ইদানিং কিছু ফেবু জিহাদিস্ট এর উদ্ভব হয়েছে যারা তাবলীগ জামাআতের বিরুদ্ধে নানা রকম আজগুবি ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে থাকেন । এই কূৎসা রটনাকারীদের মূলত তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যায় __
১। কথিত আহলে হাদিস l
২। মওদুদি জামাত শিবির ।
৩। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত কিছু লোক ।
কূৎসা রটনাকারী ১ম শ্রেনীঃ এরা মূলত দাওয়াত ও জিহাদ কোনোটির সাথেই সম্পর্ক রাখে না । পেট্রো ডলার এর বিনিময়ে মুসলিমদের মাঝে বিভেদ ও ফিৎনা ছড়ানোই এদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । আন্দোলন-সংগ্রামের সময় এদের হারিকেন ধরিয়েও কখনো খুজে পাওয়া যায় না ।
কূৎসা রটনাকারী ২য় শ্রেনীঃ এরা সাধারণত রাস্তায় নেমে ইট-পাটকেল ও লাঠি নিয়ে আম পাবলিকের গাড়ি-ঘোড়া ভাঙ্গা ও অগ্নিসংযোগ করাকে জিহাদ মনে করে । আল্লাহ্'র বিধানকে জমিনে কায়েম করা নয় বরং এদের কথিত জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হল দলীয় বা গোষ্ঠিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা তথা নিজেদের নেতা-কর্মীদের মুক্ত করা ।
কূৎসা রটনাকারী ৩য় শ্রেনীঃ এরা মূলত অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ও প্রকৃত অবস্থা না জানার কারণে এমনটি করে থাকে । এদের খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না ।
তাবলীগের উদ্দেশ্যঃ
তাবলীগ জামাআতের কাজ মানুষকে আল্লাহর সাথে জুড়ে দেয়া, এরপর দ্বীনের জন্য যা করা দরকার সে করবে, এক্ষেত্রে তাবলীগ জামাআত নিষেধ তো করেনি। আরেকটা কথা, সবাই যদি দ্বীনের লাইনে চলে আসে তাহলে তারাই আপনাকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে বলবে আপনাকে আন্দোলন করতে হবেনা। বড় কথা হল ইসলামী রাষ্ট্র তো শুধু কোনো ভূখণ্ডের নাম নয় যে আন্দোলন করে তা জয় করলেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়ে যাবে বরং মানুষের মনগুলোকে আগে জয় করা চাই। এরপরও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা বা ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রুতা করার চেষ্টা করে তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, যা নবী সাঃ করেছেন। মনে রাখতে হবে যুদ্ধ ইসলাম কায়েম করার মাধ্যম নয়, বরং ইসলাম রক্ষা করার মাধ্যম। ইসলাম কায়েম করতে হবে দাওয়াত দিয়ে যেমনটা ইসলামের প্রথম যুগে নবী সাঃ করেছেন , আর যুদ্ধ করে ইসলাম রক্ষা করতে হবে, যেমনটা নবী সাঃ মদীনা জীবনে করেছেন। যারা তাবলীগের বিরোধিতা করছেন এই বলে যে তাবলীগ জামাআত শুধু নামাজের কথা বলে নামাজ কায়েমের বা জিহাদ, দ্বীন কায়েমের কথা ভাবেনা তাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে আসলে আপনারা তাবলীগ জামাআতের মিশনটাই জানেননা, বুঝেন না, আর বুঝার চেষ্টাও করেন না। তাবলীগ জামাআতের উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষকে আল্লাহ্ মুখী করা, অন্তরে দ্বীনের সমঝ ও দরদ সৃষ্টি করে দেওয়া। এরপর সে ব্যাক্তিগতভাবে আলেম উলামা বা দ্বীনি প্রতিষ্ঠান সমুহ থেকে দ্বীনের ইলম, মাসআলা মাসায়েল শেখা এবং দ্বীনের প্রয়োজনে জিহাদ করা, আন্দোলন করা , রাজনীতি করা এগুলো সম্পূর্ণ নির্ভর করবে তার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার উপর তাবলীগ জামাআত এ ব্যাপারে নিষেধও করেনা উৎসাহিতও করেনা। কারণ সেটা তাদের মিশনও না উদ্দেশ্যও না।
আর একটা বিষয়, যারা রাজনীতি করে তারা যদি মাদরাসা না পড়ায় তাহলে শুধু এতেই প্রমাণিত হয়না যে তারা নাহক, অনুরূপ যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা যদি তাবলীগ না করে মাদরাসায় না পড়ায় তারাও গোমরাহ না। তাহলে তাবলীগ জামাআত রাজনীতি না করলে গোমরাহ হবে কেন? সবাই সবার জায়গায় থেকে দ্বীনের কাজ করবে শর্ত হল পদ্ধতিটা আল্লাহর ও তাঁর নবীর তরীকায় হতে হবে ।
তাবলীগি ভাইরা কি জিহাদ করে না ?
আপনাদের চারপাশের হয়তো কিছু এমন মানুষদের দেখেছেন যারা তাবলীগ এ সময় দেয় কিন্তু হেফাযতকে ব্যাক্তিগত ভাবে সমর্থন দেয়নি ! এমন হওয়া কি অস্বাভাবিক ? এ রকম অল্প কিছু মানুষকে দেখে সবাইকে মূল্যায়ন করা যায় না । নিজের এলাকা বা আশপাশের দুই/চারজন কে দেখে গোটা দেশের তাবলীগ ওয়ালাদের এমন ভাবা ঠিক না । আমার জেলা নাটোরের তাবলীগ জামাআতের জেলা মারকাজ এর ১৫ জন শুরা সদস্যসহ আরো কয়েকশত তাবলীগি ভাই ৫ মে'র সমাবেশে এসেছিল । যার মধ্যে আমার গ্রামের ১৬ জন তাবলীগি সাথি ও মাদরাসার ছাত্র আর বাড়ি ফিরে আসেনি , নিখোঁজ । আমি ঢাকায় যে মসজিদের সাথি তার তাবলীগ ও ইসলামী আন্দোলনের সাথিদেরও সমাবেশে যেতে ও হেফাযতকে পূর্ণ সমর্থন দিতে দেখেছি । ভাই এটা হল তাবলীগি ভাইদের ভূমিকা আমার স্বচোখ্যে দেখা ও জানা বিষয় l সারা দেশের তাবলীগ ওয়ালাদের বেশির ভাগ-ই হেফাযত কে মৌন-মৌখিক ও সক্রিয় অবস্থানের মাধ্যমে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল ।
হ্যা তবে এটা ঠিক আমরা তাবলীগের ব্যানারে এ্যাডভারটাইজ করে মাঠে নামিনি । আর সব সাধারণ মুসলিম ও হকপন্থী দলগুলোর সাথেই এক কাতারে আন্দোলন সংগ্রামে শামিল হয়েছি । তাবলীগ দ্বীনি দাওয়াতের জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে প্রায় সব ইসলামী দলগুলো এসে দাওয়াতি মেহনতে শরীক হয় । আবার বাতিল কে প্রতিহত ও ইসলামের পক্ষে আন্দোলনেও একজোটে সবার সম-অবস্থান বজায় থাকে ।
কিছু কূৎসা রটনাকারী আছে যারা বলে তাবলীগ নাকি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কথা বলেনা তারা নাকি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে, আমি তাদের বলি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আজ যারা প্রতিবাদ করছে তারা বেশীর ভাগই তাবলিগওয়ালা আমি মনে করি বাংলার সেরা তাবলিগওয়ালা হলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফি দাঃবাঃ আর উনার ডাকে লক্ষ মানুষ নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে নেমেছিলো আর যারা হেফাজতে ইসলাম করে বা কওমি আক্বিদার তারা সবাই তো তাবলিগওয়ালা, চট্টগ্রামের তাবলিগের আমির মুফতি জসিম সাহেব হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছিল ঐ কূৎসা রটনাকারীর দল কি তা দেখেনি ?
আমরা বলব যারা তাবলিগ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে তাদের থেকে সাবধান । মাওলানা সাদ, মাওলানা জুবায়ের, মাওলানা জামিল উদ্দন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা তারিক জামিল, মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব, মুফতি নুরুল আমিন, মুফতি গোলাম রহমান, মুফতি রফিকুর রহমান, মাও:মোশাররফ হোসেন, মুফতি আতাউর রহমান, মুফতি মামুনুর রহমান, মাও:আব্দুর রাজ্জাক, এরা কারা ?? এরা অনেকেই তাবলীগের শুরার সাথী এবং সবাই কওমি আলেম উলামা ! আর হেফাজতের সক্রিয় সদস্য এবং আলেমগণও কওমি উলামায়ে কেরাম !!
হেফাজতিরা কারা ? এরা মূলত তাবলীগি-কওমি বা দেওবন্দি এছাড়া বেশিরভাগ হকপন্থি ইসলামী দল গুলোর সমন্বয়ে হেফাজত গঠিত । আন্দোলন সংগ্রামের ময়দানে ইসলামের উপর সকল আঘাতের প্রতিরোধে তাবলীগি-দেওবন্দিরাই ও সকল হকপন্থি ইসলামী দল সমূহই চিরকাল সক্রিয় ছিল ইন-শা-আল্লাহ্ ভবিষ্যতেও থাকবে ।
যারা তাবলীগ ও দেওবন্দি, হক্কানি ওলামা মাশায়েখদের গীবত করেন এই বলে যে তারা মসজিদে বসে তাসবিহ পাঠ করে জিহাদ বা আন্দোলন করে না এদেরকে কখনো আন্দোলনের ময়দানে পাওয়া
যায়না । এদের কাজই হল ঘরে বসে বসে তাবলীগ ওয়ালাদের কূৎসা রটানো । ময়দানে আন্দোলন সংগ্রামে যখন তাবলীগ ওয়ালা, দেওবন্দি, ইসলামী দলগুলো সক্রিয় অবস্থান নেয় তখন এই কুৎসা রটনাকারীগণ ভুলেও ঘরের বাইরে পা ফেলে না । ছুটির আমেজে ঘরে টিভির সামনে বসে বসে বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে চা-বিস্কিট আর আপেল কমলা খেয়ে জিহাদ করেন । এদের মুখে জিহাদের কথা শুনলে হাসি পায় আর পর দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও আন্দোলন শেষ হয়ে গেলে খোয়াড় থেকে ছাড়া পেয়ে গলাবাজী শুরু করেন । এদের মুখে পচা ডিম ছুড়ে মারতে মন চায়। হকের সমালোচনা বা বিরোধিতা তো বাতিল সব সময় করে থাকে এটাই স্বাভাবিক ।
নিন্দুকের নিন্দায় কিছু আসে যায় না । তাবলীগ দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে ভবিষ্যতেও চলবে ইন-শা-আল্লাহ।।
Copy from Rezwanur Rahman
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!