Friday, April 7, 2017

সত্তরের দশকে বিশ্ব কাঁপানো পপ তারকা। তার সুর আর গানে মেতে ছিল পৃথিবী।

ক্যাট স্টিভেন্স।

সত্তরের দশকে বিশ্ব কাঁপানো পপ তারকা। তার সুর আর গানে মেতে ছিল পৃথিবী। সেই ক্যাট স্টিভেন্স একবার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে গিয়ে জোয়ারের কবলে পড়েন। তিনি স্রোতের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রে ডুবে মরার উপক্রম। সাথে সাথে তিনি তার প্রভুর শরণাপন্ন হলেন। তিনি দোয়া করলেন, হে প্রভু, আমি তোমার সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমার জীবনকে ব্যয় করব। তুমি মেহেরবানি করে আমাকে রক্ষা কর। ব্যস, অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে তিনি বেঁচে গেলেন। সেদিন থেকে তার অন্তরে তৈরি হল সত্যের তলব।সেই সত্য, যার জন্য কাজ করার প্রতিজ্ঞা তার জীবন রক্ষার কারন। কোন সে সত্য? একবার তার ভাই আল কোরআনের ইংরেজি অনুবাদের একটি কপি বাসায় নিয়ে এলেন। ক্যাট স্টিভেন্স সেই কপি উল্টিয়ে দেখলেন। আশ্চর্য বইটিতে মূল লেখকের কোন নাম নেই। ভাবলেন, ছাপার সময় হয়তো লেখকের নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। বইটি নিয়ে চলে গেলেন লাইব্রেরীতে। বইটির অন্য কোন কপি আছে কিনা তালাশ করলেন। লাইব্রেরিয়ান বিভিন্ন পাবলিশার্স এর কয়েকটা কপি তার সামনে রাখলেন। সবগুলোতে একই অবস্হা। লেখকের নাম নেই। তার মনে প্রশ্ন জাগল, Who is the writer? লাইব্রেরিয়ান জানালো এটি মুসলমানদের কিতাব। তারা বলে থাকে, এটি স্রষ্টার প্রেরিত একটি বই। এই জওয়াব তার কৌতূহল নিবারণ করতে পারল না। তিনি ছুটলেন মুসলমানের খোঁজে। পেয়েও গেলেন একজন। জিজ্ঞেস করলেন, কে এই বইয়ের লেখক। জওয়াব এল, এটি আমাদের স্রষ্টা তার নবীর কাছে পাঠিয়েছেন। আচ্ছা মানলাম, কিন্তু Where is the edition? জবাব এল, It is the first edition and the last edition. মানে এডিশন একটিই, এতে আর কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হয়নি। Ok, Where is the preface? বইটির ভূমিকা কই? কেননা প্রতিটি বইয়ে ভূমিকা থাকে, লেখক শুরুতেই স্বীকার করে নেন, বইটি ভুলের উর্ধে নয়। কাজেই কোন ভুল চোখে পড়লে দয়া করে জানাবেন, পরবর্তী এডিশনে সংশোধন করা হবে। অতএব, এই বইয়েরও কোন ভূমিকা থাকা চাই।
জবাব এল,
الم. ذلك الكتاب لا ريب فيه.
It is that book, where there is no doubt.
এটি ঐ বই, যাতে কোন সন্দেহ বা ভুলের কোন অবকাশই নেই।
ক্যাট বললেন, Impossible, অসম্ভব। আমাকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হোক, আমি ভুলগুলো বের করে দিচ্ছি। তো ক্যাট কোরআন পড়া শুরু করলেন। পথের সন্ধানে নয়, ভুলের খোঁজে। কিন্তু ক্যাট ছিলেন সত্যের পুজারী। সত্য গ্রহনে সদা প্রস্তুত। সত্যের তালাশ আগে থেকেই তার মধ্যে উপস্থিত।
কোরআন তার চোখ খুলে দিল। ভুলের সন্ধানে শুরু করলেও কোরআন তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তার নিজের ভুল। কোরআনে তিনি কী পেলেন? দেখলেন, এই কোরআনে বার বার সম্মোধন করা হচ্ছে কিছু মানুষকে। কোরআনের ভাষায় যাদের নাম Believers, বিশ্বাসী। কোরআনের বারংবার আহবান,
يا ايها الذين آمنوا
O believers,
হে বিশ্বাসীগন।
কিসের প্রতি আহবান করা হচ্ছে বিশ্বাসীগনকে? এমন কিছু গুনের দিকে, যা তার নিজের মধ্যেই নেই। সত্য বলা, ইনসাফ কায়েম করা, অপরের কল্যাণ কামনা করা, আমানত রক্ষা করা। এককথায় পুরো মানবজাতির কল্যাণের আহবান আল-কোরআনে। আবার এমন সব দোষ থেকে কোরআন নিষেধ করছে, যা তার মাঝে পুরোপুরি উপস্থিত। জুলুম না করা, মিথ্যা না বলা, অপরের হক নষ্ট না করা। কোরআন ক্যাটের সামনে তোলে ধরল একজন বিশ্বাসীর চরিত্র। ক্যাট মনে মনে খোঁজ করলেন, বিশ্বাসী, কোথায় এরা, কিভাবে এদের পাওয়া যাবে? বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আকাঙ্খা তার অন্তরে। তো, তিনি বিশ্বাসীদের তালাশে বের হলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হল মুসলমানদের এক বসতিতে। তিনি ঐ সকল মুসলমানদের দেখলেন, কোরআনের স্কেল দিয়ে তাদের মাপলেন। তিনি হতাশ হলেন। না, কোরআনে বর্ণিত বিশ্বাসী তো এরা নয়। কারণ ক্যাট যাদের কাছে গেছে, তারা তো আমার মতোই নামে মুসলমান। বিশ্বাসীদের গুনাবলী তাদের মাঝে কোথায়? ক্যাট নমুনা তালাশ করছেন। তাকে যে বিশ্বাসী বনতে হবে। ক্যাট এক বুক হতাশা নিয়ে ফিরে আসলেন। বললেন, যদি তোমরা বিশ্বাসীদের দেখা পেয়ে যাও, তো আমাকে ইনফর্ম করো। কিছুদিন পরে ঐ এলাকায় একটি জামাত এল। ক্যাটকে খবর দেয়া হল। ক্যাট অনেক্ষণ ধরে তাদের দেখলেন। বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে বললেন,
Ok, you seem to be believers, but not 100%, ok, may be 80% or 90%.
তো ক্যাট কোরআন দিয়ে মুসলমানদের যাচাই করে দেখছেন। তারপর তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো হতে চাই। তারা বললেন, দেখো, কোরআনে বর্ণিত বিশ্বাসীদের এসমস্ত গুন অর্জনের জন্য তো চেষ্টা করতে হবে। এগুলো তো শেখার জিনিস। আর শেখার জন্য সময় দিতে হয়। ক্যাট জিজ্ঞেস করল, তোমরা কত সময় চাও? বলা হল, চারমাস। ক্যাট রাজী হয়ে গেল। ঐ জামাত ক্যাট স্টিভেন্সকে কালিমা পড়ালেন। ক্যাটের নতুন নাম রাখা হল ইউসুফ ইসলাম। ক্যাট মুসলমান হয়ে চারমাসের জন্য আসলেন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। এভাবে বদলে গেল একটা জীবন। ক্যাট স্টিভেন্স এখনও ইউসুফ ইসলাম হয়েই চলছেন। মানুষকে ডেকে যাচ্ছেন সত্যের দিকে।


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!