Saturday, April 1, 2017

বর্তমান বিশ্বে আহলে হাদীস বলতে কিছু নাই

এখানে দুটি কথা ৷
(1) বর্তমান বিশ্বে আহলে হাদীস বলতে কিছু নাই ৷
(2) বর্তমান যামানায় আহলে হাদীস হওয়া সম্ভবও নয় ৷

আসুন প্রথম বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি ৷
বর্তমান পৃথিবীতে আহলে হাদীস না থাকার কারণ হলো , আহলে হাদীস অর্থ  যদি ধরা হয় হাফেজে হাদীস বা হাদীস সংকলনকারী বা হাদীসের মহা পন্ডিত ৷ তাহলে এমন লোক  বর্তমান পৃথিবীতে একজনও নাই ৷ আর যদি আহলে হাদীস বলতে কথিত লা- মাযহাবী ভাইদের বোঝানো হয়, তাহলে এটা সঠিক হবেনা ৷ কারণ লা মাযহাবীদের দাবী হলো হাদীস ছাড়া অন্য কিছু মানিনা ৷ অথচ বর্তমান আহলে হাদীস পরিচয়দানকারী সম্প্রদায়টির সিংহভাগ লোক হাদীসের  কিছুই জানেনা ৷
এদের মাঝে যারা শিক্ষিত তারা দু - একটি চটি বই পড়ে বিতর্কিত কিছু কথাবার্তা শিখে ৷ মুল হাদীসের কিতাব পড়বে তো দূরের কথা স্বপ্নেও দেখেনা ৷ এদের সর্বোচ্চ দৌড় বুখারী - মুসলিমের বাংলা অনুবাদ ৷ সেই অনুবাদ পড়ে তারা আহলে হাদীস দাবী করে ৷ এজন্য বুখারী শরীফের সর্ব প্রথম অনুবাদক , আমার প্রাণপ্রিয় শায়খ  ও উস্তাদ , শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ• বলতেন, ৫০ বছর বুখারী পড়াইলাম আহলে হাদীস হতে পারলাম না ৷ আর এখন স্কুল কলেজের কিছু তরুন আমার অনুবাদ পড়ে আহলে হাদীস হয়ে যায় ৷
দুঃখ রাখি কোথায় ? আর যারা এদের মধ্যে মুর্খ, তারা শিক্ষিত লোকদের কথামতো চলে, এর নামইতো তাকলিদ বা মাযহাব মানা ৷ আমার মসজিদে একদিন এক ভ্যান ওয়ালা মুছল্লীকে জিজ্ঞাসা করলাম এভাবে নামাজ পড়েন কেন  ? বলল: আমি আহলে হাদীস ৷

আমি বললাম আহলে হাদীস মানে ? সে বলে, আমি হাদীস ছাড়া কিছু মানিনা ৷ আমি   বললাম হাদীস কি জিনিস দেখেছেন কখনো  ? সে বলে না ৷ আমি বললাম, তাহলে আপনি আহলে হাদীস হলেন কি করে  ? সে বলে আমাদের হুজুরের বলেছে ৷
আমি  বললাম, হুজুরের বলেছে এটা শুনে আপনি আহলে হাদীস হয়ে গেলেন আর আমি দাওরায়ে হাদীসে মুসলিম শরীফ পড়িয়ে আহলে হাদীস হতে পারলাম না ৷ আপনি বরং না জেনে শুধু হুজুরদের কথায় চলার কারনে তাকলিদ করে মাযহাবী হলেন ৷ সে বলে, না আমি আহলে হাদীসই ৷ এই হচ্ছে বর্তমান আহলে হাদীস ভাইদের অবস্থা ৷ এদের মধ্যে হাজারে দু- এক জন যদি কোন রকম হাদীস পড়তে পারে, তাও নাকে দরি বাধা ৷ আলবানী কি বলেছে এর বাহিরে কিছু বলা বা মানা যাবে না ৷ আরে ভাই এর নামইতো তাকলিদ বা মাযহাব মানা ৷ আপনি আলবানী আর নায়েকের কথার বাহিরে কিছু মানবেন না ৷ তাহলে আপনি বড় মাযহাবী ৷ মানার কথা ছিল কাকে আর মানেন কাকে ? দ্বিতীয় বিষটি হলো,  বর্তমান বিশ্বে আহলে হাদীস হওয়া সম্ভব নয় ৷
এর কারণ বর্তমান আধুনিক যুগে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যার অভাব নেই ৷ নিত্য নতুন আবিষ্কার ও তার ব্যবহারে শরয়ী সমাধান পেতে হলে, কোন ব্যক্তির মতামত ছাড়া সরসারি শুধু হাদীস দ্বারা দেয়া সম্ভব নয় ৷ যেমন: ব্যাংক, বীমা, শেয়ার বাজার ব্যবসার বৈধ পদ্ধতি কি ? এগুলো সরাসরি হাদীস দ্বারা দেয়া সম্ভব নয় ৷ হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যামুলক উত্তর দিতে হবে ৷ আর মাযহাবের ইমামগণ এটাই করেছেন ৷ তাই আধুনিক সমস্যাবলীর যেমন কোন ব্যক্তির মতামত ছাড়া সমাধান দেয়া যায় না, ঠিক একই কারণে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও মাযহাব মানা ছাড়া শরয়ী মাসয়ালাগুলোর সমাধান দেয়া যায় না ৷
উদাহরণত,
১.নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি ? ২.নামাজ ভাঙার কারণ কয়টি ওকি কি ?
৩.নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি ?
৪.অযু ভাঙার কারণ কয়টি ও কি কি ?
৫.রোজা ভাঙার কারণ কয়টি ও কি কি ?
এগুলো কোন ব্যক্তির মতামত ও ব্যাখ্যা ছাড়া, সরাসরি কোন সহিহ হদীস দিয়ে কিয়ামত পর্যন্তও কোন ব্যক্তি জবাব দিতে পারবে না ৷ অথচ এগুলো এমন জরুরি বিষয় যেগুলো ছাড়া, কোন ব্যক্তির নামাজ, রোজা কিছুই হবেনা  ৷ অতএব,সমস্ত   আধুনিক ও শরয়ী অনেক সমস্যার সমাধান যেহেতু কোন ব্যক্তির মতামত গ্রহন ছাড়া দেয়া সম্ভব না ৷ তাই বর্তমান যুগে মাযহাব মানা ছাড়া কোন ব্যক্তির পক্ষে আহলে হাদীস হওয়াও সম্ভব না ৷ বাস্তবে আহলে হাদীস ভাইয়েরাও এই সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে  হয়ত আলবানী র• অথবা স্বয়ং আবু হানিফা র• এর মাযহাব মেনে কাজ করে, কিন্তু মুখে স্বীকার করেনা ৷ যাত্রাবাড়ীসহ আহলে হাদীসের অনেক মাদরাসায় গোপনে ফিকহে হানাফী পড়ানো হয় ৷ আমলও করা হয় কিন্তু  মুখে বলে আমরা আহলে হাদীস ৷ মুল সমস্যা হলো, আবু জাহেলের পক্ষে যেমন মুহাম্মদ সা•কে সত্য নবী স্বীকার করা সম্ভব ছিল না (অথচ সে এটা মনেমনে বিশ্বাস করত) ঠিক তদ্রূপ লা-মাযহাবী ভাইদের পক্ষেও মাযহাব স্বীকার করা সম্ভব না ৷ (অথচ তারা এটা মনেমনে বিশ্বাস করে এবং আমলও করে ৷)


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!