আমি বিশ্বাস করি- আপনারা দেশের শান্তির জন্য প্রায় প্রতি রাতের ঘুম হারাম করে, জিবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করে থাকেন।
যে সময় আপনাদের বাবা, মা, সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন সবাই ঘুমিয়ে থাকেন, ঠিক তখনও আপনাদের রাত জেগে ডিউটি পালন করতে হয়। জনগনের নিরাপত্তার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি নিতেও ভয় করেন না আপনারা।আপনাদের এ অবদানের মূল্য দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই। শুধু এতটুকু বলি আপনারা যাঁরা দেশ,জাতি,মানবতা ও ধর্মের জন্য নিশ্বার্থ কাজ করছেন,আপনাদের এ সেবার মূল্য মহান রব নিজ হাতে দান করেন।আমিন!
প্রিয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী!
যখন আপনাদেরই সামনেই কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের দেশে সংঘবদ্ধ হয় এবং দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে ততপর হয়, তখন আমরা জেনে শুনে চুপচাপ থাকতে পারি না।
কারণ মানবীয় দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের মত সাধারণ মানুষেরও অনেক দায়ীত্ব রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আপনাদের মত আমরা অস্ত্র হাতে নিতে না পারলেও, বক্তব্য ও লেখনীর অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতিকে সতর্ক করে আপনাদের কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারি। সাধ্যমত চেষ্টা করি হরদম। এটাকে শুধু দায়ীত্ব নয় বরং সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করি।আমরা চাই স্বাধীন দেশটা নৈরাজ্য থেকে হেফাযত থাক।
প্রিয় প্রশাসন!
আজ আমি একটি সন্ত্রাসী সংগঠণের সাথে প্রমাণসহ পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি।যারা অলরেডি সরকারের কালো তালিকাভুক্ত সংগঠণ তথা হেযবুত তওহীদ। এ সংগঠণের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী (ডাক নাম সেলিম খান পন্নী) ৭১ সালের একজন নাম করা রাজাকার ছিলেন। টাঙ্গাইলে শান্তি কমিটি যারা গঠণ করেছিলো, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল এ পন্নী সাহেব ও তার বাবা মেহেদী আলী খান পন্নী খসরু। দেশ স্বাধীনের পর তাদেরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে এলাচীপুর এনে বিচার করা হয়েছিল। যা 'স্বাধীনতা ৭১' বইয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী লিখেছেন। বিস্তারিত এখানে দেখতে পারেন- https://youtu.be/-ECJdUqc3aU
অবশ্য তারা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কিছু সেমিনার করে আপনাদের সতর্ক দৃষ্টি তাদের থেকে সরাতে ব্যপক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের বই পুস্তকে সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়ার যেসব কথাবার্তা রয়েছে সেগুলোর কি হবে?
মুখে মুখে জঙ্গিবাদের বিরোধিতা করলেও তারা যে তাদের সদস্যদের সেগুলোই নিয়মিত পড়াচ্ছে সেগুলোর কি হবে? স্বশস্ত্র সংগ্রামকে যারা নিজেদের মূল থিউরী বানিয়ে বই-পুস্তক ছড়াচ্ছে এবং তাদের কর্মীদের সেভাবে তৈরী করছে, সেগুলো কোন নজরে দেখছেন? কোনো নাগরিকের কি স্বশস্ত্র সংগ্রামের অনুমতি দেশের সংবিধান অনুমতি দেয়? যদি দেয় তাহলে আমার জানা মতে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেক আলেম কারাবন্ধী। কেন? আর যদি স্বশস্ত্র সংগ্রাম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়, তাহলে নিন্মোক্ত কথা যে সংগঠণ নিয়মিত চর্চা করছে তাদের ব্যাপারে আপনারা চুপ কেন?
চলুন তাদের কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরি-
১. একথা যুক্তিসংগত যে, যে যোদ্ধা নয়,যুদ্ধ জানেনা তার এই দীনুল ইসলামের সমিতির প্রাথমিক সভ্যপদেরও (Primary membership) যোগ্যতা নেই। ভালো সভ্য হওয়া তো দুূরের কথা।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত আকীদা পৃ:১৮
২.জিহাদকারীর মর্যাদা নবীদের চেয়েও বেশি।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত আকীদা পৃ:১৭
৩.সালাতের প্রশিক্ষণ শুধু আমাদের যুদ্ধ শেখায় না, সালাহ্ চারিত্রিক,দৈহিক,মানসিক, আত্মিক,আধ্যাত্মীক বহু প্রকারের শিক্ষা দেয় যদিও যুদ্ধের প্রশিক্ষণটাই প্রথম ও মুখ্য।
সূত্র:এসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ:২১
৪.আর এই উম্মতে মোহাম্মাদীর প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে- সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর তওহীদ ভিত্তিক দীন কার্যকর কোরে মানব জাতির মধ্যেকার সমস্ত অন্যায়, অবিচার,অত্যাচার,অশান্তি,রক্তপাত দূর করে শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠা কোরে এবলিসের চ্যালেঞ্জে তাকে পরাজিত কোরে আল্লাহকে জয়ী করা।
সূত্র:এসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ:২১
৫. সশস্ত্র সংগ্রাম না করলে যেকোন ইবাদত মূ্ল্যহীন।এমনকি কেয়ামতে নবির সুপারিশও পাবে না।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত আকীদা পৃ:১৬
৬. হেযবুত তওহীদ যারা আসবে তারা নিশ্চিত জান্নাতী।
সূত্র: আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃ:৬৩
শান্তি রক্ষাকর্তা প্রিয় প্রশাসন! উপরোল্লিখিত কথা গুলো ধর্মের অপব্যাখ্যা করে ইসলামকে বরং সন্ত্রাসের ধর্ম বলে চালিয়ে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি, পাশাপাশি সরাসরি রাষ্ট্রের সংবিধান বিরোধী।
উপরোল্লিখিত কথা গুলো ইসলামের সত্যিকারের জিহাদের কথা নয় বরং ট্যারোরিষ্টদের কথা। জিহাদ আর সন্ত্রাস এক নয় বরং পুরোটাই উল্টা।সন্ত্রাস ধ্বংশ করতেই জিহাদ। কিন্তু সে জিহাদের অপব্যাখ্যা করে সন্ত্রাসবাদ তৈরির জন্য উল্লেখিত কথা গুলো কি বড় ভূমিকা রাখবে না? বলুন! এরপরও কি তারা শুধু কালো তালিকায় সীমাবদ্ধ থাকবে? নিষিদ্ধ হওয়া যৌক্তিক নয় কি?
আমি তো মনে করি হেযবুত তওহীদের এসব কথাবার্তার পরও তাদেরকে ওপেন ভাবে কার্যক্রমের সুযোগ দেয়া মানে ট্যারোরিজমকে সুযোগ দেয়া। এত মারাত্মক কথা থাকার পরও কাদের ছত্রছায়ায় তারা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে আমার বোধগম্য নয়।
প্রিয় বাহিনী! তারা শুধু সন্ত্রাসী সংগঠণ নয় বরং ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকেও একটি ভ্রান্ত ও কুফরী সংগঠন।ইসলামী মূলধারা বিবর্জিত একটি সংগঠণ।
তারা একে একে ইসলামের অধিকাংশ বিধিবিধান নিয়ে বাজে মন্তব্য করে সমাজে দাঙ্গা লাগানোর পায়তারা করছে। তাদের উগ্র কথাবার্তা সমাজের তাওহীদ প্রিয় মুসলমানদের হ্নদয়ে বারবার আঘাত করেই চলেছে।
তারা প্রচলিত ইসলামকে ভুল, মরা,পচা এবং হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান ধর্মের মত আখ্যায়ীত করার পাশাপাশি ইসলামকে নরকীয় সিস্টেম যা শান্তি আনতে ব্যার্থ বলে দাবী করেছে।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ:২০/৬১
শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী ১৬০ কোটি মৃসলমানকে কাফের-মোশরেক, আবু জেহেলের মত এমনকি ইহুদীদের মত অভিসপ্ত এবং জাহান্নামী বলে দাবী করেছে এই হেযবুত তওহীদ।
সূত্র:এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৭২/৭৫/৭৭/৮৩/৮৪১০৮/
তারা আরো দাবি করেছেন-
১. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের দুই শহীদের মর্যাদা এমনকি সরাসরি জান্নাতী।
২. পন্নী সরাসরি আল্লাহর মনোনীত এমাম,
৩. পন্নীর উপর মোজেজা সংগঠিত হয়েছে।
৪. নবিরা যেখানে ব্যার্থ, সেটা পন্নীকে দিয়ে হবে।
৫. আলেম এবং ফকিহরা ইসলাম বিকৃত করেছে, এরা কুকুর-শুকরের চেয়েও খারাপ।
৬. ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ হেরে গেছেন।
৭. রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জ না করতে পারলে ইবাদতের কোন মূল্য নেই।
৮. বোরখা শয়তানের আবিস্কার।
৯. শুধু ইসলাম নয়, যেকোন ধর্ম পালন করে জান্নাতে যাওয়া যাবে।
১০. সনাতন ধর্ম কোরআনের ধর্ম।
১১. গান-বাজনা হালাল।
১২. কবিরা গুনাহ করলেও হিসাব দেয়া লাগবে না।
১৩. বেতন নিলে সে ইমামের পেছনে নামাজ পড়া যাবেনা।
১৪. নবিজি স: তাঁর দায়ীত্ব পূর্ণ করতে পারেননি।
১৫. নবিজি স: আজও রহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারেননি।
১৬. নবিজির সুন্নাহ বলতে শুধুই জিহাদ। খাওয়া,শোয়া,পোষাক ইত্যাদীতে নবিজির কোন সুন্নাত নেই।
১৭. দাড়ি,টুপির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।
এভাবে করে একে একে নামাজ,রোজা,হজ্ব,যাকাতসহ ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তারা অপব্যাখ্যা করে সমাজের মুসলিমদের উস্কে দিচ্ছে বিশৃঙ্খলার জন্য।
প্রিয় প্রশাসনের দায়ীত্বশীলগণ! হেযবুত তওহীদ শুধু ধর্ম নয় দেশেরও শত্রু। যা আমি এখানে তুলে ধরলাম,আশা করি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং যথাপোযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যথায় দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য মহাহুমকি হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি মনে করি। তাই ধর্ম ও দেশটাকে সুরক্ষিত রাখতে হেযবুত তওহীদকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছি। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। মহান রব আমাদের দেশটা সমস্ত আগ্রাসন থেকে হিফাযতে করেন। আমিন!
নিবেদক,
রিজওয়ান রফিকী
বোর্ডবাজার, গাজীপুর সিটি।
৩০/৩/২০২০ ঈ:
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!