Friday, February 17, 2017

ফেরাউনের মমি গবেষণা ও ড. মুরিস বুকাইলি'র চাঞ্চল্যকর ইসলাম গ্রহণ!!

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিত্রা (১৯৮১-১৯৯৫) আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্তিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন।মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের লাশ নিয়ে আসা হলো প্যারিসে।প্লেনে
র সিড়ি থেকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন।ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়না তদন্ত করে সেটা নিয়ে গবেষণা করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে!
মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি।থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন করতে চেয়েছিল, আর ড. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে, কিভাবে ফিরাউন মারা গেল! পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসলো।যাতে বলা হয়েছে তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর ইহাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, সে ডুবে মারা গিয়েছিল আর মৃত্যু বরণের সঙ্গে সঙ্গে লোহিত সাগর থেকে তোলা হয়েছিল।তারপর লাশ দ্রুত মমি করা হয়েছিল।এখানে ফিরাউনের মমিটি ড. মরিস বুকাইলিকে হতবুদ্ধি করে দিল -যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকলো।যা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে।কারণ আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে থাকে।ড. মরিস বুকাইলি ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করলেন যাতে তিনি বললেন 'এটা একটা নতুন আবিস্কার।সেই সময় তাকে কেউ ফেরাউনের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা না করার পরার্মশ দেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর প্রতিবাদ করে বললেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানানো যাবেনা!
কেউ একজন তাকে বলল যে কুরআনে ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এসেছে।এই ঘটনা শুনে ড. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? এই মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে! আর প্রাচীন আরবেরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়! ড. বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে? বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ.)-এর পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই।তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবতে ছিলেন যে, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.) এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন? এবং আরো অনেক কিছু!
ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তাওরাত আনালেন এবং সেটা পড়লেন।তাওরাতে বলা আছে, পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল।যারা সমুদ্রে ঢুকলো তাদের কেউই বাঁচতে পারল না।ড. বুকাইলি আশ্চর্য্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা নাই।অতপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ময়নাতদন্তে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন।তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেন 'অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে।আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না' [আল কুরআন; সুরাঃ ১০, আয়াতঃ ৯২]
তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে তখনই ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ কন্ঠে ঘোষনা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী সুবহানাল্লাহ! ইসলাম গ্রহনের পর রচনা করেন বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান।বইটিতে তিনি এর অথার ব্যাখ্যা দেন।বইটি লিখার পর পশ্চিমা বিশ্বে বিপুল সাড়া পড়ে।ড. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়।ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রাকটিস করেন নি বরং এই সময়ে তিনি আরবী ভাষা শিখেছেন আর পবিত্র কুরআনে কোন বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করেছেন।।সবশেষে তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারলেন।যাতে বলা আছে 'এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই।এটা প্রজ্ঞাময়'!!

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!