✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০১ ভূমিকা ✍
[মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী] ৬ ই জুন ২০১৪ ঈসাব্দ। শুক্রবার। গ্রামের বাড়ি থেকে এলাম মাত্র। মাথাটা ধরে আছে। মাদরাসায় পরীক্ষা পরদিন। অনেক কাজ বাকি। কাজে যখন ব্যস্ত। ঠিক তখনি হাজির ৫ জন দ্বীনী ভাই। দুইজন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী। আর তিন জন গায়রে মুকাল্লিদ। দ্বীন শিখার নামে ইলম ঝাড়ার মানসিকতা নিয়ে এসেছে বাহাস করতে লা মাযহাবী তিনজন। একজন গুরু। আর দুইজন শিষ্য। সময় নেই। তবু সময় দিলাম। কিন্তু আফসোস! জাহিল যখন নিজেকে জ্ঞানী মনে করতে থাকে, তখন যা হয় তা’ই হল। আমার মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট করে গেল। কিন্তু আসলে কী পেলাম! ওরা কী নিয়ে গেল তা রহস্যই রয়ে গেল। পিতৃ পরিচয়হীন অনাথ শিশুর যেমন কোন মৌলিক পরিচয় থাকে না। থাকে না কোন সুনির্দিষ্ট নাম। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই ঠাঁই খুঁজে নেয়। যাকে তাকে অভিভাবক বানিয়ে বসে। যাকে তাকে পিতার আসনে বসিয়ে আশ্রয় খুঁজে। তেমনি হয়েছে লা-মাযহাবীদের অবস্থা। কখনো বলে, তারা মুহাম্মদী। কথনো বলে রাসূল সাঃ এর মুকাল্লিদ। কখনো বলে আহলে হাদীস। কখনো বলে শুধু মুসলিম। কখনো বলে আহলে হাদীস আন্দোলন কর্মী। কখনো বলে জমিয়তে আহলে হাদীস আন্দোলন কর্মী। কখনো বলে শুব্বানে আহলে হাদীস। কখনো বলে মানে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। বিপদে পড়ে আবার বলে ইজমা মানি। গ্যাঁড়াকলে পড়লে বলতে থাকে কিয়াস ও মানে। কারো অন্ধ অনুসরণের চিত্র ফুটে উঠলে বলে তাকলীদও মানে। তবে একজনের নয় যখন যাকে ইচ্ছে তাকে মানে। যখন যাকে ইচ্ছে খারাপ যাকে ইচ্ছে গলার মালা বানিয়ে নিবে। নিজের মতাদর্শী যে কাউকে যেকোন সময় ভ্রান্ত বলতে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করবে না। একজনকে মেনে মাযহাবীরা শিরক করলেও ওরা যখন তখন যাকে তাকে মানলেও মুশরিক হয় না। এ এক আজব দল! এ লা-মাযহাবী জামাত ভ্রান্ত হবার সবচে’ বড় দলীল হল, তাদের কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নেই। যখনি বলা হবে কুরআন মানেন? বলবেঃ হ্যাঁ মানি। যদি বলা হয়, কুরআনের সব আয়াত মানেন? বলবে সব আয়াত মানা যায় না। যদি বলা হয় বুখারী মানেন? বলবে- মানি। যদি বলা হয়, বুখারীর সব হাদীস মানেন? বলবে না, কিছু হাদীসে সমস্যা আছে। সব মানি না। যদি বলা হয়, আপনাদের বড়দের লেখা এমন কোন কিতাব আছে কি যেটিকে আপনারা নির্ভরযোগ্য মনে করেন? বলবে, না, এমন কোন গ্রন্থ নেই। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, এমন কোন হাদীসের কিতাব কি আছে, যার সব বিষয় আপনারা মানেন? বলবে না, এমন কোন হাদীসের গ্রন্থ নেই। এরকম শিকড়হীন, ব্যক্তিত্বহীন অভিশপ্ত জামাত পৃথিবী কোনদিন দেখেছে কি না? আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। যে মতাদর্শে কেউ দিক্ষীত হলে সে এমন মিথ্যুক ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায় যে, তার কোন কথাই আর দলীলযোগ্য থাকে না। সে যত গ্রন্থই লিখুক না কেন তার গ্রন্থ নির্ভরযোগ্য থাকে না। তাহলে আমরা কেন এ অভিশপ্ত জামাতে শরীক হতে যাবো? যেখানে প্রবেশ করে কোন গ্রন্থ লিখলে আর তা বিশ্বস্ত থাকে না। না গ্রন্থ বিশ্বস্ত থাকে, না ব্যক্তি বিশ্বস্ত থাকে। অথচ বিপরীতে চার মাযহাবে অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে, যাতে মাযহাবের অনুসারীরা হাজার বছর ধরে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে আমল করে আসছে। গায়রে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী এক অতি ধুরন্ধর এক শ্রেণীর বিভ্রান্তিকর দলের নাম। এক অঙ্গে তাদের কতরূপ, কত চাল, কত মতবাদ হতে পারে তা ভূক্তভোগী আশা করি সবাই জানেন। ওরা কখনোই এক স্থানে থাকে না। হুট করে একটিকে বিশ্বস্ত, আবার হুট করেই তা অবিশ্বস্ত সাব্যস্ত করতে দ্বিধা করবে না। আমি অনেক গায়রে মুকাল্লিদ তথা লা-মাযহাবী দেখেছি। কিন্তু কাল দেখলাম ওদের আরেক ঝলক। গিরগিটির মত মানুষও যে মুহুর্তে রং বদলাতে পারে তা লা-মাযহাবীদের না দেখলে কেউ বিশ্বাস করার কথা নয়। গিরগিটির মানুষ্য মুর্তি দেখলাম কাল। কথার ফাঁকে ফাঁকে বুঝতে গেলাম এ ফিরক্বা পুরো দ্বীনকে কতটা খেলনার বস্তু ছেলেখেলা বানিয়ে নিচ্ছে। দ্বীনকে করে তুলছে সন্দিহান। চলুন দেখি লা-মাযহাবীদের এক অঙ্গে বহুরূপের চিত্র।
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০২ পরিচয় পর্ব শেষে..... ✍
পরিচয় পর্ব শেষে জানতে চাইলাম- আপনারা [৩ লা মাযহাবী] কখন থেকে দ্বীন অনুসরণ শুরু করেছেন? ১ম লা মাযহাবী- আমি ২০০৬ থেকে সালাত ইত্যাদি শুরু করি। সেই সাথে ভিডিও দেখে ইন্টারনেট থেকে মাধ্যমে দ্বীন শিখতে শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আমি ভুলের মাঝে আছি। তাই এখন সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে চেষ্টা করি। ২য় লা-মাযহাবী- আমিও শুরু থেকে নামায পড়তাম। তারপর ২য় লা-মাযহাবীর দাওয়াতে এখন সহীহ হাদীস অনুপাতে আমল করি। আমি- আচ্ছা! আপনারা আগের আমল পাল্টালেন কেন? কি সমস্যা তাতে? ১ম লা-মাযহাবী [সেই গুরু এই তিনজনের লা-মাযহাবী কাফেলার] আসলে আমি যখন ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়তে শুরু করি, তারপর বিভিন্ন স্কলারদের ভিডিও দেখতে থাকি, তখন আমার ভুল ভাঙ্গে। আমি বুঝতে থাকি আমি ভুলের উপর আছি। তাই পড়াশোনা করতে শুরু করি। এক মাসআলায় হাদীস দেখি। তারপর দলীলের ভিত্তিতে যে মতটিকে মনে হয় তা শক্তিশালী সেটার ব্যাপারে বর্তমানের বা আগের বড় বড় ব্যক্তিদের মতামত দেখি তারপর সেটির উপর আমল করতে শুরু করি। আমি- আচ্ছা! তাহলে কী দাঁড়াল? প্রথমে আপনি আপনার নিজের জ্ঞান অনুপাতে মাসআলার দলীল খুঁজেন, তারপর যেটিকে শক্তিশালী মনে হয়, সেটির অনুপাতে বড় কারো বক্তব্য আছে কি না? তা দেখেন তারপর সেটিকে আমল করতে শুরু করেন এইতো? ১ম লা-মাযহাবীঃ না, না, আমি আগে সবার দলীল দেখি। তারপর দেখি কার দলীল কেন শক্তিশালী। অন্যের দলীলটি কেন দুর্বল। তারপর যখন দেখি একজনের দলীল আরেকজন খন্ডন করতে পারছে না, তখন সেটিকে গ্রহণ করে তার স্বপক্ষে বড়দের উক্তি দেখে আমল করি। আমি- কথাতো তাই দাঁড়াল, যা আমি বললাম। আমি কি বলেছি বলুনতো? আমিতো বললাম, আপনি দলীল তালাশ করেন। মতভেদকারী উভয়ের দলীল দেখেন। তারপর আপনার গবেষণা অনুপাতে যেটিকে হক মনে হয়েছে সেটিকে হক ধরে এক স্বপক্ষে বড় কারো উক্তি খুঁজে সেটির উপর আমল করতে থাকেন। যার পুরো ভিত্তিটাই আপনার চিন্তা ও গবেষণার পরিধির উপর নির্ভরশীল। তাই না? ১ম লা মাযহাবী- না, না, আমিতো দলীল দেখে নেই। তাই আমার গবেষণার পরিধির উপর নির্ভরশীল থাকছে কিভাবে? আমি- আরে ভাই! আমি কি একথা বলেছি যে, আপনি দলীল দেখেননি? আমি কি বলছি সেটি কেন আপনি শুনছেন না? আমিতো বলছি, আপনি দলীল দেখেন। তারপর সেই দলীলের মাঝে যার দলীল শক্তিশালী মনে হয় সেটি মানেন। আমিতো বলিনি আপনি দলীল দেখেন না। ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ, এভাবে বলেন, দলীলের ভিত্তিতে। শুধু ধারণা বা গবেষণার পরিধি নয়। আমি- আমি একবারও কি বলেছি আপনার গবেষণার পরিধি শুধু? দলীলের ভিত্তিতে আপনি প্রধান্য দেন একথা কি বলিনি? অযথা কথা বলে কেন সময় নষ্ট করেন? আচ্ছা, তাহলে আপনার কথার ফলাফল কী দাঁড়াল? আপনি আপনার ইলমের দৌড় অনুপাতে যেটিকে প্রাধান্য মনে হয়, সেটিকে প্রাধান্য দেন সেই সাথে বর্তমান কোন বড় আলেমের সমর্থন জোড়ে নেন। ১ম লা মাযহাবী- না, না শুধু এমনিতে প্রাধান্য দেই না। দলীল হিসেবে দেই। যেমন আমি আগে মনে করতাম অযু ছাড়া কুরআন ধরা যায়, তারপর যখন দেখলাম এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ একটি চিঠি লিখলেন। যাতে অন্য ভাষায় কুরআন লিখা ছিল। তখন তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন আয়াতাংশ কোন কাফির স্পর্শ না করে, তখন থেকে আমি আমার মতকে পাল্টিয়ে ফেলেছি। এখন বলি অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায় না। তাহলে আমি শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করে বা আমার ইলমের দৌড়ের উপর নির্ভর করে কোন কিছু বলি নাতো। ভুল হলে শুধরে নেই। আমি- ভাইরে! আমি আপনাকে বলছি কি? আপনি যা বলছেন এসব দ্বারা দাঁড়াচ্ছে কি? আপনার ইলমের দৌড় অনুপাতে আপনি আগে বলতে অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায়, তারপর আপনার ইলমের পরিধি বেড়েছে তারপর বলতে লাগলেন অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায় না, তাহলে কি হল? আপনি প্রথমত যে মত দিয়েছেন তা ছিল আপনার পড়াশোনার পরিধি অনুপাতে। তারপর যখন পড়াশোনার পরিধি বাড়ল তখন প্রথম মতটি পাল্টে দিলেন তাই না? ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ। আমি- আমিতো আপনাকে একথাটিই বলতে চাচ্ছি যে, আপনি আপনার পড়াশোনা আর গবেষণা অনুপাতে দলীল দেখে একটিকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু আপনি মুখে তা বলে আবার এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন বুঝতি পারছি নাতো? কারণ কি? আপনি যেটা বলছেন, যেভাবে আমল করছেন বলে আপনি নিজেই বলছেন, সেটির খুলাসা বলতে আপনার দ্বিধা হচ্ছে কেন? আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই স্থানে আসার মানে কি?
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৩ পড়াশোনার পরিধি অনুপাতে যখন যেটা মনে হয় সেটাকে প্রাধান্য দেয়া..... ✍
এবার ২য় লা-মাযহাবী কথা বলে উঠল। এ লোক পুরো মজলিসে শুধু অযথা কমেন্ট এবং দৃষ্টি ঘুরানো ও অহেতুক আলাপে সময় নষ্ট করার পিছনে ব্যয় করেছে। তার গুরু তথা ১ম লা মাযহাবী যেখানে ধরা খেয়ে যাচ্ছে দেখে সেখানেই সে অন্য প্রসঙ্গ টানার চেষ্টা করে বেড়িয়েছে, কিংবা নিজেই হাল ধরা ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। ২য় লা-মাযহাবিটি বলতে লাগল- ”আমরাতো কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করে থাকি। তিনি যাচাই বাছাই করে যেটিকে শক্তিশালী দলীল হিসেবে পেয়েছেন সেটিকে মানছেন। আমিও তাই করি।” অনেক রাগ হচ্ছিল আমার। এরা আসলে চায় কি? কথা বুঝে না? নাকি ন্যাকামি করে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে? এ কোন ফিরক্বা হে? একই কথা বারবার বলছে। আবার আমি যখন বলে দিচ্ছি, তখন সেই কথাই বলছে কিন্তু আবার নতুন করে কথা জোড়ার অপচেষ্টা করছে। বহুকষ্টে মনকে শান্ত করে বললাম- “আরে ভাই! আপনাদের কথারতো আমি কোন মাথামুন্ডু বুঝতে পারছি না। আপনারা বারবার একই কথা কেন বলছেন? আপনারা যে কথা বলছেন আমিতো সেই কথারই সারমর্ম বলছি। আপনি দলীলের ভিত্তিতে একটিকে প্রাধান্য দেন। আমিতো একথা অস্বিকার করিনি। কিন্তু সেই প্রাধান্যটা দিয়ে থাকেন আপনার পড়াশোনা অনুপাতে সেটি কেন মানছেন না? অথচ একথাই আপনি বলছেন বারবার। আপনি নিজেই বললেন, অজু ছাড়া কুরআন ধরা জায়েজ মনে করতে দলীলের ভিত্তিতে। তারপর আরেক দলীল পেয়ে পূর্বের কথা ছেড়ে দিয়েছেন। তাহলে কি দাঁড়াল? আপনি দলীল যা পান সে হিসেবে একটিকে প্রাধান্য দেন। তারপর ভিন্ন দলীল পেলে তা বর্জন করেন। সেই হিসেবে কোন মত প্রাধান্য দেয়ার আপনার উসুল হল, আপনার পড়াশোনার পরিধি আর দলীল সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের পরিধি এইতো? ১ম লা-মাযহাবী- না, আমি সব দলীল দেখে তারপর একটিকে দলীল হিসেবে প্রধান্য দেই। অল্প কিছু না। আমি- সব দলীল দেখতে পারলে আপনি এক সময় একটি তারপর আরেকটি মত কেন পোষণ করছেন? ১ম লা-মাযহাবী- আসলে আমিতো সবার দলীল দেখি ফাতওয়াগুলোতে তাতে সব দলীলই থাকে। তাই সেখান থেকে যেটার ক্ষেত্রে দলীল শক্তিশালী দেখি সেটিকে মানি। আমি- আপনি যে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছেন সেটির প্রমাণ হল, সহজ কথাকে বারবার ঘুরানোর চেষ্টা করছেন। আর যা বলছেন তাই মানছেন না। নিজেই বলছেন সব দলীল দেখেন, আবার নিজেই আগে বললেন এক সময় একটি মানতেন, তারপর আরেক দলীল দেখে পাল্টে গেলেন। তাহলে সব দলীল দেখলেন কোথায়? আরেকটি বিষয়, আপনিতো মাযহাবের মাসআলাগুলোর ক্ষেত্রে দলীল দেখে দলীল হিসেবে একটি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আপনি হানাফী ফিক্বহের কয়টি কিতাবের নাম জানেন? কয়টি কিতাব থেকে আপনি দলীল যাচাই করেন? ১ম লা-মাযহাবী- আমিতো আরবদের ফাতওয়া দেখি। তাতে সব দলীলই থাকে। সেখান থেকে দেখে, ভিডিও দেখে, ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর প্রাধান্য দেই। আমি- তাহলে আপনার কোন বক্তব্যকে প্রাধান্য দেয়ার ভিত্তি হল, বর্তমান ফেতনার যুগের অনির্ভযোগ্য আরব শায়েখদের ফাতওয়া, নেটে থাকা অনির্ভযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের ভিডিও ইত্যাদি তাই না? ১ম লা-মাযহাবী- কেন? তারাতো দলীল ভিত্তিক কথা বলেন। সেসব যাচাই করে মানি। আমি বুঝে গেলাম। এ খুব ঘাগু। একে বুঝানো সম্ভব নয়। নিজের কথার ঘুরপাকেই বারবার ঘুরে ঘুরে বিভ্রান্তির জাল ছড়াতে চাচ্ছে। আমি তাই আমার কাছে থাকা বুখারীর একটি আরবী নুসখা তার সামনে পেশ করে বললাম- দেখুনতো এটি কি কিতাব? ১ম লা-মাযহাবী- এসব দেখবো কেন? এসব দেখার দরকার কি? আমি- আপনি মুজতাহিদদের দলীল যাচাই করে থাকেন। দলীল শক্তিশালী হলে মানেন, নতুবা বাতিল করে দেন। তাহলে আপনাকে দলীল সাব্যস্ত করতে হলে হাদীস দেখতে হয় না। হাদীসে আসলে কি আছে তা জানতে হয় না? তো আপনি বুখারীর প্রথম পৃষ্ঠাটি একটু ইবারত পড়ে অনুবাদ করুনতো। একথা শুনে একসাথে জ্বলে উঠল উভয় লা-মাযহাবী। বলতে লাগল- এসব দেখতে হবে কেন? আমরা অনুবাদ দেখি। আমি বললাম ২য় লা মাযহাবীকে- আপনি আরবী পড়তে জানেন? ২য় লা মাযহাবী- পারি। তবে অর্থ জানি না। ১ম লা মাযহাবী বলল- আমিও পারি না। আমি- আপনি আরবীই পড়তে জানেন না। মানে হল মূল হাদীসে কি আছে তা আপনি জানেনই না, সেখানে মুজতাহিদদের কথাকে যাচাই করে চলেন হাদীসের সহীহ জঈফ ইত্যাদি দেখে এমন উদ্ভট কথাতো জীবনেও শুনিনি। আপনি কি করে বুঝেন অনুবাদটি সঠিক। অনুবাদতো ভুলও হতে পারে। আচ্ছা আপনি একটু বুখারীর প্রথম পৃষ্ঠাটি অনুবাদ করে শুনানতো। বুঝে নেই আপনি কি অনুবাদ বুঝে মুজতাহিদদের দলীলকে যাচাই করেন। ১ম লা মাযহাবী- দেখুন! আমরা অন্ধ অনুসারী নই। এখন অনুবাদ জানা খুবই সোজা। আমি একাধিক অনুবাদ দেখি। আর একাধিক অনুবাদ দেখে যে কেউ বুঝে যাবে আসল অনুবাদটি কি হবে? তাই ভুল অনুবাদ করে কেউ পাড় পাবে না। একাধিক অনুবাদ দেখে অনুমান করা যায়, এখানে কোন অনুবাদটি সঠিক। আমি- আচ্ছা। তাহলে আপনি কুরআন ও হাদীস একাধিক অনুবাদ দেখে একটি অনুবাদকে নিজের বুঝ অনুপাতে কিয়াস করে ঠিক করে আমল করে থাকেন। তাহলেতো আপনার মতবাদ কাইয়্যাস তথা কিয়াস নির্ভর হয়ে গেল কুরআন ও হাদীসের দলীল নির্ভর রইল কোথায়? পুরাইতো কিয়াস নির্ভর।
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৪ হাদীসের বিপরীত হযরত উমর রাঃ এর কথার কি দাম আছে? (নাউযুবিল্লাহ)..... ✍
এবার নুতন জিগির তুলল ১ম লা মাযহাবীটি। বলতে লাগল, দেখুন আমরা এভাবে কথা বলতে থাকলে কোন সমাধানে যেতে পারবো না। তাই আসুন আমরা সুনির্দিষ্ট একটি মাসআলা নিয়ে কথা বলি। আমি বললাম-“ আপনিতো কুরআন ও হাদীসই মূল কিতাব দেখে বুঝেন না। আপনি কি আলোচনা করবেন? আপনার পুরো ভিত্তিতিই আরেকজনের অনুবাদের উপর অন্ধ তাকলীদ। আচ্ছা, বলুন, আপনার কাছে দলীল কয়টি?” ১ম লা-মাযহাবী- আপনার কাছে দলীল কয়টি? আমি- আমার কাছে দলীল চারটি। যথা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। আর আপনার কাছে? ১ম লা-মাযহাবী- আমার কাছেও দলীল চারটি। কুরআন হাদীস ও ইজমা-কিয়াস। তবে যে ইজমা কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি- যে ইজমা ও কিয়াস কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হবে তা যে গ্রহণযোগ্য নয় একথা বলার কোন প্রয়োজন নেই, যে ইজমা কিয়াস সম্পর্কে জানে সেই একথা জানে। যাইহোক, মজার কথা বললেন, তাহলে আপনি ইজমাও কিয়াসও মানেন? ১ম লা-মাযহাবী- কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হলে মানি না। আমি- আরে ভাই! আপনার মনে হয়, এক কথা বারবার বলার বদভ্যাস আছে নাকি? আমিতো স্পষ্ট বলেই দিলাম, কুরআন ও হাদীসের খেলাফ যে ইজমা ও কিয়াস হয়, সেটিকে আসলে শরয়ী ইজমা ও কিয়াস বলেই না। তাই এটি বারবার বলার কোন দরকারই নেই। আচ্ছা, আপনি ইজমা ও কিয়াস মানলে বলুনতো বিশ রাকাত তারাবীহের ক্ষেত্রে কি হুকুম? এটিতো সাহাবায়ে কেরামের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। হযরত উমর রাঃ এর আমল থেকে চলে আসছে, যা আজো বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে পড়া হচ্ছে। ২য় লা-মাযহাবী এবার মুখ খুলল। আগেই বলেছি এই লোক পুরো সময়টিতে যা কথা বলেছে, তা পুরোটাই অযথা কথন। কোন দলীল নেই। কোন যৌক্তিকতা নেই। শুধুই কথা বলার মানসিকতা। আর ১ম লা মাযহাবী যাকে সে নিজের গুরু বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই গুরু যখন কথায় আটকে যেতে দেখে তখনি কথা বলে উঠে। অহেতুক সব কথার ফুলঝুরি দিয়ে কথার মোড় ঘুরাতে অপচেষ্টা করে থাকে। এবার বলতে লাগল- বিশ রাকাত তারাবীহের ব্যাপারে ইজমা হয়েছে একথা কোথায় আছে? একথা কোথায় নেই। কুরআন ও হাদীসের বিপরীত উমর রাঃ এর কথার কোন ধর্তব্যতা থাকে? ১ম লা মাযহাবীকে উদ্দেশ্য করে বললাম- আপনি বলুনতো, কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথাও আট রাকাতের তারাবীহের কথা আছে? ১ম লা মাযহাবী- আসলে আমি তারাবীহ বলতে নারাজ। এটি আসলে কিয়াম। যার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। যত ইচ্ছে পড়া যায়। রাসূল সাঃ দুই দুই রাকাত করে পড়তেন। তাই আট রাকাত বিশ রাকাত বলা ঠিক না। আমি- কুরআন ও হাদীস মূল উৎস থেকে না বুঝেও অনুবাদের অনুমানের উপর নির্ভর করে আপনিও তাহলে শরয়ী বিষয়ের সমাধান দিতে জানেন। যাইহোক, তাহলে আপনি যে বললেন, ইজমা গ্রহণযোগ্য। সেই হিসেবে বিশ রাকাত তারাবীহ যে হযরত উমর রাঃ চালু করলেন। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৪২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/১৭৬} কোন সাহাবী এর প্রতিবাদ করেননি। আজো তা বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নবুবীতে চলছে। তা কি ইজমা হয়নি? ২য় লা-মাযহাবী- ইজমা যে হয়েছে এর কোন দলীল আছে। হয়তো কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছেন। আর হাদীসের বিপরীত হযরত উমর রাঃ এর কথার কি দাম আছে? আমি বললাম- সেই প্রতিবাদটা কে করেছেন? নামটি বলুনতো। আর আপনার ভাষায় হযরত উমর রাঃ রাসূল সাঃ এর সুন্নতের খেলাফ একটি বিদআতি পদ্ধতি চালু করেছেন। আর তখনকার সাহাবা জমানা থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে সেই বিদআত চালু আছে? ১ম লা-মাযহাবী- আসলে যেহেতু আপনি যেমন বলছেন বিশ রাকাত তারাবীহ সাহাবাগণের ইজমা দ্বারা প্রমানিত। তাই আমাদের কথা হচ্ছে, বিশ রাকাত পড়া উত্তম। আর আট রাকাত পড়া জায়েজ। আমি- জায়েজ মানে জানেনতো? ১ম লা-মাযহাবী- এ ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কেরাম যা বলেছেন তাই হবে। আমি – ফুক্বাহায়ে কেরামতো লিখেছেন- জায়েজ হল এমন বিষয়, যা করলে সওয়াব নেই, না করলে গোনাহ নেই। তাহলে আপনার বক্তব্য অনুপাতে আট রাকাত পড়লে সওয়াব নেই, না পড়লে গোনাহ নেই? ১ম লা-মাযহাবী- না, না বিষয়টি এমন না। আসলে বিশ রাকাত পড়াই উত্তম। যেহেতু সাহাবাগণ বিশ রাকাত পড়ে আসছেন। আমি এবার ২য় লা-মাযহাবীর দিকে ফিরলাম। আপনার কি মনে হয়? ২য় লা-মাযহাবটি কট্টর হওয়ার সাথে সাথে বেশ বেআদব বলেও মনে হয়েছে আমার কাছে। একজন লা-মাযহাবী লা-মাযহাবী হওয়ার জন্য প্রাথমিক যেসব বদগুণ থাকা দরকার তার মাঝে বেদআদবী এবং অহংকার হল প্রধানতম বদগুণ। যা গায়রে মুকাল্লিদ মাত্র সবার মাঝেই বিদ্যমান। এ দু’টি বদগুণ না থাকলে এ ভ্রান্ত মাযহাবের অন্তর্ভূক্তি পূর্ণতা পায় না। যাইহোক, ১ম লা-মাযহাবী বিশ রাকাত তারাবীহকে উত্তম বললেও ২য় লা মাযহাবী তা মানতে নারাজ। তিনি হযরত উমর রাঃ বিদআতি আমল জারি করেছেন মর্মে বলতেও পারছে না। আবার ইজমা হয়নি তাও প্রকাশ করতে পারছে না। আবার আট রাকাতের ভুতটি মাথা থেকে নামাতেও পারছে না। এ ত্রিশঙ্কু হালাতে শুধু আস্তে আস্তে খিস্তি আউড়াতে শুনলাম। আমি এবার ১ম লা-মাযহাবীর দিকে মনোনিবেশ করলাম- তাহলে বিশ রাকাত তারাবীহ যারা পড়ে তারা উত্তম কাজ করে থাকে। সামনের রমজানে আপনারা বিশ রাকাত তারাবী পড়ে সেই উত্তম কাজটি করবেন? নাকি আপনার ভাষায় যা করলে সওয়াব নেই আবার না করলে গোনাহ নেই এমন আট রাকাত তারাবীহ পড়বেন?
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৫ প্রসংগ পরিবর্তন..... ✍
১ম লা-মাযহাবী- উত্তম কাজইতো করা উচিত হবে। আমরা আসলে এভাবে কথা না বলে চলুন। সুনির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে কথা বলি। রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলি। এই বিষয়টি পরিস্কার হলে আস্তে আস্তে আস্তে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আমি- আচ্ছা, ভাল কথা। চলুন একটি মাসআলা নিয়েই কথা বলি। আপনি আগে এক ধরণের নামায পড়তেন বলেছেন। আর এখন ভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়ে থাকেন তাও বলেছেন। তো আমাকে পরিস্কার করুন কিছুক্ষণ পর আমরা আসরের নামায পড়বো। আর আসরের নামায যেহেতু চার রাকাত। সেই হিসেবে এই চার রাকাতের কত স্থানে আপনি রফয়ে ইয়াদাইন করবেন? ১ম লা-মাযহাবী- এইতো, তাকবীরে তাহরীমার সময়। তারপর রুকুতে যেতে আসতে। আর তৃতীয় রাকাতের শুরুতে। আমি- তাহলে আপনি চার রাকাত নামাযে মোট ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করেন তাই না? ২য় লা-মাযহাবী- আপনি পেঁচাইতাছেন কেন? ওনিতো পরিস্কার করেই বলল। [বেশ রেগে গিয়ে কথাগুলো বললেন ২য় লা-মাযহাবিটি] আমি- আপনি ক্ষেপতেছেন কেন? আমিতো পেঁচাচ্ছি না। বরং ১ম লা-মাযহাবিটি ভাইয়ের বলা বক্তব্যটি পরিস্কার হচ্ছি। আচ্ছা, তো আপনার বক্তব্য অনুপাতে আপনি আসরের চার রাকাত নামাযে ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকেন। আর বাকি ১৮ স্থানে করেন না। মানে দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতের শুরুতে এবং চার রাকাতের আট সেজদায়ে গমণ এবং উঠতে। এই ১৮ স্থানে আপনারা কখনোই রফয়ে ইয়াদাইন করেন না তাই না? ১ম লা-মাযহাবী- আমতা আমতা করে বললেন- হ্যাঁ, ঠিক আছে। কিন্তু আপনি সেজদার সময়ের রফয়ে ইয়াদাইনের কথা কেন বলছেন? এটিতো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আমি- তাই নাকি? আপনি মনে হয় সুনানে নাসায়ী উঠিয়ে কখনোই দেখেননি। সেখানে পরিস্কার ভাষায় সেজদায় গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ আছে। যা সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন আপনাদের কাছে মান্যবর শায়েখ আলবানী রহঃ। ১ম লা-মাযহাবী- সেই হাদীস জঈফ। আলবানী বললেই তা সহীহ হয়ে যায় না। তিনি তার কিতাবে অনেক হাদীসকে সহীহ বলেছেন অথচ তা সহীহ নয়। আমি- আচ্ছা, এই তাহলে আলবানী সাহেবের অবস্থা। তাহলেতো আলবানী রহঃ এর সহীহ জঈফ বলার কথা উল্লেখ করাই বেকার। এরকম অবিশ্বস্ত ব্যক্তির কথা না বলাই ভালো। আচ্ছা, আপনিতো বলছেন সেই হাদীস জঈফ। ঠিক আছে। কি কারণে জঈফ আর কে সেই জঈফ বলেছে সেটি একটু বলতে পারবেন? আল্লাহ বা রাসূল সাঃ জঈফ বলেছেন? না কোন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন? ১ম লা-মাযহাবী- দেখুন আমরা উসুলে হাদীসের সব বিষয় নিয়ে কথা বললে আসলে কোন ফায়দা হবে না। আমাদের উচিত একটি বিষয়ে ঠিক থাকা। সেটি হল এখানে রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইন। আমি- আলোচ্য বিষয় কিন্তু আপনিই নির্ধারণ করেছেন। সেটি ছিল রফয়ে ইয়াদাইন। রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইন একথা কিন্তু বলা হয়নি। আর রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইনের আলোচনা হলে সেজদাতে আসতে যাওয়ার রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলতে আপনার বাঁধতে কেন? ফাঁদে পড়ে এবার ক্ষিপ্ত হল ২য় লা-মাযহাবী। বলতে লাগল- “অধিকাংশ মুহাদ্দিসরা সেজদার ক্ষেত্রে রফয়ে ইয়াদাইনকে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমরাও ছেড়ে দেই।” আকুল দরিয়ায় যেন খড়কোটা খুঁজে পেল ১ম লা-মাযহাবী। ২য় লা-মাযহাবীর সাথে সুর মিলিয়ে সেও বলতে লাগল- হ্যাঁ, হ্যাঁ, অধিকাংশ ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসরা তা ছেড়ে দিয়েছে। তাই আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আমি- “অধিকাংশ ব্যক্তি কোন সুন্নত ছেড়ে দিলে আপনারাও সুন্নত ছেড়ে দিবেন। এই আপনাদের মূলনীতি? অথচ আপনারাই সারাদিন বলে বেড়ান وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ (116 অর্থাৎ যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে। {সূরা আন’আম-১১৬} তাহলে আপনারা অধিকাংশের কথার উপর নির্ভর করে এ সুন্নত ছেড়ে দিয়ে কুরআনের ভাষায় কি কাজ করছেন ভেবে দেখেছেন?”
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৬ সহীহ জঈফ বলার পদ্ধতি.....✍
প্রচন্ড ধুর্ত ১ম লা-মাযহাবী ভাইটি এবার প্রসঙ্গ পরিবর্তনে মত্ত হলেন। যা গায়রে মুকাল্লিদীনদের পুরাতন অভ্যাস। হুট করে প্রশ্ন করে বসল-“আপনারা কিভাবে সহীহ জঈফ নির্ধারণ করেন?” আমি বুঝে গেলাম। কিয়ামত আসলেও সেজদার সময়ের রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক সঠিক জবাব পৃথিবীর সমস্ত গায়রে মুকাল্লিদ মিলিয়েও দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। তাই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে পালাতে চাচ্ছে এ বিষয় থেকে। আমিও সুযোগ দিলাম। নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য বললাম- “আমাদের অবস্থা পরিস্কার ও খুব সহজ। আমরা যখন কোন বিপরীতমুখী হাদীস দেখি। তখন তাকিয়ে দেখি হাদীসটি সহীহ জঈফ নাকি অন্য কিছু সে ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন কিছু বলেননি। আর মুহাদ্দিসীনদের মাঝে সহীহ এর সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর মতবিরোধ। ইমাম বুখারীর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে ইমাম মুসলিম রহঃ এর সহীহ এর মিল নেই। অনেক হাদীস ইমাম মুসলিমের কাছে সহীহ। কিন্তু বুখারীর কাছে সহীহ নয়। কারণ দুইজনের সহীহ এর সংজ্ঞা ভিন্ন। আবার ইমাম তিরমিজীর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে অন্যের মিল নেই। মিল নেই ইবনে হিব্বান ও ইবনে খুজাইমা রহঃ এর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে অন্য কারো। এই এক সহীহ শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর মতভেদ। আমি কার কথা মেনে কোন হাদীসকে সহীহ বলবো? কার সহীহ এর সংজ্ঞা সঠিক? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট বক্তব্য না আল্লাহ তাআলা থেকে আছে না রাসূল সাঃ থেকে আছে। এই দ্বিধান্বিত হালাতে আমি যখন রাসূল সাঃ এর হাদীসের দিকে তাকাই তখন দেখি আল্লাহর নবী সাঃ কয়েকটি জমানাকে শ্রেষ্ঠতম তথা অনুসরণীয় সাব্যস্ত করে গেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِينَ يَلُونِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، তথা শ্রেষ্ঠ উম্মত হল যারা আমার নিকটবর্তী তথা সাহাবাগণ। তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী তথা তাবেয়ীগণ। তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী তথা তাবে তাবেয়ীগণ। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৩৩} যেহেতু সহীহ জঈফের সংজ্ঞা নিয়ে এমন সময়কারের ব্যক্তিগণ মতভেদ করছেন যাদের জমানার শ্রেষ্ঠত্ব ও অনুসরণীয় হওয়ার কোন সার্টিফিকেট আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে নেই। তাই আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কর্তৃক অননোমোদিত কারো কথায় কোন হাদীসকে সহীহ জঈফ বলাকে আমরা নিরাপদ মনে করি না। এ কারণে আমরা ফিরে গেছি সেই জমানার মুহাদ্দিসও মুজতাহিদের দিকে। যিনি রাসূল সাঃ এর বক্তব্য দ্বারা অনুসরণীয় শ্রেষ্ঠ জমানার ব্যক্তিত্ব। রাসূল সাঃ যে জমানাকে শ্রেষ্ঠ জমানা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যে জমানার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সেই শ্রেষ্ট জমানার পৃথিবী বিখ্যাত গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফক্বীহগণের দিকে। তারা যেটিকে সহীহ বলেছেন আমরা সেটিকে সহীহ বলি। তারা যেটিকে জঈফ সাব্যস্ত করেছেন আমরা সেটিকে জঈফ সাব্যস্ত করি। আর আর সহীহ জঈফ পরিভাষা যেহেতু অনেক পরের সৃষ্টি। যা ৫০০ শতাব্দীর আগে কেউ ব্যবহারই করতো না। আর শব্দ যেহেতু মাকসাদই নয়, তাই আমরা যে হাদীসের উপর চার ইমামের ফক্বীহগণ একমত পোষণ করে আমলী বলে সাব্যস্ত করেছন আমরা সে হাদীসকে সর্বসম্মত সহীহ বলে বিশ্বাস করি। আর যে হাদীস নিয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে মতভেদ হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আমরা উক্ত হাদীসের সহীহ নিয়ে মতভেদ আছে বলে বিশ্বাস করি। আর হাদীসের সহীহ নিয়ে মতভেদ আছে সময়কার আমরা প্রাধান্য দেই আমাদের ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর প্রাধান্য দেয়া মতটিকে। তিনি যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে মাসআলা বলেছেন সেটিকে সহীহ বিশ্বাস করি। আর যে হাদীসকে ছেড়ে দিয়েছেন সেটিকে মারজূহ তথা অপ্রাধান্য পাওয়া হাদীস বলে মেনে নেই। আরো পরিস্কার করে বলছি, কোন হাদীস সহীহ কোন হাদীস জঈফ? তা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ বলে যাননি। তাই আমরা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর শ্রেষ্ঠত্বের সার্টিফিকেট দেয়া জমানার ব্যক্তিদের কথায় হাদীস সহীহ জঈফ মানি। রাসূল সাঃ এর বলা ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের কথায় হাদীসকে সহীহ জঈফ বলে সর্বক্ষেত্রে আমল করাকে নিরাপদ মনে করি না। আরেকটি বিষয়, ইমাম ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর ইন্তেকালের ৪৪ বছর পর জন্ম লাভ করেছে ইমাম বুখারী রহঃ। ইমাম মুসলিম রহঃ এর জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৪ বছর পর। ইমাম তিরমিজী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬০ বছর পর। ইমাম আবু দাউদ রহঃ জন্ম লাভ করেছেন ৫২ বছর পর। ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৯ বছর পর। ইমাম নাসায়ী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬৫ বছর পর। সুতরাং যে হাদীস রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে সহীহ। আর সহীহ না হয়ে উপায়ও নেই, তিনি নিজে তাবেয়ী হলে পরবর্তীই সাহাবী। আর কোন সূত্রই নেই। আর যদি তাবে তাবেয়ী ধরি, তাহলে মাঝখানে হল শুধু তাবেয়ী। আর এরা সবাই শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব। সুতরাং হাদীস জাল ও জঈফ হবার কোন সুযোগই নেই। কিন্তু ঐ হাদীসটিই ৪৪ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম বুখারী, ৫৪ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম মুসলিম, ৬০ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম তিরমিজী, ৫২ বছর পর জন্ম নেয়া আবু দাউদ, ৫৯ বছর পর জন্ম নেয়া ইবনে মাজাহ এবং ৬৫ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম নাসায়ীর জমানার সময় জঈফ এবং জালও হয়ে যেতে পারে। কারণ, আমরা জানি হাদীস জঈফ ও জাল হবার একটি মৌলিক কারণ হল, রাবী জঈফ বা মিথ্যুক হওয়া। এ কারণে শ্রেষ্ঠ যুগের মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস যে হাদীসকে আমলযোগ্য সাব্যস্ত করে ফেলেছেন সেটিকে আমরা সহীহ বিশ্বাস করাকে নিরাপদ মনে করি ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের সহীহ বলা কথার উপর আমল করার চেয়ে। তাহলে আমাদের সহীহ জঈফের সারমর্ম দাঁড়াচ্ছে। আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ জঈফ না বলায় আমরা বাধ্য হয়ে নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদের হাদীসের উপর আমলকরণ ও আমল বর্জনের আলোকে হাদীসকে সহীহ ও জঈফ সাব্যস্ত করি। ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্যের আলোকে সকল মাসআলার সমাধানে হাদীসকে সহীহ জঈফ বলাকে নিরাপদ পন্থা বলে মনে করি না। যেহেতু তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কোন নির্ভরযোগ্যতার সার্টিফিকেট নেই। এই হল, আমাদের সহীহ জঈফ বলার পদ্ধতি।” এবার গজগজ করে উঠল উভয় লা মাযহাবী একসাথে..................
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৭ অন্ধ তাকলীদ কাকে বলে?..... ✍ এবার গজগজ করে উঠল উভয় লা মাযহাবী একসাথে। বলতে লাগল। একজনকে মানার নির্দেশ কে দিয়েছে? ইমাম আবু হানীফা রহঃ সব সঠিক বলেছেন একথা কে বলেছে? ইমাম আবু হানীফাতো নিজেই বলেছেন তার কথা যাচাই করে মানতে।” দুই লা মাযহাবী একই সাথে শুধু বলতেই আছে, বলতেই আছে। থামার কোন লক্ষণ নেই। ২য় লা মাযহাবীটি বলার সাথে সাথে বেশ রাগও দেখাল। আস্তে আস্তে কি গালি দিল কি না? তা বুঝতে পারিনি। তবে মুখ নড়ছিল খুব। থামানোর চেষ্টা করলাম। অনেক বলার পর থামল দু’জন। বললাম, “আরে ভাই! পয়েন্টওয়ারী কথা বলুন। এভাবে শুধু বলতেই থাকলে কিভাবে আলোচনা ফলপ্রসু হবে? আপনাদের অভিযোগ অনেক একেকটি করে আলোচনা করুন। এভাবে কলকলিয়ে উঠলেতো কথা চলতে পারবে না। আমার পূর্বে বলা বিষয়টি বুঝলে আসলে আপনারা এসব প্রশ্ন করতেন না। আমি কিন্তু বলিনি। শুধু আবু হানীফা রহঃ কেই মানতে হবে। আমি প্রথমত বলেছি শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদকে মানতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হল আমরা ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে প্রাধান্য দেই তিনি সবার আগের। তাঁর এবং হাদীসের মূল রাবীর মাঝের দূরত্ব একদম নেই বললেই চলে। আর হাদীসের সহীহ জঈফের বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূল সাঃ সুনির্দিষ্ট করে যাননি। তাই হাদীসের মুল রাবীর নিকটবর্তী এবং রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্বের কথাকে প্রধান্য দেই হাদীসের সহীহ জঈফ বিষয়ে মতভেদপূর্ণ হালাতে। মতভেদহীন হালাতে অন্যরাও প্রাধান্য পায়। কিন্তু মতভেদপূর্ণ হালাতে যেহেতু কাউকে নির্দিষ্ট করে মানার নির্দেশ নেই। একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে মানার কুরআন ও হাদীসের কোন দলীল বিদ্যমান নেই। তাই রাবীর নিকটবর্তী এবং পৃথিবী বিখ্যাত ও স্বীকৃতি মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর সহীহ সাব্যস্ত করণকে সহীহ সাব্যস্ত করি। আর যেটিকে তিনি বাদ দিয়েছেন সেটিকে জঈফ বা এক্ষেত্রে আমলহীন সাব্যস্ত করে থাকি। তাহলে আপনারা যে কাজটি করছে ফেতনার যুগের মুহাদ্দিস দিয়ে, আমি সেকাজটিই করছি শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তি দিয়ে। তথা আপনারা হাদীস সহীহ জঈফ বলছেন ফেতনার যুগের বক্তব্যের আলোকে আর আমরা হাদীস সহীহ জঈফ বলছি শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস সেই সাথে মুজতাহিদের বক্তব্যের আলোকে। এই হল আপনাদের আর আমাদের সহীহ জঈফ বলার মাঝে মূল পার্থক্য।” ১ম লা-মাযহাবী- ইমাম আবু হানীফাতো তার কথা দলীল ছাড়া মানতে নিষেধ করেছেন। তো? আমি- কাকে নিষেধ করেছেন? আপনার আমার মত মুর্খকে? না মুজতাহিদ ইমাম আবু ইউসুফকে? ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উক্ত বক্তব্যটি কাকে উদ্দেশ্য করে বলা? ১ম লা মাযহাবী- আবু ইউসুফকে। কিন্তু…….. ২য় লা-মাযহাবী- “অন্ধ তাকলীদ। একেই বলে অন্ধ তাকলীদ। আপনারাতো অন্ধ তাকলীদ করছেন।” বেশ তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন তিনি। ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ, ঠিকই অন্ধ তাকলীদ। অন্ধের মত তাকলীদ করা। আমি- “একটু থামেন না ভাই। কথা শুধু বলেই যাচ্ছেন।” দ্বিতীয় লা মাযহাবীকে উদ্দেশ্য করে বললাম- অন্ধ তাকলীদ কাকে বলে বলুনতো।” ২য় লা-মাযহাবী- এটা আবার কে না জানে। কারো কথা অন্ধভাবে মেনে নেয়াকে অন্ধ তাকলীদ বলে। আমি- আপনার ভুলটাতো এখানেই। আপনি অন্ধ তাকলীদ বলে চিল্লাচ্ছেন কিন্তু অন্ধ তাকলীদ কি জিনিস তা জানলেন না। অন্ধ তাকলীদ হচ্ছে, অন্ধ অন্ধের পিছনে ছোটা। এক অন্ধ আরেক অন্ধের পিছনে ছোটার নাম অন্ধ তাকলীদ। ২য় লা-মাযহাবী- অন্ধ মানে কি? চোখ নষ্ট? আমি- আপনি যে আমাকে অন্ধ তাকলীদ করি বলছিলেন এর দ্বারা কি আপনি আমার চোখ নষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন? ২য় লা-মাযহাবী- অন্ধ তাকলীদ বিষয়টি বুঝিয়ে কনতো! আমি- “যেমন ধরুন আপনি একটি অন্ধ চোখে দেখেন না। আমি আরেক অন্ধ। এখন আমাদের রাস্তা পাড় হতে হবে। আমি অন্ধ আপনি অন্ধের কাছে গিয়ে বললাম আমাকে রাস্তা পাড় করে দিন। আপনি নিজেই চোখে দেখেন না, আমাকে কি রাস্তা পাড় করে দিবেন? এই হল, অন্ধ তাকলীদ। মানে অন্ধের পিছনে অন্ধ ছোটা। যেমন বর্তমানে আপনারা যারা কুরআন ও হাদীস দেখে পড়তেই জানেন না, তারা আবার একজন আরেকজনকে গুরু বানিয়ে তার কথা অনুপাতে কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবি করে আলেম উলামাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে চলে আসেন। এরকম এক জাহিল আরেক জাহিলকে গুরু মেনে পথ চলার নাম অন্ধ তাকলীদ। একজন চক্ষুসমান ব্যক্তিকে এক অন্ধ অনুসরণ করলে সেটিকে অন্ধ অনুসরণ বলে না। যেমন একজন জ্ঞানী মুজতাহিদকে জাহিল ব্যক্তি যদি অনুসরণ করে তাকেও অন্ধ তাকলীদ বলবে না। এতো জ্ঞানীর পিছনে জাহিলের অনুসরণ। জাহিলের পিছনে জাহিলের অনুসরণ নয়। জাহিলের পিছনে জাহিলের অনুসরণের নাম অন্ধ তাকলীদ। এবার বলুন আমরা অন্ধ তাকলীদ করি? না আপনারা?” ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৮ঃ ফিক্বহে হানাফী কি আবু হানীফা রহ. এর সংকলিত নয়? ✍ ১ম লা মাযহাবী ভাইটি অনেক চালাক। তিনি কোথাও আটকে গেলে কিভাবে সেখান থেকে জান ছাড়াতে হয় তা ভাল করেই রপ্ত করেছেন। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এবার নতুন সূর উঠালেন। বলতে লাগলেন- ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ করার কথা আপনি বলছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহ বলে যা প্রচলিত। তাতো তার সংকলিত নয়। আর তিনি কি কোন কিছু লিখিয়ে গেছেন? যা কিছু নিসবত করা হয় এরতো কোন সনদই ইমাম আবু হানীফা পর্যন্ত নেই। তাই হানাফী ফিক্বহের কিতাবের নিসবত তার দিকে করাটা ভুল। আমি- আপনার বক্তব্যের সারমর্ম হল, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কোন লিখিত গ্রন্থ নেই, আর যা ফিক্বহে হানাফী বলে আছে তার সনদ না থাকায় তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহ নয় এইতো আপনার অভিযোগ। আপনার মনে এ প্রশ্নটি উদয় হয়েছে দু’টি বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। একটি হল ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর স্বহস্তে লিখিত কিতাব সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। সেই সাথে উস্তাদের কথা ছাত্র লিখলে যে সেটি উস্তাদেরই কিতাব হয় সেটি না জানার কারণে। আর দ্বিতীয় অজ্ঞতা হল, মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ প্রয়োজন হয় না মুহাদ্দিস ও ফুক্বাহাদের এ সর্বজনবিদিত উসুলটি না জানার কারণে এ প্রশ্ন উত্থাপন করলেন। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর লিখিত কিতাব “মুসনাদে আবী হানীফা” এখনো বিদ্যমান। আমাদের কাছেও সেই কিতাব আছে। তাছাড়া আরো অনেক কিতাব আছে। যেমন ফিক্বহুল আকবর। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বলা উসুল অনুপাতে তার ছাত্ররা যেসব কিতাব সংকলিত করেছেন তাও অনেক। তাছাড়া আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র মুহাম্মদ রহঃ মুয়াত্তা। ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর আসার। ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর ছয় কিতাব তথা জামে কাবীর, জামে সগীর, সিয়ারে সগীর, সিয়ারে কাবীর, মাবসূত, জিয়াদাত ইত্যাদি গ্রন্থ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উসুল ও ফাতওয়ার আলোকে লিখা। যা পরবর্তীতে কাফী নামক কিতাবে একসাথে সন্নিবিষ্ট করা হয়। উস্তাদের নির্দেশনায় কিতাব লেখাটি মূলত উস্তাদেরই লেখা হয়। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ এর ছাত্র ফিরাবরী রহঃ ইমাম বুখারী রহঃ এর নির্দেশনায় বুখারীর বেশ কিছু হাদীস সংকলিত করেছেন যা বুখারীর ১ম খন্ডের ১৫০ নং পৃষ্ঠার টিকায় লিখা আছে। ফিরাবরী রহঃ বুখারীর হাদীস একত্রিত করার কারণে গ্রন্থটি ফিরাবরীর হয়ে যায় নি। বরং যেহেতু ইমাম বুখারীর নির্দেশে সংকলিত করা হয়েছে তাই গ্রন্থটির মূলক লেখক ইমাম বুখারীই রয়ে যাচ্ছেন। তেমনি ইমাম মুহাম্মদ রহঃ যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উসুল ও মূলনীতির আলোকে গ্রন্থ সংকলিত করেছেন, তাই সেসব মূলত ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর গ্রন্থই থেকে যাচ্ছে। আর আপনি হেদায়া কুদুরীর সনদের বিষয়ে যেকথাটি বলেছেন। সে দু’টি গ্রন্থ মুতাওয়াতির হওয়ার পরও আপনার সনদ তালাশ করাটি হয়ে গেছে পুরাই নাস্তিকদের প্রশ্নের মত। মুসলিমের প্রশ্ন হয়নি। কারণ মুতাওয়াতির বস্তুর সনদ লাগে না। আপনি নিজেও জানেন এটি ফিক্বহে হানাফী যদিও আপনি এ গ্রন্থ মানেন না। আবার আমরা যারা ফিক্বহে হানাফী মানি তারাও জানি এটি ফিক্বহে হানাফী। তাহলে যারা মানে তারা যেমন ফিক্বহে হানাফী হিসেবে মানছে, আবার যারা মানছে না সমালোচনা করছে তারাও ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই সমালোচনা করছে। তাহলে কি দাঁড়াল? এটি যে ফিক্বহে হানাফী এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি মুতাওয়াতির। সংকলনের পর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্ব এটিকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। লাখো মাদরাসায় এটি দরসে নিজামীর অন্তর্ভূক্ত। পৃথিবীব্যাপী কোটি ছাত্র শিক্ষক এটি ফিক্বহে হানাফী হিসেবে পড়ছে পড়াচ্ছে। মুহাদ্দিস, মুফতী, ফক্বীহ সেই সাথে সাধারণ মানুষ এক বাক্যে এসব গ্রন্থকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই জেনে আসছে। ১২৪৬ হিজরীর আগে ফিক্বহে হানাফীর উপর কোন অভিযোগের কথা এ উপমহাদেশে কেউ শুনেনি। সর্বপ্রথম যে শিয়া ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তারপর তারই অনুসরণ করে কথিত আহলে হাদীস বা গায়রে মুকাল্লিদীনরা ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারাও একথা স্বীকার করতো এসব ফিক্বহে হানাফী। তাহলে এমন একটি মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ তালাশ করা আহমকী হয়। আমি আগেই বলেছি মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ তালাশ করা মুসলিমের কাজ নয়। নাস্তিকদের পদ্ধতি। যেমন- কোন নাস্তিক আপনাকে প্রশ্ন করল- রাসূল সাঃ এর উপর যে কুরআন নাজিল হয়েছে এটি যে হুবহু সেই কুরআন। তার কি সনদ আছে? কুরআনের প্রতিটি আয়াতের সনদ কি রাসূল সাঃ পর্যন্ত প্রমাণিত? সনদ নেই বলে কুরআন কি নাউজুবিল্লাহ নবীর উপর নাজিলকৃত কুরআন নয়? কি জবাব রয়েছে আপনার কাছে?” এক সাথে কলকলিয়ে উঠলেন দুই লা মাযহাবী। অবশেষে ১ম লা মাযহাবী ভাই বললেন- কুরআন আর ফিক্বহে হানাফী এক জিনিস নয়। আমি- কুরআন আর ফিক্বহে হানাফী এক জিনিস আপনাকে কে বলেছে? উল্টো কথা বলেন কেন? আমি বলেছি কুরআনের প্রতি আয়াতের সনদ কি আছে? না থাকলে কি তা অগ্রহণীয় হয়ে যাবে? ১ম লা মাযহাবী- কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্বতো আল্লাহ নিয়েছেন। তাই এটির সনদ প্রয়োজন নেই। আমি- আপনি যে সংরক্ষণের কথাটি বলছেন সেটিওতো কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। নাস্তিক যখন সনদ ছাড়া কুরআন মানতেই নারাজ, সেখানে আপনি কুরআনের আয়াত দিয়েই তা সংরক্ষিত কিভাবে প্রমাণ করবেন? ১ম লা মাযহাবী- এটা প্রমাণ করা খুবই সোজা। সারা পৃথিবীতে কুরআনের নুসখা একই রকম। তাই এটি রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন। আমি- আপনি কি বলছেন নিজে বুঝতে পারছেনতো? ভাষা এক হলেই সনদ না থাকলে তা গ্রহণীয় হলে, হেদায়া কুদুরীর সারা পৃথিবীর যেসব নুসখা আছে তাতে কি আপনি কোন পরিবর্তন পেয়েছেন? সবতো একই বক্তব্য নির্ভর। তাহলে এটির সনদ তালাশ করছেন কেন? উসূল সম্পর্কে না জানার কারণে আপনি হক মানতে পারছেন না। কুরআন মুতাওয়াতির। সবাই জানে এটি কুরআন। নাস্তিকও জানে। আস্তিকও জানে। মান্যকারীও জানে অমান্যকারীও জানে। সারা পৃথিবীতে তা প্রচলিত। তাই এ মুতাওয়াতিরের হক প্রমাণের জন্য সূত্র তথা সনদ প্রয়োজন হয় না। যেমনটি শরহু নুখবাতিল ফিক্বারে ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন। মুতাওয়াতিরের সনদ তালাশ করা মুর্খতা ছাড়া কিছু নয়। তেমনি হেদায়া কুদুরী যে ফিক্বহে হানাফী সে কথা প্রথম বিরোধীতাকারী শিয়াও স্বীকার করেছে, তার অনুসরণ করে আপনারা যারা বর্তমানে বিরোধিতা করছেন তারাও স্বীকার করেন এসব ফিক্বহে হানাফী, আর আমরা যারা মান্য করি তারাও জানি এসব ফিক্বহে হানাফী। সারা পৃথিবীতে এসব কিতাব ফিক্বহে হানাফী হিসেবে পড়া হচ্ছে। মাদরাসায় পড়ানো হচ্ছে। মুফতী, মুহাদ্দিস, ফক্বীহ এসবকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই জেনে আসছে। তাই এটি মুতাওয়াতির। আর মুতাওয়াতির বস্তুর সনদ লাগে না। যে সনদ তালাশ করে ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ভাষায় উক্ত ব্যক্তি জাহিল। আবার ১ম লা মাযহাবী ভাইটি চালাকীর পরিচয় দিল। নিজেই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এ স্থানে এসেছিল। এখন যখন দেখছে বিপদে পড়েছে। এবার আবার মূল প্রসঙ্গে চলে যাওয়ার কথা উঠাল। বলতে লাগল- আসলে এভাবে কথা বললে কথা শেষ হবে না। চলুন আমরা রফউল ইয়াদাইনের বিষয়ে আলোচনা করি। ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৯ নামাজে জুতা পরিধান করা ..... ✍ আমি- আলোচনাতো রফয়ে ইয়াদাইন নিয়েই ছিল। আপনারাইতো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এ স্থানে নিয়ে এলেন। যাইহোক আমরা রফয়ে ইয়াদাইনের বিষয়ে আপনাদের পূর্ণ আমল নিয়ে কথা বলছিলাম। আপনারা জানিয়েছেন চার রাকাত নামাযে আপনারা ১৮ রফয়ে ইয়াদাইন কখনোই করেন না, আর ১০ স্থানে সর্বদা করে থাকেন। তো….. ১ম লা-মাযহাবী- এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে আমরা জানতে চাই। আমরাতো আপনার কাছ থেকে জানতে এসেছি। তাই আপনি বিষয়টি বুঝিয়ে দিন। আমি- আপনি যেভাবে আমল করছেন সেটিতো আপনার আমল। আমার না। আমিতো আমার আমলের দলীল দিব। আপনি আপনার আমলের দলীল দিবেন। আপনি আগে যেটি করতেন সেটি ছেড়ে দিয়ে কেন এ নতুন আমল ধরলেন। আর আপনার পড়াশোনা অনুপাতে আপনার বর্তমানের আমলটি কেন সহীহ মনে হচ্ছে? তা প্রমাণ করাতো আপনার দায়িত্ব। আপনার দায়িত্ব আমার কাঁধে কেন চাপাতে চাচ্ছেন? প্রসিদ্ধ হাদীসটি শুনেননি? দাবিকারী দলীল উপস্থাপন করবে, আর অস্বিকারকারীর উপর আবশ্যক হল ইয়ামীন করা। তাহলে রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে আপনারা দাবিকারী হয়ে আমাদের কাছে দলীল চাচ্ছেন কেন? আমরাতো আপনার দলীল খন্ডন করে তা অস্বিকার করবো। ১ম লা মাযহাবী- দাবিকারীতো আমরা না আপনি? আমি- কিভাবে? ১ম লা মাযহাবী- হাদীসে রফয়ে ইয়াদাইনের কথা এসেছে। আর আপনারা তা অস্বিকার করছেন। তাই আপনাদের দলীল দিতে হবে। আমি- “আপনি বাদি আর বিবাদির সংজ্ঞাই বুঝেননি। হাদীস হচ্ছে দলীল। আর আপনি যা বলছেন তা হচ্ছে দাবি। আমি যা বলছি তা হচ্ছে অস্বিকার। অস্বিকারকারীর বক্তব্য দাবি হয় না হয় অস্বিকার। আপনি বলছেন রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবে রুকুতে যেতে আসতে। আমি বলছি একথা মানি না। তাহলে দাবিকারী আমি সাব্যস্ত হলাম কিভাবে? আমিতো অস্বিকার করছি। দাবিতো করছেন আপনি। দাবিকারী হয়ে দলীল অস্বিকারকারীর কাছে চাওয়াতো হাদীসের নির্দেশনা অমান্য করা। হাদীস অনুসারী এমন কাজ কি করে করতে পারে?” আবারো হাম তাম শুরু করে দিল ২য় লা-মাযহাবী। দলীল দিতে রাজি হচ্ছে না একজনও। পরিস্থিতি দেখে বিষয়টি আরো পরিস্কার করার জন্য বললাম- আচ্ছা, বলুন আপনারা যে রফয়ে ইয়াদাইন করছেন তার হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- সুন্নত। আমি- এটি সুন্নত একথা কোথায় আছে? ১ম লা মাযহাবী- রাসূল সাঃ যা করেছেন তা সবই করা আমাদের উপর কর্তব্য। সবই জরুরী। আমি বললাম- বুখারী মুসলিমে এসেছে রাসূল সাঃ জুতা পা দিয়ে নামায পড়েছেন, জুতা পা দিয়ে নামায পড়ার হুকুম কি আপনার বক্তব্য অনুপাতে সুন্নত নয়? ১ম লা মাযহাবী- জুতা পা দিয়ে নামায পড়া জায়েজ। আমি- একথা আপনি কোথায় পেলেন? রফয়ে ইয়াদাইনের নির্দেশ যেমন আল্লাহর নবী সাঃ দেননি শুধু নামাযরত অবস্থায় আমল করেছেন মর্মে আপনারা হাদীস দেখান। তেমনি রাসূল সাঃ জুতা পা দিয়ে নামায পড়েছেন কিন্তু পড়তে আদেশ দেননি মর্মে হাদীসে এসেছে। তাহলে রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত হলে জুতা পায়ে নামায পড়া সুন্নত নয় কেন? ১ম লা মাযহাবী- জুতা ছাড়া নামায পড়েছেন একথা হাদীসে এসেছে। তাই আমরা এটিকে ছেড়ে দেই। আমি- আপনার ইচ্ছে হলেই সহীহ হাদীসে আসা রাঃ এর নামায সংক্রান্ত আমল ছেড়ে দেন? এর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ? আর কোন হাদীসে জুতা খুলে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে একটি হাদীসের কিতাবের নাম বলুনতো। ২য় লা-মাযহাবী- আরে! আপনি কিসের সাথে কি মিলাচ্ছেন? জুতা পরিধান করে নামায পড়া সুন্নত হবে কেন? এটি এমনিতেই পড়েছেন। আপনি এটিকে রফয়ে ইয়াদাইনের সাথে মিলাচ্ছেন কেন? আমি- আমি মিলাচ্ছি না আপনারা গুলিয়েছেন। রাসূল সাঃ যা করেছেন, তাই সুন্নত বললেন, অথচ জুতা পরিধান করে নামায পড়েছেন সেটিকে সুন্নত মানতে নারাজ কেন? ২য় লা-মাযহাবী- রাসূল সাঃ জুতা খুলেও নামায পড়েছেন। আমি- কোন হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ জুতা খুলে নামায পড়েছেন সেই হাদীসটা একটু দেখানতো? [বেটা হাদীসের কিতাব দেখলেই কাঁপে, আবার ঝারি দিয়ে বেড়াচ্ছে হাদীসে আছে, হাদীসে আছে বলে] ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, পেয়েছি। হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ একবার জুতা পা দিয়ে নামায পড়ছিলেন, তখন জিবরাঈল আঃ এসে বললেন আপনার জুতায় নাপাক আছে, তখন তিনি জুতা খুলে বাকি নামায পড়েন। সুতরাং বুঝা গেল জুতা খুলে নামায পড়া জায়েজ। আমি- এ হাদীসতো আরো পরিস্কার করছে যে, জুতা পরিধান করেই নামায পড়তে হবে। শুধু নাপাক থাকলে খুলে পড়বে এতটুকু প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু নাপাক না থাকলে খুলে পড়বে একথাও কি প্রমাণ হচ্ছে? যেমন হাত উঠাতে না পারলে হাত না উঠানোর যেমন সুযোগ থাকে, কিন্তু আপনার দাবি অনুপাতে সে সময় রফয়ে ইয়াদাইনের সুন্নত বাদ হয় না, কিন্তু নাপাক থাকলে জুতা খুলে পড়বে তা দিয়ে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার সুন্নত হওয়াকে অস্বিকার করছেন কিভাবে? ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১০ ফরজ ও সুন্নাত নির্ধারণ.... ✍ ১ম লা মাযহাবী- আপনি শুধু শুধুই ঘুরাচ্ছেন। জুতা পরিধান করা আর রফয়ে ইয়াদাইন এক বস্তু নয়। ২য় লা-মাযহাবী- রফয়ে ইয়াদাইন না করার কোন হাদীসই নেই। আর জুতা খুলে নামায পড়ার হাদীস আছে। তাই দু’টি এক হতে পারে না। আমি- রফয়ে ইয়াদাইন না করার কোন হাদীসই নেই? ২য় লা-মাযহাবী- না কোন হাদীস নেই। আমি- হাদীস সম্পর্কে মাশাআল্লাহ ভালই জ্ঞান রাখেন দেখছি। …… ১ম লা মাযহাবী- দেখেন রাসূল সাঃ যে আমল করেছেন যদি সেটির বিপরীত কর্ম প্রমাণিত না হয়, তাহলে সেটি করা জরুরী। আর যদি বিপরীতটি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা আছে। যেমন এখানে রফয়ে ইয়াদাইনের বিপরীত কোন হাদীস নেই। তাই এটি সুন্নত। আর যেহেতু জুতা খুলে নামায পড়ার হাদীস আছে তাই এটি জায়েজ। আমি- আপনার এসব ব্যাখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথাও আছে? না আপনার মন যা বলে তাও শরীয়ত? ১ম লা মাযহাবী- এসবতো বুঝা যায়। আমি- তাহলে আপনার বুঝের নাম আপনার কাছে শরীয়ত। কুরআন ও হাদীসের ইবারত নয়। আরেকটি বিষয় আপনি একবার বলছেন জরুরী আবার বলছেন সুন্নত এ পার্থক্যের মানে কি? কোনটির আসলে হুকুম কি? কিসের ভিত্তিতে এসব বলে থাকেন? ১ম লা মাযহাবী- যে কাজ না করলে নামায হয় না, সেটি আবশ্যক বা ফরজ। আর যেটি ছাড়া নামায হয় সেটি সুন্নত। আমি- মাশাআল্লাহ! সুন্দর সংজ্ঞা। কিন্তু এ সংজ্ঞাটি কুরআনের কোন আয়াতের অনুবাদ বা কোন হাদীসের অনুবাদ? ১ম লা মাযহাবী- এসব বুঝা যায়। আমি- হু বুঝা যায়। আর আপনার সেই বুঝের নাম কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরন? আচ্ছা, তাহলে আপনার এই সংজ্ঞা অনুপাতে আমাকে নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমা বলা আর রফয়ে ইয়াদাইনের পার্থক্যটি বুঝান। কোনটির হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- তাকবীরে তাহরীমা রুকন। আর রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত। আমি- এ দুই হুকুম কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় আছে? ১ম লা মাযহাবী- যেহেতু তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না তাই এটি রুকন। আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় তাই এটি সুন্নত। আমি- তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না, আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় একথা কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? ১ম লা মাযহাবী- তাকবীর বলে নামায পড়তে বলা হয়েছে তাই এটি ছাড়া নামায হবে না। কিন্তু রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে এমন বলা হয়নি। তাই এটি সুন্নত। আমি- মাযহাবীদের কিয়াসকারী বলে গালি দেন। কিন্তু নিজেরা যেভাবে যেটা মনে চায় সেটির একেকটি বানোয়াট হুকুম সাব্যস্ত করে চলেন তা দেখে সত্যিই হাসি পাই। আপনি বলেছেন যা ছাড়া নামায হয় না, তা রুকন, আর যা ছাড়া নামায হয় তা সুন্নত। সেই হিসেবে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না বলে সেটিকে রুকন সাব্যস্ত করেছেন। আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় বলে এটিকে সুন্নত সাব্যস্ত করছেন। কিন্তু রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় একথারও কোন দলীল পেশ করেননি, আবার তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায না হওয়ারও কোন স্পষ্ট দলীল পেশ করতে পারেননি আপনার কথিত যুক্তি ছাড়া। এসব পরিভাষা কোত্থেকে আমদানী করলেন? কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের অনুবাদ এসব পরিভাষা সেটিও জানাননি। শুধু নিজের ইচ্ছেমত একেকটিকে একেকটি বলে দিলেন, এর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ? বলুনতো কিয়াম ছাড়া নামায হয়? ১ম লা মাযহাবী- না হয় না। আমি- এর কী দলীল আছে? কিয়াম ছাড়া নামায হয় না, রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয়, এসব পার্থক্য আপনাকে কে বানিয়ে দিয়েছে? নাম কুরআন ও হাদীসের আর কাজ নিজের খাহেশাত নিঃসৃত যুক্তির এ কেমন কাজ ভাই? ১ম লা মাযহাবী- দেখেন ! আমরা এভাবে আলোচনা করতে থাকলে কোন কিছুই হবে না। চলুন আমরা রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলছি সেটাই শেষ করি। ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১১ঃ জাহিল ব্যক্তির কিয়াস - একি কিয়াস নাকি ধোঁকা!!!..... ✍ আমি- আচ্ছা, চলুন, রফয়ে ইয়াদাইন নিয়েই কথা বলি। আপনি রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আপনাদের আমলতো বললেন। অর্ধেক হুকুম বলে দিয়েছেন মানে রফয়ে ইয়াদাইন করা সুন্নত। এবার হুকুমের দ্বিতীয় অংশটি বলুন! রফয়ে ইয়াদাইন না করার হুকুম এবং যারা করে না তাদের হুকুম সেই সাথে রফয়ে ইয়াদাইন না করা নামাযের হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয়ে যায়। অনিচ্ছায় ছেড়ে দিলে গোনাহ নেই। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে। আমি- এই কাজ সুন্নত এবং সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহটা কি জিনিস? একটু পরিস্কার করে বলুন। ১ম লামাযহাবী- মানে, রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত। আর ইচ্ছেকৃত না করলে সুন্নত ছেড়ে দিলে যে গোনাহ হয় সে গোনাহ হবে। আমি- সুন্নত ছেড়ে দিলে কি গোনাহ হয়? ১ম লামাযহাবী- আল্লাহ তাআলা কুরআনে নবীজী সাঃ এর অনুসরণের আদেশ দিয়েছেন। তাই রাসূল সাঃ যা করেছেন তা ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে। আমি- ভাই! আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন নবীজীকে অনুসরণের। তাই সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। এই দু’ইয়ের মাঝে মিল কোথায়? আল্লাহ বলছেন নবীজীকে অনুসরণের, আর আপনি বলছেন সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে, “অনুসরণ আর সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” এই দুইয়ের মাঝে মিল কোথায়? আর “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” একথার দলীল অনুসরণের নির্দেশের দ্বারা হয় কিভাবে? সহজ করে বলছি, আল্লাহ বলছেন, নবীজী সাঃ কে অনুসরণ করতে। আর আপনি বলছেন সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। এর মাঝে “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” বক্তব্যটি আপনার দাবি, আর “নবীজী সাঃ কে অনুসরনের” নির্দেশ সম্বলিত আয়াত হচ্ছে আপনার দলীল। এখন আমাকে বলুন, আপনার দাবির স্বপক্ষে দলীলটি প্রয়োগ হয়েছে কি না? একদিকে অনুসরণের নির্দেশ, অপরদিকে “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে”। আপনার দলীলে “গোনাহ হওয়ার বিষয়” কোথায়? আর সুন্নত শব্দ কোথায়? যেভাবে ইচ্ছে আয়াত ও হাদীসকে একটিকে অপরটির সাথে লাগানোর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ। আমাদের ব্যাপারে বদনাম করে বেড়ান, আমরা কিয়াস করে বেড়াই। কুরআন ও হাদীসের ধার ধারি না। কিন্তু আপনাদের যা হালাত দেখা যাচ্ছে, সব কিছুতেই দেখি প্রথমে কিয়াস করে থাকেন আপনারা। তবে পার্থক্য হল, আমাদের এখানে প্রয়োজনে কিয়াস করে সর্বজনস্বীকৃত মুজতাহিদ আর আপনাদের এখানে আরবী দেখে পড়তেও জানে না, এমন জাহিল ব্যক্তিরা। কাজ কিয়াসের, নাম কুরআন ও হাদীসের! এ কেমন ধোঁকা? “‘রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে’ এই মর্মে আপনাদের কথিত কিয়াস ছাড়া আর কোন দলীল আপনাদের কাছে নেই” স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেন? ১ম লা-মাযহাবী- না, না আছেতো। আমি- কিভাবে আছে? উপরে তাহলে কি দেখালাম? আপনার বক্তব্যের দলীল এসব আয়াত না আপনার কিয়াসকে দলীল বানাচ্ছেন? যে কিয়াসের কোন ভিত্তিই নেই। আয়াতে বলছে অনুসরণের নির্দেশের কথা। আর আপনি বলছেন “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” মিলল কিভাবে? ১ম লা-মাযহাবী- আচ্ছা, ভাই! এই সব বিষয়ে এখন কথা বললে আসলে কোন সমাধান হবে না। অল্প অল্প করে আমরা একেক দিন আলোচনা করবো। তাই আজকে শুধু রফয়ে ইয়াদাইন না করা বিষয়ে আপনাদের দলীলটি জানতে চাই। আমি- আমিতো আগেই বলেছি, দলীল দেয়া আমাদের যিম্মায় নয়। কারণ আমরা অস্বিকারকারী। আপনারা দাবিকারী। রফয়ে ইয়াদাইন করার দাবি করছেন, আর আমরা অস্বিকার করছি। বলছি, রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবে না। প্রসিদ্ধ হাদীস অনুপাতে দলীল দেয়া দাবিকারীর উপর আবশ্যক। অস্বিকারকারীর উপর নয়। ১ম লামাযহাবী- আজকে চলে যাবো। আরেক দিন আসবো। সেই দিন আরো বিস্তারিত কথা হবে। আমি- সেদিন কি রফয়ে ইয়াদাইন করার উপর দলীল পেশ করবেন? ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, সাথে সাথে আপনাদের দলীলগুলো আমাকে দিলে ভাল হয়। আমি উভয়টি রিসার্চ করবো। যদি আপনাদের দলীল শক্তিশালী মনে হয় তাহলে আপনাদেরটা গ্রহণ করবো। মনে মনে হাসি পেল আমার। হাদীসের কিতাব দেখে যে ব্যক্তির শরীর কাঁপতে থাকে। তিনি কুরআন ও হাদীসের দলীল যাচাই করে যেটিকে সঠিক মনে হয় সেটি মানবেন। কি মারাত্মক দুঃসাহস................. ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১২ঃ কিয়ামত পর্যন্ত সময় নিন..... ✍ মনে মনে হাসি পেল আমার। হাদীসের কিতাব দেখে যে ব্যক্তির শরীর কাঁপতে থাকে। তিনি কুরআন ও হাদীসের দলীল যাচাই করে যেটিকে সঠিক মনে হয় সেটি মানবেন। কি মারাত্মক দুঃসাহস! এরকম জাহিলরা পুরো দ্বীনটাকেই হাসি তামাশার বস্তু বানিয়ে রেখেছে। নিজের জাহালাত আর মুর্খতা সত্বেও নিজেকে মনে করছে বিশাল গবেষক। গবেষণা করবে, রিসার্চ করবে, তারপর নিজের জাহেলী সমঝে যেটিকে হক মনে করবে, সেটিকে মানবে, আর যেটি বুঝে আসবে না মানবে না। কি ভয়াবহ মানসিকতা। দ্বীনটা তাদের কাছে কতটা ছেলেখেলা। যে দ্বীন শিখার জন্য একেকজন বিদ্যানুরাগীরা দিনের পর দিন সফর করেছেন। বছরের পর বছর শায়েখদের কাছে পড়ে রয়েছেন। সেই দ্বীন শুধু কিছু অনুবাদ পড়ে, ভিডিও দেখে ইন্টারনেটের কিছু লেখা পড়ে শিখে যাবে! নিজের ইচ্ছেমত যাকে তাকে বিশ্বস্ত, যাকে তাকে সহীহ-জঈফ সাব্যস্ত করে দিবে। এর নামও দ্বীন? আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভয়ানক গবেষকদের ফিতনা থেকে হিফাযত করুন। আমি ১ম লা মাযহাবীকে বললাম- আমার দলীল দেয়ার দায়িত্ব নয়। তবু আপনাকে দিচ্ছি। রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আমরা নামাযে যা করি তার পূর্ণ আমলের পূর্ণ দলীল এই দু’টি বইয়ে আছে। একটি হল, মাওলানা আব্দুল মতীন সংকলিত “দলীলসহ নামাযের মাসায়েল” আর শায়েখ মুহাম্মদ ইলিয়াস ফয়সালে “নামাযে পয়ম্বর” গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ “নবীজীর নামায” এ। এ দুটি কিতাব দেখে নিন। এবার আপনি রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আপনার পূর্ণ আমলের শুধু একটি সহীহ হাদীস পেশ করবেন। আর আপনার পূর্ণ আমল মনে থাকবেতো? ১ম লা-মাযহাবী- থাকবে না কেন? থাকবে। আমি- হয়তো থাকবে না। আমি লিখে দিচ্ছি। তাহলে মনে থাকবে। ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, তাহলে লিখে দিন। আমি যখন কাগজ কলম নিচ্ছি লিখে দেয়ার জন্য। তখন ২য় লামাযহাবীটি কথা বলে উঠল। বলতে লাগল- আপনি আপনার দলীল দিন। আমাদের কাছে এসব লিখে দিচ্ছেন কেন? আমাদের কাঁধে চাপাতে চাচ্ছেন কেন? ১ম লামাযহাবী- ওনাদের দলীলতো ওনারা দিয়েছেন। যা এই দুই কিতাবে বিদ্যমান। আমরা আমাদের আমলের দলীল লিখে নিয়ে আসবো আগামী একদিন। আমি- এইতো বুঝেছেন। ঠিক আছে লিখেন রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে- চার রাকাত নামাযে সর্বদা দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করা, ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন না করা, একাজটি সুন্নত, ইচ্ছেকৃত ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে ইদ্যাদি বক্তব্য সম্বলিত একটি সহীহ হাদীস, যাকে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ বা তাদের সমর্থনে সহীহ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১ম লা-মাযহাবী- আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি কিন্তু এসবের লিখিত জবাব নিয়ে আসবো। আমি- কোন সমস্যা নেই। লিখিতই নিয়ে আসুন। কিন্তু উপরের সব ক’টি পয়েন্ট কিন্তু ভুলবেন না। আমল পূর্ণ করে, অর্ধেকের দলীল পেশ করা ধোঁকাবাজী একথাতো মানেন? ১ম লা-মাযহাবী- তাতো অবশ্যই। পূর্ণ আমল করলে দলীলতো পূর্ণ আমলেরই দিতে হবে। অর্ধেক আমলের দিবে কেন? আমি- তাহলে ঠিক আছে। রফয়ে ইয়াদাইনের পূর্ণ আমলের দলীলই আশা করি পেশ করবেন। ১ম লা-মাযহাবী- আরেকটি কথা, আমি ব্যস্ত মানুষতো। অফিস থেকে এসে তারপর পড়াশোনা করতে বসতে হয়। তাই আমার বেশ কিছুদিন দেরী হতে পারে আপনার উত্তর দিতে। আমি- যত ইচ্ছে সময় নিন। আরেকটি কথা জেনে রাখুন, কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের এসব আমলের পূর্ণ দলীল আপনারা উপস্থিত করতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ। এটি আমাদের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। ১ম লামাযহাবী- আচ্ছা, দেখা যাক। একটু কিন্তু দেরী হবে আগেই বলে নিচ্ছি। আমি- জানি দেরী হবে। আপনার দেরী হবে বলার কোন দরকার নেই। যেহেতু দেরীই করবেন, তাহলে নামাযের আবশ্যকীয় আরো কয়েকটি বিষয়ের সমাধানও একটু খুঁজে দেখবেন আশা করি। ১ম লা-মাযহাবী- বলেন। আমি- লিখুন- নামাযের ফরজ কয়টি ও কী কী? ফরজের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। নামাযের সুন্নত কয়টি ও কী কী? সুন্নতের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী? সুনির্দিষ্ট করে কুরআন ও হাদীস জানতে চাই। নামাযের মাকরূহ কয়টি ও কী কী? মাকরূহের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। ১ম লা-মাযহাবী- ব্যস, ব্যস। এতটুকু থাক। ২য় লা-মাযহাবী- আমরা ওনাকে কোন কিছু করার দায়িত্ব দিয়ে যাবো না? শুধু আমরাই নিয়ে যাবো? ১ম লা-মাযহাবী- ওনিতো ওনার দায়িত্ব পালনই করেছেন। ওনার দলীল লিখে দিয়েছেন। এ দুই কিতাবে আছে। আমরা আমাদের আমলের দলীল এখন পেশ করবো। আমি- মাশাআল্লাহ! আপনি ভাল বুঝেছেন। তাহলে পরে একদিন দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। সবাই- জি ইনশাআল্লাহ! আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমার দীর্ঘ সময় নষ্ট করে চলে গেল ভ্রাতারা। বলে গেল আবার আসবে। কিন্তু আমি জানি, ওরা আসবে না। ওরা আসতে পারে না। সত্যের আলোকচ্ছটা বিকির্ণিত হলে আঁধার থাকতে পারে না। সেখানে অন্ধকার ঢুকতে পারে না। যদি পরিবর্তিত হয়, তাহলে আসবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু নিজের অন্ধ মাযহাব আঁকড়ে ধরে থাকলে আসবে না। কারণ তিনি ধাক্কা খেয়েছেন। এতদিনকার গর্বিত মাযহাবটা যে, বড় ঠুনকো তা মুখে স্বীকার না করলেও চেহারার ভঙ্গিমায় তা ঠিকই জানান দিয়েছেন। ভাইয়েরা আবার ফিরে আসুক। সত্য ও ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে। অসত্য, ধোঁকা, মিথ্যাচারের ভাগাড় ছেড়ে আলোকিত হয়ে। আমীন। ছুম্মা আমীন। কিন্তু আজ অনেক দিন হয়ে গেল উক্ত ভাইদের কোন সাড়া শব্দ আমরা আর পাচ্ছি না। কপালে হেদায়াত না থাকলে হয়তো আর কোনদিনও আসবেন না আমাদের কাছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসব কথিত আহলে হাদীস নামধারীদের ধোঁকা থেকে বেঁচে দ্বীনের উপর সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
[মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী] ৬ ই জুন ২০১৪ ঈসাব্দ। শুক্রবার। গ্রামের বাড়ি থেকে এলাম মাত্র। মাথাটা ধরে আছে। মাদরাসায় পরীক্ষা পরদিন। অনেক কাজ বাকি। কাজে যখন ব্যস্ত। ঠিক তখনি হাজির ৫ জন দ্বীনী ভাই। দুইজন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী। আর তিন জন গায়রে মুকাল্লিদ। দ্বীন শিখার নামে ইলম ঝাড়ার মানসিকতা নিয়ে এসেছে বাহাস করতে লা মাযহাবী তিনজন। একজন গুরু। আর দুইজন শিষ্য। সময় নেই। তবু সময় দিলাম। কিন্তু আফসোস! জাহিল যখন নিজেকে জ্ঞানী মনে করতে থাকে, তখন যা হয় তা’ই হল। আমার মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট করে গেল। কিন্তু আসলে কী পেলাম! ওরা কী নিয়ে গেল তা রহস্যই রয়ে গেল। পিতৃ পরিচয়হীন অনাথ শিশুর যেমন কোন মৌলিক পরিচয় থাকে না। থাকে না কোন সুনির্দিষ্ট নাম। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই ঠাঁই খুঁজে নেয়। যাকে তাকে অভিভাবক বানিয়ে বসে। যাকে তাকে পিতার আসনে বসিয়ে আশ্রয় খুঁজে। তেমনি হয়েছে লা-মাযহাবীদের অবস্থা। কখনো বলে, তারা মুহাম্মদী। কথনো বলে রাসূল সাঃ এর মুকাল্লিদ। কখনো বলে আহলে হাদীস। কখনো বলে শুধু মুসলিম। কখনো বলে আহলে হাদীস আন্দোলন কর্মী। কখনো বলে জমিয়তে আহলে হাদীস আন্দোলন কর্মী। কখনো বলে শুব্বানে আহলে হাদীস। কখনো বলে মানে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। বিপদে পড়ে আবার বলে ইজমা মানি। গ্যাঁড়াকলে পড়লে বলতে থাকে কিয়াস ও মানে। কারো অন্ধ অনুসরণের চিত্র ফুটে উঠলে বলে তাকলীদও মানে। তবে একজনের নয় যখন যাকে ইচ্ছে তাকে মানে। যখন যাকে ইচ্ছে খারাপ যাকে ইচ্ছে গলার মালা বানিয়ে নিবে। নিজের মতাদর্শী যে কাউকে যেকোন সময় ভ্রান্ত বলতে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করবে না। একজনকে মেনে মাযহাবীরা শিরক করলেও ওরা যখন তখন যাকে তাকে মানলেও মুশরিক হয় না। এ এক আজব দল! এ লা-মাযহাবী জামাত ভ্রান্ত হবার সবচে’ বড় দলীল হল, তাদের কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নেই। যখনি বলা হবে কুরআন মানেন? বলবেঃ হ্যাঁ মানি। যদি বলা হয়, কুরআনের সব আয়াত মানেন? বলবে সব আয়াত মানা যায় না। যদি বলা হয় বুখারী মানেন? বলবে- মানি। যদি বলা হয়, বুখারীর সব হাদীস মানেন? বলবে না, কিছু হাদীসে সমস্যা আছে। সব মানি না। যদি বলা হয়, আপনাদের বড়দের লেখা এমন কোন কিতাব আছে কি যেটিকে আপনারা নির্ভরযোগ্য মনে করেন? বলবে, না, এমন কোন গ্রন্থ নেই। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, এমন কোন হাদীসের কিতাব কি আছে, যার সব বিষয় আপনারা মানেন? বলবে না, এমন কোন হাদীসের গ্রন্থ নেই। এরকম শিকড়হীন, ব্যক্তিত্বহীন অভিশপ্ত জামাত পৃথিবী কোনদিন দেখেছে কি না? আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। যে মতাদর্শে কেউ দিক্ষীত হলে সে এমন মিথ্যুক ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায় যে, তার কোন কথাই আর দলীলযোগ্য থাকে না। সে যত গ্রন্থই লিখুক না কেন তার গ্রন্থ নির্ভরযোগ্য থাকে না। তাহলে আমরা কেন এ অভিশপ্ত জামাতে শরীক হতে যাবো? যেখানে প্রবেশ করে কোন গ্রন্থ লিখলে আর তা বিশ্বস্ত থাকে না। না গ্রন্থ বিশ্বস্ত থাকে, না ব্যক্তি বিশ্বস্ত থাকে। অথচ বিপরীতে চার মাযহাবে অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে, যাতে মাযহাবের অনুসারীরা হাজার বছর ধরে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে আমল করে আসছে। গায়রে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী এক অতি ধুরন্ধর এক শ্রেণীর বিভ্রান্তিকর দলের নাম। এক অঙ্গে তাদের কতরূপ, কত চাল, কত মতবাদ হতে পারে তা ভূক্তভোগী আশা করি সবাই জানেন। ওরা কখনোই এক স্থানে থাকে না। হুট করে একটিকে বিশ্বস্ত, আবার হুট করেই তা অবিশ্বস্ত সাব্যস্ত করতে দ্বিধা করবে না। আমি অনেক গায়রে মুকাল্লিদ তথা লা-মাযহাবী দেখেছি। কিন্তু কাল দেখলাম ওদের আরেক ঝলক। গিরগিটির মত মানুষও যে মুহুর্তে রং বদলাতে পারে তা লা-মাযহাবীদের না দেখলে কেউ বিশ্বাস করার কথা নয়। গিরগিটির মানুষ্য মুর্তি দেখলাম কাল। কথার ফাঁকে ফাঁকে বুঝতে গেলাম এ ফিরক্বা পুরো দ্বীনকে কতটা খেলনার বস্তু ছেলেখেলা বানিয়ে নিচ্ছে। দ্বীনকে করে তুলছে সন্দিহান। চলুন দেখি লা-মাযহাবীদের এক অঙ্গে বহুরূপের চিত্র।
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০২ পরিচয় পর্ব শেষে..... ✍
পরিচয় পর্ব শেষে জানতে চাইলাম- আপনারা [৩ লা মাযহাবী] কখন থেকে দ্বীন অনুসরণ শুরু করেছেন? ১ম লা মাযহাবী- আমি ২০০৬ থেকে সালাত ইত্যাদি শুরু করি। সেই সাথে ভিডিও দেখে ইন্টারনেট থেকে মাধ্যমে দ্বীন শিখতে শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আমি ভুলের মাঝে আছি। তাই এখন সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে চেষ্টা করি। ২য় লা-মাযহাবী- আমিও শুরু থেকে নামায পড়তাম। তারপর ২য় লা-মাযহাবীর দাওয়াতে এখন সহীহ হাদীস অনুপাতে আমল করি। আমি- আচ্ছা! আপনারা আগের আমল পাল্টালেন কেন? কি সমস্যা তাতে? ১ম লা-মাযহাবী [সেই গুরু এই তিনজনের লা-মাযহাবী কাফেলার] আসলে আমি যখন ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়তে শুরু করি, তারপর বিভিন্ন স্কলারদের ভিডিও দেখতে থাকি, তখন আমার ভুল ভাঙ্গে। আমি বুঝতে থাকি আমি ভুলের উপর আছি। তাই পড়াশোনা করতে শুরু করি। এক মাসআলায় হাদীস দেখি। তারপর দলীলের ভিত্তিতে যে মতটিকে মনে হয় তা শক্তিশালী সেটার ব্যাপারে বর্তমানের বা আগের বড় বড় ব্যক্তিদের মতামত দেখি তারপর সেটির উপর আমল করতে শুরু করি। আমি- আচ্ছা! তাহলে কী দাঁড়াল? প্রথমে আপনি আপনার নিজের জ্ঞান অনুপাতে মাসআলার দলীল খুঁজেন, তারপর যেটিকে শক্তিশালী মনে হয়, সেটির অনুপাতে বড় কারো বক্তব্য আছে কি না? তা দেখেন তারপর সেটিকে আমল করতে শুরু করেন এইতো? ১ম লা-মাযহাবীঃ না, না, আমি আগে সবার দলীল দেখি। তারপর দেখি কার দলীল কেন শক্তিশালী। অন্যের দলীলটি কেন দুর্বল। তারপর যখন দেখি একজনের দলীল আরেকজন খন্ডন করতে পারছে না, তখন সেটিকে গ্রহণ করে তার স্বপক্ষে বড়দের উক্তি দেখে আমল করি। আমি- কথাতো তাই দাঁড়াল, যা আমি বললাম। আমি কি বলেছি বলুনতো? আমিতো বললাম, আপনি দলীল তালাশ করেন। মতভেদকারী উভয়ের দলীল দেখেন। তারপর আপনার গবেষণা অনুপাতে যেটিকে হক মনে হয়েছে সেটিকে হক ধরে এক স্বপক্ষে বড় কারো উক্তি খুঁজে সেটির উপর আমল করতে থাকেন। যার পুরো ভিত্তিটাই আপনার চিন্তা ও গবেষণার পরিধির উপর নির্ভরশীল। তাই না? ১ম লা মাযহাবী- না, না, আমিতো দলীল দেখে নেই। তাই আমার গবেষণার পরিধির উপর নির্ভরশীল থাকছে কিভাবে? আমি- আরে ভাই! আমি কি একথা বলেছি যে, আপনি দলীল দেখেননি? আমি কি বলছি সেটি কেন আপনি শুনছেন না? আমিতো বলছি, আপনি দলীল দেখেন। তারপর সেই দলীলের মাঝে যার দলীল শক্তিশালী মনে হয় সেটি মানেন। আমিতো বলিনি আপনি দলীল দেখেন না। ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ, এভাবে বলেন, দলীলের ভিত্তিতে। শুধু ধারণা বা গবেষণার পরিধি নয়। আমি- আমি একবারও কি বলেছি আপনার গবেষণার পরিধি শুধু? দলীলের ভিত্তিতে আপনি প্রধান্য দেন একথা কি বলিনি? অযথা কথা বলে কেন সময় নষ্ট করেন? আচ্ছা, তাহলে আপনার কথার ফলাফল কী দাঁড়াল? আপনি আপনার ইলমের দৌড় অনুপাতে যেটিকে প্রাধান্য মনে হয়, সেটিকে প্রাধান্য দেন সেই সাথে বর্তমান কোন বড় আলেমের সমর্থন জোড়ে নেন। ১ম লা মাযহাবী- না, না শুধু এমনিতে প্রাধান্য দেই না। দলীল হিসেবে দেই। যেমন আমি আগে মনে করতাম অযু ছাড়া কুরআন ধরা যায়, তারপর যখন দেখলাম এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ একটি চিঠি লিখলেন। যাতে অন্য ভাষায় কুরআন লিখা ছিল। তখন তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন আয়াতাংশ কোন কাফির স্পর্শ না করে, তখন থেকে আমি আমার মতকে পাল্টিয়ে ফেলেছি। এখন বলি অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায় না। তাহলে আমি শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করে বা আমার ইলমের দৌড়ের উপর নির্ভর করে কোন কিছু বলি নাতো। ভুল হলে শুধরে নেই। আমি- ভাইরে! আমি আপনাকে বলছি কি? আপনি যা বলছেন এসব দ্বারা দাঁড়াচ্ছে কি? আপনার ইলমের দৌড় অনুপাতে আপনি আগে বলতে অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায়, তারপর আপনার ইলমের পরিধি বেড়েছে তারপর বলতে লাগলেন অজু ছাড়া কুরআন ধরা যায় না, তাহলে কি হল? আপনি প্রথমত যে মত দিয়েছেন তা ছিল আপনার পড়াশোনার পরিধি অনুপাতে। তারপর যখন পড়াশোনার পরিধি বাড়ল তখন প্রথম মতটি পাল্টে দিলেন তাই না? ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ। আমি- আমিতো আপনাকে একথাটিই বলতে চাচ্ছি যে, আপনি আপনার পড়াশোনা আর গবেষণা অনুপাতে দলীল দেখে একটিকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু আপনি মুখে তা বলে আবার এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন বুঝতি পারছি নাতো? কারণ কি? আপনি যেটা বলছেন, যেভাবে আমল করছেন বলে আপনি নিজেই বলছেন, সেটির খুলাসা বলতে আপনার দ্বিধা হচ্ছে কেন? আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই স্থানে আসার মানে কি?
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৩ পড়াশোনার পরিধি অনুপাতে যখন যেটা মনে হয় সেটাকে প্রাধান্য দেয়া..... ✍
এবার ২য় লা-মাযহাবী কথা বলে উঠল। এ লোক পুরো মজলিসে শুধু অযথা কমেন্ট এবং দৃষ্টি ঘুরানো ও অহেতুক আলাপে সময় নষ্ট করার পিছনে ব্যয় করেছে। তার গুরু তথা ১ম লা মাযহাবী যেখানে ধরা খেয়ে যাচ্ছে দেখে সেখানেই সে অন্য প্রসঙ্গ টানার চেষ্টা করে বেড়িয়েছে, কিংবা নিজেই হাল ধরা ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। ২য় লা-মাযহাবিটি বলতে লাগল- ”আমরাতো কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করে থাকি। তিনি যাচাই বাছাই করে যেটিকে শক্তিশালী দলীল হিসেবে পেয়েছেন সেটিকে মানছেন। আমিও তাই করি।” অনেক রাগ হচ্ছিল আমার। এরা আসলে চায় কি? কথা বুঝে না? নাকি ন্যাকামি করে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে? এ কোন ফিরক্বা হে? একই কথা বারবার বলছে। আবার আমি যখন বলে দিচ্ছি, তখন সেই কথাই বলছে কিন্তু আবার নতুন করে কথা জোড়ার অপচেষ্টা করছে। বহুকষ্টে মনকে শান্ত করে বললাম- “আরে ভাই! আপনাদের কথারতো আমি কোন মাথামুন্ডু বুঝতে পারছি না। আপনারা বারবার একই কথা কেন বলছেন? আপনারা যে কথা বলছেন আমিতো সেই কথারই সারমর্ম বলছি। আপনি দলীলের ভিত্তিতে একটিকে প্রাধান্য দেন। আমিতো একথা অস্বিকার করিনি। কিন্তু সেই প্রাধান্যটা দিয়ে থাকেন আপনার পড়াশোনা অনুপাতে সেটি কেন মানছেন না? অথচ একথাই আপনি বলছেন বারবার। আপনি নিজেই বললেন, অজু ছাড়া কুরআন ধরা জায়েজ মনে করতে দলীলের ভিত্তিতে। তারপর আরেক দলীল পেয়ে পূর্বের কথা ছেড়ে দিয়েছেন। তাহলে কি দাঁড়াল? আপনি দলীল যা পান সে হিসেবে একটিকে প্রাধান্য দেন। তারপর ভিন্ন দলীল পেলে তা বর্জন করেন। সেই হিসেবে কোন মত প্রাধান্য দেয়ার আপনার উসুল হল, আপনার পড়াশোনার পরিধি আর দলীল সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের পরিধি এইতো? ১ম লা-মাযহাবী- না, আমি সব দলীল দেখে তারপর একটিকে দলীল হিসেবে প্রধান্য দেই। অল্প কিছু না। আমি- সব দলীল দেখতে পারলে আপনি এক সময় একটি তারপর আরেকটি মত কেন পোষণ করছেন? ১ম লা-মাযহাবী- আসলে আমিতো সবার দলীল দেখি ফাতওয়াগুলোতে তাতে সব দলীলই থাকে। তাই সেখান থেকে যেটার ক্ষেত্রে দলীল শক্তিশালী দেখি সেটিকে মানি। আমি- আপনি যে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছেন সেটির প্রমাণ হল, সহজ কথাকে বারবার ঘুরানোর চেষ্টা করছেন। আর যা বলছেন তাই মানছেন না। নিজেই বলছেন সব দলীল দেখেন, আবার নিজেই আগে বললেন এক সময় একটি মানতেন, তারপর আরেক দলীল দেখে পাল্টে গেলেন। তাহলে সব দলীল দেখলেন কোথায়? আরেকটি বিষয়, আপনিতো মাযহাবের মাসআলাগুলোর ক্ষেত্রে দলীল দেখে দলীল হিসেবে একটি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আপনি হানাফী ফিক্বহের কয়টি কিতাবের নাম জানেন? কয়টি কিতাব থেকে আপনি দলীল যাচাই করেন? ১ম লা-মাযহাবী- আমিতো আরবদের ফাতওয়া দেখি। তাতে সব দলীলই থাকে। সেখান থেকে দেখে, ভিডিও দেখে, ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর প্রাধান্য দেই। আমি- তাহলে আপনার কোন বক্তব্যকে প্রাধান্য দেয়ার ভিত্তি হল, বর্তমান ফেতনার যুগের অনির্ভযোগ্য আরব শায়েখদের ফাতওয়া, নেটে থাকা অনির্ভযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের ভিডিও ইত্যাদি তাই না? ১ম লা-মাযহাবী- কেন? তারাতো দলীল ভিত্তিক কথা বলেন। সেসব যাচাই করে মানি। আমি বুঝে গেলাম। এ খুব ঘাগু। একে বুঝানো সম্ভব নয়। নিজের কথার ঘুরপাকেই বারবার ঘুরে ঘুরে বিভ্রান্তির জাল ছড়াতে চাচ্ছে। আমি তাই আমার কাছে থাকা বুখারীর একটি আরবী নুসখা তার সামনে পেশ করে বললাম- দেখুনতো এটি কি কিতাব? ১ম লা-মাযহাবী- এসব দেখবো কেন? এসব দেখার দরকার কি? আমি- আপনি মুজতাহিদদের দলীল যাচাই করে থাকেন। দলীল শক্তিশালী হলে মানেন, নতুবা বাতিল করে দেন। তাহলে আপনাকে দলীল সাব্যস্ত করতে হলে হাদীস দেখতে হয় না। হাদীসে আসলে কি আছে তা জানতে হয় না? তো আপনি বুখারীর প্রথম পৃষ্ঠাটি একটু ইবারত পড়ে অনুবাদ করুনতো। একথা শুনে একসাথে জ্বলে উঠল উভয় লা-মাযহাবী। বলতে লাগল- এসব দেখতে হবে কেন? আমরা অনুবাদ দেখি। আমি বললাম ২য় লা মাযহাবীকে- আপনি আরবী পড়তে জানেন? ২য় লা মাযহাবী- পারি। তবে অর্থ জানি না। ১ম লা মাযহাবী বলল- আমিও পারি না। আমি- আপনি আরবীই পড়তে জানেন না। মানে হল মূল হাদীসে কি আছে তা আপনি জানেনই না, সেখানে মুজতাহিদদের কথাকে যাচাই করে চলেন হাদীসের সহীহ জঈফ ইত্যাদি দেখে এমন উদ্ভট কথাতো জীবনেও শুনিনি। আপনি কি করে বুঝেন অনুবাদটি সঠিক। অনুবাদতো ভুলও হতে পারে। আচ্ছা আপনি একটু বুখারীর প্রথম পৃষ্ঠাটি অনুবাদ করে শুনানতো। বুঝে নেই আপনি কি অনুবাদ বুঝে মুজতাহিদদের দলীলকে যাচাই করেন। ১ম লা মাযহাবী- দেখুন! আমরা অন্ধ অনুসারী নই। এখন অনুবাদ জানা খুবই সোজা। আমি একাধিক অনুবাদ দেখি। আর একাধিক অনুবাদ দেখে যে কেউ বুঝে যাবে আসল অনুবাদটি কি হবে? তাই ভুল অনুবাদ করে কেউ পাড় পাবে না। একাধিক অনুবাদ দেখে অনুমান করা যায়, এখানে কোন অনুবাদটি সঠিক। আমি- আচ্ছা। তাহলে আপনি কুরআন ও হাদীস একাধিক অনুবাদ দেখে একটি অনুবাদকে নিজের বুঝ অনুপাতে কিয়াস করে ঠিক করে আমল করে থাকেন। তাহলেতো আপনার মতবাদ কাইয়্যাস তথা কিয়াস নির্ভর হয়ে গেল কুরআন ও হাদীসের দলীল নির্ভর রইল কোথায়? পুরাইতো কিয়াস নির্ভর।
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৪ হাদীসের বিপরীত হযরত উমর রাঃ এর কথার কি দাম আছে? (নাউযুবিল্লাহ)..... ✍
এবার নুতন জিগির তুলল ১ম লা মাযহাবীটি। বলতে লাগল, দেখুন আমরা এভাবে কথা বলতে থাকলে কোন সমাধানে যেতে পারবো না। তাই আসুন আমরা সুনির্দিষ্ট একটি মাসআলা নিয়ে কথা বলি। আমি বললাম-“ আপনিতো কুরআন ও হাদীসই মূল কিতাব দেখে বুঝেন না। আপনি কি আলোচনা করবেন? আপনার পুরো ভিত্তিতিই আরেকজনের অনুবাদের উপর অন্ধ তাকলীদ। আচ্ছা, বলুন, আপনার কাছে দলীল কয়টি?” ১ম লা-মাযহাবী- আপনার কাছে দলীল কয়টি? আমি- আমার কাছে দলীল চারটি। যথা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। আর আপনার কাছে? ১ম লা-মাযহাবী- আমার কাছেও দলীল চারটি। কুরআন হাদীস ও ইজমা-কিয়াস। তবে যে ইজমা কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি- যে ইজমা ও কিয়াস কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হবে তা যে গ্রহণযোগ্য নয় একথা বলার কোন প্রয়োজন নেই, যে ইজমা কিয়াস সম্পর্কে জানে সেই একথা জানে। যাইহোক, মজার কথা বললেন, তাহলে আপনি ইজমাও কিয়াসও মানেন? ১ম লা-মাযহাবী- কুরআন ও হাদীসের খেলাফ হলে মানি না। আমি- আরে ভাই! আপনার মনে হয়, এক কথা বারবার বলার বদভ্যাস আছে নাকি? আমিতো স্পষ্ট বলেই দিলাম, কুরআন ও হাদীসের খেলাফ যে ইজমা ও কিয়াস হয়, সেটিকে আসলে শরয়ী ইজমা ও কিয়াস বলেই না। তাই এটি বারবার বলার কোন দরকারই নেই। আচ্ছা, আপনি ইজমা ও কিয়াস মানলে বলুনতো বিশ রাকাত তারাবীহের ক্ষেত্রে কি হুকুম? এটিতো সাহাবায়ে কেরামের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। হযরত উমর রাঃ এর আমল থেকে চলে আসছে, যা আজো বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে পড়া হচ্ছে। ২য় লা-মাযহাবী এবার মুখ খুলল। আগেই বলেছি এই লোক পুরো সময়টিতে যা কথা বলেছে, তা পুরোটাই অযথা কথন। কোন দলীল নেই। কোন যৌক্তিকতা নেই। শুধুই কথা বলার মানসিকতা। আর ১ম লা মাযহাবী যাকে সে নিজের গুরু বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই গুরু যখন কথায় আটকে যেতে দেখে তখনি কথা বলে উঠে। অহেতুক সব কথার ফুলঝুরি দিয়ে কথার মোড় ঘুরাতে অপচেষ্টা করে থাকে। এবার বলতে লাগল- বিশ রাকাত তারাবীহের ব্যাপারে ইজমা হয়েছে একথা কোথায় আছে? একথা কোথায় নেই। কুরআন ও হাদীসের বিপরীত উমর রাঃ এর কথার কোন ধর্তব্যতা থাকে? ১ম লা মাযহাবীকে উদ্দেশ্য করে বললাম- আপনি বলুনতো, কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথাও আট রাকাতের তারাবীহের কথা আছে? ১ম লা মাযহাবী- আসলে আমি তারাবীহ বলতে নারাজ। এটি আসলে কিয়াম। যার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। যত ইচ্ছে পড়া যায়। রাসূল সাঃ দুই দুই রাকাত করে পড়তেন। তাই আট রাকাত বিশ রাকাত বলা ঠিক না। আমি- কুরআন ও হাদীস মূল উৎস থেকে না বুঝেও অনুবাদের অনুমানের উপর নির্ভর করে আপনিও তাহলে শরয়ী বিষয়ের সমাধান দিতে জানেন। যাইহোক, তাহলে আপনি যে বললেন, ইজমা গ্রহণযোগ্য। সেই হিসেবে বিশ রাকাত তারাবীহ যে হযরত উমর রাঃ চালু করলেন। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৪২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/১৭৬} কোন সাহাবী এর প্রতিবাদ করেননি। আজো তা বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নবুবীতে চলছে। তা কি ইজমা হয়নি? ২য় লা-মাযহাবী- ইজমা যে হয়েছে এর কোন দলীল আছে। হয়তো কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছেন। আর হাদীসের বিপরীত হযরত উমর রাঃ এর কথার কি দাম আছে? আমি বললাম- সেই প্রতিবাদটা কে করেছেন? নামটি বলুনতো। আর আপনার ভাষায় হযরত উমর রাঃ রাসূল সাঃ এর সুন্নতের খেলাফ একটি বিদআতি পদ্ধতি চালু করেছেন। আর তখনকার সাহাবা জমানা থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে সেই বিদআত চালু আছে? ১ম লা-মাযহাবী- আসলে যেহেতু আপনি যেমন বলছেন বিশ রাকাত তারাবীহ সাহাবাগণের ইজমা দ্বারা প্রমানিত। তাই আমাদের কথা হচ্ছে, বিশ রাকাত পড়া উত্তম। আর আট রাকাত পড়া জায়েজ। আমি- জায়েজ মানে জানেনতো? ১ম লা-মাযহাবী- এ ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কেরাম যা বলেছেন তাই হবে। আমি – ফুক্বাহায়ে কেরামতো লিখেছেন- জায়েজ হল এমন বিষয়, যা করলে সওয়াব নেই, না করলে গোনাহ নেই। তাহলে আপনার বক্তব্য অনুপাতে আট রাকাত পড়লে সওয়াব নেই, না পড়লে গোনাহ নেই? ১ম লা-মাযহাবী- না, না বিষয়টি এমন না। আসলে বিশ রাকাত পড়াই উত্তম। যেহেতু সাহাবাগণ বিশ রাকাত পড়ে আসছেন। আমি এবার ২য় লা-মাযহাবীর দিকে ফিরলাম। আপনার কি মনে হয়? ২য় লা-মাযহাবটি কট্টর হওয়ার সাথে সাথে বেশ বেআদব বলেও মনে হয়েছে আমার কাছে। একজন লা-মাযহাবী লা-মাযহাবী হওয়ার জন্য প্রাথমিক যেসব বদগুণ থাকা দরকার তার মাঝে বেদআদবী এবং অহংকার হল প্রধানতম বদগুণ। যা গায়রে মুকাল্লিদ মাত্র সবার মাঝেই বিদ্যমান। এ দু’টি বদগুণ না থাকলে এ ভ্রান্ত মাযহাবের অন্তর্ভূক্তি পূর্ণতা পায় না। যাইহোক, ১ম লা-মাযহাবী বিশ রাকাত তারাবীহকে উত্তম বললেও ২য় লা মাযহাবী তা মানতে নারাজ। তিনি হযরত উমর রাঃ বিদআতি আমল জারি করেছেন মর্মে বলতেও পারছে না। আবার ইজমা হয়নি তাও প্রকাশ করতে পারছে না। আবার আট রাকাতের ভুতটি মাথা থেকে নামাতেও পারছে না। এ ত্রিশঙ্কু হালাতে শুধু আস্তে আস্তে খিস্তি আউড়াতে শুনলাম। আমি এবার ১ম লা-মাযহাবীর দিকে মনোনিবেশ করলাম- তাহলে বিশ রাকাত তারাবীহ যারা পড়ে তারা উত্তম কাজ করে থাকে। সামনের রমজানে আপনারা বিশ রাকাত তারাবী পড়ে সেই উত্তম কাজটি করবেন? নাকি আপনার ভাষায় যা করলে সওয়াব নেই আবার না করলে গোনাহ নেই এমন আট রাকাত তারাবীহ পড়বেন?
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৫ প্রসংগ পরিবর্তন..... ✍
১ম লা-মাযহাবী- উত্তম কাজইতো করা উচিত হবে। আমরা আসলে এভাবে কথা না বলে চলুন। সুনির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে কথা বলি। রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলি। এই বিষয়টি পরিস্কার হলে আস্তে আস্তে আস্তে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আমি- আচ্ছা, ভাল কথা। চলুন একটি মাসআলা নিয়েই কথা বলি। আপনি আগে এক ধরণের নামায পড়তেন বলেছেন। আর এখন ভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়ে থাকেন তাও বলেছেন। তো আমাকে পরিস্কার করুন কিছুক্ষণ পর আমরা আসরের নামায পড়বো। আর আসরের নামায যেহেতু চার রাকাত। সেই হিসেবে এই চার রাকাতের কত স্থানে আপনি রফয়ে ইয়াদাইন করবেন? ১ম লা-মাযহাবী- এইতো, তাকবীরে তাহরীমার সময়। তারপর রুকুতে যেতে আসতে। আর তৃতীয় রাকাতের শুরুতে। আমি- তাহলে আপনি চার রাকাত নামাযে মোট ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করেন তাই না? ২য় লা-মাযহাবী- আপনি পেঁচাইতাছেন কেন? ওনিতো পরিস্কার করেই বলল। [বেশ রেগে গিয়ে কথাগুলো বললেন ২য় লা-মাযহাবিটি] আমি- আপনি ক্ষেপতেছেন কেন? আমিতো পেঁচাচ্ছি না। বরং ১ম লা-মাযহাবিটি ভাইয়ের বলা বক্তব্যটি পরিস্কার হচ্ছি। আচ্ছা, তো আপনার বক্তব্য অনুপাতে আপনি আসরের চার রাকাত নামাযে ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকেন। আর বাকি ১৮ স্থানে করেন না। মানে দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতের শুরুতে এবং চার রাকাতের আট সেজদায়ে গমণ এবং উঠতে। এই ১৮ স্থানে আপনারা কখনোই রফয়ে ইয়াদাইন করেন না তাই না? ১ম লা-মাযহাবী- আমতা আমতা করে বললেন- হ্যাঁ, ঠিক আছে। কিন্তু আপনি সেজদার সময়ের রফয়ে ইয়াদাইনের কথা কেন বলছেন? এটিতো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আমি- তাই নাকি? আপনি মনে হয় সুনানে নাসায়ী উঠিয়ে কখনোই দেখেননি। সেখানে পরিস্কার ভাষায় সেজদায় গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ আছে। যা সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন আপনাদের কাছে মান্যবর শায়েখ আলবানী রহঃ। ১ম লা-মাযহাবী- সেই হাদীস জঈফ। আলবানী বললেই তা সহীহ হয়ে যায় না। তিনি তার কিতাবে অনেক হাদীসকে সহীহ বলেছেন অথচ তা সহীহ নয়। আমি- আচ্ছা, এই তাহলে আলবানী সাহেবের অবস্থা। তাহলেতো আলবানী রহঃ এর সহীহ জঈফ বলার কথা উল্লেখ করাই বেকার। এরকম অবিশ্বস্ত ব্যক্তির কথা না বলাই ভালো। আচ্ছা, আপনিতো বলছেন সেই হাদীস জঈফ। ঠিক আছে। কি কারণে জঈফ আর কে সেই জঈফ বলেছে সেটি একটু বলতে পারবেন? আল্লাহ বা রাসূল সাঃ জঈফ বলেছেন? না কোন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন? ১ম লা-মাযহাবী- দেখুন আমরা উসুলে হাদীসের সব বিষয় নিয়ে কথা বললে আসলে কোন ফায়দা হবে না। আমাদের উচিত একটি বিষয়ে ঠিক থাকা। সেটি হল এখানে রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইন। আমি- আলোচ্য বিষয় কিন্তু আপনিই নির্ধারণ করেছেন। সেটি ছিল রফয়ে ইয়াদাইন। রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইন একথা কিন্তু বলা হয়নি। আর রুকুতে আসতে যেতে রফয়ে ইয়াদাইনের আলোচনা হলে সেজদাতে আসতে যাওয়ার রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলতে আপনার বাঁধতে কেন? ফাঁদে পড়ে এবার ক্ষিপ্ত হল ২য় লা-মাযহাবী। বলতে লাগল- “অধিকাংশ মুহাদ্দিসরা সেজদার ক্ষেত্রে রফয়ে ইয়াদাইনকে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমরাও ছেড়ে দেই।” আকুল দরিয়ায় যেন খড়কোটা খুঁজে পেল ১ম লা-মাযহাবী। ২য় লা-মাযহাবীর সাথে সুর মিলিয়ে সেও বলতে লাগল- হ্যাঁ, হ্যাঁ, অধিকাংশ ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসরা তা ছেড়ে দিয়েছে। তাই আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আমি- “অধিকাংশ ব্যক্তি কোন সুন্নত ছেড়ে দিলে আপনারাও সুন্নত ছেড়ে দিবেন। এই আপনাদের মূলনীতি? অথচ আপনারাই সারাদিন বলে বেড়ান وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ (116 অর্থাৎ যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে। {সূরা আন’আম-১১৬} তাহলে আপনারা অধিকাংশের কথার উপর নির্ভর করে এ সুন্নত ছেড়ে দিয়ে কুরআনের ভাষায় কি কাজ করছেন ভেবে দেখেছেন?”
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৬ সহীহ জঈফ বলার পদ্ধতি.....✍
প্রচন্ড ধুর্ত ১ম লা-মাযহাবী ভাইটি এবার প্রসঙ্গ পরিবর্তনে মত্ত হলেন। যা গায়রে মুকাল্লিদীনদের পুরাতন অভ্যাস। হুট করে প্রশ্ন করে বসল-“আপনারা কিভাবে সহীহ জঈফ নির্ধারণ করেন?” আমি বুঝে গেলাম। কিয়ামত আসলেও সেজদার সময়ের রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক সঠিক জবাব পৃথিবীর সমস্ত গায়রে মুকাল্লিদ মিলিয়েও দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। তাই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে পালাতে চাচ্ছে এ বিষয় থেকে। আমিও সুযোগ দিলাম। নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য বললাম- “আমাদের অবস্থা পরিস্কার ও খুব সহজ। আমরা যখন কোন বিপরীতমুখী হাদীস দেখি। তখন তাকিয়ে দেখি হাদীসটি সহীহ জঈফ নাকি অন্য কিছু সে ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন কিছু বলেননি। আর মুহাদ্দিসীনদের মাঝে সহীহ এর সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর মতবিরোধ। ইমাম বুখারীর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে ইমাম মুসলিম রহঃ এর সহীহ এর মিল নেই। অনেক হাদীস ইমাম মুসলিমের কাছে সহীহ। কিন্তু বুখারীর কাছে সহীহ নয়। কারণ দুইজনের সহীহ এর সংজ্ঞা ভিন্ন। আবার ইমাম তিরমিজীর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে অন্যের মিল নেই। মিল নেই ইবনে হিব্বান ও ইবনে খুজাইমা রহঃ এর সহীহ এর সংজ্ঞার সাথে অন্য কারো। এই এক সহীহ শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর মতভেদ। আমি কার কথা মেনে কোন হাদীসকে সহীহ বলবো? কার সহীহ এর সংজ্ঞা সঠিক? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট বক্তব্য না আল্লাহ তাআলা থেকে আছে না রাসূল সাঃ থেকে আছে। এই দ্বিধান্বিত হালাতে আমি যখন রাসূল সাঃ এর হাদীসের দিকে তাকাই তখন দেখি আল্লাহর নবী সাঃ কয়েকটি জমানাকে শ্রেষ্ঠতম তথা অনুসরণীয় সাব্যস্ত করে গেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِينَ يَلُونِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، তথা শ্রেষ্ঠ উম্মত হল যারা আমার নিকটবর্তী তথা সাহাবাগণ। তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী তথা তাবেয়ীগণ। তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী তথা তাবে তাবেয়ীগণ। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৩৩} যেহেতু সহীহ জঈফের সংজ্ঞা নিয়ে এমন সময়কারের ব্যক্তিগণ মতভেদ করছেন যাদের জমানার শ্রেষ্ঠত্ব ও অনুসরণীয় হওয়ার কোন সার্টিফিকেট আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে নেই। তাই আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কর্তৃক অননোমোদিত কারো কথায় কোন হাদীসকে সহীহ জঈফ বলাকে আমরা নিরাপদ মনে করি না। এ কারণে আমরা ফিরে গেছি সেই জমানার মুহাদ্দিসও মুজতাহিদের দিকে। যিনি রাসূল সাঃ এর বক্তব্য দ্বারা অনুসরণীয় শ্রেষ্ঠ জমানার ব্যক্তিত্ব। রাসূল সাঃ যে জমানাকে শ্রেষ্ঠ জমানা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যে জমানার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সেই শ্রেষ্ট জমানার পৃথিবী বিখ্যাত গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফক্বীহগণের দিকে। তারা যেটিকে সহীহ বলেছেন আমরা সেটিকে সহীহ বলি। তারা যেটিকে জঈফ সাব্যস্ত করেছেন আমরা সেটিকে জঈফ সাব্যস্ত করি। আর আর সহীহ জঈফ পরিভাষা যেহেতু অনেক পরের সৃষ্টি। যা ৫০০ শতাব্দীর আগে কেউ ব্যবহারই করতো না। আর শব্দ যেহেতু মাকসাদই নয়, তাই আমরা যে হাদীসের উপর চার ইমামের ফক্বীহগণ একমত পোষণ করে আমলী বলে সাব্যস্ত করেছন আমরা সে হাদীসকে সর্বসম্মত সহীহ বলে বিশ্বাস করি। আর যে হাদীস নিয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে মতভেদ হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আমরা উক্ত হাদীসের সহীহ নিয়ে মতভেদ আছে বলে বিশ্বাস করি। আর হাদীসের সহীহ নিয়ে মতভেদ আছে সময়কার আমরা প্রাধান্য দেই আমাদের ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর প্রাধান্য দেয়া মতটিকে। তিনি যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে মাসআলা বলেছেন সেটিকে সহীহ বিশ্বাস করি। আর যে হাদীসকে ছেড়ে দিয়েছেন সেটিকে মারজূহ তথা অপ্রাধান্য পাওয়া হাদীস বলে মেনে নেই। আরো পরিস্কার করে বলছি, কোন হাদীস সহীহ কোন হাদীস জঈফ? তা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ বলে যাননি। তাই আমরা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর শ্রেষ্ঠত্বের সার্টিফিকেট দেয়া জমানার ব্যক্তিদের কথায় হাদীস সহীহ জঈফ মানি। রাসূল সাঃ এর বলা ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের কথায় হাদীসকে সহীহ জঈফ বলে সর্বক্ষেত্রে আমল করাকে নিরাপদ মনে করি না। আরেকটি বিষয়, ইমাম ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর ইন্তেকালের ৪৪ বছর পর জন্ম লাভ করেছে ইমাম বুখারী রহঃ। ইমাম মুসলিম রহঃ এর জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৪ বছর পর। ইমাম তিরমিজী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬০ বছর পর। ইমাম আবু দাউদ রহঃ জন্ম লাভ করেছেন ৫২ বছর পর। ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৯ বছর পর। ইমাম নাসায়ী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬৫ বছর পর। সুতরাং যে হাদীস রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে সহীহ। আর সহীহ না হয়ে উপায়ও নেই, তিনি নিজে তাবেয়ী হলে পরবর্তীই সাহাবী। আর কোন সূত্রই নেই। আর যদি তাবে তাবেয়ী ধরি, তাহলে মাঝখানে হল শুধু তাবেয়ী। আর এরা সবাই শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব। সুতরাং হাদীস জাল ও জঈফ হবার কোন সুযোগই নেই। কিন্তু ঐ হাদীসটিই ৪৪ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম বুখারী, ৫৪ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম মুসলিম, ৬০ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম তিরমিজী, ৫২ বছর পর জন্ম নেয়া আবু দাউদ, ৫৯ বছর পর জন্ম নেয়া ইবনে মাজাহ এবং ৬৫ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম নাসায়ীর জমানার সময় জঈফ এবং জালও হয়ে যেতে পারে। কারণ, আমরা জানি হাদীস জঈফ ও জাল হবার একটি মৌলিক কারণ হল, রাবী জঈফ বা মিথ্যুক হওয়া। এ কারণে শ্রেষ্ঠ যুগের মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস যে হাদীসকে আমলযোগ্য সাব্যস্ত করে ফেলেছেন সেটিকে আমরা সহীহ বিশ্বাস করাকে নিরাপদ মনে করি ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের সহীহ বলা কথার উপর আমল করার চেয়ে। তাহলে আমাদের সহীহ জঈফের সারমর্ম দাঁড়াচ্ছে। আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ জঈফ না বলায় আমরা বাধ্য হয়ে নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদের হাদীসের উপর আমলকরণ ও আমল বর্জনের আলোকে হাদীসকে সহীহ ও জঈফ সাব্যস্ত করি। ফিতনার যুগের কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্যের আলোকে সকল মাসআলার সমাধানে হাদীসকে সহীহ জঈফ বলাকে নিরাপদ পন্থা বলে মনে করি না। যেহেতু তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কোন নির্ভরযোগ্যতার সার্টিফিকেট নেই। এই হল, আমাদের সহীহ জঈফ বলার পদ্ধতি।” এবার গজগজ করে উঠল উভয় লা মাযহাবী একসাথে..................
✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৭ অন্ধ তাকলীদ কাকে বলে?..... ✍ এবার গজগজ করে উঠল উভয় লা মাযহাবী একসাথে। বলতে লাগল। একজনকে মানার নির্দেশ কে দিয়েছে? ইমাম আবু হানীফা রহঃ সব সঠিক বলেছেন একথা কে বলেছে? ইমাম আবু হানীফাতো নিজেই বলেছেন তার কথা যাচাই করে মানতে।” দুই লা মাযহাবী একই সাথে শুধু বলতেই আছে, বলতেই আছে। থামার কোন লক্ষণ নেই। ২য় লা মাযহাবীটি বলার সাথে সাথে বেশ রাগও দেখাল। আস্তে আস্তে কি গালি দিল কি না? তা বুঝতে পারিনি। তবে মুখ নড়ছিল খুব। থামানোর চেষ্টা করলাম। অনেক বলার পর থামল দু’জন। বললাম, “আরে ভাই! পয়েন্টওয়ারী কথা বলুন। এভাবে শুধু বলতেই থাকলে কিভাবে আলোচনা ফলপ্রসু হবে? আপনাদের অভিযোগ অনেক একেকটি করে আলোচনা করুন। এভাবে কলকলিয়ে উঠলেতো কথা চলতে পারবে না। আমার পূর্বে বলা বিষয়টি বুঝলে আসলে আপনারা এসব প্রশ্ন করতেন না। আমি কিন্তু বলিনি। শুধু আবু হানীফা রহঃ কেই মানতে হবে। আমি প্রথমত বলেছি শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদকে মানতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হল আমরা ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে প্রাধান্য দেই তিনি সবার আগের। তাঁর এবং হাদীসের মূল রাবীর মাঝের দূরত্ব একদম নেই বললেই চলে। আর হাদীসের সহীহ জঈফের বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূল সাঃ সুনির্দিষ্ট করে যাননি। তাই হাদীসের মুল রাবীর নিকটবর্তী এবং রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্বের কথাকে প্রধান্য দেই হাদীসের সহীহ জঈফ বিষয়ে মতভেদপূর্ণ হালাতে। মতভেদহীন হালাতে অন্যরাও প্রাধান্য পায়। কিন্তু মতভেদপূর্ণ হালাতে যেহেতু কাউকে নির্দিষ্ট করে মানার নির্দেশ নেই। একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে মানার কুরআন ও হাদীসের কোন দলীল বিদ্যমান নেই। তাই রাবীর নিকটবর্তী এবং পৃথিবী বিখ্যাত ও স্বীকৃতি মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর সহীহ সাব্যস্ত করণকে সহীহ সাব্যস্ত করি। আর যেটিকে তিনি বাদ দিয়েছেন সেটিকে জঈফ বা এক্ষেত্রে আমলহীন সাব্যস্ত করে থাকি। তাহলে আপনারা যে কাজটি করছে ফেতনার যুগের মুহাদ্দিস দিয়ে, আমি সেকাজটিই করছি শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তি দিয়ে। তথা আপনারা হাদীস সহীহ জঈফ বলছেন ফেতনার যুগের বক্তব্যের আলোকে আর আমরা হাদীস সহীহ জঈফ বলছি শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস সেই সাথে মুজতাহিদের বক্তব্যের আলোকে। এই হল আপনাদের আর আমাদের সহীহ জঈফ বলার মাঝে মূল পার্থক্য।” ১ম লা-মাযহাবী- ইমাম আবু হানীফাতো তার কথা দলীল ছাড়া মানতে নিষেধ করেছেন। তো? আমি- কাকে নিষেধ করেছেন? আপনার আমার মত মুর্খকে? না মুজতাহিদ ইমাম আবু ইউসুফকে? ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উক্ত বক্তব্যটি কাকে উদ্দেশ্য করে বলা? ১ম লা মাযহাবী- আবু ইউসুফকে। কিন্তু…….. ২য় লা-মাযহাবী- “অন্ধ তাকলীদ। একেই বলে অন্ধ তাকলীদ। আপনারাতো অন্ধ তাকলীদ করছেন।” বেশ তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন তিনি। ১ম লা মাযহাবী- হ্যাঁ, ঠিকই অন্ধ তাকলীদ। অন্ধের মত তাকলীদ করা। আমি- “একটু থামেন না ভাই। কথা শুধু বলেই যাচ্ছেন।” দ্বিতীয় লা মাযহাবীকে উদ্দেশ্য করে বললাম- অন্ধ তাকলীদ কাকে বলে বলুনতো।” ২য় লা-মাযহাবী- এটা আবার কে না জানে। কারো কথা অন্ধভাবে মেনে নেয়াকে অন্ধ তাকলীদ বলে। আমি- আপনার ভুলটাতো এখানেই। আপনি অন্ধ তাকলীদ বলে চিল্লাচ্ছেন কিন্তু অন্ধ তাকলীদ কি জিনিস তা জানলেন না। অন্ধ তাকলীদ হচ্ছে, অন্ধ অন্ধের পিছনে ছোটা। এক অন্ধ আরেক অন্ধের পিছনে ছোটার নাম অন্ধ তাকলীদ। ২য় লা-মাযহাবী- অন্ধ মানে কি? চোখ নষ্ট? আমি- আপনি যে আমাকে অন্ধ তাকলীদ করি বলছিলেন এর দ্বারা কি আপনি আমার চোখ নষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন? ২য় লা-মাযহাবী- অন্ধ তাকলীদ বিষয়টি বুঝিয়ে কনতো! আমি- “যেমন ধরুন আপনি একটি অন্ধ চোখে দেখেন না। আমি আরেক অন্ধ। এখন আমাদের রাস্তা পাড় হতে হবে। আমি অন্ধ আপনি অন্ধের কাছে গিয়ে বললাম আমাকে রাস্তা পাড় করে দিন। আপনি নিজেই চোখে দেখেন না, আমাকে কি রাস্তা পাড় করে দিবেন? এই হল, অন্ধ তাকলীদ। মানে অন্ধের পিছনে অন্ধ ছোটা। যেমন বর্তমানে আপনারা যারা কুরআন ও হাদীস দেখে পড়তেই জানেন না, তারা আবার একজন আরেকজনকে গুরু বানিয়ে তার কথা অনুপাতে কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবি করে আলেম উলামাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে চলে আসেন। এরকম এক জাহিল আরেক জাহিলকে গুরু মেনে পথ চলার নাম অন্ধ তাকলীদ। একজন চক্ষুসমান ব্যক্তিকে এক অন্ধ অনুসরণ করলে সেটিকে অন্ধ অনুসরণ বলে না। যেমন একজন জ্ঞানী মুজতাহিদকে জাহিল ব্যক্তি যদি অনুসরণ করে তাকেও অন্ধ তাকলীদ বলবে না। এতো জ্ঞানীর পিছনে জাহিলের অনুসরণ। জাহিলের পিছনে জাহিলের অনুসরণ নয়। জাহিলের পিছনে জাহিলের অনুসরণের নাম অন্ধ তাকলীদ। এবার বলুন আমরা অন্ধ তাকলীদ করি? না আপনারা?” ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৮ঃ ফিক্বহে হানাফী কি আবু হানীফা রহ. এর সংকলিত নয়? ✍ ১ম লা মাযহাবী ভাইটি অনেক চালাক। তিনি কোথাও আটকে গেলে কিভাবে সেখান থেকে জান ছাড়াতে হয় তা ভাল করেই রপ্ত করেছেন। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এবার নতুন সূর উঠালেন। বলতে লাগলেন- ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ করার কথা আপনি বলছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহ বলে যা প্রচলিত। তাতো তার সংকলিত নয়। আর তিনি কি কোন কিছু লিখিয়ে গেছেন? যা কিছু নিসবত করা হয় এরতো কোন সনদই ইমাম আবু হানীফা পর্যন্ত নেই। তাই হানাফী ফিক্বহের কিতাবের নিসবত তার দিকে করাটা ভুল। আমি- আপনার বক্তব্যের সারমর্ম হল, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কোন লিখিত গ্রন্থ নেই, আর যা ফিক্বহে হানাফী বলে আছে তার সনদ না থাকায় তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহ নয় এইতো আপনার অভিযোগ। আপনার মনে এ প্রশ্নটি উদয় হয়েছে দু’টি বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। একটি হল ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর স্বহস্তে লিখিত কিতাব সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। সেই সাথে উস্তাদের কথা ছাত্র লিখলে যে সেটি উস্তাদেরই কিতাব হয় সেটি না জানার কারণে। আর দ্বিতীয় অজ্ঞতা হল, মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ প্রয়োজন হয় না মুহাদ্দিস ও ফুক্বাহাদের এ সর্বজনবিদিত উসুলটি না জানার কারণে এ প্রশ্ন উত্থাপন করলেন। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর লিখিত কিতাব “মুসনাদে আবী হানীফা” এখনো বিদ্যমান। আমাদের কাছেও সেই কিতাব আছে। তাছাড়া আরো অনেক কিতাব আছে। যেমন ফিক্বহুল আকবর। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বলা উসুল অনুপাতে তার ছাত্ররা যেসব কিতাব সংকলিত করেছেন তাও অনেক। তাছাড়া আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র মুহাম্মদ রহঃ মুয়াত্তা। ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর আসার। ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর ছয় কিতাব তথা জামে কাবীর, জামে সগীর, সিয়ারে সগীর, সিয়ারে কাবীর, মাবসূত, জিয়াদাত ইত্যাদি গ্রন্থ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উসুল ও ফাতওয়ার আলোকে লিখা। যা পরবর্তীতে কাফী নামক কিতাবে একসাথে সন্নিবিষ্ট করা হয়। উস্তাদের নির্দেশনায় কিতাব লেখাটি মূলত উস্তাদেরই লেখা হয়। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ এর ছাত্র ফিরাবরী রহঃ ইমাম বুখারী রহঃ এর নির্দেশনায় বুখারীর বেশ কিছু হাদীস সংকলিত করেছেন যা বুখারীর ১ম খন্ডের ১৫০ নং পৃষ্ঠার টিকায় লিখা আছে। ফিরাবরী রহঃ বুখারীর হাদীস একত্রিত করার কারণে গ্রন্থটি ফিরাবরীর হয়ে যায় নি। বরং যেহেতু ইমাম বুখারীর নির্দেশে সংকলিত করা হয়েছে তাই গ্রন্থটির মূলক লেখক ইমাম বুখারীই রয়ে যাচ্ছেন। তেমনি ইমাম মুহাম্মদ রহঃ যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উসুল ও মূলনীতির আলোকে গ্রন্থ সংকলিত করেছেন, তাই সেসব মূলত ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর গ্রন্থই থেকে যাচ্ছে। আর আপনি হেদায়া কুদুরীর সনদের বিষয়ে যেকথাটি বলেছেন। সে দু’টি গ্রন্থ মুতাওয়াতির হওয়ার পরও আপনার সনদ তালাশ করাটি হয়ে গেছে পুরাই নাস্তিকদের প্রশ্নের মত। মুসলিমের প্রশ্ন হয়নি। কারণ মুতাওয়াতির বস্তুর সনদ লাগে না। আপনি নিজেও জানেন এটি ফিক্বহে হানাফী যদিও আপনি এ গ্রন্থ মানেন না। আবার আমরা যারা ফিক্বহে হানাফী মানি তারাও জানি এটি ফিক্বহে হানাফী। তাহলে যারা মানে তারা যেমন ফিক্বহে হানাফী হিসেবে মানছে, আবার যারা মানছে না সমালোচনা করছে তারাও ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই সমালোচনা করছে। তাহলে কি দাঁড়াল? এটি যে ফিক্বহে হানাফী এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি মুতাওয়াতির। সংকলনের পর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্ব এটিকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। লাখো মাদরাসায় এটি দরসে নিজামীর অন্তর্ভূক্ত। পৃথিবীব্যাপী কোটি ছাত্র শিক্ষক এটি ফিক্বহে হানাফী হিসেবে পড়ছে পড়াচ্ছে। মুহাদ্দিস, মুফতী, ফক্বীহ সেই সাথে সাধারণ মানুষ এক বাক্যে এসব গ্রন্থকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই জেনে আসছে। ১২৪৬ হিজরীর আগে ফিক্বহে হানাফীর উপর কোন অভিযোগের কথা এ উপমহাদেশে কেউ শুনেনি। সর্বপ্রথম যে শিয়া ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তারপর তারই অনুসরণ করে কথিত আহলে হাদীস বা গায়রে মুকাল্লিদীনরা ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারাও একথা স্বীকার করতো এসব ফিক্বহে হানাফী। তাহলে এমন একটি মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ তালাশ করা আহমকী হয়। আমি আগেই বলেছি মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ তালাশ করা মুসলিমের কাজ নয়। নাস্তিকদের পদ্ধতি। যেমন- কোন নাস্তিক আপনাকে প্রশ্ন করল- রাসূল সাঃ এর উপর যে কুরআন নাজিল হয়েছে এটি যে হুবহু সেই কুরআন। তার কি সনদ আছে? কুরআনের প্রতিটি আয়াতের সনদ কি রাসূল সাঃ পর্যন্ত প্রমাণিত? সনদ নেই বলে কুরআন কি নাউজুবিল্লাহ নবীর উপর নাজিলকৃত কুরআন নয়? কি জবাব রয়েছে আপনার কাছে?” এক সাথে কলকলিয়ে উঠলেন দুই লা মাযহাবী। অবশেষে ১ম লা মাযহাবী ভাই বললেন- কুরআন আর ফিক্বহে হানাফী এক জিনিস নয়। আমি- কুরআন আর ফিক্বহে হানাফী এক জিনিস আপনাকে কে বলেছে? উল্টো কথা বলেন কেন? আমি বলেছি কুরআনের প্রতি আয়াতের সনদ কি আছে? না থাকলে কি তা অগ্রহণীয় হয়ে যাবে? ১ম লা মাযহাবী- কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্বতো আল্লাহ নিয়েছেন। তাই এটির সনদ প্রয়োজন নেই। আমি- আপনি যে সংরক্ষণের কথাটি বলছেন সেটিওতো কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। নাস্তিক যখন সনদ ছাড়া কুরআন মানতেই নারাজ, সেখানে আপনি কুরআনের আয়াত দিয়েই তা সংরক্ষিত কিভাবে প্রমাণ করবেন? ১ম লা মাযহাবী- এটা প্রমাণ করা খুবই সোজা। সারা পৃথিবীতে কুরআনের নুসখা একই রকম। তাই এটি রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন। আমি- আপনি কি বলছেন নিজে বুঝতে পারছেনতো? ভাষা এক হলেই সনদ না থাকলে তা গ্রহণীয় হলে, হেদায়া কুদুরীর সারা পৃথিবীর যেসব নুসখা আছে তাতে কি আপনি কোন পরিবর্তন পেয়েছেন? সবতো একই বক্তব্য নির্ভর। তাহলে এটির সনদ তালাশ করছেন কেন? উসূল সম্পর্কে না জানার কারণে আপনি হক মানতে পারছেন না। কুরআন মুতাওয়াতির। সবাই জানে এটি কুরআন। নাস্তিকও জানে। আস্তিকও জানে। মান্যকারীও জানে অমান্যকারীও জানে। সারা পৃথিবীতে তা প্রচলিত। তাই এ মুতাওয়াতিরের হক প্রমাণের জন্য সূত্র তথা সনদ প্রয়োজন হয় না। যেমনটি শরহু নুখবাতিল ফিক্বারে ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন। মুতাওয়াতিরের সনদ তালাশ করা মুর্খতা ছাড়া কিছু নয়। তেমনি হেদায়া কুদুরী যে ফিক্বহে হানাফী সে কথা প্রথম বিরোধীতাকারী শিয়াও স্বীকার করেছে, তার অনুসরণ করে আপনারা যারা বর্তমানে বিরোধিতা করছেন তারাও স্বীকার করেন এসব ফিক্বহে হানাফী, আর আমরা যারা মান্য করি তারাও জানি এসব ফিক্বহে হানাফী। সারা পৃথিবীতে এসব কিতাব ফিক্বহে হানাফী হিসেবে পড়া হচ্ছে। মাদরাসায় পড়ানো হচ্ছে। মুফতী, মুহাদ্দিস, ফক্বীহ এসবকে ফিক্বহে হানাফী হিসেবেই জেনে আসছে। তাই এটি মুতাওয়াতির। আর মুতাওয়াতির বস্তুর সনদ লাগে না। যে সনদ তালাশ করে ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ভাষায় উক্ত ব্যক্তি জাহিল। আবার ১ম লা মাযহাবী ভাইটি চালাকীর পরিচয় দিল। নিজেই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এ স্থানে এসেছিল। এখন যখন দেখছে বিপদে পড়েছে। এবার আবার মূল প্রসঙ্গে চলে যাওয়ার কথা উঠাল। বলতে লাগল- আসলে এভাবে কথা বললে কথা শেষ হবে না। চলুন আমরা রফউল ইয়াদাইনের বিষয়ে আলোচনা করি। ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ০৯ নামাজে জুতা পরিধান করা ..... ✍ আমি- আলোচনাতো রফয়ে ইয়াদাইন নিয়েই ছিল। আপনারাইতো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এ স্থানে নিয়ে এলেন। যাইহোক আমরা রফয়ে ইয়াদাইনের বিষয়ে আপনাদের পূর্ণ আমল নিয়ে কথা বলছিলাম। আপনারা জানিয়েছেন চার রাকাত নামাযে আপনারা ১৮ রফয়ে ইয়াদাইন কখনোই করেন না, আর ১০ স্থানে সর্বদা করে থাকেন। তো….. ১ম লা-মাযহাবী- এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে আমরা জানতে চাই। আমরাতো আপনার কাছ থেকে জানতে এসেছি। তাই আপনি বিষয়টি বুঝিয়ে দিন। আমি- আপনি যেভাবে আমল করছেন সেটিতো আপনার আমল। আমার না। আমিতো আমার আমলের দলীল দিব। আপনি আপনার আমলের দলীল দিবেন। আপনি আগে যেটি করতেন সেটি ছেড়ে দিয়ে কেন এ নতুন আমল ধরলেন। আর আপনার পড়াশোনা অনুপাতে আপনার বর্তমানের আমলটি কেন সহীহ মনে হচ্ছে? তা প্রমাণ করাতো আপনার দায়িত্ব। আপনার দায়িত্ব আমার কাঁধে কেন চাপাতে চাচ্ছেন? প্রসিদ্ধ হাদীসটি শুনেননি? দাবিকারী দলীল উপস্থাপন করবে, আর অস্বিকারকারীর উপর আবশ্যক হল ইয়ামীন করা। তাহলে রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে আপনারা দাবিকারী হয়ে আমাদের কাছে দলীল চাচ্ছেন কেন? আমরাতো আপনার দলীল খন্ডন করে তা অস্বিকার করবো। ১ম লা মাযহাবী- দাবিকারীতো আমরা না আপনি? আমি- কিভাবে? ১ম লা মাযহাবী- হাদীসে রফয়ে ইয়াদাইনের কথা এসেছে। আর আপনারা তা অস্বিকার করছেন। তাই আপনাদের দলীল দিতে হবে। আমি- “আপনি বাদি আর বিবাদির সংজ্ঞাই বুঝেননি। হাদীস হচ্ছে দলীল। আর আপনি যা বলছেন তা হচ্ছে দাবি। আমি যা বলছি তা হচ্ছে অস্বিকার। অস্বিকারকারীর বক্তব্য দাবি হয় না হয় অস্বিকার। আপনি বলছেন রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবে রুকুতে যেতে আসতে। আমি বলছি একথা মানি না। তাহলে দাবিকারী আমি সাব্যস্ত হলাম কিভাবে? আমিতো অস্বিকার করছি। দাবিতো করছেন আপনি। দাবিকারী হয়ে দলীল অস্বিকারকারীর কাছে চাওয়াতো হাদীসের নির্দেশনা অমান্য করা। হাদীস অনুসারী এমন কাজ কি করে করতে পারে?” আবারো হাম তাম শুরু করে দিল ২য় লা-মাযহাবী। দলীল দিতে রাজি হচ্ছে না একজনও। পরিস্থিতি দেখে বিষয়টি আরো পরিস্কার করার জন্য বললাম- আচ্ছা, বলুন আপনারা যে রফয়ে ইয়াদাইন করছেন তার হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- সুন্নত। আমি- এটি সুন্নত একথা কোথায় আছে? ১ম লা মাযহাবী- রাসূল সাঃ যা করেছেন তা সবই করা আমাদের উপর কর্তব্য। সবই জরুরী। আমি বললাম- বুখারী মুসলিমে এসেছে রাসূল সাঃ জুতা পা দিয়ে নামায পড়েছেন, জুতা পা দিয়ে নামায পড়ার হুকুম কি আপনার বক্তব্য অনুপাতে সুন্নত নয়? ১ম লা মাযহাবী- জুতা পা দিয়ে নামায পড়া জায়েজ। আমি- একথা আপনি কোথায় পেলেন? রফয়ে ইয়াদাইনের নির্দেশ যেমন আল্লাহর নবী সাঃ দেননি শুধু নামাযরত অবস্থায় আমল করেছেন মর্মে আপনারা হাদীস দেখান। তেমনি রাসূল সাঃ জুতা পা দিয়ে নামায পড়েছেন কিন্তু পড়তে আদেশ দেননি মর্মে হাদীসে এসেছে। তাহলে রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত হলে জুতা পায়ে নামায পড়া সুন্নত নয় কেন? ১ম লা মাযহাবী- জুতা ছাড়া নামায পড়েছেন একথা হাদীসে এসেছে। তাই আমরা এটিকে ছেড়ে দেই। আমি- আপনার ইচ্ছে হলেই সহীহ হাদীসে আসা রাঃ এর নামায সংক্রান্ত আমল ছেড়ে দেন? এর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ? আর কোন হাদীসে জুতা খুলে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে একটি হাদীসের কিতাবের নাম বলুনতো। ২য় লা-মাযহাবী- আরে! আপনি কিসের সাথে কি মিলাচ্ছেন? জুতা পরিধান করে নামায পড়া সুন্নত হবে কেন? এটি এমনিতেই পড়েছেন। আপনি এটিকে রফয়ে ইয়াদাইনের সাথে মিলাচ্ছেন কেন? আমি- আমি মিলাচ্ছি না আপনারা গুলিয়েছেন। রাসূল সাঃ যা করেছেন, তাই সুন্নত বললেন, অথচ জুতা পরিধান করে নামায পড়েছেন সেটিকে সুন্নত মানতে নারাজ কেন? ২য় লা-মাযহাবী- রাসূল সাঃ জুতা খুলেও নামায পড়েছেন। আমি- কোন হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ জুতা খুলে নামায পড়েছেন সেই হাদীসটা একটু দেখানতো? [বেটা হাদীসের কিতাব দেখলেই কাঁপে, আবার ঝারি দিয়ে বেড়াচ্ছে হাদীসে আছে, হাদীসে আছে বলে] ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, পেয়েছি। হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ একবার জুতা পা দিয়ে নামায পড়ছিলেন, তখন জিবরাঈল আঃ এসে বললেন আপনার জুতায় নাপাক আছে, তখন তিনি জুতা খুলে বাকি নামায পড়েন। সুতরাং বুঝা গেল জুতা খুলে নামায পড়া জায়েজ। আমি- এ হাদীসতো আরো পরিস্কার করছে যে, জুতা পরিধান করেই নামায পড়তে হবে। শুধু নাপাক থাকলে খুলে পড়বে এতটুকু প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু নাপাক না থাকলে খুলে পড়বে একথাও কি প্রমাণ হচ্ছে? যেমন হাত উঠাতে না পারলে হাত না উঠানোর যেমন সুযোগ থাকে, কিন্তু আপনার দাবি অনুপাতে সে সময় রফয়ে ইয়াদাইনের সুন্নত বাদ হয় না, কিন্তু নাপাক থাকলে জুতা খুলে পড়বে তা দিয়ে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার সুন্নত হওয়াকে অস্বিকার করছেন কিভাবে? ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১০ ফরজ ও সুন্নাত নির্ধারণ.... ✍ ১ম লা মাযহাবী- আপনি শুধু শুধুই ঘুরাচ্ছেন। জুতা পরিধান করা আর রফয়ে ইয়াদাইন এক বস্তু নয়। ২য় লা-মাযহাবী- রফয়ে ইয়াদাইন না করার কোন হাদীসই নেই। আর জুতা খুলে নামায পড়ার হাদীস আছে। তাই দু’টি এক হতে পারে না। আমি- রফয়ে ইয়াদাইন না করার কোন হাদীসই নেই? ২য় লা-মাযহাবী- না কোন হাদীস নেই। আমি- হাদীস সম্পর্কে মাশাআল্লাহ ভালই জ্ঞান রাখেন দেখছি। …… ১ম লা মাযহাবী- দেখেন রাসূল সাঃ যে আমল করেছেন যদি সেটির বিপরীত কর্ম প্রমাণিত না হয়, তাহলে সেটি করা জরুরী। আর যদি বিপরীতটি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা আছে। যেমন এখানে রফয়ে ইয়াদাইনের বিপরীত কোন হাদীস নেই। তাই এটি সুন্নত। আর যেহেতু জুতা খুলে নামায পড়ার হাদীস আছে তাই এটি জায়েজ। আমি- আপনার এসব ব্যাখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথাও আছে? না আপনার মন যা বলে তাও শরীয়ত? ১ম লা মাযহাবী- এসবতো বুঝা যায়। আমি- তাহলে আপনার বুঝের নাম আপনার কাছে শরীয়ত। কুরআন ও হাদীসের ইবারত নয়। আরেকটি বিষয় আপনি একবার বলছেন জরুরী আবার বলছেন সুন্নত এ পার্থক্যের মানে কি? কোনটির আসলে হুকুম কি? কিসের ভিত্তিতে এসব বলে থাকেন? ১ম লা মাযহাবী- যে কাজ না করলে নামায হয় না, সেটি আবশ্যক বা ফরজ। আর যেটি ছাড়া নামায হয় সেটি সুন্নত। আমি- মাশাআল্লাহ! সুন্দর সংজ্ঞা। কিন্তু এ সংজ্ঞাটি কুরআনের কোন আয়াতের অনুবাদ বা কোন হাদীসের অনুবাদ? ১ম লা মাযহাবী- এসব বুঝা যায়। আমি- হু বুঝা যায়। আর আপনার সেই বুঝের নাম কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরন? আচ্ছা, তাহলে আপনার এই সংজ্ঞা অনুপাতে আমাকে নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমা বলা আর রফয়ে ইয়াদাইনের পার্থক্যটি বুঝান। কোনটির হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- তাকবীরে তাহরীমা রুকন। আর রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত। আমি- এ দুই হুকুম কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় আছে? ১ম লা মাযহাবী- যেহেতু তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না তাই এটি রুকন। আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় তাই এটি সুন্নত। আমি- তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না, আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় একথা কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? ১ম লা মাযহাবী- তাকবীর বলে নামায পড়তে বলা হয়েছে তাই এটি ছাড়া নামায হবে না। কিন্তু রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে এমন বলা হয়নি। তাই এটি সুন্নত। আমি- মাযহাবীদের কিয়াসকারী বলে গালি দেন। কিন্তু নিজেরা যেভাবে যেটা মনে চায় সেটির একেকটি বানোয়াট হুকুম সাব্যস্ত করে চলেন তা দেখে সত্যিই হাসি পাই। আপনি বলেছেন যা ছাড়া নামায হয় না, তা রুকন, আর যা ছাড়া নামায হয় তা সুন্নত। সেই হিসেবে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায হয় না বলে সেটিকে রুকন সাব্যস্ত করেছেন। আর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় বলে এটিকে সুন্নত সাব্যস্ত করছেন। কিন্তু রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয় একথারও কোন দলীল পেশ করেননি, আবার তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামায না হওয়ারও কোন স্পষ্ট দলীল পেশ করতে পারেননি আপনার কথিত যুক্তি ছাড়া। এসব পরিভাষা কোত্থেকে আমদানী করলেন? কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের অনুবাদ এসব পরিভাষা সেটিও জানাননি। শুধু নিজের ইচ্ছেমত একেকটিকে একেকটি বলে দিলেন, এর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ? বলুনতো কিয়াম ছাড়া নামায হয়? ১ম লা মাযহাবী- না হয় না। আমি- এর কী দলীল আছে? কিয়াম ছাড়া নামায হয় না, রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয়, এসব পার্থক্য আপনাকে কে বানিয়ে দিয়েছে? নাম কুরআন ও হাদীসের আর কাজ নিজের খাহেশাত নিঃসৃত যুক্তির এ কেমন কাজ ভাই? ১ম লা মাযহাবী- দেখেন ! আমরা এভাবে আলোচনা করতে থাকলে কোন কিছুই হবে না। চলুন আমরা রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কথা বলছি সেটাই শেষ করি। ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১১ঃ জাহিল ব্যক্তির কিয়াস - একি কিয়াস নাকি ধোঁকা!!!..... ✍ আমি- আচ্ছা, চলুন, রফয়ে ইয়াদাইন নিয়েই কথা বলি। আপনি রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আপনাদের আমলতো বললেন। অর্ধেক হুকুম বলে দিয়েছেন মানে রফয়ে ইয়াদাইন করা সুন্নত। এবার হুকুমের দ্বিতীয় অংশটি বলুন! রফয়ে ইয়াদাইন না করার হুকুম এবং যারা করে না তাদের হুকুম সেই সাথে রফয়ে ইয়াদাইন না করা নামাযের হুকুম কি? ১ম লা মাযহাবী- রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায হয়ে যায়। অনিচ্ছায় ছেড়ে দিলে গোনাহ নেই। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে। আমি- এই কাজ সুন্নত এবং সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহটা কি জিনিস? একটু পরিস্কার করে বলুন। ১ম লামাযহাবী- মানে, রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত। আর ইচ্ছেকৃত না করলে সুন্নত ছেড়ে দিলে যে গোনাহ হয় সে গোনাহ হবে। আমি- সুন্নত ছেড়ে দিলে কি গোনাহ হয়? ১ম লামাযহাবী- আল্লাহ তাআলা কুরআনে নবীজী সাঃ এর অনুসরণের আদেশ দিয়েছেন। তাই রাসূল সাঃ যা করেছেন তা ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে। আমি- ভাই! আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন নবীজীকে অনুসরণের। তাই সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। এই দু’ইয়ের মাঝে মিল কোথায়? আল্লাহ বলছেন নবীজীকে অনুসরণের, আর আপনি বলছেন সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে, “অনুসরণ আর সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” এই দুইয়ের মাঝে মিল কোথায়? আর “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” একথার দলীল অনুসরণের নির্দেশের দ্বারা হয় কিভাবে? সহজ করে বলছি, আল্লাহ বলছেন, নবীজী সাঃ কে অনুসরণ করতে। আর আপনি বলছেন সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। এর মাঝে “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” বক্তব্যটি আপনার দাবি, আর “নবীজী সাঃ কে অনুসরনের” নির্দেশ সম্বলিত আয়াত হচ্ছে আপনার দলীল। এখন আমাকে বলুন, আপনার দাবির স্বপক্ষে দলীলটি প্রয়োগ হয়েছে কি না? একদিকে অনুসরণের নির্দেশ, অপরদিকে “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে”। আপনার দলীলে “গোনাহ হওয়ার বিষয়” কোথায়? আর সুন্নত শব্দ কোথায়? যেভাবে ইচ্ছে আয়াত ও হাদীসকে একটিকে অপরটির সাথে লাগানোর নাম কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ। আমাদের ব্যাপারে বদনাম করে বেড়ান, আমরা কিয়াস করে বেড়াই। কুরআন ও হাদীসের ধার ধারি না। কিন্তু আপনাদের যা হালাত দেখা যাচ্ছে, সব কিছুতেই দেখি প্রথমে কিয়াস করে থাকেন আপনারা। তবে পার্থক্য হল, আমাদের এখানে প্রয়োজনে কিয়াস করে সর্বজনস্বীকৃত মুজতাহিদ আর আপনাদের এখানে আরবী দেখে পড়তেও জানে না, এমন জাহিল ব্যক্তিরা। কাজ কিয়াসের, নাম কুরআন ও হাদীসের! এ কেমন ধোঁকা? “‘রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে’ এই মর্মে আপনাদের কথিত কিয়াস ছাড়া আর কোন দলীল আপনাদের কাছে নেই” স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেন? ১ম লা-মাযহাবী- না, না আছেতো। আমি- কিভাবে আছে? উপরে তাহলে কি দেখালাম? আপনার বক্তব্যের দলীল এসব আয়াত না আপনার কিয়াসকে দলীল বানাচ্ছেন? যে কিয়াসের কোন ভিত্তিই নেই। আয়াতে বলছে অনুসরণের নির্দেশের কথা। আর আপনি বলছেন “সুন্নত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে” মিলল কিভাবে? ১ম লা-মাযহাবী- আচ্ছা, ভাই! এই সব বিষয়ে এখন কথা বললে আসলে কোন সমাধান হবে না। অল্প অল্প করে আমরা একেক দিন আলোচনা করবো। তাই আজকে শুধু রফয়ে ইয়াদাইন না করা বিষয়ে আপনাদের দলীলটি জানতে চাই। আমি- আমিতো আগেই বলেছি, দলীল দেয়া আমাদের যিম্মায় নয়। কারণ আমরা অস্বিকারকারী। আপনারা দাবিকারী। রফয়ে ইয়াদাইন করার দাবি করছেন, আর আমরা অস্বিকার করছি। বলছি, রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবে না। প্রসিদ্ধ হাদীস অনুপাতে দলীল দেয়া দাবিকারীর উপর আবশ্যক। অস্বিকারকারীর উপর নয়। ১ম লামাযহাবী- আজকে চলে যাবো। আরেক দিন আসবো। সেই দিন আরো বিস্তারিত কথা হবে। আমি- সেদিন কি রফয়ে ইয়াদাইন করার উপর দলীল পেশ করবেন? ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, সাথে সাথে আপনাদের দলীলগুলো আমাকে দিলে ভাল হয়। আমি উভয়টি রিসার্চ করবো। যদি আপনাদের দলীল শক্তিশালী মনে হয় তাহলে আপনাদেরটা গ্রহণ করবো। মনে মনে হাসি পেল আমার। হাদীসের কিতাব দেখে যে ব্যক্তির শরীর কাঁপতে থাকে। তিনি কুরআন ও হাদীসের দলীল যাচাই করে যেটিকে সঠিক মনে হয় সেটি মানবেন। কি মারাত্মক দুঃসাহস................. ✍ এক অঙ্গে কত রূপ - ১২ঃ কিয়ামত পর্যন্ত সময় নিন..... ✍ মনে মনে হাসি পেল আমার। হাদীসের কিতাব দেখে যে ব্যক্তির শরীর কাঁপতে থাকে। তিনি কুরআন ও হাদীসের দলীল যাচাই করে যেটিকে সঠিক মনে হয় সেটি মানবেন। কি মারাত্মক দুঃসাহস! এরকম জাহিলরা পুরো দ্বীনটাকেই হাসি তামাশার বস্তু বানিয়ে রেখেছে। নিজের জাহালাত আর মুর্খতা সত্বেও নিজেকে মনে করছে বিশাল গবেষক। গবেষণা করবে, রিসার্চ করবে, তারপর নিজের জাহেলী সমঝে যেটিকে হক মনে করবে, সেটিকে মানবে, আর যেটি বুঝে আসবে না মানবে না। কি ভয়াবহ মানসিকতা। দ্বীনটা তাদের কাছে কতটা ছেলেখেলা। যে দ্বীন শিখার জন্য একেকজন বিদ্যানুরাগীরা দিনের পর দিন সফর করেছেন। বছরের পর বছর শায়েখদের কাছে পড়ে রয়েছেন। সেই দ্বীন শুধু কিছু অনুবাদ পড়ে, ভিডিও দেখে ইন্টারনেটের কিছু লেখা পড়ে শিখে যাবে! নিজের ইচ্ছেমত যাকে তাকে বিশ্বস্ত, যাকে তাকে সহীহ-জঈফ সাব্যস্ত করে দিবে। এর নামও দ্বীন? আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভয়ানক গবেষকদের ফিতনা থেকে হিফাযত করুন। আমি ১ম লা মাযহাবীকে বললাম- আমার দলীল দেয়ার দায়িত্ব নয়। তবু আপনাকে দিচ্ছি। রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আমরা নামাযে যা করি তার পূর্ণ আমলের পূর্ণ দলীল এই দু’টি বইয়ে আছে। একটি হল, মাওলানা আব্দুল মতীন সংকলিত “দলীলসহ নামাযের মাসায়েল” আর শায়েখ মুহাম্মদ ইলিয়াস ফয়সালে “নামাযে পয়ম্বর” গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ “নবীজীর নামায” এ। এ দুটি কিতাব দেখে নিন। এবার আপনি রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে আপনার পূর্ণ আমলের শুধু একটি সহীহ হাদীস পেশ করবেন। আর আপনার পূর্ণ আমল মনে থাকবেতো? ১ম লা-মাযহাবী- থাকবে না কেন? থাকবে। আমি- হয়তো থাকবে না। আমি লিখে দিচ্ছি। তাহলে মনে থাকবে। ১ম লা-মাযহাবী- হ্যাঁ, তাহলে লিখে দিন। আমি যখন কাগজ কলম নিচ্ছি লিখে দেয়ার জন্য। তখন ২য় লামাযহাবীটি কথা বলে উঠল। বলতে লাগল- আপনি আপনার দলীল দিন। আমাদের কাছে এসব লিখে দিচ্ছেন কেন? আমাদের কাঁধে চাপাতে চাচ্ছেন কেন? ১ম লামাযহাবী- ওনাদের দলীলতো ওনারা দিয়েছেন। যা এই দুই কিতাবে বিদ্যমান। আমরা আমাদের আমলের দলীল লিখে নিয়ে আসবো আগামী একদিন। আমি- এইতো বুঝেছেন। ঠিক আছে লিখেন রফয়ে ইয়াদাইন বিষয়ে- চার রাকাত নামাযে সর্বদা দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করা, ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন না করা, একাজটি সুন্নত, ইচ্ছেকৃত ছেড়ে দিলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার গোনাহ হবে ইদ্যাদি বক্তব্য সম্বলিত একটি সহীহ হাদীস, যাকে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ বা তাদের সমর্থনে সহীহ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১ম লা-মাযহাবী- আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি কিন্তু এসবের লিখিত জবাব নিয়ে আসবো। আমি- কোন সমস্যা নেই। লিখিতই নিয়ে আসুন। কিন্তু উপরের সব ক’টি পয়েন্ট কিন্তু ভুলবেন না। আমল পূর্ণ করে, অর্ধেকের দলীল পেশ করা ধোঁকাবাজী একথাতো মানেন? ১ম লা-মাযহাবী- তাতো অবশ্যই। পূর্ণ আমল করলে দলীলতো পূর্ণ আমলেরই দিতে হবে। অর্ধেক আমলের দিবে কেন? আমি- তাহলে ঠিক আছে। রফয়ে ইয়াদাইনের পূর্ণ আমলের দলীলই আশা করি পেশ করবেন। ১ম লা-মাযহাবী- আরেকটি কথা, আমি ব্যস্ত মানুষতো। অফিস থেকে এসে তারপর পড়াশোনা করতে বসতে হয়। তাই আমার বেশ কিছুদিন দেরী হতে পারে আপনার উত্তর দিতে। আমি- যত ইচ্ছে সময় নিন। আরেকটি কথা জেনে রাখুন, কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের এসব আমলের পূর্ণ দলীল আপনারা উপস্থিত করতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ। এটি আমাদের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। ১ম লামাযহাবী- আচ্ছা, দেখা যাক। একটু কিন্তু দেরী হবে আগেই বলে নিচ্ছি। আমি- জানি দেরী হবে। আপনার দেরী হবে বলার কোন দরকার নেই। যেহেতু দেরীই করবেন, তাহলে নামাযের আবশ্যকীয় আরো কয়েকটি বিষয়ের সমাধানও একটু খুঁজে দেখবেন আশা করি। ১ম লা-মাযহাবী- বলেন। আমি- লিখুন- নামাযের ফরজ কয়টি ও কী কী? ফরজের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। নামাযের সুন্নত কয়টি ও কী কী? সুন্নতের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কী কী? সুনির্দিষ্ট করে কুরআন ও হাদীস জানতে চাই। নামাযের মাকরূহ কয়টি ও কী কী? মাকরূহের সংজ্ঞাসহ এর হুকুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে চাই। ১ম লা-মাযহাবী- ব্যস, ব্যস। এতটুকু থাক। ২য় লা-মাযহাবী- আমরা ওনাকে কোন কিছু করার দায়িত্ব দিয়ে যাবো না? শুধু আমরাই নিয়ে যাবো? ১ম লা-মাযহাবী- ওনিতো ওনার দায়িত্ব পালনই করেছেন। ওনার দলীল লিখে দিয়েছেন। এ দুই কিতাবে আছে। আমরা আমাদের আমলের দলীল এখন পেশ করবো। আমি- মাশাআল্লাহ! আপনি ভাল বুঝেছেন। তাহলে পরে একদিন দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। সবাই- জি ইনশাআল্লাহ! আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমার দীর্ঘ সময় নষ্ট করে চলে গেল ভ্রাতারা। বলে গেল আবার আসবে। কিন্তু আমি জানি, ওরা আসবে না। ওরা আসতে পারে না। সত্যের আলোকচ্ছটা বিকির্ণিত হলে আঁধার থাকতে পারে না। সেখানে অন্ধকার ঢুকতে পারে না। যদি পরিবর্তিত হয়, তাহলে আসবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু নিজের অন্ধ মাযহাব আঁকড়ে ধরে থাকলে আসবে না। কারণ তিনি ধাক্কা খেয়েছেন। এতদিনকার গর্বিত মাযহাবটা যে, বড় ঠুনকো তা মুখে স্বীকার না করলেও চেহারার ভঙ্গিমায় তা ঠিকই জানান দিয়েছেন। ভাইয়েরা আবার ফিরে আসুক। সত্য ও ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে। অসত্য, ধোঁকা, মিথ্যাচারের ভাগাড় ছেড়ে আলোকিত হয়ে। আমীন। ছুম্মা আমীন। কিন্তু আজ অনেক দিন হয়ে গেল উক্ত ভাইদের কোন সাড়া শব্দ আমরা আর পাচ্ছি না। কপালে হেদায়াত না থাকলে হয়তো আর কোনদিনও আসবেন না আমাদের কাছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসব কথিত আহলে হাদীস নামধারীদের ধোঁকা থেকে বেঁচে দ্বীনের উপর সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!