মহান আল্লাহ তায়া’লার উপর ঈমান,আকিদা বিশ্বাস বিশুদ্ধ রাখা এবং ইসলামের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে আজ আমরা পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করছি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। রোগ-শোক, বালামুসিবত থেকে রক্ষা সহ যাবতীয় কিছুর দিকনির্দেশনা ইসলামে রয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,করোনা ভাইরাস মহামারির এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই ইসলামের নির্দেশনার প্রতি গুরুত্ববান না হয়ে পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন যা যা করতে বলছে আমরা অক্ষরে অক্ষরে তা-ই পালন করছি।
পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনে বলা হচ্ছে-
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে পরস্পরে সাক্ষাৎ হলে একে অপরের সাথে মুসাফাহা করা যাবে না। ব্যস! আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছি। অনেকেই এখন আর মুসাফাহা করে না। সুস্থ ব্যক্তির সাথেও না। কি আশ্চর্য ব্যপার!
মুসাফাহার মাধ্যমেই করোনা ছড়িয়ে যাবে এমনটা আপনি আমার আকিদা বিশ্বাস হলে মহান আল্লাহ তায়া’লা উপর আর বিশ্বাস রইলো কোথায়? সহিহ বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ "লা-আদওয়া- অর্থাৎ রোগের কোন ছোয়াছে নেই। রোগ আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে না। হাদীসের ভাষ্য মতে নিজস্ব ক্ষমতায় যদি রোগ কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে তাহলে পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একটি ফযিলতপূর্ণ আমাল মুসাফাহা ছেড়ে দেওয়ার কি মানে ?
মুসলমান একে অপরের সাথে দেখা হলে মুসাফাহা বা করমর্দন করা একটি ইসলামী রীতি ও উত্তম চরিত্র। রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে তা প্রমাণিত।
এর দ্বারা মুসাফাহাকারী ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে ভালবাসা ও হৃদ্যতার বহিঃপ্রকাশ হয় । মুসাফাহা মুসলমানদের পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও কলহ দূর করে দেয়। মুসাফাহা-এর ফজিলতের ব্যাপারে হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:“কোন মুসলিমদ্বয় যদি সাক্ষাত করে পরস্পর মুসাফাহা করে তাহলে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। [সুনানে আবু দাউদ- ৫২১২]
হ্যাঁ, বাস্তবেই কেহ করোনায় আক্রান্ত হলে বা সে করোনায় আক্রান্ত জানা থাকলে তার সাথে মুসাফাহা না করতে পারি। সেসময় সতর্ক থাকার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু
ঢালাওভাবে সবার সাথে মুসাফাহা পরিত্যাগ করার তো কোন মানে হয় না।
মূসা আলাইহিসসালাম এর অনুপস্থিতিতে সামেরী নাম এক ব্যক্তি মূসা আ.এর উম্মতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিলো। গো- বৎসের পূজার শিক্ষা দিয়েছিল।
পবিত্র কুরআন শরীফে ১৬ নং পারার সূরা ত্বহার ৯৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,হযরত মূসা আলাইহিসসালাম সামেরীকে বদ দুআ করে বলেছিলেন,দূর হ,তোর জন্য সারা জীবন এ শাস্তি রইলো যে,তুই বলবিঃ আমাকে স্পর্শ করো না।
হযরত মূসা আ.সামেরীর জন্যে পার্থিব জীবনে এই শাস্তি ধার্য করেন যে,সবাই তাকে বর্জন করবে। এবং কেহ তার কাছে ঘেঁষবে না।
তাফসীরে মারেফুল কুরআনে উল্লেখ আছে,কাউকে নিকটে আসতে দেখলেই সে(সামেরী)চিৎকার করে বলতোঃ
لا مساس- লা মিছাছ
অর্থাৎ,আমাকে কেউ স্পর্শ করো না।
করোনার অজুহাতে যারা ঢালাওভাবে মুসাফাহা ছেড়ে দিয়েছি,তাদের ভেবে দেখা উচিত যে,এ কাজ কুরআনে বর্ণিত সামেরীর সাদৃশ্য হচ্ছে না তো!
কাছে না ঘেঁষা,পরস্পরের স্পর্শ বা ছোঁয়াকে খারাপ মনে করা এটা হিন্দুয়ানী রীতিনীতি। সামেরী থেকে হিন্দুরা গো-বৎসের পূজা আর ছোঁয়াকে খারাপ মনে করার শিক্ষা লাভ করেছে। এসব কোন মুসলমানের আকিদা বিশ্বাস হতে পারে না। পশ্চিমা চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের পিছনে দৌড়ালে চলবে না বরং তা ইসলামের কষ্টিপাথরে যাচাই-বাছাই করে তারপর আমাল করতে করতে হবে। আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে তকদিরের উপর ঈমান রেখে, মহান আল্লাহ তায়া’লা উপর আকিদা বিশ্বাস সঠিক রেখে চলার তাওফীক দান করুন, আমিন।
[সংকলনে-H.M.Zunaid
দারুল উলুম হাটহাজারী।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!