হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের খতমে বোখারি ও দোয়া মাহফিলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, যেভাবে সারা দেশের মানুষ আল্লাহর দ্বীনের ইজ্জত রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শহীদ হয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন, আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় দেখেছেন। এ দেশের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে, ইসলাম ও ঈমানের হেফাজতের জন্য রক্ত দিয়েছে। তারা কোনো গদির জন্য বা কাউকে গদিতে বসানো বা নামানোর জন্য শহীদ হয়নি। নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আপনারা যে জিহাদ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। ইসলাম ও দেশ রক্ষায় ওলামায়ে কেরামের এই রক্ত ও ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। গতকাল শুক্রবার উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) সমাপনী বর্ষের বোখারি শরিফের শেষ কাসের পর আখেরি মুনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী কাস ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন দেশের শীর্ষ আলেম হেফাজতে ইসলামের আমির ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস পীরে কামেল আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে আসর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই দ্বীনি সমাবেশে দাওরায়ে হাদিসের (টাইটেল) সমাপনী দরস সম্পন্ন হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় হাদিসশাস্ত্রের বিশুদ্ধ ও প্রধান কিতাব বোখারি শরিফের আখেরি দরস বা সমাপনী কাস শেষ হয়। মাওলানা নূরুল আলম ও মাওলানা আব্দুল্লাহর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, মাওলানা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ প্রমুখ। দাওরায়ে হাদিস বিদায়ী কাসের ছাত্রদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তরুণ আলেম মাওলানা মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। বিকেল সাড়ে ৩টায় হাদিসশাস্ত্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত গ্রন্থ সহীহ বোখারি শরিফের আখেরি দরস শুরু হয়। দরসের শুরুতে আখেরি হাদিসের পুরো সনদসহ মতন পাঠের পর হজরত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী (দা.বা.) ছাত্রদের উদ্দেশে হাদিসের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। আলোচনায় হাদিসের বিশুদ্ধ কিতাব বোখারি শরিফ ও বোখারি শরিফের রচয়িতা ইমাম আবু আব্দিল্লøাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারির (রাহ.) কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইমাম বোখারি (রাহ.) দীর্ঘ ১৬ বছর পর্যন্ত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ১,০৮০ জন উস্তাদ থেকে অর্জনকৃত ছয় লাখ হাদিস থেকে বাছাই করে ৭,২৭৫টি হাদিস সঙ্কলন করেছেন। প্রত্যেক হাদিস লেখার আগে গোসল করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে এই দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! হাদিস যদি ভুল হয়, তাহলে শুদ্ধতা অন্তরে ঢেলে দিন। রওজায়ে আক্বদাসের পাশে বসে ৩,৩৮৮টি বাব (অধ্যায়) নির্ধারণ করেছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তরুণ আলেমদেরকে উদ্দেশ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, যেভাবে সারা দেশের মানুষ আল্লাহর দ্বীনের ইজ্জত রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শহীদ হয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় দেখেছেন। এ দেশের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে, ইসলাম ও ঈমানের হেফাজতের জন্য রক্ত দিয়েছে। তারা কোনো গদির জন্য বা কাউকে গদিতে বসানো বা নামানোর জন্য শহীদ হয়নি। নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আপনারা যে জিহাদ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। ইসলাম ও দেশ রক্ষায় ওলামায়ে কেরামের এই রক্ত ও ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। এই নাস্তিক্যবাদীরা দেশে যা শুরু করেছিল, আর কিছু দিন যদি ওরা এসব করতে পারত, তবে এই বাংলাদেশে ইসলাম ও ঈমান বাকি থাকত না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী আলেমদের উদ্দেশ করে বলেন, মৃত্যু আমাদের একদিন অবশ্যই হবে। সুতরাং মুসলমান কখনো মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় না। আর সেই মৃত্যুটা যদি শাহাদতের মৃত্যু হয়, তা তো একজন মুসলমানের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফী তরুণ আলেমদের সতর্ক করে বলেন, ঈমান-আকিদা ও ইসলামের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ যেন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়, সে দিকে নজর রাখবেন। কারণ, মুসলমানরা সুশৃঙ্খল জাতি। ইসলামে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। খতমে বোখারি ও দোয়া মাহফিলে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা কাতেব সুলায়মান আরমান, মাওলানা শফিউল আলম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক), স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ শীর্ষপর্যায়ের ইসলামি নেতৃবৃন্দ, ওলামা-মাশায়েখ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশত তৌহিদি জনতা শরিক হন। দরস চলাকালীন সুবিশাল শিক্ষাভবন, আশপাশ অন্যান্য শিক্ষাভবন, ছাত্রাবাস ও মাদরাসা ক্যাম্পাসে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দরস ও হিদায়াতি বয়ান শেষে আল্লামা শাহ্্ আহ্্মদ শফী বিদায়ী ছাত্র, উপস্থিত মুসল্লি এবং দেশ ও মুসলিম জাতির কল্যাণ ও শান্তির জন্য বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। মুনাজাতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গুরুতর অসুস্থ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। মুনাজাত পরিচালনার সময় ‘আমিন’ ‘আমিন’ রবে সমগ্র জামিয়া ক্যাম্পাসে কান্নার রোল পড়ে যায়। বিদায়ী ছাত্ররা মা-হারা সন্তানের মতো অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!