শিশুদেরকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হলে , একদিন তারাই এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে । ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত বলতে আমি মাদ্রাসায় পড়ানোর কথা বলছি না । শিশুদের মন-মানসিকতায় ইসলামির প্রতি মহব্বত , প্রাথমিক আকিদা সমন্ধে জানা ( তৌহিদ , রেসালত , কিয়ামত , পরকাল, ফেরেশতা , কবরের জগৎ ) , নবী-রসুল, সাহাবাদের প্রতি মহব্বত এই সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় চিন্তা চেতনায় উজ্জীবিত করে তোলা । সর্বোপরি আরোও একটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে শিখানো সেটা হলো “আদব” বা ” ইসলামিক ভদ্রতা” ( Islamic Manner ) । বর্তমান সমাজ ব্যবস্হাকে আমরা কোনোক্রমেই অস্বীকার করতে পারি না । তাই আপনার সন্তান স্কুলে অধ্যায়ন করলেও, সকল ব্যাস্ততার মাঝেও তাদের যেন ইসলামিক চেতনায় উজ্জিবিত করা যায় , এমন কিছু প্রচেষ্টা নিয়েই আজকে আলোচনা করব । প্রথমে শিশুদের শিক্ষা বিষয়ক কিছু অমুল্য হাদিস শরীফ উল্লেখ করব :
হাদিস শরীফ ১: রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বলেন “কোনো পিতা তার সন্তানকে এর থেকে উত্তম উপঢৌকন প্রদান করতে পারেন না , তিনি তাকে যে উত্তম শিক্ষা ( ইসলামিক শিক্ষা ) প্রদান করেন” । ( তিরমিযী )
হাদিস শরীফ ২: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ননা করেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বলেন “শিশুর যখন কথা ফুটতে শুরু করবে তখন সর্ব প্রথম তাকে কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” শিখাবে , আর মৃত্যুকালেও তাদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র তালকীন দিবে । কেননা যার প্রথম বাক্য “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং শেষ বাক্য “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হবে সে যদি হাজার বছরও বেচে থাকে তাহলে তাকে কোনো গোনাহ ও পাপের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না ( বায়হাকী ) ।
হাদিস শরীফ ৩: হযরত আলী (রা:) হতে বর্নিত রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন তোমরা স্ব স্ব সন্তানদেরকে তিনটি স্বভাবের অনুসারী করে গড়ে তোলো ১) তাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এর প্রতি ভালোবাসা শিক্ষা দাও । ২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এর বংশধরদের প্রতি ভালোবাসা শিক্ষা দাও ৩) তাদের মধ্যে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যেস গড়ে তোলো । কেননা আল কোরআনের ধারক ও বাহকরাই সেদিন আম্বিয়া কেরাম এবং সাধু সজ্জনদের সাথে আরশের ছায়ায় অবস্হান করবে যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না । ( তিবরানী )
উপরের হাদিস শরীফ গুলোর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু । এবার আসুন ৪ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুদের ইসালামিক শিক্ষা দেবার ক্ষেত্রে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে অগ্রসর হতে পারি সে সম্বন্ধে কিছু পর্যালোচনা :
প্রাথমিক শিক্ষা
একটি শিশু ৪/৫ বছরের হলে সাধারনত আমরা তাদের স্কুলে দিয়ে থাকি । ৪ বছরে না দিয়ে বরং ৫ বছরে তাদের স্কুলে দেয়া যেতে পারে । এবং এর পরিবর্তে এই ১ বছর তাদের ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যেতে পারে । ১ টি বছর । খুব বেশী নয় । ১৫/২০/২৫ বছর মাস্টারস ডিগ্রি , হনার্স ডিগ্রি অর্জন করার জন্য আমরা ব্যয় করে থাকি । আমরা কি পারি না জীবনের শুধুমাত্র একটি বছর সন্তানের শিক্ষার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার উদ্দেশ্য উৎসর্গ করতে ? এই ১ বছরে যদি শিশুদের চেতনায় ইসলামের প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলা যায় , তাহলে পরবর্তিকালে দেখবেন অল্প অল্প করে তারাই ইসলামিক বিষয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে । নাস্তিক বা প্রগতিবাদের নামে ইসলামের সমালোচনা করবে না ।
সাধারনত দেখা গেছে , যেসব শিশু ছোটকালে কিছুটা হলেও ইসলামকে জেনেছে, নবীজীর জীবনি পড়েছে , আদব-কায়দা ( Proper Attitude ) শিখেছে , তারা কখনও নাস্তিক হয় না ।
আগে নিজে শুদ্ধ হোন:
শিশুদেরকে যেকোনো বিষয় শিখানোর পরিবর্তে আগে ভালোমতো খেয়াল করুন , আমাদের মধ্যে সেই দোষটা বা গুনটা আছে কিনা ? “সবসময় সত্য কথা বলিবে” এটা শিখানোর আগে বাবা-মা-দের সত্য কথা বলার অভ্যসে করা উচিত । আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ শিশু মনযোগ দিয়ে খেয়াল করছে । তাই আগে আমাদের ঠিক হতে হবে ।
টিভির থেকে দুরে রাখুন
শিশুদেরকে ভয়ংকর নেশা এবং বিষতুল্য “টেলিভিশন” এর প্রতি আগ্রহি করে তুলবেন না । অনেক শিশু আছে “কার্টুন” না দেখলে খাবার খায় না । এটা অভ্যসের ব্যাপার । এটা পরিত্যাগ করুন । আজ টেলিভিশন এর মাধ্যমে যেভাবে পশ্চিমা নির্লজ্য সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করছে সেটার থেকে আপনার সন্তানকে দুরে রাখুন । অনেকে বলে থাকে “টেলিভিশন” এর মাধ্যমে জ্ঞান চর্চা হয় । তাহলে আমার প্রশ্ন
১) গত এক মাসে যদি আপনারা কেউ টেলিভিশন নিয়মিত দেখে থাকেন তাহলে কি বলতে পারেন এই সময়ের মধ্যে আপনি কি এমন কোনো প্রোগ্রাম দেখেছেন যেটাতে শিখিয়েছে “সবসময় সত্য কথা বলা উচিত, বাবা মার সেবা করা উচিত , স্রষ্টাকে চেনা উচিত , রোগীদের সেবা করা উচিত ? ” । এর উত্তর “না” । এমন প্রোগ্রাম আজকাল মিডিয়াতে দেখানো হয় না । আজকাল দেখানো হয় “লাক্স সুন্দরী, ফেয়ার এন্ড লাভলী, ভারতীয় অপসংস্কৃতির পরকীয়া প্রেমের রগরগে কাহিনী” ইত্যাদি । নয় কি ? আমরা শুধু শুনেই এসেছি , টিভির মাধ্যমে মুক্তমনের বিকাশ হয়, জ্ঞানের চর্চা হয় । কিন্তু কখনও বিচার করে দেখিনি কথাটা কতটুকু সত্য । আজ অন্তত ২ মিনিটের জন্য হলেও বিচার করুন, চিন্তা করুন । ইনশাল্লাহ আল্লাহর মর্জি হলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন ।
Alternate Entertainment এর ব্যবস্হা করুন :
শিশুরা যাতে টিভি, নাটক, গান এগুলোতে অভ্যস্হ না হয়ে ওঠে সেজন্য তাদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন । বাসায় লাইব্রেরী গড়ে তুলুন । প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে অন্তত: একদিন কিছু সময় আপনি তাদের সাথে বসে ধর্মিয় বিষয়ে আলোচনা করুন । নির্দিষ্ট কোনো বই নিয়ে তাদের পড়ে শুনান । নবী রসুলদের কিংবা সাহাবীদের , পুর্ববর্তি সলফে সালেহীনদের জীবনী হলে আরো ভালো হয় ।
কিছু বই আপনি পাবেন যারা বাচ্চাদের উপযোগী বর্ননাসমৃদ্ধ করে বের করেছে ( যেমন বাংলাপ্রকাশের নবীদের জীবনি নিয়ে লেখা ছোটদের বই ) , সেগুলো সংগ্রহ করে অল্প অল্প করে পড়ে দেখুন এবং তাদের পড়ে শোনান । অনেকে সময় বাচ্চাদের সরাসরি আদেশ করলে তারা শোনে না । সেইজন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তাদেরকে বেশী বেশী করে উপদেশমুলক ঘটনা শোনানো । রিসার্চ করে দেখা গেছে যেকোনো শিশুকেই ঘটনা বললে তারা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে । এই ক্ষেত্রে আমরা তাদের ইসলামিক চেতনাসমৃদ্ধ ঘটনা বেশী বেশী করে বলতে পারি ।
শিশুদেরকে সময় দেয়া :
The best gift you can give to your child , GIFT of your time.
কথাটা সর্বাংশে সত্য । স্বামী-স্ত্রী সারাদিন চাকরিতে ব্যস্তা থাকলে, শিশুরা সাধারনত বুয়াদের কাছে মানুষ হয় । সেই শিশুদের চেতনায় আপনার মন-মানসিকতা থাকবে নাকি বুয়াদের কালচারে বড় হয়ে উঠবে ? । তারা আপনার ভাষা শিখবে , নাকি বুয়াদের ভাষা শিখবে ? যারা সমঅধিকারে বিশ্বাসি তাদের শুধু একটি প্রশ্ন “শিশুকে কে মানুষ করবে ? ” বাবা নাকি মা ? একজন “মা” এর সর্বশ্রেষ্ট ভুমিকা হওয়া উচিত ছিল সে কিভাবে তার শিশুকে জ্ঞান বিজ্ঞান, উন্নত মন-মানসিকতা, পরোপকার ইত্যাদি শিক্ষা দিবে । অথচ এ প্রশ্নের উত্তরে মিডিয়া নীরব । যেন শিশুরা এই জাতির কোনো অংশই নয় । এর পরিবর্তে শিশুদের আজ মিডিয়া নিয়ে এসে এ্যাডভারটাইজমেন্ট করানো হচ্ছে ।
একজন “মা” এর জন্য গৌরবের বিষয় সে তার শিশুকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে । অথচ সেই মাকে আমরা মিছিল, মিটিং, চাকরী ইত্যাদিতে এমন ব্যস্ত করে রেখেছি যে , একজন এয়ার হোস্টেস ১০ টি পুরুষের সেবা করতে পারে ,খবার সার্ভ করতে পারে , অথচ তার বাসায় তার স্বামীকে এক কাপ চা দেয়ার মতো সময় তার নেই, প্লেনে একটি শিশু অসুস্হ হয়ে গেলে সে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিচ্ছে , অথচ তার শিসুকে নাপা সিরাপ দিচ্ছে কাজের বুয়া ।
আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে করপোরেট কালচার আমাদের কি দিচ্ছে ।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!