Wednesday, November 16, 2016

ডা. জাকির নায়কঃ কুরআন-হাদিস সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মূল্যায়ন

༺ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ༻
আসসালামু আলাইকুম ওরহমাতুল্লাহি
ওবারাকাতুহু
► প্রশ্নঃ ডা. জাকির নায়ক ব্যক্তিটি কেমন?
তার আকিদা-বিশ্বাস কি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সামাঞ্জস্যশীল?
► হাদিসের ব্যাখ্যা ও কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে তার মতামত কতটুকু গ্রহণ যোগ্য?
► এবং ফিকহ সাস্ত্রে তার মাযহাব কি? তিনি কোন ইমামের অনুসারী?
► আমরা তার আলোচনা শুনে তার উপর আমল করতে পারব কি না? দয়া করে সন্তুষজনক উত্তর দিয়ে ধন্য করবেন।
► উত্তরঃ ডা. জাকির নায়ক সাহেবের বক্তব্য ও আলোচনায় বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাসের বিকৃতি, পবিত্র কুরআনের মনগড়া অপব্যাখ্যা, বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের আতঙ্ক, ইসলাম বিদ্ধেষী
পশ্চিমা বিশ্বের চেতনা এবং ফিক্বহী মাসায়িল সমূহে সালাফে সালেহীন ও উম্মতের অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগণের মত ও পথ থেকে বিচ্যুতির মত ভ্রষ্টপূর্ণ কথাবার্তা পাওয়া যায়।
এবং তিনি মুসলিম জাতিকে মুজতাহিদ ইমামগণের অনুসরণ থেকে বিরত, দ্বীনি মাদরাসা সমূহ থেকে মানুষকে বিমুখ এবং হক্বানী ওলামায়ে কিরামদেরকে জনসাধরণের কাছে সন্দেহান্বিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার অপ-প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নে তার ভ্রান্তিপূর্ণ কিছু আলোচনার উদাহরণ দেয়া হলো।

►এক- আকিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির নায়ক সাহেবের কয়েকটি মন্তব্য: আক্বিদা- অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়! তাতে সমান্য পদস্খলন অনেক সময় ঈমানের জন্য আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায়। এই আক্বিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির
নায়ক সাহেবের মন্তব্য-
►(ক) ‘বিষ্ণু’ও ‘ব্রাহ্মম’বলে আল্লাহ তা‘য়ালাকে ডাকা বৈধ? ডাক্তার সাহেব এক প্রোগ্রামে বলেন,
“আল্লাহ তা‘য়ালাকে হিন্দুদের উপাস্যদের নামে ডাকা বৈধ,যেমন ‘বিষ্ণু অর্থ রবএবং ‘ব্রাহ্মণ’অর্থ খালিক তথা সৃষ্টিকর্তা। তবে শর্ত হল এই বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, বিষ্ণুর চারটি হাত রয়েছে এবং পাখির উপর আরোহিত”। (জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম আওর আলমী আখওয়াত”-৩৩}
অথচ অনারবী সে সকল শব্দ দ্বারাই কেবল এক মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাকে ডাকা যায়, যা কেবল মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালার জন্যই নির্দিষ্ট। তা ব্যতীত
অন্য কোন শব্দ দ্বারা জায়েজ নয় তাহলেবিষ্ণু,ব্রাহ্মণ যা হিন্দুদের প্রতীক তা দ্বারা আল্লাহকে ডাকা কিভাবে বৈধ হতে পারে?
► (খ) আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম(কুরআন শরিফ) কিরূপ? তা বিজ্ঞান ও টেকনোলজী দ্বারা প্রমাণ করা জরুরি? ডাক্তর সাহেব এক প্রোগ্রামে
বলেন,মানুষ মনে করে এ পবিত্র গ্রন্থটিই আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম (বাণী)। কিন্তু যদি আপনি জানতে চান যে,কোনটি প্রকৃত আল্লাহর কিতাব তাহলে আপনাকে সর্বশেষ পরীক্ষা তথা‘আধুনিক বিজ্ঞান ও টেকনোলজী’দ্বারা তা প্রমাণ করাতে হবে। যদি তা আধুনিক বিজ্ঞান সমর্থন করে তাহলে ধরে নিতে হবে তা আল্লাহর কিতাব । (আল জাওয়াবু আলা সালাসিনা যাওয়াবান আলা আন জাকিরুল হিন্দ ওয়া আসহাবু ফিকরিহী মুনহারিফীনা দ্বালালান লিশ শায়েখ ইয়াহইয়া আল হাজুরী}
এ কথা দ্বারা ডাক্তার সাহেবের পবিত্র কুরআন সর্ম্পকে গুমরাহীমূলক নির্ভীকতা ও চিন্তার বিপথগামীতা এবং অধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি অতিভক্তির বিপদজনক মনোভাব প্রমাণিত হয়। তিনি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে আসমানী কিতাব বিশেষত আল্লাহ তা‘য়ালার পবিত্র কালাম ‘কুরআন’মজিদের সততা প্রমাণের মানদণ্ড সাব্যস্ত করেছেন। অথচ কুরআন মজিদ আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম বা বাণী হওয়ার বড় প্রমাণ তার ‘ই‘জাজ’তথা তার রচনাশৈলী ও বর্ণনাভঙ্গী। যার উপমা দিতে মানুষ অক্ষম। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে চ্যাল্যাঞ্জ ঘোষণা করেছেন।
 ► (গ) ফাতওয়া দেয়ার অধিকার সকলের রয়েছে?! ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব এক স্থানে বলেন,‘যে কোন মানুষের ফতোয়া দেয়ার অধিকার রয়েছে’কারণ ফতোয়া দেয়া মানে অভিমত ব্যক্ত করা । {প্রাগুক্ত} এখানে ডাঃ জাকির নায়েক ফাতওয়া দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর ভাষ্যমতে,মুফতি আল্লাহ তা‘য়ালার বিধান বর্ণনায় মহান রাব্বুল আলামীনের ভাষ্যকার ও স্থলাভিষিক্ত হয়ে স্বাক্ষরের যিম্মাদার হয়ে থাকেন। ﻟﻢ ﺗﺼﻠﺢ ﻣﺮﺗﺒﺔ ﺍﻟﺘﺒﻠﻴﻎ ﺑﺎﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻔﺘﻴﺎ ﺇﻻ ﻟﻤﻦ ﺍﺗﺼﻒ ﺑﺎﻟﻌﻠﻢ ﻭﺍﻟﺼﺪﻕ ﻓﻴﻜﻮﻥ ﻋﺎﻟﻤﺎ ﺑﻤﺎ ﺑﻠﻎ ﺻﺎﺩﻗﺎ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻜﻮﻥ ﻣﻊ ﺫﻟﻚ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻄﺮﻳﻘﺔ ﻣﺮﺿﻲ ﺍﻟﺴﻴﺮﺓ ﻋﺪﻻ ﻓﻲ ﺃﻗﻮﺍﻟﻪ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻪ ﻣﺘﺸﺎﺑﻪ ﺍﻟﺴﺮ ﻭﺍﻟﻌﻼﻧﻴﺔ ﻓﻲ ﻣﺪﺧﻠﻪ ﻭﻣﺨﺮﺟﻪ ﻭﺃﺣﻮﺍﻟﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣﻨﺼﺐ ﺍﻟﺘﻮﻗﻴﻊ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﺑﺎﻟﻤﺤﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻨﻜﺮ ﻓﻀﻠﻪ ﻭﻻ ﻳﺠﻬﻞ ﻗﺪﺭﻩ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺃﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺍﺗﺐ ﺍﻟﺴﻨﻴﺎﺕ ﻓﻜﻴﻒ ﺑﻤﻨﺼﺐ ﺍﻟﺘﻮﻗﻴﻊ ﻋﻦ ﺭﺏ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ، ﻓﺤﻘﻴﻖ ﺑﻤﻦ ﺃﻗﻴﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻨﺼﺐ ﺃﻥ ﻳﻌﺪ ﻟﻪ ﻋﺪﺗﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﺘﺄﻫﺐ ﻟﻪ ﺃﻫﺒﺘﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻌﻠﻢ ﻗﺪﺭ ﺍﻟﻤﻘﺎﻡ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﻗﻴﻢ ﻓﻴﻪ ‏( ﺍﻋﻼﻡ ﺍﻟﻤﻮﻗﻌﻴﻦ- 1/91 )
[অর্থ: হাদীস বর্ণনা এবং ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্য কেবল আলেমও সত্যবাদীদের। সুতরাং সে হবে আলেম, সাথে সাথে সত্যাবাদীতা। এবং যার বাহ্যিক অভ্যান্তরিণ অবস্থা হবে সৌন্দর্যমন্ডিত। কথাবার্তা ও কর্মে হবে ন্যায়পরায়ণ। যার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য ও বাহ্যিক ও অভ্যন্তরিণ অবস্থা হবে সমান সুন্দর। যখন রাজ্যের বাদশাহ হওয়ার পদটিকে এমন মর্যাদা দেয়া হয়ে যে, এর পদর্যাদাকে কেউ অস্বিকার করে না, আর এটাতো সবচে’ উঁচু পর্যায়ের পদ, সুতরাং আসমান জমিনের রবের প্রতিনিধিত্বের পদটি কতটা মর্যাদাপূর্ণ হবে? প্রকৃত বিষয় হলযাকে এ স্থানে অধিষ্ঠিত করা হবে, তাকে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং স্বীয় পদমর্যাদা সম্পর্কে হতে হবে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। {ইলামুল মুআক্বিয়ীন-১/৯১}] ডাক্তার সাহেব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে “স্বীয় অভিমত”বলে একটি সাধারণ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে শুধু নিজের জন্য নয় বরং অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ সকলের জন্য ফতোয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন। আর তিনি পবিত্র কুরআনের এআয়াত- ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ‏(43 ) অর্থ: যদি তোমরা না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নাও {সূরা নাহল-৪৩, সূরা আম্বিয়া-৭} সেই সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের হাদিসটি সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেলেন; ﻣﻦ ﺍﻓﺘﻰ ﺑﻐﻴﺮﻋﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﺇﺛﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺃﻓﺘﺎﻩ (অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্ণ জ্ঞানী হওয়া ছাড়া (অশুদ্ধ) ফতোয়া দেয় ঐ (অশুদ্ধ) ফতোয়ার গুনাহ ফতোয়া প্রদানকারীর উপরই বর্তাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৫৯৩, বাবু তাফসিরিল কুরআন আন রাসূলিল্লাহ অধ্যায়। ☼►◄☼ দুই- তাফসীরে- মনগড়া ব্যাখ্যা তথা অর্থবিকৃতি :◄☼ কুরআন মজিদের তাফসীরের বিষয়টি খুবই সুক্ষ্ম। কেননা মুফাসসির আয়াত থেকে আল্লাহ তা‘য়ালার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করেন যে,আল্লাহ তা‘য়ালা এই অর্থই বুঝিয়েছেন। তাই অযোগ্য লোকদের এ বিষয়ে পা রাখা অত্যন্ত বিপদজনক। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﺄﺻﺎﺏ ﻓﻘﺪ ﺃﺧﻄﺄ অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআনের তাফসীর কেবল নিজের জ্ঞান দিয়ে করে, তাহলে সে ঘটনাচক্রে সঠিক বললেও তাকে ভুলকারী সাব্যস্ত করা হবে। (তিরমিযি শরিফ-হাদীস নং-২৯৫২) অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺃ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ অনুবাদ-যে ব্যক্তি স্বীয় যুক্তি দিয়ে কুরআনের তাফসীর করে সে তার আবাস জাহান্নামকে বানিয়ে নিল। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৯৫১} তাই মুফাসসিরের জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যেমন,- ১- কুরআনের সকল আয়াতের উপর দৃষ্টি থাকতে হবে। ২- হাদীসের ব্যাপারে থাকতে হবে অগাধ পান্ডিত্ব। ৩. আরবী ভাষা ও ব্যকরণ তথা নাহু, ছরফ, ইশতিক্বাক্ব, এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে রাখতে হবে গভীর পাণ্ডিত্য। ডাক্তার সাহেবের মধ্যে এ সকল শর্তের একটিও যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। তার না আছে আরবী ভাষা ও আরবী ব্যকরণ সর্ম্পকে যথাযথ পারঙ্গমতা। না আছে হাদিস ভাণ্ডারের উপরকোন সুগভীর পড়াশোনা। আর আরবী সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রেও নন তেমন জ্ঞানী। (এ কথাগুলো নিম্নের উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ) অপরদিকে তাফসীরের ক্ষেত্রে বিপদগামী হওয়ার যত উপকরণ হতে পারে,সবকটিই তার মধ্যে বিদ্যমান, যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত তাফসীর থেকে বিমুখিতা, কালের চিন্তনে প্রভাবিত হওয়া, এবং পবিত্র কুরআনের বিষয়বস্তুকে ভুল বুঝা ইত্যাদি। তাই তিনি দশের অধিক আয়াতকে স্বীয় অজ্ঞতা চর্চার ক্ষেত্র বানিয়েছেন। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেয়া গেল। ☼►◄☼ প্রথম আয়াত : ☼◄ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻗﻮﺍﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ (অর্থ: পুরুষরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল) এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ডাক্তার সাহেব বলেন,অনেকে বলেন ‘ক্বাওয়্যাম’অর্থ এক স্তর উর্দ্ধে হওয়া। কিন্তু বাস্তবে ‘ক্বাওয়্যাম’শব্দটি “ইক্বামাতুন” শব্দ থেকে নির্গত। ‘ইক্বামাতুন’অর্থ দাঁড়ানো। তাই ‘ইক্বামাতুন’-এর মর্ম হল যিম্মাদারিতে একস্তর উর্দ্ধে হওয়া,সম্মান ও মর্যাদায় উর্দ্ধে হওয়া নয়। (খুতুবাতে জাকির নায়েক-২৯৫, ফরীদ বুক ডিপো) ডাক্তার সাহেব পশ্চিমা বিশ্বের ‘সমানাধিকার’নীতির সমর্থনে উক্ত আয়াতের মনগড়া তাফসীর করতে গিয়ে সম্মান ও মর্যাদায় পুরুষের এক স্তর উর্দ্ধে হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। অথচ উম্মতের বড় বড় মুফাসসিরগণ ‘সম্মান ও মর্যাদায়’শ্রেষ্ঠ হওয়ার কথা বলেন। যেমন আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻗﻮﺍﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন, ﺃﻱ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻗﻴﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻱ ﻫﻮﺭﺋﻴﺴﻬﺎ ﻭﻛﺒﻴﺮﻫﺎ ﻭﺍﻟﻤﺤﺎﻛﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ،ﻣﺆﺩﺑﻬﺎ ﺇﺫﺍﺍﻋﻮﺟﺖ অর্থ: স্ত্রীর কাছে স্বামীর অবস্থান শাসনকর্তা ও সরদারের ন্যায়। প্রয়োজনে স্বামী স্ত্রীকে উপযুক্ত সংশোধনও করতে পারবেন। আর ﻭﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺩﺭﺟﺔ এর তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ লিখেন - ﻭﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺩﺭﺟﺔ ﺃﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻀﻴﻠﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻭﺍﻟﻤﻨﺰﻟﺔ ﻭﻃﺎﻋﺔ ﺍﻷﻣﺮﻭﺍﻹﻧﻔﺎﻕ ﻭﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﺑﺎﻟﻤﺼﺎﻟﺢ ﻭﺍﻟﻔﻀﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ অর্থ: স্বামী স্ত্রী থেকে সম্মান,মর্যাদা,অনুকরণ ইত্যাদিতে এক স্তর উর্দ্ধে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৬১০) এছাড়াও ডাক্তার সাহেবের এই তাফসীর রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের হাদিসটির সম্পুর্ণ বিপরীত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন - - ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻓَﻼَ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻟَﻮْ ﻛُﻨْﺖُ ﺁﻣِﺮًﺍ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺠُﺪَ ﻷَﺣَﺪٍ ﻷَﻣَﺮْﺕُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺠُﺪْﻥَ ﻷَﺯْﻭَﺍﺟِﻬِﻦَّ ‏(ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2142- ) অর্থ: যদি আমি আল্লাহ তা‘য়ালা ছাড়া অন্য কাউাকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম,তাহলে আমি মহিলাদেরকে আপন আপন স্বামীকে সিজদা করার আদেশ দিতাম। (আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪২) যদি স্বামী-স্ত্রী উভয় জন সাম্মান ও মর্যদায় সমান এবং স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর উর্দ্ধে না হতো,তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদেরকে সিজদা (যা সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক) করার কেন আদেশ দেয়ার কথা বললেন? ☼►◄☼ দ্বিতীয় আয়াত ☼►◄☼ ডাক্তার সাহেবের কাছে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে মাতৃগর্ভে নবজাত শিশুর লিঙ্গ কেবল মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাই জানেন। কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নতি করেছে,আমরা আল্ট্রাসনুগ্রাফ ীর মাধ্যমে নবজাতকের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকি। কুরআনের এই আয়াত কি মেডিকেল সাইন্সের বিপরীত নয়? এর উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন,‘এটি সত্য যে, কুরআনের এ আয়াতের বিভিন্ন অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,“কেবল আল্লাহ তা‘য়ালাই জানেন মাতৃগর্ভে নবজাতকের লিঙ্গের কথা”। কিন্তু এই আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গির প্রতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়,এখানে ইংরেজী শব্দ sex এর অর্থ প্রদানকারী কোন শব্দ নেই। মূলতঃ কুরআন যা বলতে চায় তা এই যে,মাতৃগর্ভে কি আছে? তা আল্লাহ জানেন। বহু সংখ্যক মুফাসসিরগণ এখানে ভুলের শিকার হয়েছেন। তারা বলেছেন ‘মাতৃগর্ভে নবজাতকের লিঙ্গ আল্লাহই জানেন’। এটি অশুদ্ধ। এই আয়াতটি নবজাতকের লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে না। বরং তা থেকে উদ্দেশ্য হল এই নবজাতকের স্বভাব কেমন হবে,সে ছেলেটি মাতা-পিতার জন্য রহমত হবে না অভিশাপ? ইত্যাদি। (ইসলাম পর চালিস ইতিরাজাত-১৩০, ডাঃ জাকির নায়েক, আরীব পাবলিশার্স, দিল্লী) ডাক্তার সাহেব অধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রভাবিত হয়ে এ কারণে সৃষ্টি একটি অভিযোগের উত্তর দেয়ার জন্য কুরআনের অন্য আয়াত ও সাহাবী- তাবেয়ী থেকে বর্ণিত তাফসীরকে পশ্চাপদ রেখে একটি সু-প্রশিদ্ধ অর্থকে অস্বীকার করে দিলেন। এবং বড় বড় মুফাসসিরগণেরউপর অভিযোগ করে তাদেরকে ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করলেন। ডাক্তার সাহেব যে ব্যাখ্যা করেছেন তা ﻣﺎ ﻣﻮﺻﻮﻟﻪ ’-এর ব্যাপকতায় আসতে পারে। আনেক মুফাসসিরগণ সম্ভাবনা হিসাবে প্রথম অর্থের সাথে এটিকেও যোগ করেছেন। কিন্তু অন্য অর্থকে বিলকুল অশুদ্ধ বলা,ডাক্তার সাহেবের গবেষণায় ঘাটতি ও তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবা- তাবেয়ীদের মতামতকে অবমূল্যায়নের বড় প্রমাণ। কেননা ডাক্তার সাহেব যে অর্থকে অস্বীকার করছেন তার প্রতি সুরায়ে রা‘দের আট নাম্বার আয়াত ইঙ্গিত করছে। ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻌﻠﻢ ﻣﺎ ﺗﺤﻤﻞ ﻛﻞ ﺃﻧﺜﻰ ﻭﻣﺎ ﺗﻐﻴﺾ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﻭﻣﺎ ﺗﺰﺩﺍﺩ অর্থ: আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর খবর রাখেন;যা মাতৃগর্ভে থাকে তার,এবং যাকিছু মায়ের পেটে কম-বেশী হয় তার। (সূরা রাদ-৮) এবং প্রশিদ্ধ তা‘বেয়ী,তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম হযরত কাতাদাহ রহ. থেকেও এই অর্থই বর্ণিত। যেমন তিনি বলেন, ﻓﻼﺗﻌﻠﻢ ﻣﺎﻓﻲ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﺃﺫﻛﺮ ﺃﻡ ﺃﻧﺜﻲ ﺍﻟﺦ অর্থ: মাতৃগর্ভে ছেলে না মেয়ে তার বাস্তব জ্ঞান আল্লাহ তা‘য়ালা ব্যতীত অন্য কারো কাছে নেই। তেমনি আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. তাফসীরে ইবনে কাসীরের৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৫৫ পৃষ্টায়, এবং আল্লামা নাসাফী রহ. তাফসীরে মাদারিকের তৃতীয় খন্ডের ১১৬ নং পৃষ্টায়, এবং আল্লামা শাওকানী রহ. তাফসীরে ফাতহুল কাদীরের পঞ্চম খন্ডের ৪৯৮ নং পৃষ্টায় উপরোক্ত আয়াতের এই অর্থই বলেছেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেব এই সকল শীর্ষ মুফাসসিরগণের অর্থকে অশুদ্ধ বলে নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনাকৃত অর্থকেই একান্তবিশুদ্ধ মনে করে তার উপরই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ☼ উল্লেখিত প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব: ☼►◄☼ আয়াতের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য ‘ইলমে গায়ব’বা অদৃশ্যের জ্ঞান সাব্যস্ত করা। বস্তুত ‘ইলমে গায়ব’বলা হয় ঐ দৃঢ় ও নিশ্চিত জ্ঞানকে যা কোন বাহ্যিক উপকরণ ছাড়া,যন্ত্র ব্যতীত সরাসরি অর্জিত হয়। মেডিকেল সাইন্সের যন্ত্র দ্বারা ডাক্তারদের অর্জিত জ্ঞান দৃঢ়-নিশ্চিত জ্ঞানও নয় আবার উপকরণ ছাড়াও নয়;বরং তা একটি ধারণা প্রসূত জ্ঞান মাত্র;যা যন্ত্র দ্বারা অর্জিত হয়। অতএব আল্ট্রাসোনুগ্রাফী দ্বারা অর্জিত এই ধারণা প্রসূত জ্ঞান দ্বারা পবিত্র কুরআনের আয়াতের উপর কোন ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে না। ☼►◄☼ তৃতীয় আয়াত: ◄☼ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﻙَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﻳُﺒَﺎﻳِﻌْﻨَﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛْﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ‏( ﺍﻟﻤﻤﺘﺤﻨﺔ 12- ) অর্থ: হে নবী আপনার নিকট মু‘মিন নারীরা এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করবে না। (সূরা মুমতাহিনা-১২) ডাক্তার সাহেব এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন,এখানে ‘বায়আত’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ‘বায়আত’শব্দে আমাদের বর্তমানইলেক্শনের অর্থও অন্তর্ভুক্ত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে আল্লাহ তা‘য়ালার রাসুল ছিলেন,অপরদিকে রাষ্ট্র প্রধানও ছিলেন। আর ‘বায়াআত’ দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ রাষ্ট্র প্রদানের আনুগত্ব করার নামই। এ হিসেবে ইসলাম নারীদেরকে ভোটাধিকারও প্রদান করেছিল । (ডাঃ জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম মে খাওয়াতিন কি হুকুক”-৫০) এখানে ডাক্তার সাহেব আয়াতের অপ- ব্যাখ্যার মাধ্যমে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রমাণ করতে চাচ্ছেন;তিনি বলেন,মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ‘বায়আত’গ্রহণ করা;মূলত বর্তমান গণতন্ত্রের নির্বাচন পদ্ধতির প্রাচীন পদ্ধতি। অথচ গণতন্ত্র সর্ম্পকে যারা অবগত তারা ভালভাবেই জানেন যে,ডাক্তার সাহেবের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বিরোধী,এবং তাফসীরের ক্ষেত্রে যুক্তির অপ-প্রয়োগ মাত্র। কেননা বর্তমান গণতন্ত্রে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচন করার জন্য আপন আপন ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার সকলের রয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ট লোকের ভোট না পায় তাহলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেন না। যদি রাসূল সাঃ এর বায়আত নেয়ার মূলত ভোট নেয়া হতো, তাহলে কি সেসব সাহাবীয়াদের কি কোন অধিকার ছিল রাসূল সাঃ কে রাষ্ট্রপ্রধান মানতে অস্বিকৃতি জানানো? ☼►◄☼ চুতুর্থ আয়াত:◄☼ সুরায়ে মারয়ামের আটাশ নাম্বার আয়াত- ﻳَﺎ ﺃُﺧْﺖَ ﻫَﺎﺭُﻭﻥَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺑُﻮﻙِ ﺍﻣْﺮَﺃَ ﺳَﻮْﺀٍ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺃُﻣُّﻚِ ﺑَﻐِﻴًّﺎ‏( ﻣﺮﻳﻢ 2-8)এরউপর অজ্ঞতার কারণে উত্থাপিত প্রশিদ্ধ প্রশ্ন;“হযরত মারয়াম আঃ হযরত হারুন আঃ-এর বোন ছিলেন না,উভয় জনের মধ্যে প্রায় এক হাজার বছরের ব্যবধান রয়েছে”। এর উত্তর দিতে গিয়ে ডাঃ সাহেবে বলেন,‘‘খৃষ্টান মিশনারীরা বলেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঈসা মসীহের মাতা মারয়াম (mary) ও হারুন আঃ এর বোন মারয়ামের মধ্যে প্রার্থক্য জানা ছিল না, অথচ আরবী ভাষায় ‘উখত’বলতে সন্তানকেও বুঝায়। এ জন্য লোকেরা তাকে বলেছিল হে হারুনের সন্তান, বাস্তবেও তা থেকে হারুন আঃ-এর সন্তানই উদ্দেশ্য। {ডাঃ জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম পর চালিস ইতিরাজাত”} ডাক্তার সাহেবর হাদিস ও ভাষা সর্ম্পকে অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল এই বক্তব্যের বিশ্লেষণে মুসলিম শরীফের নিম্নের হাদিসটিই যথেষ্ট। ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺓ ﺑﻦ ﺷﻌﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺪﻣﺖ ﻧﺠﺮﺍﻥ ﺳﺄﻟﻮﻧﻰ ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ ﺇﻧﻜﻢ ﺗﻘﺮﺀﻭﻥ ﻳﺎ ﺃﺧﺖ ﻫﺎﺭﻭﻥ ﻭﻣﻮﺳﻰ ﻗﺒﻞ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻜﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ . ﻓﻠﻤﺎ ﻗﺪﻣﺖ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺳﺄﻟﺘﻪ ﻋﻦ ﺫﻟﻚ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺴﻤﻮﻥ ﺑﺄﻧﺒﻴﺎﺋﻬﻢ ﻭﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ ﻗﺒﻠﻬﻢ ‏(ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ- 6/171 ، ﺩﺍﺭ ﺍﻟﺠﻴﻞ ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺭﻗﻢ 5721- ) অর্থ:হযরত মুগিরা ইবনে শু‘বা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি যখন নাজরানে গেলাম তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হল,তোমরা পড় ‘‘ইয়া উখতা হারুন!’’‘‘হে হারুনের বোন’’অথচ মুসা আঃ এর যুগ ঈসা আঃ-এর যুগের অনেক পূর্বের। অতপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তার ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তারা (তখনকার লোকেরা) নবীগণ ও যোগ্য উত্তরসুরীদের নামে নিজেদের নাম করণ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৭২১) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই করে দিয়েছেন। তার সারাংশ হল হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতা হযরত মারয়াম আলাইহাস্ সালাম হযরত মুছা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাই হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর বোন ছিলেন না;বরং হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতার ভায়ের নামও হারুন ছিল। আর তখনকার লোকেরা নবীগণ ও স্বীকৃত বুযুর্গদের নামে নিজেদের নামকরণ করতেন। অতএব একথা স্পষ্ট যে,এটি কোন নতুন অভিযোগও নয়;আর এর উত্তর নিজের পক্ষ থেকে দেয়ারও কোন দরকার নেই। ডাক্তার সাহেবের তাফসীর সংশ্লষ্ট হাদীসের ব্যাপারে অজ্ঞতা এতটাই সীমাহীন যে, হাদীস ভান্ডার ও তাফসীরের মৌলিকত্ব পর্যন্ত পৌছার চেষ্টার বদলে মনগড়া ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন। ☼►◄☼ পঞ্চম আয়াত: ◄☼ ডাক্তার জাকির নায়েক ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺩَﺣَﺎﻫَﺎ ‏( ﺍﻟﻨﺎﺯﻋﺎﺕ 30- )এ আয়াতে কারীমা সম্পর্কে বলেন-এখানে ডিমের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘দাহা’। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল উটপাখির ডিম। উটপাখির ডিম জমিনের সাথে সাদৃশ্য রাখে। তাই পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধভাবে পৃথিবীর আকৃতির ব্যাখ্যা করছে। অথচ কুরআন নাযিলের সময় পৃথিবীকে (Flat) সমতল মনে করা হতো। {খুতুবাতে জাকির নায়েক, কুরআন আওর জাদিদ সায়েন্স-৭৩-৭৪} এখানে ডাক্তার সাহেব বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাবিত হয়ে, সেই সাথে পবিত্র কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় (তথা তাওহীদ ও রিসালত,আর বাকি প্রাকৃতিক বিষয়াদির আলোচনা প্রাসঙ্গিক মাত্র) না বুঝার কারণে পৃথিবীর আকৃতির বিশ্লেষণ করার জন্যআয়াতে কারীমা দিয়ে ভুল দলিল দিতে আয়াতের মনগড়া তাফসীর করেছেন। কেননা, আরবী ভাষায়- ﺩﺣـــﻮ শব্দটি এবং তার মূল উৎস বিস্তৃত ও বিস্তীর্ণ করার অর্থ প্রদান করে। এই অর্থ হিসেবে‘দাহাহা’-এর অনুবাদ ও তাফসীর হল ‘পৃথিবীকে বিস্তৃত করা ও তাতে বিদ্ধমান বস্তু সমূহকে সৃষ্টি করা’। (দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে কাসীর) এই শব্দটি ও তার মূল উৎস‘ডিমের’অর্থে আসে না। ☼►◄☼ তিন.- হাদীসে নববীতে অজ্ঞতা : ◄☼ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশাল হাদিস ভাণ্ডার সম্পর্কে ডাক্তার সাহেবের অজ্ঞতার কারণে অনেক জায়গায় তিনি বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত মাসআলা বলছেন। আরবহু স্থানে কোন মাসআলায় অনেক হাদিস বিদ্যমান থাকা সত্তেও তিনি বলে দেন ‘এই বিষয়ে কোন দলিল নেই’। নিম্নে ডাক্তার সাহেবের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতা বা জেনেও না বলার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করা হল- ☼►◄☼ (ক) হায়য অবস্থায় মহিলাদের কুরআন পড়ার অনুমতি প্রদান: ◄☼ এক প্রোগ্রামে ডাক্তার সাহেব মহিলাদের বিশেষ দিন (হায়য চলাকালীন সময়) সম্পর্কে বলেন-‘কুরআন হাদিসে নামায মাফ হওয়ার কথা আছে;কিন্তু (মহিলারা হায়য অবস্থায়) কুরআন পড়তে পারবে না’এই মর্মে কোন হাদিস নেই। অথচ তিরমিযি শরিফে স্পষ্ট আছে - ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ : ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﻘﺮﺃ ﺍﻟﺤﺎﺋﺾ ﻭﻻ ﺍﻟﺠﻨﺐ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ‏(ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ، ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﻄﻬﺎﺭﺍﺕ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺐ ﻭﺍﻟﺤﺎﺋﺾ : ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻻ ﻳﻘﺮﺃﻥ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 131- ) অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩} একটু ভেবে দেখুন-বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট হাদিস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার সাহেব নিজেকে সর্বজ্ঞানী সাব্যস্ত করে তা অস্বিকার করে দিলেন।◄☼(খ) রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে ‘হানাফী মাজহাবের’কোন দলিল নেই?! ◄☼ ডাক্তার সাহেব এক অনুষ্ঠানে রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গবে-নাকি ভাঙ্গবে না? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,‘কতিপয় ওলামায়ে কিরাম বিশেষত হানাফী মাযহাবের অনুসারী ওলামায়ে কিরামের মতে রক্ত বের হলে অজু ভেঙ্গে যায়। নামাযের মধ্যখানে রক্ত বের হলে কি করতে হবে?এই প্রশ্নের উত্তরে তাদের ফতোয়া (হানাফীদের ফতোয়া) অনেক দীর্ঘ। তবে এমতের স্বপক্ষে স্পষ্ট কোন দলিল নেই। {হাকীকতে জাকির নায়েক-২১৪, মাকতাবায়ে মদীনা, ভারত} এখানে ডাক্তার সাহেব ফিকহে হানাফীর সংশ্লিষ্ট ওলমায়ে কিরামের বিরোদ্ধে অপবাদ আরোপকরলেন যে,তারা বিনা দলিলে অজু ভাঙ্গার কথা বলেন। অথচ রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার স্বপক্ষে অসংখ্য হাদিস রয়েছে,এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলও ছিল এর উপর। নিম্নে তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হল। (১) ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﺟﺎﺀﺕ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ ﺃﺑﻲ ﺣﺒﻴﺶ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻲ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺃﺳﺘﺤﺎﺽ ﻓﻼ ﺃﻃﻬﺮ ﺃﻓﺄﺩﻉ ﺍﻟﺼﻼﺓ ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ‏( ﻻ ﺇﻧﻤﺎ ﺫﻟﻚ ﻋﺮﻕ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺤﻴﺾ ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻗﺒﻠﺖ ﺣﻴﻀﺘﻚ ﻓﺪﻋﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺩﺑﺮﺕ ﻓﺎﻏﺴﻠﻲ ﻋﻨﻚ ﺍﻟﺪﻡ ﺛﻢ ﺻﻠﻲ ‏) . ﻗﺎﻝ ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻲ ‏( ﺛﻢ ﺗﺆﺿﻲ ﻟﻜﻞ ﺻﻼﺓ ﺣﺘﻰ ﻳﺠﻲﺀ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻮﻕ ) অর্থ: হযরত আয়শা রা. বলেন,হযরত ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশ রা. হায়য অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বলেন,হে আল্লাহর রাসুল! আমি হায়য হলে (দশ দিনের পরও) পবিত্র হই না। (দশ দিনের পরও) কি নামায ছেড়ে দিব? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-ইহা তো শরীরের ঘাম,হায়েয নয়। তাই হায়েয হলে নামায পড়বে না। আর হায়েয বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নামায পড়বে। হিসাম বলেন,আমার পিতা বলেন,অতঃপর প্রত্যেক নামাযের জন্য অজু করবে,আর এই অজু ওয়াক্ত বাকি থাকা পর্যন্ত অব্যহত থাকবে।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২৬) (২) ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ﺇﺫﺍ ﺭﻋﻒ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﻓﻠﻴﻨﺼﺮﻑ ﻓﻠﻴﻐﺴﻞ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺪﻡ ﺛﻢ ﻟﻴﻌﺪ ﻭﺿﻮﺀﻩ ﻭﻟﻴﺴﺘﻘﺒﻞ ﺻﻼﺗﻪ অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- তোমাদের কারো যদি নামাযে নাক থেকে রক্ত বের হয়, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে তা ধৌত করবে, তারপর অযু করবে, তারপর নামায আদায় করবে। {আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৩৭৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৬১৮} (৩) ﻗﺎﻝ ﺗﻤﻴﻢ ﺍﻟﺪﺍﺭﻱ قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : الوضوء من كل دم سائل অর্থ: হযরত তামিমে দারী রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ বলেছেন-প্রবাহিত রক্তের কারণে অযু আবশ্যক। {সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭, নসবুর রায়াহ-১/৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৪২) এছাড়া আরো অনেক হাদিস থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার সাহেব আপন অজ্ঞতাকে গোপন করে মুজতাহিদ সেজে বলে দিলেন,‘রক্ত দ্বারা অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে কোন দলিল নেই’! ♦ (গ) নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য অবৈধ ?! অন্য এক জায়গায় ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোথাও একটি সনদবিশিষ্ট বিশুদ্ধ হাদিস পাওয়া যায় না যেখানে নারীদেরকে পুরুষ থেকে পৃথক পদ্ধতিতে নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে বুখারী শরিফে বর্ণিত যে,হযরত উম্মে দারদা রা. বলেন, আত্তাহিয়্যাতের বৈঠকে মহিলারা পুরুষের ন্যায় বসার হুকুম”। এখানে ডাক্তার সাহেব সরাসরি দুইটি ভুল করেছেন: (ক) নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের ব্যাপারে কোন হাদীস নেই। (খ) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় বসতে বলেছেন। ডাক্তার সাহেব প্রথম কথা বলে ঐ সকল হাদিস অস্বীকার করে বসলেন যার মধ্যে নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্যের কথা রয়েছে। নিম্নে তার কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হল- ১- أخرج البخاري عن النبي – عليه السلام- أنه قال: يا أيها الناس ما لكم حين نابكم شيء في الصلاة أخذتم في التصفيق إنما التصفيق للنساء অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,হে লোক সকল!তোমাদের কি হল?নামাযে কোন অসুবিধা দেখলে করতালি দাও; করতালি তো একমাত্র মহিলাদের জন্যই। {সহীহ বুখারী-১/১৭৪, হাদীস নং-১১৭৭} ২- عن وائل بن حجر قاللي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها অর্থ: হযরত ওয়ায়েল ইবনে হাজার রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন,হে ওয়ায়েল!নামায পড়ার সময় হাত কান পর্যন্ত উঠাও আর মহিলারা সিনা পর্যন্ত উঠাবে। (আল মু’জামুল কাবীর লিত তাবরানী, হাদীস নং-২৮, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৯৬৪০ ) ৩- عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل অর্থ: হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবি হাবীব রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে গমন করছিলেন, তখন (তাদেরকে উদ্দেশ্য করে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যখন তোমরা সিজদা দাও, তখন শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে মিলিয়ে দাও। কেননা,এই ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মত নয়। (সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১৬, সুনানে আবু দাউদ মুরসালান) ৪- عن ابن عمر أنه سئل كيف كن النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : كن يتربعنثم أمرن أن يحتفزن অর্থ: হযরত ইবনে উমর রা. থেকে জিজ্ঞাসা করা হল,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন? তিনি বলেন,তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদের জড়সড় হয়ে নামায আদায়ের আদেশ দেয়া হয়। (জামিউল মাসানিদ-১/৪০০)এ সকল বর্ণনায় নারী-পুরুষের নামাযে বিভিন্ন ধরণের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে,এ বিষয়ে রচিত কিতাবাদীতে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় বিষয় অর্থাৎ বুখারী শরিফে মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় নামায আদায় করার হুকুম সংশ্লিষ্ট বিষয়টি একটি ভুল নিসবত ইমাম বুখারীর দিকে। ডাক্তার সাহেব হযরত উম্মে দারদা এর যে হাদিসটির উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা এভাবে বর্ণিত -وكانت أم الدرداء تجلس في صلاتها جلسة الرجل وكانت فقيهة অর্থ: উম্মে দারদা নামাযে পুরুষের ন্যায় বসতেন,আর তিনি ‘ফকীহা’ছিলেন। {সহীহ বুখারী-১/১১৪} এখানে কোথাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী বা আমলের কথা উল্লেখ নেই; বরং এটি এক মহিলা তাবেয়ীর আমলমাত্র। যা উল্লেখ করে ইমাম বুখারী রহঃ ইঙ্গিতও করেছেন যে,তিনি ফকীহা ছিলেন,তিনি স্বীয় ইজতিহাদেরভিত্তিতে এমন করতেন। এছাড়াও ইমাম বুখারী এ বক্তব্যের কোন সনদ উল্লেখ করেন নি। তা’লীকান উল্লেখ করেছেন। ►►► চার- ডাক্তার সাহেবের মাযহাব: ডাক্তার সাহেবের বক্তব্য ও রচনায় মুজতাহিদ ইমামগণের অবাধ্যতা ও ফিকহী মাসাআলা সমূহে সংখ্যাগরিষ্ট দলের মতের বিরোধীতা তিনি কোনো ইমামের অনুসারী নয় বলেই প্রমাণ বহন করে। বরং তিনি মুক্তচিন্তা,অতি অধুনিকতা ও প্রগতিবাদী চেতনায় উজ্জেবিত,‘লা মাযহাবী তথা‘গায়রে মুকাল্লিদদের’(কথিত আহলে হাদীস) অন্তর্ভুক্ত বলেই স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। শুধু তাই নয়, ডাক্তার সাহেব নিজেতো সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসারী ননই; সেই সাথে ইমামদের তাক্বলীদকারী সাধারণ মুসলমানদেরও গায়রে মুকাল্লিদ হতে তথা ইমামদের অনুসরণ ছেড়ে দেওয়ার আহবান করে থাকেন। তিনি মাসআলা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক সময় কোন ইমামের বক্তব্য বা কোন ইমামের গবেষণালব্দ সিদ্ধান্ত নিজের গবেষণা ও সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেন। আবার কখনো কখনো মুজতাহিদ সেজে নিজেই মাসআলার বলতে শুরু করে দেন। অথচ ডাক্তার সাহেবের উচিৎ সুনির্দিষ্টভাবে সে ইমামের নাম উল্লেখ করে তারপর মাসআলাটি বলা, যাতে করে শ্রোতাদের মনে এ ভুল ধারণা না জন্মে যে, কুরআন ও হাদীস দ্বারা কেবল এটাই প্রমাণিত। এছাড়া অন্য যেসব বিষয় মানুষের আমলে আছে তা সবই বাতিল। চাই সেসব আমল কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হোক বা কোন মুজতাহিদের বক্তব্য হোক। নিম্নের আলোচনা দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলো পরিস্কার হবে। লক্ষ্য করুন- ♦ (ক) বিনা অজুতে কুরআন শরিফ স্পর্শ করা জায়েজ?! ডাক্তার সাহেব এক স্থানে বলেন,বিনা অজুতে কুরআন মজিদ র্স্পশ করা জায়েয হওয়া উচিত। অথচ ডাক্তার সাহেবের এই সিদ্ধান্তটি কুরআনের আয়াত ও সকল মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্তের বিপরীত বক্তব্য।لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ (79) অর্থ: (অজু বা গোসল দ্বারা ) পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন মজিদ স্পর্শ করো না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯} ♦ (খ) জুমার খুতবা আরবী ব্যতিত স্থানীয় ভাষায় হওয়া চাই : তিনি অন্যত্র বলেন,‘আমাদের দেশে জুমার খুতবা স্থানীয় ও মাতৃভাষায় দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত বলেই আমার মনে হয়’। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত জুমার খুতবা আরবী ভাষায় দেয়ার প্রচলনই নিরবচ্ছিন্ন আমল দ্বারা চলে আসছে। আর এখন ডাক্তার সাহেব জুমার খুতবা স্থানীয় ভাষায় দেয়ার দাওয়াত দিচ্ছেন;যেন মানুষ খুতবা বুঝতে সক্ষম হয়। অথচ এই যুক্তি (অনারবরা খুতবা বুঝা) রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও বিদ্যমান ছিল। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবায় অনারবরাও উপস্থিত থাকতেন,তা সত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদা আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন;অন্য কোন ভাষায় নয়। পরবর্তীতে অনুবাদও করাতেন না। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ী,তাবে তাবেয়ী ও তাদের অনুসারীগণ আরব থেকে বের হয়ে ‘আজম’অনারব রাষ্ট্রে বসবাস করেছেন,প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্বে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু সবর্ত্রই জুমআর খুতবা হত আরবী ভাষায়। অথচ বর্তমানের তুলনায় তখনদ্বীন প্রচার-প্রসারের প্রয়োজন ছিল বেশি। শুধু তাই নয়, তখন বেশ কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীগণ অনারবী ভাষা খুব ভালভাবে জানতেন। তা সত্ত্বেও তারা খুতবা আরবীতেই মুখস্ত করতেন। • সারকথা: খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীনগণের ধারাবাহিক আমল এবং গোটা উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন সূত্রপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা আমল একথার উপর স্পষ্ট দলিল যে, খুতবা আরবী ভাষায়ই দিতে হবে। এমনকি ‘আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া’ইমাম মালেক রহঃ-এর মতে জুমা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। যদিওসমবেত সকল লোক অনারবী হয়, যাদের কেউ আরবী জানেনা।যদি আরবীতে খুতবা দেয়ার মত কোন লোক না থাকে,তাহলেসবাই যোহরের নামায আদায় করবে,জুমার নামায তাদের জিম্মা থেকে বাদ হয়ে যাবে। ولو كان الجماعة عجما لا يعرفون العربية فلو كان ليس فيهم من يحسن الإتيان بالخطبة عربية لم يلزمهم جمعة অর্থ: যদি গোটা জামাত অনারবী হয়,যাদের কেউ আরবী ভাষা জানেনা,তাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যেভাল করে আরবীতে খুতবা দিতে পারে, তাহলে তাদের উপর জুমআ পড়া আবশ্যক নয়। হাশিয়াতুত দাসুকী আলা শরহীল কাবীর-১/৩৭৮} আর হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহঃ বলেন,খুতবা শুধুমাত্র আরবী ভাষায়ই হবে। পূর্ব-পশ্চিম সারা বিশ্বে সদা এটার উপরই আমল চলে আসছে। {মুসাফফা শরহে মুয়াত্তা-১৫২, প্রকাশক-মাতবায়ে ফারুকী, দিল্লী} ♦ (গ) তিন তালাকে এক তালাক হওয়া চাই?! ডা.জাকির নায়ক বলেন, তিন তালাকের জন্য এতগুলো শর্ত রয়েছে যে,সবকটি এক সাথে পাওয়া যাওয়া দুষ্কর ও অসম্ভব। এ সর্ম্পকে সৌদি আরবের তিনশ ফতোয়া বিদ্যমান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক সাথে তিন তালাকে এক তালাক হওয়া চাই। {খুতুবাতে জাকির নায়েক, বহাওয়ালায়ে হাকীকতে জাকির নায়েক-৩৩১} অথচ সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ীগণ,মুজতাহিদ ৪ ইমামগণ ও অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম, সেই সাথেবর্তমান সৌদি আরবের নির্ভরযোগ্য সকল ওলামায়ে কিরামগণ এক মজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হয়, এক তালাক নয় মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন। এ বিষয়ে পূর্ণ ইসলামের ইতিহাসে কোন গ্রহণযোগ্য আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। কেবল মাত্র আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ও তার শিষ্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ ব্যতিত। কিন্তু সকল উম্মতের বিপরীত (যেখানে ইমাম চতুষ্টয়- ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শা‘ফী রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ অন্তর্ভূক্ত) এই দুই জনের সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ডাক্তার সাহেব এমন সর্বজন স্বীকৃত বিষয়ের বিরোধিতা করে উম্মতকে পথ ভ্রষ্ট করার অপ-প্রয়াস চালাচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত ( এক সাথে তিন তালাকে তিন তালাক পতিত হওয়া) কুরআনের আয়াত ও অগণিত হাদিস এবং সাহাবায়ে কিরামের আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি হাদীসপেশ করা হল। (১) وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃএর কাছে‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায়‘রুজু’করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩} (২) عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليهثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩} (৩) عن مالك أنه بلغه أن رجلا قال لعبد الله بن عباس إني طلقت امرأتي مائة تطليقة فماذا ترى علي فقال له ابن عباس طلقت منك لثلاث وسبع وتسعون اتخذت بها آيات الله هزوا অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে জিজ্ঞাসা করল-“আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি,এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? তখন ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছে,আর সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে উপহাস করেছ। [মুয়াত্তা মালেক;১৯৯, হাদীস নং-২০২১]। (৪) عن مالك أنه بلغه أن رجلا جاء إلى عبد الله بن مسعود فقال إني طلقت امرأتي ثماني تطليقاتفقال ابن مسعود فماذا قيل لك قال قيل لي إنها قد بانت مني فقال ابن مسعود صدقوا অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে আট তালাক দিয়েছি। হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে উত্তর দিল,তারা বলল ‘‘তোমার স্ত্রী ‘বায়ানা’তালাক প্রাপ্ত হয়ে গেছে’’তখন হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,তারা সত্য বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হয়েছে। (মুয়াত্তা মালিক; পৃঃ-১৯৯, হাদীস নং-২০২২] (৫) نا علي بن محمد بن عبيد الحافظ نا محمد بن شاذان الجوهري نا معلى بن منصور نا شعيب بن رزيق أن عطاء الخراساني حدثهم عن الحسن قال نا عبد الله بن عمر أنه طلق امرأته تطليقة وهي حائض ثم أراد أن يتبعها بتطليقتين أخراوين عند القرئين فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : يا بن عمر ما هكذا أمرك الله إنك قد أخطأت السنة والسنة أن تستقبل الطهر فيطلق لكل قروء قال فأمرني رسول الله صلى الله عليه و سلم فراجعتها ثم قال إذا هي طهرت فطلق عند ذلك أو أمسك فقلت يا رسول الله رأيت لو أني طلقتها ثلاثا أكان يحل لي أن أراجعها قال لا كانت تبين منك وتكون معصية অর্থ: হযরত হাসান রাঃ বলেন,হযরত ইবনে উমর রাঃআমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি আপন স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় এক তালাক দিয়েছিলেন, অতঃপর ইচ্ছা করলেন যে, দুই তুহুরে [হায়য থেকে পবিত্র অবস্থায়] অবশিষ্ট দুই তালাক দিয়ে দিবেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পর বলেন-ইবনে ওমর! এভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে হুকুম দেননি। তুমি সুন্নাতের বিপরীত কাজ করেছ [হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছ]। তালাকের শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি হল,‘তুহুর’পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রত্যেক ‘তুহুরে’এক তালাক দেয়া। তার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রুজু’করার নির্দেশ দিলেন। এ জন্য আমি ‘রুজু’করে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বললেন,সে পবিত্র হওয়ার পর তোমার এখতিয়ার থাকবে। চাইলে তুমি তালাকও দিতে পারবে,বা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবে। হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন-তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম-ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি তিন তালাক দেই তখনও কি ‘রুজু’করার অধিকার থাকবে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-না। তখন স্ত্রী তোমার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবে। এবং তোমার এই কাজ (এক সাথে তিন তালাক দেয়া) গুনাহের কাজ সাব্যস্ত হবে। {সুনানে দারা কুতনী-২/৪৩৮, হাদীস নং-৮৪, যাদুল মাআদ-২/২৫৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭৩২} লক্ষ্য করুনউল্লেখিত হাদিস সমূহে তিন তালাক দ্বারা তিন তালাকই পতিত হওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে যে,তিন তালাক দ্বারা তিন তালাকই পতিত হবে এক তালাক নয়।

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!