[মুফতী মাহফুজুর রহমান]
এই হল লা মাযহাবি চটি মুফতীদের অবস্থা
লাশ দাফন করার পর সম্মিলিত বা একাকী মুনাজাতের বিধান।
কয়েকটি বর্ণনা শুরুতে দেখে নেইঃ
১
وَفِي حَدِيثِ بن مَسْعُودٍ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللَّهِ ذِي النِّجَادَيْنِ الْحَدِيثَ وَفِيهِ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ أَخْرَجَهُ أَبُو عَوَانَةَ فِي صَحِيحه (فتح البارى، كتاب الدعوات، قَوْلُهُ بَابُ الدُّعَاءِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ-11/209)
হযরত ইবনে মাসঊদ রাঃ এর বর্ণনায় এসেছে [তিনি বলেনঃ] যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুন নাজাদাইনের কবরে দেখলাম। …………. যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফন থেকে ফারিগ হলেন, তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুললেন। ইমাম আবূ আওয়ানা তার “সহীহ” নামক গ্রন্থে বর্ণনাটি এনেছেন। [ফাতহুল বারী-১১/২০৯]
২
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ
হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফন থেকে ফারিগ হতেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দুআ কর, এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। কেননা, এখনি তাকে সুওয়াল করা হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১]
৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এসেছে যে,
حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ، فَأَطَالَ الْقِيَامَ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ،
তিনি জান্নাতুল বাকীতে আসলেন, এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। তারপর তিনবার উভয় হাতকে উঠালেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭৪]
উপরোক্ত হাদীসগুলোর দিকে তাকালে আমাদের পরিস্কার হয়ে যায় যে, দাফন করার পর, বা কবরের পাশে দাড়িয়ে, কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে মুনাজাত করা হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই প্রমাণিত।
আর সম্মিলিত মুনাজাত বিষয়ে হাদীসে এসেছেঃ
عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.
হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাঃ। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।
{মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬}
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭}
عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫}
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।{ মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১}
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে বিধান হল,
১
মৃতকে দাফন করার পর, তার কবরের পাশে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুআ করা জায়েজ আছে।
২
একাকী করাও জায়েজ আছে, আর সম্মিলিতভাবে করাও জায়েজ আছে।
৩
এ দুআকে জরুরী মনে করা বা দাফনের সুন্নাত মনে করা বিদআত।
৪
যারা এভাবে দুআ না করে চলে যায়, তাদের ভর্ৎসনা করা জায়েজ নেই।
রাসূল সাঃ এর এই হাদিসের মাঝে আপনারা এই সকল অন্ধ ভক্ত ও তাদের কথিত শায়েখদের খুজে পাবেন।
عن عبد الله بن عمرٍو (رض) قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم : - ان الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد و لكن يقبض العلم بقبض العلماء حتي اذا لم يبق عالما اتخذا الناس رؤسا جهالا فسئلوا فافتوا بغير علم فضلوا و اضلوا. (متفق عليه، مشكوة ص ٣٣)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্নিত - তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন শেষ যামানায় আল্লাহ্ পাক তার বান্দার অন্তর থেকে ইলম উঠিয়ে নিবেন না; বরং আলিমদের ইন্তকালের মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি দুনিয়ায় কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা অজ্ঞদের নেতা বা বিচারক হিসাবে গ্রহন করবে। এরপর তাদের কাছে মাসআলা মাসাইল জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তারা বিনা ইলমে ফতুওয়া দিবে। ফলে নিজেরাও গোমরাহ্ হবে এবং অপরকেও গোমরাহ্ করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৩ পৃঃ)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহঃ এর কথাটুকু মনে রাখা দরকার :
"“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে, আধা বক্তা, আধা ফকীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
[মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]"
আল্লাহ পাক বলেন-
وَ لَا تَقْفُ مَا لَیْسَ لَکَ بِهٖ عِلْمٌ ؕ اِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا
অর্থ : যে বিষয়ে তোমার পুরোপুরি জানা-শোনা নেই সে বিষয়ের পেছনে পড়বে না। নিঃসন্দেহে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর, এগুলোর প্রতিটিই জিজ্ঞাসিত হবে। সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৬
আল্লাহ তায়ালা পবিএ কোরআনে ইরশাদ করেনঃ-
لعنة اللّٰه على الكاذبين
অর্থঃ- মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ তায়ালার লা'নত।
হাদিসে পাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন---
كفى بالمرأ كذبا أن يحدث بكل ما سمع
"কারো মিথ্যাচারী হওয়ার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে ( সত্যমিথ্যার যাচাই ছাড়া ) তাই বর্ননা করে।" (সহীহ মুসলিম, প্রথম খন্ড, কিতবুল ঈমান, হাদীস নং ০৫; আবু দাঊদ, হাদীস নং ৪৯৮২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন---
من يقل عليّ ما لم أقل فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার ব্যপারে এমন কথা বলবে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নমে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। [সহীহ বুখারীঃ ১/২১ হাদিস ১০৯]
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ব্যাপারে এভাবে মনগড়া কথা বলা বা তার শব্দ কিংবা অর্থকে মনগড়াভাবে বর্ণনা করা মারাত্মক অন্যায় ও মহাপাপ। এর শাস্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন---
مَنْ قَالَ فِي القُرآنِ بِرأيِهِ ، فَلْيَتَبوأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাপারে নিজের মনগড়াভাবে বললো, সে যেন নিজের অবস্থান দোযখে বানিয়ে নেয়।” (জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ২৯৫১/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৯-১১০/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২০৬৯, ২৪২৯, ২৯৭৬, ৩০২৫ প্রভৃতি)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন---
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন দোযখে নিজের আবাস বানিয়ে নেয়।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৬/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ০৩ প্রভৃতি)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!