Saturday, May 27, 2017

তারাবীহ নামাজ কয় রাকাত ?

তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। যারা বলে ৮ রাকাআত তাদের বক্তব্য সঠিক নয় । মুলত ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাআত তারাবীহ এই মতামতের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে ।

* সংশয় নিরসনের জন্য ৮ রাকআত বা এসংক্রান্ত বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল।

প্রথম হাদীসঃ-

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন , রমজানে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন , রাসুল (সাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বশী পড়তেন না।

(বুখরী শরীফ হাঃ নং ১১৪৭)

দ্বিতীয় হাদীসঃ-

ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রঃ) বলেন আমি রাসুল (সঃ) এর রাত্রী কালীন নামাজ সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম । উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল(সঃ) রাত্রে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন । প্রথমে আট রাকাত পড়তেন , এর পর বিতির পড়তেন, তার পর দুই রাকত নামাজ বসে আদায় করতেন ।

( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৪)

এজাতীয় হাদীস দ্বারা লা মাজহাবী সম্প্রদায়- তারাবীহ ৮ রাকাত এর উপর দলীল পেশ করে থাকে।

উপরোক্ত হাদীস সমূহের উত্তরঃ-

প্রথম উত্তর: আয়েশা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস দুটি যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে ঠিক তেমনি মুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীস ও বর্ণিত আছে। যেমন:

হাদীসঃ-

কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুল (সাঃ) রাত্রিতে দশ রাকাত নামাজ, এক রাকাত বিতির ,ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাকাত পড়তেন।

( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৭)

এমন কি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হদীস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায় রাসুল (সাঃ) রাত্রীকালীন নামাজ- কোন রাত্রীতে ১১ রাকাত ,কখনো ১৩ রাকাত কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৭ রাকাত ও, আদায় করতেন । সুতরাং আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ন অযৌক্তিক।

দ্বিতীয় উত্তরঃ-

প্রকৃত পক্ষে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত , তারাবীহ সম্পর্কিত নয় । একারনেই হাদীস গ্রন্থাকারগন এজাতীয় হাদীসকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন , তারাবীর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।

তৃতীয় উত্তরঃ-

আহলে হাদীসগন তারাবী ৮ রাকাত হওয়ার স্বপক্ষে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করেন না। কেননা হাদীসে রমজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে , অথচ তারা তাদের হাদীস অনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ পড়ে না।

বিশ রাকাত তারাবীর দলীল সমুহ:

১ নং হাদীসঃ-

সায়ের ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সাহাবা গন উমর (রাঃ) এর খেলাফত কালে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ।

(বাইহাকী শরীফ-খঃ ২/৪৯৬ হাঃ নং ৪৬১৭)

২ নং হাদীসঃ-

ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ- হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে সাহাবারা বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । (মুয়াত্তা মালেক খঃ ১পৃঃ ১১৫)

৩ নং হাদীসঃ-

আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাহাবাদেরকে বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছি ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা – ৫/২২৪)

(উল্লেখিত সবগুলো হাদীস সহীহ)

এছাড়াও অসংখ্য হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট রুপে প্রমানিত হয় যে, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত যার উপর খোলাফয়ে রাশেদীন ,সমস্ত সাহাবা , তাবেই, তাবে তাবেই, সালফে সালেহীন গন, ঐক্যমতে আমল করেছেন। এবং চার মাজহাবের ইমাম গনও এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন ।

সুতরাং যারা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেন ,তারা মুলত সরলমনা মুসলমানদের অন্তরে বিভ্রান্তির বিষ ঢেলে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চান।

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক। সংগ্রহীত


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!