Monday, March 6, 2017

হাদীসের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

হাদীস : রাসুল (স:) এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা,কাজ এবং অনুমোদনকে হাদীস বলে। মূল বক্তব্য হিসাবে হাদীস তিন প্রকার 
১) কাওলী হাদীস : রাসুল(স:) এর পবিত্র মুখের বানীই কাওলী হাদীস। 
২) ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (স:) স্বয়ং করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস। 
৩) তাকরীরী হাদীস : সাহাবীদের যে সব কথাও কাজের প্রতি রাসূল (স:) সমর্থন প্রদান করেছেন তাহাই তাকরীরী হাদীস। 

রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার: ১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব। 
২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে। 
৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: হাদীস গরীব আজিজ এবং খবরে মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীদকে একত্রে খবরে আহাদ বলে, প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহিদ বলে।
 আযীয হাদীস: যে হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্তত: দুজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন, তাকে আযীয হাদীস বলে। গরীব হাদীস: যে হাদীস কোন যুগে মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন। তাকে গরীব হাদীস বলে।

রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার 
১। মারফু হাদীস: যে হাদীসের সনদ রাসুল(স:) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে। 
২। মাওকুফ হাদীস : যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে। 
৩। মাকতু হাদীস: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে। 

রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার। 
১। মুত্তাছিল হাদীস: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে। 
২। মুনকাতে হাদীস: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে। 

মুনকাতে হাদীস তিন প্রকার: 
১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে। 
২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে। 
৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে। 

বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার
 ১। সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে। 
২। হাসান হাদীস: সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে। 
৩। যায়ীফ হাদীস: হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে। হাদীসে কুদসী: যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল(স:) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল(স:) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে। মুদাল্লাছ হাদীস যে হাদীসের সনদের দোষ ক্রটি গোপন করা হয় তাকে মুদাল্লাছ হাদীস বলে। 

সুনান: হাদীসের ঐ কিতাবকে সুনান বলা হয় যা ফিক্হ এর তারতীব অনুয়াযী সাজানো হয়েছে। সুনানে আরবায়া: আবুদাউদ শরীফ+ নাসায়ী শরীফ+তিরমীযী শরীফ+ ইবনে মাজায় শরীফ এই চার হাদীস গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়। 

মুসনাদ: হাদীসের ঐ কিতাবকে বলা হয় যা সাহাবায়ে কিরামের তারতীব অনুয়াযী লিখা হয়েছে। সহীহাইন: বুখারী শরীফ ্ও মুসলীম শরীফকে এক সাথে সহীহাইন বলা হয়। মুত্তাফাকুন আলাইহি: ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র:) উভয়ে একই সাহাবী হতে যে হাদীস স্ব-স্ব প্রান্তে সংকল করেছেন তাকে মুত্তাফাকুন আল্লাইহি বলে। 

জামে: যে গ্রন্থে হাদীস সমূহকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যার মধ্যে আকাইদ ছিয়ার তাফসির আহকাম, আদব, ফিতান, রিকাক ও মানাকিব এ আটটি অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলা হয় যেমন জামে তিরমিযী 
সনদ: হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে, 
মতন: হাদীসের মূল শব্দ সমূহকে মতন বলে। রেওয়ায়েত: হাদীস বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে। দেরায়েত: হাদীসের মতন বা মূল বিষয়ে আভ্যান্তরীন সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে যুক্তির কষ্টিপাথরে যে সমালোচনা করা হয় তাকে দেরায়েত বলে। রিজাল: হাদীস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে রিজাল বলে। 

শায়খাইন:মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় ইমান বুখারী(র:) ও মুসলিম (র:) কে শায়খাইন বলে। হাফিজ: যে ব্যাক্তি সনদও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হাফিজ বলে। হুজ্জাত: যে ব্যাক্তি সদন ও মতনের সকল বৃন্তান্ত সহ তিন লক্ষ্য হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হুজ্জাত বলে। হাকিম: যে ব্যাক্তি সনদ ও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ সকল হাদীস মুখস্থ করেছেন তাকে হাকিম বলে। সিহাহ্ সিত্তা: সিহাহ্ অর্থ বিশুদ্ব, সিত্তাহ অর্থ ছয়। সিহা সিত্তা এর আভিধানিক অর্থ হল ছয়টি বিশুদ্ব ইসলামী পরিভাষায় হাদীস শাসের ছয়টি নির্ভূল ও বিশুদ্ব হাদীস গ্রন্থকে এক কথায় সিহাহ্ সিত্তা বলা হয়। সিহাহ্ সিত্তা হাদীস গ্রন্থ গুলো এবং সংকলকদের নাম:

১। সহীহ বুখারী- ইমাম বুখারী (র:)- হাদীস সংখ্যা ৭৩৯৭ ২। 

সহীহ মুসলিম – ইমাম মুসলিম (র:) হাদীস সংখ্যা- ৪০০০ ৩।

 জামি তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী (র:) হাদীস সংখ্যা ৩৮১২ ৪।

 সুনানে আবুদাউদ (র:) ইমাম আবুদাউদ (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৮০০ ৫। 

সুনানে নাসায়ী – ইমাম নাসাই (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২ ৬। 

সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম ইবনে মাজাহ (র:) হাদীস- ৪৩৩৮ হাদীসের শ্রেণী বিভাগ: মুল বক্তব্য হিসেবে তিন প্রকার: 

১। কাওলী ২। ফেলী ৩। তাকরীর রাবীদের সংখ্যা হিসেবে তিন প্রকার: ১। খবরে মুতাওয়াতের ২। খবরে মাশহুর ৩। খবরে ওয়াহেদ রাবীদের সিলসিলা হিসাবে তিন প্রকার : ১। মারফু ২। মাওকুফ ৩। মাকতু রাবীদের পড়া হিসেবে দুই প্রকার: ১। মুক্তাসিল ২। মুনকাতে বিশ্বস্ততা হিসেবে তিন প্রকার: ১। ছহীহ্ ২। হাসান। ৩। জয়ীফ বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণ: 

১। হযরত আবু হুরায়রা (র:)হাদীস সংখ্যা ৫৩৭৪টি মৃত্যু৫৭হিজরী বয়স: ৭৮বছর 

২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (র:) হাদীস সংখ্যা ২২১০টি মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৬৭বছর ৩।

 হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(র:) হাদীস সংখ্যা ১৬৬০ মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৭১বছর 

৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর(র:) হাদীস সংখ্যা ১৬৩০ মৃত্যু ৭০ হিজরী বয়স: ৮৪বছর 

৫। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (র:) হাদীস সংখ্যা ১৫৪০ মৃত্যু ৭৪ হিজরী বয়স: ৯৪বছর 

৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক (র:) হাদীস সংখ্যা ১২৮৬ মৃত্যু ৯৩ হিজরী বয়স: ১০৩বছর 

৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী হাদীস সংখ্যা ১১৭০ মৃত্যু ৪৬ হিজরী বয়স: ৮৪বছর ৮। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র:) হাদীস সংখ্যা ৮৪৮ মৃত্যু ৩২ হিজরী বয়স:-

৯। হযরত আমর ইবনুল আস(র:) হাদীস সংখ্যা ৭০০ মৃত্যু ৬৩ হিজরী বয়স:- প্রসংগ কথা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সকল প্রশংসা কেবল মহান আল্লাহ রাবুল আলামিনয়ের, অসংখ্য দরুদ বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক ও নেতা রাসুল পাক (স:) ও তার বংশ ধরদের প্রতি এবং হাজার ও সালাম সে সব বীর মুজাহিদদের প্রতি, যারা যুগে যুগে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমার প্রাণ প্রিয় জ্ঞান পিপাসু মুমিন মুক্তাকী ভাই এবং বুনেরা আমি হাদীস শাসরের কতিপয় পরিভাষা আল্লাহর মেহের বানীতে এই জন্য লিখার প্রয়োজন মনে করলাম আমাদের অনেক বাংলাদেশী ভাই এবং বোনেরা কুয়েতে বসবাস করছি এদের ভিতর যারা আলেম তারা মাশাআল্লাহ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। কিন্তু যারা আলেম না কিন্তু কুরআন হাদীস পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে চান বিশেষ করে সেই ভাইয়েরা আশা করি অনেক উপকৃত হবেন। আল্লাহ পাকের দরবারে এই দোয়া কামনা করে শেষ করছি হে আমাদের মহান রব্ব তোমার দ্বীনের পথের আমদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন আমিন।

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!