Friday, April 7, 2017

স্মৃতিতে হেফাজতে ইসলামের ঐতিহাসিক লংমার্চ!

আজ ৬ এপ্রিল ঐতিহাসিক লংমার্চ দিবস। ২০১৩ সালের এ দিনে ইসলামের হেফাজতে ঐতিহাসিক মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল বাংলাদেশে। মহানবীকে (সা.) অবমাননাকরী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ (লংমার্চ) অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। শুধু দেশের আলেম-ওলামা, মাদরাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থী নয়,স্কুল-কলেজ ভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের অগণিত ধর্মপ্রেমিক তাওহিদী জনতা হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কাফেলা ও ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে অংশগ্রহন করেছিলেন। নবীপ্রেমিক, দ্বীন-দরদী মুসল্লিদের লংমার্চ ও মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে পথে হামলা ও বাধা দিয়েছিল ইসলাম ও নবী বিদ্বেষী তথাকথিত নাস্তিক ব্লগার ও তাগুত সরকার। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের মদতে বাম ঘরানার ২৭ সংগঠনের হরতালের আহব্বান করে। নাস্তিকদের দোসর এই সরকারের মদদে নজিরবিহীন হরতাল পালন করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার ২৭ সংগঠন। কোটি কোটি নবীপ্রেমিক মুসলমানদের নির্ধারিত সমাবেশ ও আহুত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ বানচাল করতেই শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ইসলাম বিদ্বেষীরা হরতাল পালন করে। সরকারি ছুটির দিনে এবং রাতের বেলা এ ধরনের হরতাল পালনের ঘটনা নিকট-অতীতে ঘটেনি। আবার অপরদিকে একই দাবিতে শুক্রবার সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল নাস্তিক ব্লগার তথা গণজাগরণ মঞ্চের শাহাবাগিরা।

আলহামদুলিল্লাহ! স্বৈরাচারী সরকারের কন্টকাকীর্ণ বাধার বৃত্ত, গুলি , কারাশৃঙ্খলের রক্তচক্ষুসহ বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কূটচালকে চুর্ণ করে; এসব বাধার পাহাড় ডিঙিয়েই সারাদেশ থেকে অর্ধকোটি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন হেফাজতের শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকা পুরোটাই ছিল ধর্মপ্রেমিক জনতার দখলে। এত বাধা-প্রতিন্ধকতা পেড়িয়ে সমাবেশে শরীক হওয়া একমাত্র করুণাময় তায়ালার নুসরতেই সম্ভব হয়েছিল। এ জন্য আন্তরিক শোকর আদায় করছি মহামহীম আল্লাহপাকের শাহী দরবারে।

বড় খুশির বিষয়; রাজধানী বা শহরতিলই শুধু নয়; সুদুর কুমিল্লা, নরসিংদী, গাজিপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হেঁটে হেঁটে ধর্মপ্রাণ জনতা যোগ দিয়েছিলেন শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে। ওইদিনের এমন জনমহাসমুদ্র এ যাবৎকালে কখনো কেউ দেখেনি। শুধু মানুষ আর মানুষ। দৃষ্টিসীমা যেখানে খেই হারায়, তারপরও মানুষ আর মানুষ। আল্লাহু আবকার! যেদিকে চোখ যায়, শুধু টুপি আর টুপি। পাগড়ি আর পাগড়ি। ঢাকার রাজপথ-অলিগলি সব যেন মানুষের প্লাবনে একাকার হয়ে গিয়েছিল। এত মানুষ! এ যেন মানুষের কল্পনাকেও ধরতে পারে না। শাপলা চত্বরের ঐতিহাসিক লংমার্চ ও গণজমাতে কত লোক অংশ নিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব কারও পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়! তবে এ কথাটিন সবার মুখে মুখে ছিল যে,‘এত লোক রাজধানী ঢাকায় এর আগে কেউ দেখেনি’। সেদিন ঢাকার জনসমুদ্রে নবী-প্রেমিকদের জোয়ার নেমেছিল। ঢাকার মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, তোপখানা, আরামবাগ, ফকিরের পুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা ফকিরের ফুল-বঙ্গভবন সড়কটিতেও মানুষের সমুদ্র। শাপলা চত্বর থেকে সড়ক গেছে ইত্তেফাকের দিকে সেটিও কানায় কানায় পূণ ছিল। এছাড়া অলিগলি চত্বরে কোথাও মানুষের তিল ধারণের ঠাই ছিল না। ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ ‘হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ’-কেই ঐতিহাসিক বলতে হবে। এ সমাবেশের সঙ্গে আগের কোন সমাবেশ, মহাসমাবেশ কিংবা জনসমুদ্রের তুলনা চলে না। হেফাজতে ইসলামের এ সমাবেশস্থলসহ অন্য এলাকাগুলো ৫০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন ৩০-থেকে ৩৫ লাখের কম হবে না।পর্যবেক্ষরা বলেছেন, হিসাব করে মানুষের সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে না। লংমার্চ কাফেলায় অগণিত মানুষের উপস্থিতি মহাসমুদ্রে রুপ নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্মরণকালে কোন সমাবেশে এত লোকের উপস্থিতি দেখা যায়নি। (দৈনিক ইনকিলাব, মানব জমিন, আমার দেশ, ৭ এপ্রিল’১৩)

কেন এই লংমার্চ: লম্পট গুটি কয়েক নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক ইসলাম ও রাসুল (সা.) নিয়ে ব্লগে অব্যাহত কটুক্তির প্রতিবাদে এবং ইসলাম ও নবী অবমানাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে হেফাজত ইসলামের আমীর, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোডের্র (বেফাক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কওমী বিদ্যাপিঠ, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক, শায়খুল ইসলাম,আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফি (দা.বা.) এই লংমার্চের আহ্বান করেন।

লম্পট ব্লগার, আহমদ রাজিব হায়দার, (ওরফে থাবা বাবা) আসিফ মহিউদ্দিন, ইব্রাহিম খলিলসহ (সবাক পাখি)প্রমুখ । ওরা পবিত্র কুরআনুল কারীম, রাসুলুল্লাহ, (সা.) সাহাবায়ে কেরাম, রাসুলের বিবি হযরত খাদিজাসহ (রা) ইসলামের বিভিন্ন পরিভাষা, যেমন- নামাজ, রোজা, হজ্ব, ঈদ, অজ,ু গোসল, মসজিদসহ নানা বিষয়ে জঘন্য ভাষায় বিভিন্ন ব্লগে দীর্ঘদিন ধরে বিষেদগার করে আসছিলো। তাদের জঘন্য কটুক্তি মুসলমানদের ঈমান-আকিদায় গভীর কুঠারাঘাত করে। নাস্তিক ব্লগাররা মনগড়া, কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে আল্লাহ, রাসুল, (সা.)সাহাবী, ও খাদিজাকে অপমানিত করে বিভিন্ন মন্তব্য করে তাঁদের শানে চরম বেয়াদবিমূলক ভাষা ব্যবহার করে। ব্লগারদের কুৎসিত ও অশালিন মন্তব্য বিবেকবান প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে-রক্তক্ষরণ শুরু ছিল। কোটি কোটি মুমিন তাদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠেন। ঠিক এমনি মুহুর্তে নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তির দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসুচির আহব্বান করেন, হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফি। তাঁর এ কর্মসুচির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন, দেশের শীর্ষ হক্কানী আলেম সমাজ ও বিভিন্নœ ইসলামী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি নিয়েই রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আহব্বান করেন, যুগশ্রেষ্ট বুজুর্গ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফি (দা.বা.)।

২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল আল্লাহ ও রাসুলকে নিয়ে কটুক্তিকারী ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে এক মঞ্চে এসেছিলেন দেশের হক্কানী আলেম সমাজ। জালিম সরকারের এই পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে হাতে তাসবিহ ও জায়নামাজ নিয়ে, মুখে‘ নারায়ে তাকবির’ আল্লাহু আকবার ও ‘লা ইলাহা ইল্লাাহর’ জিকিরে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ জনতা লংমার্চ কাফেলায় অংশ নিয়ে মহাসমাবেশে যো দেন । ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ। দেশবরেণ্য আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ, শীর্ষ ইসলামী রাজনীতিবীদদের বক্তৃতাসহ বিভিন্ন কর্মসুচি ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিকাল পৌনে ৫টায় মহাসমাবেশ শেষ হয়েছিল। তপ্ত রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বিক্ষোব্ধ মানুষের দীর্ঘ সময় অবস্থান ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূর্ণ। এহেন শৃঙ্খলাপূর্ণ নজীর দ্বিতীয়টি নেই। অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের আমীর শফী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি ও ব্লাসফেমি আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আলটিমেটামসহ বিভিন্ন কর্মসুচি ঘোষণঅ করেন, দলের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী (দা.বা.) ।

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও লংমার্চের কোন দিক নিয়ে আলোকপাত করবো; কত স্মৃতি! তা না লিখলেই কি হয়? সবদিকই কিন্তু আলোচনা বিষয়! এখানে মেহমানদারীর বিষয়টি আলোকপাত করার প্রয়াস করা হলো। হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকায় আগত লংমার্চ কাফেলাকে প্রাণের ভালবাসা দিয়ে সেবা দিয়েছিলেন ঢাকাবাসী। যা কোনদিনও ভুলা যাবে না! এমন স্মৃতিময় অতিথেয়তা কেউ আগে দেখেনি । নবীপ্রেমিকদের প্রতি মুমিনদের এতো আবেগ, এত ভালবাসা এর আগে এমন দৃশ্য কেউ কখনও দেখেনি। যারা চোখে দেখেননি তাদেরকে চোখে দেখার দৃশ্য বলে, বা লিখে বুঝানো যাবে না! সুবহানাল্লাহ! হেফাজতের লংমার্চে ঢাকায় আগত নবীপ্রেমিক মুসল্লিদেরকে ঢাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছিলেন আন্তরিকতারসাথেই। মেহমানদের মেজবানরা (ঢাকাবাসী) যার যতটুকু সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে আন্তরিকতার সাথে খেদমত করেছেন; যার অভাবনীয় দৃশ্য লিখে বূঝানো দুরূহ ব্যাপার।

রিকশাচালক, ঠেলাগাড়িচালক, কাঠমিস্ত্রি, আড়তদার থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ-ই কেরল নয়; এমনকি সাধারণ মানুষও যার যার সামর্থ্য অনুযায়ি চা-পানি, শরবত, বিস্কুট, চিড়া, মুড়ি, কলা, পাউরুটি, শসা, গাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফল এবং পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিরায়ানি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নবীপ্রেমিক মুসল্লিদের অতিথেয়তায়। চোখে পানি এসে যায় আল্লাহপ্রেমিক ও ইসলামের প্রতি এদেশের মানুষের এত আবেগ এত ভালবাসা দেখে! অবাক বিস্ময়ে দেখেছে সবাই! যেমনটি আমিও দেখেছি। মহাসমাবেশস্থহল এবং চারপাশে যেখানে যান না কেন, চোখে পড়েছে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে আছে পানি ও খাবার নিয়ে। মহাসমাবেশের শুরু আর শেষ কোথায় ছিল তা কেউ জানে না। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। টুপি আর টুপি। পাগড়ি আর পাগড়ি। পাগড়ি ও টুপিওয়ালাদের সেবায় কেউবা দাঁড়িয়ে ছিলেন টিস্যু হাতে। কেউবা পানি নিয়ে মুসল্লিদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। অনেক যুবকদেরকে দেখেছি মুসল্লিদেরকে পানির পাশাপাশি শরবতও পান করাতে। মুসল্লিদের ঘাম মুছতে টিস্যু পেপারের ছিল না কোন ঘাটতি। কত যুবক জোরেজোওে চিৎকার করে বলছে, ভাই পানি নিন, ভাই একটু শরবত খান আমি আপনাদের সেবা করতে চাই। যেদিকে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছে সেদিকেই মানুষ স্ফতঃস্ফুর্তভাবে শরবত, পানি খাবার স্যলাইন ও শুকনো খাবারের ডালিসহ তরমুজ, শসা,বিরানী,আঙুর,রকমারী ফল।

কত তরুণদেরকে বলতে শুনেছি,ভাই একটু পানি নিন, শসা নিন টিসু নিন, তরমুজ নিন, শরবত নিন, আল্লাহর রাহে আপনাদের একটু সেবা করতে দিন। নবীপ্রেমিকদের সেবা করার সুযোগ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে চায়নি মহিলা এবং শিশুরাও। মহিলারাও মোড়ে মোড়ে তাদের ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে পানি ও খাবার বিতরণ করছেন। বাসা থেকে বিরানী পাক করে কাফেলাদের আপ্যায়ন করার দৃশ্যৗও চোখে এখনও ভাসছে। এছাড়াও আর অগণিত মানুষ তাদের সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন। মানুষের এই আবেগ আর আন্তরিক ভালবাসায় রীতিমতো অভিভূত হয়েছিলেন লংমার্চ কাফেলা ও মহাসমাবেশের মুসাফিররা। যেমনটি হয়েলি আমাদের কাফেলার সাথীরও।

হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ফলাফল:
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশ বাংলাদেশে ইসলামী রেঁনেসার সৃষ্টি করেছিল। ব্রিটিশ তাড়ানো দেওবন্দি আলেমরা ৬০ বছর আবার জেগে ওঠেছিলেন সিংহ হুংকারে। বাংলাদেশে ইসলামী চেতনার মহাজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। ঢাকাসহ সারাদেশের মহাসড়কগুলো আলেম-ওলামাদের দখলে ছিল। দাড়ি ও টুপিওয়ালা রাজপথ দখল করে ইসলাম ও রাসুল অবমাননাকরী নাস্তিক-কুলাঙ্গারদের দাতভাঙা জবাব দিয়েছিলেন। মহাসমাবেশের দিন হেফাজতে ইসলামের মিছিলে বাধা দেয়ায় বিক্ষোব্ধ জনতা ও হেফাজত কর্মীদের তাড়া খেয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিকের) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন পালিয়ে মতিঝিলস্থ ‘টুডে হেয়ার ড্রেসার’ নামের এক নাপিতের ঘরে (সেলুনে) আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ইাাস্তিরা সেদিন নিরব দর্শকের গ্যালারিতে বসে বিক্ষোদ্ধ নবী-প্রেমিকদের ইসলামী চেতনা উপলব্ধি করেছিলো কাছে থেকে খুব ভাল করেই। বিশ্বমিডিয়ায়ও গুরুত্ব পেয়েছিল আলেম-ওলামার এই মহাজাগরণের চিত্র। দেশের জাতীয় দৈনিক কাগজেও লিড নিউজ দিতে বাধ্য গয়েছিল সকল দেনিকগুলো। আলেম-ওলামাদেরকে বৃহৎ এক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল জাতীয় এক দৈনিক। তবে এ বিষয়টিও না লিখলেই নয়! দুঃখজনক হলেও কঠিন সত্য যে, লংমার্চে অংশ গ্রহণে সরকার যেভাবে বাধা দিয়েছিলে, তেমনি লংমার্চ সরাসরি প্রচারেও মিডিয়াওয়ালা কৃপণতা করছিলো। ধর্মপ্রেমিক লাখ লাখ মুসলমানের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যেভাবে লংমার্চ ও মহাসমাবেশের সংবাদটি প্রচার হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। দেশের অধিকাংশ স্যাটেলাই টেলিভিশন এবং রেডিও লংমার্চ ও মহাসমাবেল সরাসরি সম্প্রচারে কৃপণতা করেছে। অথচ ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগি গুটি কয়েক নাস্তিকদের গান-নৃত্য ২৪ ঘন্টা সরাসরি সম্প্রচার করেছে এসব টিভি চ্যনেল। দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে এ মিডিয়াগুলো বিশেষ গোষ্ঠির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছিল সেদিন। সারাদেশ থেকে লংমার্চে যোগ দিতে আসা মুসল্লিদের জোয়ার দেখে সরকার বাস, লঞ্চ দূরপাল্লার সব ধরণের যানবাহন বন্ধ করে দিয়েচিল। যানবাহনসেবা বন্ধ করে দিয়ে মানুষের জোয়ার রুখতে না পেরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীরা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ওপর হামলা বাধা ও প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করেছিল। দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, একুশে টিভি, এনটিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, বাংলাভিশন ও এসএ টিভি হেফাজতের লংমার্চ ও সমাবেশের সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে। বাকি মিডিয়াগুলো লংমার্চ ও সমাবেশের সংবাদটি গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য সংবাদ তুলনামুলক কম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যেমন-ঘাদানিকেরহরতাল ও ব্লগারদের অবরোদের সংবাদকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রচার করে । লংমার্চ ও মহাসমাবেশের সংবাদ প্রচারে কৃপণতার পরিচয় দিয়েছে এসব টিভি চ্যানেল । এগুলো হচ্ছে, এটিএন বাংলা, এটি এন নিউজ, সময়, ইন্ডিপেন্ডেট টিভি, আরটিভি, বিটিভি, চ্যানেল নাইন, বৈশাখি টিভি, জিটিভি, দেশ টিভি ও মাইটিভি ইত্যাদি। তবে নিতান্তই দায় এড়াতে এসব চ্যানেল সংবাদের মাঝে কয়েক মিনিটের জন্য সরাসরি মতিঝিলের চিত্র দেখিয়েছ, যা শূধু দায় এড়ানোর খাতিরেই করেছে ।

এদিকে রাজধানীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ গণজোয়ারকে দেশের মানুষের কাছে গোপন করে রাখার হীন অপচেষ্টা করেছিল সরকার। শনিবার দিনের শুরু থেকে সন্ধা পর্যন্ত সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় ডিশলাইন সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এছাড়া অধিকাংশ স্থানে বিদুৎ সরবরাহ ও বন্ধ রাখা হয়েছিল। রাজধানীর বাইরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ডিশলাইনও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। আরও কত তামাশা করেছিল সরকার! কোনটি রেখে কোনটি লিখি? সরকার এত কিছু করার পরও সফল হতে পারেনি। সবক্ষেত্রেই লংমার্চ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিলো। সরকার ও সরকারি দল আশ্রিত সন্ত্রাসী মস্তানদের বাধা ও যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছিল দুদিন আগেই। যারা যানবাহনের অভাবে ঢাকায় আসতে পারেননি তার নিজ নিজ এলাকায় মহাসড়কে বসেই অবস্থান ও মহাসমাবেশ কর্মসুচী পালন করেন। এদিকেও হেফাজতে ইসলামও নবীপ্রেমিক মুসল্লিরা সফল।

হেফাজতের ১৩ দফা দাবি:

হেফাজতের আহব্বানে যে ১৩দফা দাবিতে লংমার্চ ও মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে রয়েছে।

১. দফা হচ্ছে, সংবিধানে আল্লহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুন:স্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২. আল্লাহ,রাসুল ( সা: )ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎস রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী “স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরদাত ”এবং প্রিয় নবী (সা:)-এর শানের জগন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যাক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা,অনাচার,ব্যভিচার,প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ,মোমবাতি প্রজ্বলনসহ ‘বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা’
৫. ইসলাম বিরোধী নারীনীতি,ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্থর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করা।
৬ . সরকারীভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষনা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমুল সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
৭ . মসজিদের নগর ঢাকাকে মুর্তির নগরে রুপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মেড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাষ্কর্যের নামে ‘মূর্তি’ স্থাপন বন্ধ করা।
৮ . জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯ . রেডিও-টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্্রা এবং নাটক-সিনিমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মমের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমুলক মনোভাব সৃস্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০ .পার্বত্য চট্রগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রীষ্টান মিশনারিগুলোর ধমান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১১ . রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা,মাদ্রাসা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা দমন-পীড়ন,নির্বিচার,গুলিবর্সণ এবং গনহত্যা বন্ধ করা।
১২ . সারাদেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক,ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি,ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং
১৩ . অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মুক্তিদান,দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যাক্তিদের ক্ষতিপুরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।

মহাসমাবেশে দেশবরেণ্য আলেমের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল,‘ঈমান ও দেশরক্ষার লড়াইয়ে বিজয় ছাড়া ঘরে ফেরা নয়! সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থ পুনঃস্থাপন ও নাস্তিকদের ফাঁসি না হলে সরকারের পতন’।
এখন পর্যালোচনার বিষয়, ঐতিহাসিক লঙমার্চেও আজ তিন বছর গত হলো। কতটুকু সফল হলো হেফাজতে ইসলাম! ১৩ দফা দাবির কয়টি আদায় করতে পেরেছে হেফাজতে ইসলাম? হেফাজতে ইসলামের মহাজাগরণ আমাদেরকে কি বার্তা দিল? আন্দোলন করে বারবার মাঠ গরম করে আলেম সমাজ; ফায়েদা নেয় অন্যরা! এর যথার্থ কারণ ও প্রতিকার খোঁজ বের করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুতে হবে হেফাজতে ইসলামকে। আবেগ-আর বাড়তি উৎসাহ ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি যথার্থ প্ল্যান নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পাদনা করতে পারলে আশাতীত ফলাফল অর্জন হবে বলে আশাবাদী। আবেগে কখনো সফলতা আসে না। আবেগের সাথে বিবেক ও রাজনৈতিব দূরদর্শিতাও দরকার।
লেখক: সাংবাদিক, আলেম ও কলাম লেখক

বিগত ৬ এপ্রিল ২০১৩ সাল ঘুরে আবার আসলো ৬ এপ্রিল ২০১৬ । এভাবে প্রতি বছরই ৬ এপ্রিল আসবে। ‘১৩ ১৪’ ১৫’=২০১৬ শুধু হবে!
৬ এপ্রিল ২০১৩ ।
এ তারিখটি স্মৃতির অ্যলবামে আমৃত্যু স্মরণ থাকবে ।
গত তিন বছর পূর্বে এপ্রিলের ৬ তারিখে ইসলামের হেফাজতে ঐতিহাসিক মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল বাংলাদেশে ।
মহানবী (সা.) কে অবমাননাকরী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ (লংমার্চ) অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ।
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে পথে হামলা ও বাধা দেয়া হয় ।
ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ।
ক্ষমতাসীন সরকারের মদতে বাম ঘরানার ২৭ সংগঠনের হরতাল পালনের ঢাক দেয় ।
এই সরকারের মদতে নজিরবিহীন হরতাল পালন করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার ২৭ সংগঠন ।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী (দাবা.) আহুত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ বানচাল করতেই শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ইসলাম বিদ্বেষীরা হরতাল পালন করে ।
সরকারি ছুটির দিনে এবং রাতের বেলা এ ধরনের হরতাল পালনের ঘটনা নিকট-অতীতে ঘটেনি ।
আবার অপরদিকে একই দাবিতে শুক্রবার সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করে নাস্তিক ব্লগার দা গণজাগরণ মঞ্চের শাহাবাগিরা ।
স্বৈরাচারী সরকারের কন্টাকাকীর্ণ বাধার বৃত্ত, গুলি , কারাশৃঙ্খলের রক্তচক্ষুসহ বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কূটচালকে চুর্ণ করে এসব বাধার পাহাড় ডিঙিয়েই সারাদেশ থেকে
অর্ধলক্ষাধিক মানুষ যোগ দেয় হেফাজতের শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে ।
২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকা পুরোটাই ছিল ধর্মপ্রেমিক জনতার দখলে ।
রাজধানী বা শহরতিলই শুধু নয়; সুদুর কুমিল্লা, নরসিংদী, গাজিপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হেঁটে হেঁটে ধর্মপ্রাণ জনতা যোগ দেয় শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে ।
ওইদিনের এমন জনমহাসমুদ্র এ যাবৎকালে কখনো কেউ দেখেনি ।
শুধু মানুষ আর মানুষ ।
দৃষ্টিসীমা যেখানে খেই হারায়, তারপরও মানুষ আর মানুষ ।
যেদিকে চোখ যায় শুধু টুপি আর টুপি ।
ঢাকার রাজপথ-অলিগলি সব যেন মানুষের প্লাবনে একাকার হয়ে গিয়েছিল ।
এত মানুষ! এ যেন মানুষের কল্পনাকেও ধরতে পারে না।
শাপলা চত্বরের ঐতিহাসিক লংমার্চ ও গণজমায়ে কত লোক অংশ নিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব কারও পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়!
তবে একটি কথা সবার মুখে মুখে এত লোক রাজধানী ঢাকায় এর আগে কেউ দেখেনি ।
ঢাকায় যেন জনসমুদ্রে নেমেছে জোয়ার ।
ইয়াল্লাহ! মানুষ আর মানুষ! সুবহানাল্লাহ এত মানুষ!
ঢাকার মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, তোপখানা, আরামবাগ, ফকিরের পুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা ফকিরের পুল-বঙ্গভবন সড়কটিতেও মানুষের সমুদ্র ।
শাপলা চত্বর থেকে সড়ক গেছে ইত্তেফাকের দিকে সেটিও কানায় কানায় পূর্ণ।
এছাড়া অলিগলি চত্বরে কোথাও মানুষের তিল ধারণের ঠাই ছিল না ।
ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ বলতে হলে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকেই ঐতিহাসিক বলতে হবে ।
এ সমাবেশের সঙ্গে আগের কোন সমাবেশ, মহাসমাবেশ কিংবা জনসমুদ্রের তুলনা চলে না।
হেফাজতে ইসলামের এ সমাবেশস্হলসহ অন্য এলাকাগুলো ৫০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে ।
-ইনকিলাব, আমার দেশ
আবার কেউ কেউ বলেন ৩০-থেকে ৩৫ লাখের কম হবে না ।
পর্যবেক্ষরা বলেছেন, হিসাব করে মানুষের সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে না।
শংমার্চ কাফেলায় অগণিত মানুষের উপস্হিতি মহাসমুদ্রে রুপ নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্মরণকালে কোন সমাবেশে এত লোকের উপস্হিতি দেখা যায়নি ।
কেন এই লংমার্চ:
লম্পট গুটি কয়েক নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক ইসলাম ও রাসুল সা. অবমানাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতেই হেফাজত লংমার্চের আহ্বান করে ।
লম্পট ব্লগার, আহমদ রাজিব হায়দার (ওরফে থাবা বাবা),
আসিফ মহিউদ্দিন, ইব্রাহিম খলিলসহ (সবাক পাখি)
ওরা পবিত্র কুরআনুল কারীম, রাসুল্লাহ সা., সাহাবায়ে কেরাম, রাসুলের বিবি হযরত খাদিজা রা, ইসলামের বিভিন্ন পরিভাষা নামাজ রোজা হজ্ব ঈদ অজু গোসল মসজিদসহ নানা বিষয়ে জঘণ্য ভাষায় ব্লগে বিষেদগার করে মুসলমানদের ঈমানী আকিদায় গভীর আঘাত হানে।
মনগড়া কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে আল্লাহ রাসুল সাহাবী ও খাদিজাকে অপমানিত করে আসছে দীর্ঘ ধরে।
তাদের কূৎসিত ও অশালিন মন্তব্য পড়ে কেউ নিরব বসে থাকতে পারে না।
ঈমানদার মাত্রই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠবে।
নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি নিয়েই রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আহব্বান করেন যুগশ্রেষ্ট বুজুর্গ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফি বা.।
আল্লাহ ও রাসুলকে নিয়ে কটুক্তিকারী ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে এক মঞ্চে এসেছিলেন দেশের হক্কানী আলেম সমাজ।
জালিম সরকারের এই পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে হাতে তাসবিহ ও জায়নামাজ নিয়ে মুখে নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাহর জিকিরে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ জনতা।
৬ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম ।
দেশবরেণ্য পীর মাশায়েখ আলেম ওলামাদ শীর্ষ ইসলামী রাজনীবিদদের বকৃতা ও বিভিন্ন কর্মসুচি ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিকাল পৌনে ৫টায় মহাসমাবেল শেষ হয় ।
তপ্ত রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বিক্ষোব্ধ মানুষের অবস্হান ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূণ।
এই লংমার্চে হেফাজতের আমীর শফী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি ও ব্লাসফেমি আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের সরকারকে আলটিমেটাম দেন।
এই সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি ঘোষণাসহ বিভিন্ন কর্মসুচি ঘোষণা করেন মহাসচিব বাবু নগরি ও মুফতি ফয়জুল্লাহ।
হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকায় আগত লংমার্চ কাফেলাকে প্রাণের ভালবাসা দিয়ে সেবা দিয়েছিলেন ঢাকাবাসী।
এমন স্মৃতিময় অতিথেয়তা কেউ আগে দেখেনি।


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!