লিখেছেন কলম সৈনিক محفوظ الرحمٰن ভাই.....
কোন ব্যক্তির “আহলে হাদীস” নামধারণ প্রসঙ্গেঃ কুরআন ও হাদীস হচ্ছে ইলম। তাই “আহলে কুরআন” ও “আহলে হাদীস” দ্বারা “আহলে ইলমে কুরআন” ও “আহলে ইলমে হাদীস” বুঝায় সুতরাং যখন আপনি কাউকে “আহলে হাদীস” বলছেন, তাহলে তাকে ইলমে হাদীসের চর্চাকারী অভিজ্ঞ মুহাদ্দিস বলেই অভিহিত করছেন বলা বাহুল্য, তৎকালে আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও আইম্মায়ে হাদীস মহামনীষীগণ “আহলুল হাদীস” বা “আহলে হাদীস” শব্দ দ্বারা এ অর্থই বুঝাতেন
অথচ আমাদের দেশে এমন অনেক বে-ইলম সাধারণ লোক আছেন যে, ইলমে হাদীসের কোন ধারণাই রাখেন না, কিন্তু তাদেরকে “আহলে হাদীস” আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে তাদেরকে ইলমে হাদীসের গবেষক-মুহাদ্দিস বলে অভিহিত করা হচ্ছে!
এটা অতি বড় মিথ্যাচার নয় কি? সুতরাং এক্ষেত্রে তাদের পরিচয়ের জন্য তাদেরকে “আহলে হাদীস” না বলে বাস্তব জীবনে মাযহাব না মানার কারণে তাদেরকে “আহলে লা-মাযহাব” বলাই বাঞ্ছনীয়।
কোন মুসলমান লা-মাযহাবী হতে পারেন না!
************************************
কোন মুসলমান নিজেকে লা-মাযহাবী দাবী করতে পারেন না। কেননা, মাযহাব শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পথ। তাহলে লা-মাযহাবী অর্থ হয় পথহারা। কোন মুসলমান কি পথহারা হতে পারেন? (নাউযুবিল্লাহ)
আবার মাযহাব শব্দ ধর্মের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তখন লা-মাযহাবী অর্থ হয় ধর্মহীন বা বেদ্বীন। সেক্ষেত্রে তো লা-মাযহাবী ও ধর্মহীন-নাস্তিক সমার্থক।
তা ছাড়া মাযহাবের প্রচলিত অর্থেও কেউ লা-মাযহাবী হতে পারেন না। কেননা, এ অর্থে মাযহাব হলো কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নির্ণীত শরীয়তের উপর আমলের পন্থা। তখন লা-মাযহাবী অর্থ হয় বিপথগামী।
বলতে কি, সকল মুসলমানই শরীয়তের উপর আমলের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নির্ণীত পন্থার অনুসারী হওয়ার দাবী করেন। আর সেটাই তো মাযহাব। তাহলে তো সকলেই মাযহাবী। কেউ লা-মাযহাবী নন।
অতএব, কারো জন্য নিজেকে লা-মাযহাবী বলে দাবী করা সঙ্গত নয়। আর মাযহাব যখন মানতেই হবে, তখন অনির্ভরযোগ্য বা সত্যায়নহীন কারো মাযহাব না মেনে মুহাক্কিকীনে উলামায়ে উম্মতের দ্বারা সহীহ বলে স্বীকৃত চার মাযহাবের মধ্য থেকে কোন এক মাযহাব মেনে চলাই কর্তব্য।
মাযহাব যে কোন একটি মানতে হবে।
এবং যে কোন একটি মাযহাব মানা ওয়াজিব।
**************************************
ইমাম নববী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ) ‘রাওযাতুত তালেবীন’ নামক গ্রন্থে লিখেনঃ “উলামাগণ বলেন, ইজতিহাদে মুতলাক ইমাম চতুষ্টয় পর্যন্ত খতম হয়ে গেছে। তাই তাঁরা ইমাম চতুষ্টয়ের কোন একজনের ‘তাক্বলীদ’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।
ইমামুল হারামাইন জুয়াইনী (মক্কা-মদীনা শরীফের ইমাম সাহেব – রহঃ, মৃঃ ৪৭৮ হিঃ) মায্হাব চতুষ্টয়ের তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ‘ইজ্মা’ উল্লেখ করেছেন। ”
.
( নুরুল হিদায়া হতে সংকলিত, পৃ – ১০; দেখুনঃ ফয়যুল কাদীরঃ পৃ – ১/২১০; শরহুল মুহায্যাব, নববীঃ পৃ – ১/৯১, আদাবুল মুস্তাফতী অধ্যায় )
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) লিখেছেনঃ
.
“ মুসলিম উম্মাহর ‘ইজ্মা’ উপেক্ষা করে মায্হাব চতুষ্টয়ের বিপরীতে কোন মায্হাব রচনা বা গ্রহণ বৈধ হবে না। ”
( ফাত্ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ – ২/৪৪৬ )
আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফাত্হুল মুবীন’ এ লিখেনঃ
.
“ আমাদের যুগের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ বিন হাম্বল – এ চার ইমাম ব্যতীত অন্য কারও তাক্বলীদ (অনুসরণ) জায়িয নয়। ”
( ফাত্হুল মুবীনঃ পৃ – ১৯৬ )
মুহাম্মদ ইব্নে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) এর মায্হাবঃ লা-মায্হাবীরা দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব নজদীও লা-মায্হাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন এবং তিনি নিজেই স্বীয় মায্হাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
.
-দেখুনঃ আল-হাদিয়াতুস্ সুন্নাহঃ পৃ – ৯৯
.
সাথে সাথে চার মায্হাবের যে কোন একটির ত্বাকলীদ করা যাবে এবং এই চার মায্হাব ছাড়া অন্য কোন মায্হাবের অনুসরণ করা যাবে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেছেন। -
.
তারীখু নাজদ-আলূসীঃ পৃ – ৫৪-৫৬; ছিয়ানাতুল্ ইনসানঃ পৃ – ৪৭১১
.
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ), লা-মায্হাবীদের কাছেও যিনি গ্রহণযোগ্য, তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগায় লিখেনঃ “ সু-বিন্যস্ত গ্রন্থবদ্ধ এ চার মায্হাবের উপর সকল ইমামগণের ‘ইজ্মা’ তথা ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ”
.
(হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাঃ পৃ – ১/১২৩ )
ইমাম বুখারী রহঃ সহ অন্যান্য হাদিসের ইমামগণ মাজহাব অনুসরণ করতেন। তাঁরা সকলেই কোন না কোন ইমামের তাক্বলীদ করতেন। মাজহাব যদি শির্ক বিদ'আত হয় তাহলে কুতুবে সিত্তা সহ অন্যান্য হাদিসের ইমামগণ কি মুশরিক, বিদ'আতী ছিলেন? নাউজু বিল্লাহি মিন যালিক। ওয়ামিন ওয়াস-ওয়াসি গাইরিল মুকাল্লিদ।
এ পর্যায়ে রেফারেন্স সহ হাদিসের ইমামগণের মাজহাব তুলে ধরা হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হল লামাজহাবীদের প্রথম কাতারের নেতা নবাব ছিদ্দীক হাসান খান সবিস্তারে হাদিসের ইমামগণের মাজহাব তার লিখিত বইয়ে বর্ণনা করেছেন।
✿১। ইমাম বুখারী রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।
সুত্রঃ নবাব ছিদ্দিক হাসান খান লিখিত আবজাদুল উলুম পৃষ্ঠা নং ৮১০, আলহিত্তা পৃষ্ঠা নং ২৮৩।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহঃ লিখিত আল-ইনসাফ পৃষ্ঠা নং ৬৭।
আল্লামা তাজ উদ্দীন সুবকী রহঃ লিখিত ত্ববকাতুশ শাফেয়ী পৃষ্ঠা নং ২/২।
✿২। ইমাম মুসলিম রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।
সুত্রঃ ছিদ্দিক হাঃ খান লিখিত আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২২৮।
✿৩। ইমাম তিরমিজী নিজে মুজ্তাহিদ ছিলেন। তবে হানাফী ও হাম্বলী মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
সুত্রঃ শা ওয়ালিউল্লাহ রহঃ লিখিত আল-ইনসাফ পৃষ্ঠা নং ৭৯।
✿৪। ইমাম নাসাঈ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন।
সুত্রঃ নঃ ছিঃ হাঃ লিখিত আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২৯৩।
✿৫। ইমাম আবুদাউদ রহঃ শাফেয়ী।
সুত্রঃ আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২২৮।
আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহঃ ইবনে তাইমিয়ার উদ্দৃতি দিয়ে ফয়জুল বারী ১/৫৮ তে ইমাম আবুদাউদ রহঃকে হাম্বলী বলে উল্যেখ করেছেন।
✿৬। ইমাম ইবনে মাজাহ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।
সুত্রঃ ফয়জুলবারী ১/৫৮।
এ গেল ছিহাহ ছিত্তার ইমামগণের মাজহাব।
অন্যান্য ইমামগণের মাজহাব নবাব ছিদ্দীক হাসান খান সাহেবের আল-হিত্তা থেকে।
╚►৭। মিশকাত শরিফ প্রণেতা সাফেয়ী, পৃঃ১৩৫
╚►৮। ইমাম খাত্তাবী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৫
╚►৯। ইমাম নববী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৫
╚►১০। ইমাম বাগভী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৮
╚►১১। ইমাম ত্বহাবী হানাফী পৃঃ১৩৫
╚►১২। বড় পীর আঃ কাদের জিলানী রহঃ হাম্বলী, পৃঃ ৩০০
╚►১৩। ইমাম ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী, পৃঃ ১৬৮
╚►১৪। ইবনে কায়্যিম রহঃ হাম্বলী, পৃঃ১৬৮
╚►১৫। ইমাম আঃ বার রহঃ মালেকী, পৃঃ১৩৫
╚►১৬। ইমাম আঃ হক রহঃ হানাফী, পৃঃ১৬০
╚►১৭। শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহঃ হানাফী, পৃঃ ১৬০-১৬৩
╚►১৮। ইমাম ইবনে বাত্তাল মালেকী, পৃঃ২১৩
╚►১৯। ইমাম হালাবী রহঃ হানাফী পৃঃ২১৩
╚►২০। ইমাম শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুদদায়েম রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ২১৫
╚►২১। ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী রহঃ হানাফী, পৃঃ২১৬
╚►২২। ইমাম যারকানী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ২১৭
╚►২৩। ইমাম ক্বাজী মুহিব্বুদ্দীন হাম্বলী, পৃঃ ২১৮
╚►২৪। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী, পৃঃ২১৯
╚►২৫। ইমাম বুলকিনী শাফেয়ী, পৃঃ ২১৯
╚►২৬। ইমাম মার্যুকী মালেকী পৃঃ ২২০
╚►২৭। ইমাম জালালুদ্দীন বকরী শাফেয়ী, পৃঃ২২০
╚►২৮। ইমাম কুস্তলানী শাফেয়ী, পৃঃ২২২
╚►২৯। ইমাম ইবনে আরাবী মালেকী, পৃঃ ২২৪
এমন কি তাদের মডেল আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদীকে ও হাম্বলী বলে উল্লেখ করেছেন তার আল্-হিত্তাতু ফিস সিহাহিস সিত্তাহ'র ১৬৭ পৃষ্ঠায়।
এখন কি তাহলে উল্লেখিত ইমাম, মণীষীদেরকে মাজহাব মানার কারণে বর্জন করতে হবে?
চার ইমামই সঠিক ইমাম তাহতাবী রহঃ বলেনঃ من كان خارجا من هذه المذاهب الأربعة فهو من اهل البدعة والنار তথা যে ব্যক্তি এ চার মাযহাব [হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী] থেকে বেরিয়ে যাবে, সে বেদআতি এবং জাহান্নামী। {তাহতাবী আলাদ্দুর}
عن ابراهيم بن ميسرة قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم : من وقّر صاحب بدعة فقد اعان علي هدم الاسلام .
[ رواه البيهقي، مشكوة ص ٣١ ]
অর্থঃ- হযরত ইবরাহীম ইবনে মাইসারা হতে বর্নিত-তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিদআতকারীকে সম্মান করবে, সে ইসলাম ধ্বংস সাধনে সাহায্য করল।
[ বাইহাকী, মিশকাত ৩১ পৃঃ ]
আল্লাহ তাআলা স্বরলমণা মুসলমানদের লা-মাযহাবি বিদআতিদের কবল থেকে হেফাজত ফরমান।
والله اعلم بالصواب
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!