Wednesday, April 8, 2020

শবে বরাতের আমল ও করণীয় (পর্ব:০৪) মাওলানা সাঈদ আহমদ (দা.বা.)



আল্লাহ পাক শ‌বে বরা‌তে রহমত ও মাগফিরাতের দরজা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করেন, যা গ্রহণে ব্যস্ত হওয়া বান্দার জন্য অতীব প্রয়োজন। এখন জানার বিষয় হল, এর পদ্ধতি কী হবে বা এর জন্য শরীয়তের কোন দিক-নির্দেশনা আছে কি না? এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করছি :
عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَامَ رَسُولُ اللهِ  مِنَ اللَّيْلِ يُصَلِّي، فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ قُبِضَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ ذَلِكَ قُمْتُ حَتَّى حَرَّكْتُ إِبْهَامَهُ فَتَحَرَّكَ فَرَجَعْتُ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، وَفَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ: يَا عَائِشَةُ, أَوْ يَا حُمَيْرَاءُ! ظَنَنْتِ أَنَّ النَّبِيَّ خَاسَ بِكِ؟ قُلْتُ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ! وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ قُبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ، فَقَالَ: " أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ " قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: " هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ ". 
رواه البيهقي في "شعب الإيمان" (৩৫৫৪) وقال: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ, وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ. وَاللهُ أَعْلَمُ،
অর্থ : “হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা! তোমরা কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি ইনতিকাল করেছেন কিনা। নবীজী সা. জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সা. তখন ইরশাদ করলেন, “এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (তথা শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থনাকারীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।”
(শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৫/৩৬১)

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ। তবে মনে রাখতে হবে যে, কতিপয় অনির্ভরযোগ্য ওযীফা বা বই-পুস্তকে ‘শবে বরাতের নামায’ এর নামে যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে “অর্থাৎ ১২ কিংবা ১৬ রাকাআত অথবা এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে সূরা ইখলাস বা এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে” এগুলো ঠিক নয়, হাদীস শরীফে নামাযের এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।এ সংক্রান্ত যেসব বর্ণনা রয়েছে, সেগুলোকে মুহাদ্দিসগণ মাওযূ তথা জাল বলেছেন। কাজেই এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাআত করে পছন্দ মতো সূরা মিলিয়ে যত রাকাআত সম্ভব পড়া।

>> রাত্রি জাগরণের অর্থ ও মর্ম <<

শবে বরাত পালন বা রাত্রি জাগরণের অর্থ ও মর্ম কী বা এ থেকে উদ্দেশ্য কী? এ প্রসঙ্গে ফিকহের প্রায় কিতাবে যা বলা হয়েছে, তা আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রাহ. (মৃত্যু ১২৫২ হি.) এর শব্দে উল্লেখ করছি :  
ويحصل القيام بالصلاة نفلا فرادى من غير عدد مخصوص، وبقراءة القرآن، والأحاديث وسماعها، وبالتسبيح والثناء، والصلاة والسلام على النبي  الحاصل ذلك في معظم الليل، وقيل بساعة منه.
অর্থাৎ “রাত্রি জাগরণের তাৎপর্য এই যে, রাতের অধিকাংশ সময়ে, (কারো কারো মতে,) কিছু অংশে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা ব্যতীত একাকী নফল নামায আদায় করা, কুরআন-হাদীস তেলাওয়াত করা বা শুনা, তাসবীহ পাঠ করা এবং নবীজি সা. এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করা।” (ফাতাওয়ায়ে শামী, ইবনে আবেদীন ২/৪৬৯)
 
এ আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ রাত্রে ইবাদত করার জন্য বিশেষ কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা তথা নির্দিষ্ট সংখ্যার (বারো কিংবা ষোল রাকাত) নামায জামাআত সহকারে আদায় করা অথবা সাওয়াবের নামে কিংবা অন্য উদ্দেশ্যে হালুয়া-রুটি, বিরানী-তবারুক বিতরণ করা ইসলামী শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

চল‌বে...

‌লি‌খে‌ছেন
মাওলানা সাঈদ আহমদ (দা.বা.)
উস্তাদ, দারুল উলূম হাটহাজারী।

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!