Sunday, May 28, 2017

মাত্র ৩০ দিনে হাফেজ হন আল্লামা আতহার আলী রহ.

আল্লামা আতহার আলী রহ. দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম কৃতিসন্তান। জন্ম ১৮৯১ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের ঘুঙ্গাদিয়ায়। বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন এবং আত্মশুদ্ধির জন্য হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে তার সান্নিধ্যে থেকে কঠোর মুজাহাদার মাধ্যমে অল্প সময়েই খেলাফত লাভ করেন।নিজ মুর্শিদের নির্দেশে তিনি দ্বীনি শিক্ষার প্রসারে কিশোরগঞ্জ চলে আসেন। এখানেই তার কর্মবহুল জীবনের সূত্রপাত ঘটে।

অবিভক্ত পাকিস্তানে ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. ও শিব্বির আহমাদ উসমানী রহ.-এর এ শিষ্য যখন কিশোরগঞ্জ শহরে জামিয়া ইমদাদিয়া ও শহিদী মসজিদ কেন্দ্রিক ধর্মীয় ও সমাজসংস্কারের কাজে ব্যস্ত তখনই তিনি স্বীয় উস্তাদের নির্দেশে এ মসজিদ কেন্দ্রিকই আলেমদের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈকিত প্লাটফর্ম তৈরি করতে সক্ষম হন।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষকপ্রজা পার্টি ও মাওলানা আতহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের এমএনএ ও এমপি নির্বাচিত হন।

জাতীয় এ্যসেম্বলিতে ৪টি এবং প্রাদেশিক এ্যসেম্বলিতে ৩৬টি আসন লাভ করেছিল এবং কেন্দ্রীয় এ্যসেম্বলির স্পিকার ও ১জন মন্ত্রী এবং প্রাদেশিক এ্যসেম্বলির ৩জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিল নেজামে ইসলাম থেকে। কিশোরগঞ্জ শহরের বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও পাকা রাস্তা-ঘাটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় তারই হাত ধরে।

বাল্যকালেই তিনি তার পিতার কাছে কোরআবনুল কারিম শিক্ষা করেন। কোরআনে দখল ছিল তার অসামান্য। প্রতি রমজানেই তিনি থানাভবন যেতেন। থানবী রহ. নিজেই খতমে তারাবিতে ইমামতি করতেন এবং অনেরক দক্ষ হাফেজদের লোকমাও (সংশোধনী) গ্রহণ করতেন না অথচ একদিন আতহার আলী রহ. লোকমা দিলে তিনি গ্রহণ করেন এবং নামাজ সমাপনান্তে কে লোকমা দিল তা জানতে চান। উত্তরে উপস্থিত লোকেরা বললেন ‘আতহার আলী সিলেটি’। থানবী রহ. দুআ করে বলেন, ‘আল্লাহ তাকে খুব শিঘ্রই হাফেজে কোরআন বানিয়ে দেবেন।’

ঘটনাক্রমে ১৯২১ সালে আতহার আলী রহ. থানাভবন যেতে পারেননি। নিজ গ্রামের মাতুব্বর শায়েস্তা মিয়া তাদের মসজিদে খতমে তারাবীর জন্য হাফেজ আনার জন্য অনুরোধ করেন। হজরত রহ. মুচকি হেসে বলেন, ‘এতই যখন ইচ্ছা তাহলে মসজিদে আসবেন। ইনশা আল্লাহ খতমে তারাবির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

রমজানের প্রথমদিন ইশার নামাজে এসে হাফেজ না পেয়ে এলাকাবাসী হতাশ। হাফেজ নেই, তাহলে আতহার আলী যে বলল ‘ব্যবস্থা হবে!’ মাওলানা আতহার আলী রহ. তাদেরকে জানালেন যে হাফেজ না পেয়ে তিনি নিজেই খতমে তারাবি পড়ানোর নিয়ত করেছেন এবং আজই তা শুরু হবে।

লোকেরা বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে হাফেজ না হয়ে একজন লোক কী করে খতমে তারাবি পড়াবে! সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে নামাজে দাড়িয়ে প্রথম পারা তিলাওয়াত করেন। এভাবেই তিনি প্রতিদিন এক পারা করে মুখস্থ করে খতমে তারাবি পড়িয়ে রমজানের এক মাসেই হাফেজ হয়ে যান।

তথ্যসূত্র : হায়াতে আতাহার


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!