রশ্ন করল.....? নবীজির সা: জন্মালোচনা (মিলাদুন্নবী) কোন রুপরেখায় জায়েয...?
.
তদুত্তরে তিনি লিখেন যে, রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মালোচনা যদি আবশ্যিক ইবাদাতের সময় থেকে মুক্ত এবং বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত সমূহের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামসহ কুরুনে ছালাছা (উত্তম তিন যুগ)’র তরীকার বিপরীতমুখী বা পরিপন্থী না হয়, (যে যুগ উত্তম যুগ হিসাবে প্রমাণিত) শিরকের সাথে সম্পকির্ত কোনো আকীদা সংশ্লিষ্ট না হয়, সাহাবায়ে কেরামের আদাব বা শিষ্টাচার পরিপন্থী না হয়, তবে তা মুস্তাহাব ব্যতিরেকে অন্য কিছু হবার কোন অবকাশ নেই। কেননা তারাই তো মাপকাঠি বা মেছদাক।”
.
এবার আমাদের জানতে হবে যে, যে আমলটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা শরীয়ত কর্তৃত নির্ধারিত নয়, সেটিকে বিশেষ কোনো মাস বা দিবসের সাথে নির্দিষ্ট করলে (কোনো মাস বা দিবসকে উপলক্ষ্য করার দ্বারা) সঠিক হবে কিনা? [ফাতওয়ায়ে আজীজিয়্যাহ ১/১৯৯-তে লেখা আছে যে,]
.
হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস আদ দিহলভী রহঃ -কে প্রশ্ন করা হয়ে ছিল “রবিউল আওয়াল মাসে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে এর সাওয়াব হুজুরেপাক সাঃ এর রূহ মুবারকে পৌঁছালে কি জায়েজ হবে.......?”
.
তিনি উত্তরে বলেছেন-
.
ﺟﻮﺍﺏ : ﺍﻧﺴﺎﻥ ﮐﻮ ﺍﺧﺘﯿﺎﺭ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺍﭘﻨﮯ ﻋﻤﻞ ﮐﺎ ﺛﻮﺍﺏ ﺑﺰﺭﮔﻮﮞ ﮐﻮ ﭘﻨﮩﭽﺎﮰ ﻟﯿﮑﻦ ﮐﻮﺉ ﻭﻗﺖ ﺩﻥ ﺍﻭﺭ ﻣﮩﯿﻨﮧ ﻣﻘﺮﺭ ﮐﺮﻧﺎ ﺑﺪﻋﺖ ﮨﮯ . ﺍﻟﺒﺘﮧ ﺍﮔﺮ ﮐﻮﺉ ﻧﯿﮏ ﮐﺎﻡ ﺍﯾﺴﮯ ﻭﻗﺖ ﻣﯿﮟ ﺧﺎﺹ ﮐﺮﮐﮯ ﮐﺮﮮ ﮐﮧ ﺍﺱ ﻭﻗﺖ ﻣﯿﮟ ﺛﻮﺍﺏ ﺯﯾﺎﺩۃ ﮨﻮﺗﺎ ﮨﮯ ﺗﻮ ﺍﺳﻤﯿﮟ ﻣﻀﺎﺋﻘﮧ ﻧﮩﯿﮟ . ﻣﺜﻼ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺮﯾﻒ ﻣﯿﮟ ﺍﻟﺦ
.
অর্থাৎ নিজের আমলের সাওয়াব কোনো বুজূর্গ ব্যক্তিকে বখশিশ করার অনুমতি মানুষের রয়েছে। তবে এর জন্য (শরীয়ত অনুমোদিত নয় এ রকম) কোনো মাস বা দিনকাল নির্দিষ্ট করা বিদয়াত।”
.
তিনি তাঁর বক্ষমান গ্রন্থ ‘ তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া ‘ কিতাবে প্রচলিত মিলাদুন্নবী উদযাপনকে শিয়াদের মুহররম উদযাপনের সাথে তুলনা করে তার নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন “শিয়াদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।”
উলামায়ে দেওবন্দের উপরোক্ত দীর্ঘ বক্তব্যে কেউ কি কোনো গলদ ধরিয়ে দিতে পারবেন....?
.
আর সাম্প্রতিককালে প্রচলিত কথিত মিলাদুন্নবী পালনকারীরা উনাদের পক্ষ হতে বেধে দেয়া শর্ত মেনে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মালোচনা করে কিনা? অবশ্যই করেননা।
.
বছরন্তর ১২ ঈ রবিউল আওয়ালে বিদআত পন্থীরা দেশব্যাপী যে লংকাকাণ্ড শুরু করে, সেটাও কি মিলাদুন্নবী......?
.
উলামায়ে দেওবন্দের উপরোক্ত দীর্ঘ বক্তব্য পরিপন্থী বিদআতীদের এ সমস্ত লংকাকাণ্ডের ব্যাপারে এবার আপনার কি ফতুয়া.......?
.
আশাকরি উলামায়ে দেওবন্দের প্রতি বিদআতী রেজভিদের পক্ষ থেকে ঢালাও ভাবে মিলাদুন্নবী উদযাপনের নেসবত কতটা সঠিক তা বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ উলামায়ে দেওবন্দের দৃষ্টিতে মিলাদুন্নবী উদযাপন নয়, বরং সহিহ কায়দায় মিলাদুন্নবী আলোচনাই শরিয়াহ অনুমোদিত। যেখানে কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য করা হবেনা এবং কিয়ামী প্রথার যোগসাজশ থাকবেনা।
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!