বিজেপি শাসিত হরিয়ানার বল্লবগড়ে ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর হামলায় জুনাইদ (১৬) নামে এক মুসলিম তরুণ নিহত হয়েছে।
শাকির এবং হাসিম নামে জুনাইদের দু’ভাই গুরুতর আহত অবস্থায় দিল্লির এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
#জুনাইদ,#হাসিম ও #শাকির বৃহস্পতিবার রাতে ঈদের বাজার করে দিল্লির তুঘলঘাবাদ থেকে বল্লভগড়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিল।
ওই তরুণরা ট্রেনে উঠতেই কয়েকজন যাত্রী তাদের হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে উত্তপ্ত কথাবার্তাসহ গালিগালাজ করে। এ সময় এক যাত্রী ছুরি দিয়ে আঘাত করলে রক্তাক্ত হয় জুনাইদ। এরপর আশাবতী স্টেশনে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জুনাইদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অন্য একটি সূত্রে পাওয়া খবর, হামলাকারীরা যখন ওই তিন ভাইকে স্টেশনে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তখন তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলপুলিশ জিআরপি’র সাহায্য চাইলেও জিআরপি তাদের সাহায্য করতে অস্বীকার করে।
ওই তরুণদের ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করাসহ তাদের শারীরিক নিগ্রহ করে ট্রেনের কয়েকজন নিত্যযাত্রী। অতিষ্ঠ হয়ে একজন প্রতিবাদ করতেই তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উত্যক্তকারীরা। মারধরসহ ছুরি দিয়েও কোপানো হয় তাদের। আক্রান্ত তরুণরা গরুর গোশত নিয়ে যাচ্ছে এমন গুজব রটিয়ে দিলে মারমুখী জনতা তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
নিহত তরুণের জন্য শোকার্তরা
আক্রান্ত তরুণদের বল্লভগড় স্টেশনে নামার কথা থাকলেও ধর্মান্ধ ট্রেনযাত্রীরা তাদের গন্তব্যস্থলে নামতে দেয়নি অধিকন্তু বেধড়ক মারধর চলতে থাকে। প্রবল রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় জুনাইদের। অন্য দুই ভাইও গুরুতর আহত হয়। ট্রেন বল্লভগড় স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হামলাকারীরা তাদের ট্রেন থেকে রেললাইনের ধারে ঠেলে ফেলে দেয়। হামলাকারীরা তাদের দাড়িও টেনে ছিঁড়ে দিতে চাচ্ছিল।
জুনাইদের বাবা জালালউঁদ্দিন বলেন, ‘তুঘলকাবাদ থেকে নিত্যযাত্রীরা ছেলেদের মাথায় টুপি দেখে তাদের আসন থেকে উঠে যেতে বলে। হত্যাকারীরা তাদের অপরিচিত এবং ওদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না।’
জালালুদ্দিন পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসা হাজী আলতাফ বলেন, ‘জুনাইদের উপরে ছুরি নিয়ে হামলা করলে তার অন্য সাথীরা পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করলেও কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তাদের এমনভাবে মারধর করা হয় যে ট্রেনের কামরা এবং তাদের পোশাক রক্তে ভিজে ছিল।’
রেলের কর্মকর্তারা বল্লভগড় পৌঁছে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন।
হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় আহত মুসলিম তরুণ শাকির
আহত শাকিরকে উদ্ধৃত করে আজ (শনিবার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, কিছু যুবক তাদের পোশাক দেখে খারাপ মন্তব্যসহ গরুর গোশত খাওয়া লোক বলে বলতে থাকে। তারা তার মাথার টুপি খুলে ফেলে দেয় এবং তার ভাইয়ের দাড়ি ছিঁড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের গ্রামে গরুর গোশত রান্না পর্যন্ত হয় না কিন্তু তারা বারবার গরুর গোশত নিয়ে অপবাদ দিতে থাকে। তারা বল্লভগড় পৌঁছাতেই তাদের উপরে ছুরি নিয়ে হামলা করা হয়।
শাকির গণমাধ্যমকে বলে, এক ব্যক্তি প্রথমে জুনাইদের উপরে কয়েকবার ছুরি নিয়ে হামলা করে এবং পরে হাশিম এবং তার উপরে হামলা চালায়। শাকিরকে পাঁচ বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। তার বুকেও ছুরি দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়।
নৃশংস ওই হামলাকে কেন্দ্র করে সিপিআই (এম)পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাত, মুহাম্মদ সেলিম এবং দলটির দিল্লি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশা শর্মা শুক্রবার সকালে হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
সিপিআই (এম) পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন অপরাধের ঘটনাই প্রমাণ করছে, বিজেপি-আরএসএসের শাসনে গণধর্মান্ধতার প্রবণতা বাড়ছে। বিজেপি শাসনামলে হরিয়ানায় এর আগেও ট্রেনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ ধরনের উসকানিমূলক ঘটনা ঘটলেও সরকার কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের অপরাধকেই প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
দলটির পক্ষ থেকে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে অপরাধীদের শাস্তিসহ আক্রান্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!