কত বড় আবাল জ্ঞানী মার্কা প্রশ্ন!! আমার জীবনে প্রথমবার এই রকমের প্রশ্ন জানা হয়েছিল মহাখালী ওয়ারলেসের পথ ধরে হাটার সময় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া খ্রিষ্টান মিশনারীদের একটা লিফলেট পড়ে। গ্রাফিক্যাল ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল সোনারগাও হোটেল এবং তখনকার সময়ে ঐ হোটেলের বস্তির ছবিটি। উচ্চবিত্ত নিম্নবিত্তের পার্থক্য বুঝাতে ছবিটি ব্যবহার করা হয়, সাথে কি একটা ইন্ডিকেটর ছিল হয়তো।
আল্লাহর রহমতে সেইটা আমার উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। ঘটনাটা ১৯৯৯ সনের সম্ভবত। তখন তো শুধু এতটুকু ভেবেছিলাম এই সস্তা লজিক ক্ষুধার্ত এবং অতি উদার মানসিকতার লোকদের কাবু করতে পারে। তারপর এইটা নিয়ে এত ভাবার সুযোগ হয়নি। ফেবু তখন থাকলে তো পোস্ট মারতাম। বর্তমান বাস্তবতা সেই লিফলেটের থিউরীতেই তারা সফলও হচ্ছে আমাদের গন্ডমুর্খতার দুর্বলতার সুযোগে। আসুন বাস্তবতায় নজর দেই।
রকিব সাহেব টি আর প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর। খুবই সৎ, কারো হক নষ্ট করেন না, দয়ালু, নীতিবান মানুষ।
উনি কয়েকজন ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছেন যারা প্রত্যেকে উনার প্রতিনিধি হইয়া কাজ করবে, কোম্পানীর দেখভাল করবে। সততার অঙ্গীকার নিয়েই তারা দায়িত্ব গ্রহণ করে। প্রথম কিছুদিন তারা ভালই চালাচ্ছিল। জীবনের চলার পথে ৩ জন ম্যানেজার তাদের অসৎ ব্যক্তিদের পরামর্শে সেই সততার অঙ্গীকার থেকে সরে এসে অধিনস্থদের অধিকার, হক থেকে বঞ্চিত করতে থাকে। রকিব সাহেব ঝামেলা এড়াতে ম্যানেজারদের সাথে একটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেছিল যে তারা দুর্নীতি করলে সাজা দিতে পারবেন তবে ফায়ার তথা চাকুরীচ্যুত করা যাবেনা। অসৎ হয়ে যাওয়া ম্যানেজার ত্রয় সেই সুযোগটাই নিলো। অধিনস্তরা খুবই মর্মাহত প্রতিষ্টানের এহেন দুর্নীতি চর্চা দেখে। বাকি একজন সব কিছুই দেখতেছিল কালের সাক্ষী হিসেবে। চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বিভিন্নভাবে অভিযোগ জমা হচ্ছিল। এদের এমন দুর্নীতির পরও তাদের পদোন্নতি থেমে নেই। তাতে করে অধিনস্তরা আরো হতাশ হলো। কালের সাক্ষীও অস্থির হয়ে উঠলো কি করা যায়। অধিনস্তরা দিশেহারা হয়ে চেয়ারম্যানকে গালি-গালাজ শুরু করল।
এমনকি চেয়ারম্যান নাকি প্রতিষ্টান তিন ম্যানেজারোর কাছে দিয়ে দিছে অপবাদ দিতে লাগল। চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতা বলে দুইজনকে তিন মাসের সাজা স্বরুপ ওএসডি (বাফারিং টাইপের সাজা) করল। প্রতিষ্টান তো অসৎ ব্যক্তির কারণে ধ্বংস করে দেয়া যায়না এত সহজে। বাকি অসৎ জনের থেকে মিটিং করে সংশোধন হয়ে পুনরায় সততার সহিত করবে বলে অঙ্গীকার নিলেন, সুযোগ দিলেন। এরকমই একটা মোক্ষম সময়ে বিরোধী পক্ষ চেয়ারম্যানের নামে কুৎসা রটালো দুর্নীতিবাজ, অনভিজ্ঞ, অক্ষম ইত্যাদি লকবে। নিন্দুকের কথায় নিমুক খাওয়া কেউ কেউ সুরও মেলালো। চেয়ারম্যান সবই শুনেছেন তবে এত বছরের পুরনো মহব্বতের অধিনস্থদের কথায় কান দেননি। বড়র মনও তো বড় হওয়া চাই। উনারা ফিরে আসল স্বপদে সাজার মেয়াদ শেষে।
আবার আগের মত চলতে থাকল প্রতিষ্টান। অনেক বছর পর চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চুক্তিনামা শেষ হওয়ার আগেই পুরো প্রতিষ্টানের প্রায় সবাই অসৎ হয়ে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব প্রতিষ্টান বন্ধ করে দিয়ে অসৎদের জেলে পাঠিয়ে দেয়।
বিবেকবানরা বলুন এগল্পে চেয়ারম্যান সাহেব কি অপরাধী কিনা?
মানুষ নামক প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালা প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন কিছু দায়িত্ব দিয়ে। মানুষ পৃথিবীতে এসে সেই অঙ্গীকার ভুলে গেছে শয়তানের (অসৎ ব্যক্তি) প্ররোচনায়। যে কারণে মাঝপথে থেকে গরীবের হক আদায় না করে নিজেই সোনারগাও হোটেলে বসে বসে আলিশান জীবন যাপন করছে, পাশের বস্তির মানুষ না খেয়ে অনাহারে ধুকছে। মানুষ অতি সহজেই তার অপরাধটা স্রষ্টার উপর চাপিয়ে দেয়। নিজের দায়িত্ব অবহেলার দায়টা নিতে চায়না। নিজে পড়ছে নর্থ সাউথে পাশের বাড়ির ছবির আলী স্কুলেই যেতে পারছেনা। নিজে খাচ্ছে ভদকা, ফুটপাতের ওরা বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছেনা। তবে তুমি মানুষ কোন সততার বলে স্রষ্টাকে দোষারোপ করো বল, মানুষ তুমি বল???
রাতভর লা-লিগা গেইম দর্শন, আইপিল দেখাইকি তুমি মানবতার মানুষের কাজ? তুমি তো মানুষ তথা সমগ্র বিশ্বের হক নষ্ট করছ। সমাজে সুদ, ঘুষ, ধর্ষণ যত খারাপ কাজ আছে তুমি মানুষই করছ? তাহলে বল তুমি মানুষ কোন মুখে সকল দায় স্রষ্টার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে ভাল হওয়ার ভান করো?? আমরা এবার দেখব পৃথিবীতে সম্পদের হক অনাদায় এবং অপচয়ের কারনে কিভাবে গরীবের হক নষ্ট করছি।
"Food Waste Is Becoming Serious Economic and Environmental Issue, Report Says
এই শিরোনামে নিউ ইয়র্ক টাইমসে ২০১৫-তে একটি রিপোর্ট আসে। ওখানে খাবার অপচয়ের ভয়াবহ চিত্র তুলে ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি খাদ্য অপচয়ের একটা প্রভাব প্রকৃতির উপরও পড়ছে সেইটাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঢাকাতে প্রতিদিন কত টন খাবারযোগ্য খাবার নষ্ট হয় তার হিসেব নেই। তবে চোখে দেখার অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তাদের জন্য আশা করি ছবি বা ভিডিও দেখানোর দরকার নেই। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার, বিয়ে বাড়ি, প্রতিদিনের কর্পোরেট অফিসগুলোর খাদ্যের অপচয়ের জরিপ যদি করা হয় আমি নিশ্চিত আপনি টাশকি খাইবেন। আর আমেরিকা সৌদিয়ানদের অপচয়ের ফিরিস্তি আশা করি সবারই জানার কথা।
উপসংহারে যা আসে তা হলো স্রষ্টা নেই অজুহাত ”গরীব কেন অনাহারে” এইটা কতটা ছেলে মানুষী অভিযোগ, আপনিই বলুন। হ্যা স্রষ্টা ধরবে একদিন চুক্তি অনুযায়ী সময় শেষ হোক, কবর জীবন থেকেই শুরু হবে। ঐ যে সাজার কথা বলেছিলাম মনে আছে তো! মানুষের ওএসডি মার্কা সাজাগুলো হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জ্ঞীনারা একটু ভেবে দেখবেন কি, কতটা স্থুল চিন্তার বিষয় স্রষ্টা নেই ”গরীব অনাহারে” এই দোহায় দিয়ে?
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন... আমিন।
নোট: বিশেষ কেউ উপকৃত হবেন এই আশা রেখে এত বড় বয়ান।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!