Monday, July 10, 2017

প্রশ্নঃ চিল্লা কোথায় পেলেন? ৬ মাস, সাল, ৩ দিন ইত্যাদির শরয়ী দলীল আছে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, অসংখ্য আছে৷ কয়েকটি মাত্র নমুনা দেয়া হলোঃ
.
👉(১) চিল্লার দলীলঃ "আর আমি মুসাকে ওয়াদা দিয়েছি ৩০ রাতের এবং পূর্ণ করেছি আরও ১০ দ্বারা, বস্তুত এভাবে ৪০ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে৷" -(সূরা আ'রাফ, আয়াত ১৪২)
.
উক্ত আয়াতে চিল্লার (৪০ দিন) শেষে ঘর ছেড়ে তুর পাহাড়ে হিজরতের মাধ্যমে তওরাত দিয়েছেন৷ সুতরাং চিল্লার শিক্ষক ও উদ্ভাবক স্বয়ং আল্লহ্ নয় কি?
.
এছাড়াও রসূল (সঃ)-এর অনেক হাদীস দিচ্ছে এর প্রমাণ৷ যেমন- চিল্লার তাকবীরে উলার হাদীস, - (তিরমিযীঃ ২৪১)
.
মায়ের উদরে শিশুর প্রতি চিল্লায় (৪০ দিনে) পরিবর্তনের হাদীস।  -(বুখারীঃ ৩২০৮, ৩০৩৬, ৩০৯৭ ; মুসলিমঃ ২৬৪৩)
.
মায়ের পেটে যেমন ৩ চিল্লার (৪ মাস) পর শিশু প্রাণ পায় তেমনি চিল্লার পেটে গণজীবন ঈমানী প্রাণ পায়৷
.
👉(২) ৪ ও ৬ মাসের দলীলঃ "হযরত বারা (রাঃ) বলেন যে, রসূল (সঃ) ইয়ামানে তাবলীগের উদ্দেশ্যে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ)-কে পাঠান৷ আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম৷ আমরা দীর্ঘ ৬ মাস যাবত সেখানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ অনবরত করে চলেছি৷ এরপর হযরত আলী (রাঃ)-কে আমীরের দায়িত্ব দিয়ে খালিদ (রাঃ) কে ফিরে যেতে বলেন এবং তাঁর সাথে যারা ফিরতে চায় তারা ফিরতে পারে আর যারা যেতে চায় তারা যেতে পারে৷ আমি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে আরো সময় বাড়িয়ে দিলাম৷
.
আমরা ইয়ামানের হামাদান গোত্রের দ্বারে দ্বারে বারে বারে গমন করে করে সকলকেই হাজির করলাম৷ হযরত আলী (রাঃ) নবী (সঃ)-এর পত্র পড়ে তাদেরকে দাওয়াত দিলেন ও সবাই একই সাথে ইসলাম কবুল করে নিলেন৷" ---ফিরে এলেন ৪ মাস পর, বিদায় হাজ্জ্বের পরে৷ উভয়ের আমীরত্বে প্রায় ১ বছর হচ্ছে৷ -(হায়াতুস সাহাবাহ--খণ্ড ১ম, পৃঃ১৪০)

এ হাদীস দ্বারা খালিদ (রাঃ)-এর ৬ মাস, আলী (রাঃ)-এর ৪ মাস ও তারও চেয়ে বেশী সময় তাবলীগী সফর করার প্রমাণ মিলেছে৷
.
👉(৩) ২ মাসের দলীলঃ "ইবনে সায়াদ রচিত 'তাবাক্বাত' এর ২য় খণ্ডের ৩৫-৩৬ পৃষ্ঠায় ৬০ দিনের তাবলীগ জামাতের কথা অবশ্যই পাবেন৷"
.
👉(৪) ১৫ ও ৭ দিনের দলীলঃ ইবনে সায়াদ রচিত 'তাবাক্বাত' এর ২য় খণ্ডের ৫১-৫৪ পৃষ্টায় ১৫ ও ৭ দিনের জামাতের কথা লেখা আছে৷ আমীরঃ স্বয়ং রসূল(সঃ)৷ রোকঃ সুলায়ম গোত্র, মদিনা শরীফ৷
.
👉(৫) ৩ দিনের দলীলঃ ইবনে ইসহাক (রাঃ) ৩ দিনের কথা উল্লেখ করেছেন৷(ইবনে সায়াদ, খণ্ড ২, পৃঃ ৩১)
.
👉(৬)১০ দিনের দলীলঃ ইবনে সায়াদ, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৩০ এ ১০ দিনের জামাতের কথা উল্লেখ আছে৷
.
👉(৭) ৮/১০ ঘন্টার দলীলঃ তাবারী, খণ্ড ১, পৃঃ ২১৯ এ ৮/১০ ঘন্টার জামাতের কথা উল্লেখ আছে৷
.
👉(৮) ১ মাসের দলীলঃ Muhammad at Madina(page-84) & তাবাক্বাত, খণ্ড-৪, পৃঃ২২১ এ ৩০ দিনের(পায়দল) সফরের কথা উল্লেখ আছে৷
.
👉(৯) ১ সালের দলীলঃ The Preaching of Islam, London 1935, P. 22-24 & ইবনে সায়াদ, খণ্ড ৩, পৃঃ ৪২০-২১ এ ১ বছরের জামাতের কথা উল্লেখ আছে৷
.
👉(১০) অনির্দিষ্ট কালের জামাতের দলীলঃ
মুসলিম, কিতাবুল ঈমান এবং ইবনে সায়াদ, (খণ্ড-৪, পৃঃ২৪১)--এ অনির্দিষ্ট কালের জামাতের কথা বিবৃত হয়েছে৷
.
👉(১১) আজীবন সফরের জামাত -এর দলীলঃ
Muhammad at Madina, P.84 , ইবনে সায়াদ, (খণ্ড ৪, পৃঃ ২২১) ও মাজমুয়াতুল ওয়াসাইক, ১৪৫ পৃষ্ঠায় আজীবন সফরের কথা উল্লেখ আছে৷
.
এভাবে সাহাবাগণের ৩ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন, ৪০ দিন, ৬০ দিন, ৩০ দিন, ৪ মাস, ৬ মাস, ২/৫ বছর, ২৭ বছর এমনকি গোটা জীবনটাই পৃথিবীর প্রান্তর থেকে প্রান্তরে তাবলীগে কাটাবার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে৷
.
বাংলাদেশেও সাহাবীরা (রাঃ) এসেছেন, দেখুনঃ
★বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ৪ সাহাবীর প্রথম তাবলীগ জামাতঃ
.
👉(ক) হযরত আবি ওক্কাস (রাঃ)
👉(খ)হযরত কায়স ইবনে হুজায়ফা (রাঃ)
👉(গ) হযরত আবুল কায়স ইবনুল হারেসাহ্ (রাঃ)
👉(ঘ) হযরত ওরওয়াহ্ (রাঃ)
.
এ জামাতের আমীর ছিলেন হযরত আবি ওক্কাস (রাঃ) ৬১৭ খ্রীস্টাব্দে আবিসিনিয়া থেকে বের হন ও বাংলাদেশ সফর করে টিটাগাং বন্দর হয়ে চীনের কোয়াংটায় পৌঁছেন ৬২৫ খ্রীস্টাব্দে/৩য় হিজরীতে৷ সেখানে কোয়াংটা মসজিদ নির্মাণ করেন৷
.
তাবলীগ করতে করতে সেখানেই ঘটে জীবনাবসান৷ তাঁদের মসজিদ ও কবর মোবারক আজও তার নীরব সাক্ষ্য বহণ করে চলেছে৷
.
(ফারুক মাহমুদ, 'ইতিহাসের অন্তরালে', পৃঃ ৯৬, Dr. M. A. Rahim, 'Social and Cultural History of Bengal' ও ইবনুল আছীর, 'উসদুল গাবা', খণ্ড-৪, পৃঃ ২৯৭)
.
উপরোক্ত কুরআনেরর আয়াত, হাদীসের দলীল ও সাহাবীদের জীবনীর প্রমাণের আলোকে তাবলীগ জামাতের চিল্লা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। তাই এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা চরম অন্যায়। আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন। আমিন।।


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!