বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাতার প্রধান পরিকল্পক মৃণাল হক। ঢাকা শহর ও দেশের বিভিন্ন ভার্সিটিতে বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন মূর্তি নির্মাণ করেছেন। ২০০২ সালে মৃণাল হক আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বক ভাস্কর্যটি। ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবুলি টওয়ার তারই শিল্পকর্ম। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নির্মিত দুর্জয় ভাস্কর্যসহ সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের সামনে নির্মিত কথিত ন্যায় বিচারের প্রতীক জাস্টিসিয়া (গ্রীক দেবী) তারই শিল্পকর্ম।
সুপ্রীম কোর্টের মূর্তি নির্মাতা মৃণাল হক বলেছেন, ‘সব কিছুকে মূর্তি বলে তা সরানোর দাবি মেনে নেয়াটা হবে আত্মসমর্পণ। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী । এরকম দাবি মেনে নিলে দেশে থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না।’
বাস্তবতা হলো মৃণাল হক দেশেই থাকেন না। পরিবার নিয়ে তিনি আমেরিকায় বসবাসের স্থায়ী সুযোগ পেয়েছেন। আমেরিকার বাসিন্দা হয়েছেন ১৯৯৫ সালে। তার স্ত্রী নাসরিন হক এবং পুত্র সৈকত হককে নিয়ে আমেরিকাতেই থাকেন।
১৯৯৫ সালে আমেরিকায় যাওয়ার পর মৃণাল হক খোদ মার্কিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। নিউইয়র্কের সরকারি টিভিতে তার এক সাক্ষাৎকার ২৬ বার এবং মার্কিন সরকারি চ্যানেল সিএনএন –এ ১৮ বার প্রচার করে। এরপর তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশে এসে নিজ শিল্পকর্ম সম্প্রসারণে মোড়ে মোড়ে, বিভিন্ন স্থাপনায় নির্মাণ করছেন বিতর্কিত ভাস্কর্য।
মৃণাল হকের জন্ম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ সালে রাজশাহীতে। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢারুকলা ইন্সটিটিউট ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে তিনি মাস্টার্র সম্পন্ন করেন।
সূত্র মতে, মৃণাল হক আমেরিকাতেই থাকেন, তবে বাংলাদেশে মূর্তি বানানোর জন্য মাঝে মাঝে আসেন। প্রত্যেকটি মূর্তি তৈরিতে সরকার দফতর থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা পান। একটি মূর্তি বানাতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৫-১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিল করেন দেড়-দুই কোটি টাকা। এসব নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ তিনি যাই করেন সেগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের নাম দেন। তাই এবিষয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।
কিন্তু এখন এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের অতি বাগাড়ম্বরে কলুষিত হতে চলছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘোষিত স্বাধীনতা যুদ্ধের ৬ দফায় মূর্তি স্থাপনের কোনো দফা বা ইঙ্গিত না থকলেও বর্তমান মতান্ধ সেক্যুলারপন্থীরা ভাস্কর্যকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। বিশেষ করে বিতর্কিত ভাস্কর মৃনাল হক ও বিতর্কিত লেখক লন্ডন প্রবাসী আব্দুল গাফফার চৌধুরী ভাস্কর্যকে মুক্তিযদ্ধের চেতনা উল্লেখ করে ইসলামি দলকে রাজাকার সংগঠন বলে আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, ভাষ্কর্য নির্মাণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা । আর এর বিরোধীপক্ষ পাকিস্তানী রাজাকার ও দেশ বিরোধী চক্র।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশে পাড়ি জমিয়ে অন্য দেশের স্থায়ী নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা কোন ধরনের চেতনা? ভিন দেশী নাগরিক হয়ে এ দেশীয় দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অহরহ রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আখ্যা দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের কোন ধারার চেতনা? অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে তারা কোন ধরণের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন মানুষকে?
এর আগেও ঢাকার হজক্যাম্পের সামনে তিনি লালনের ভাস্কর্য স্থাপন করেন। যার প্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করে আল্লাহ ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা হয়।
প্রশ্ন হলো, মৃনাল হক বাস করেন বাংলাদেশে। কিন্তু বাঙালিকে কতটা বুঝেন। একজন শিল্পীকে অবশ্যই তার দেশের তার এলাকা ও সংস্কৃতির চাহিদা বুঝে শিল্প কর্ম করতে হয়। কিন্তু তিনি সেটা না করে ইউরোপ আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন বাংলাদেশে।
মূলত মুসলিম প্রধান দেশে দেশীয় সংস্কৃতি, ঈমানি চেতনা ও দেশপ্রেম বিলুপ্ত করার বিদেশী গভীর চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছেন মৃণাল হকরা, এমনটিই মন্তব্য করছেন দেশের সচেতন সাধারণ নাগরিকরা।
ইসলামি সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল অনেকেই বলছেন, যদি এই ভাস্কর মৃণাল হককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা না হয়- তাহলে নানা অযুহাতে আরো ভাস্কর্য নির্মাণ করে মুসলিম স্থাপত্য ধ্বংস করবেন। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে তার নির্মিত মূর্তি অপসারিত হয়েছে সেহেতু অন্য স্থাপনা ও লোকালয়ে দেদারছে মূর্তি স্থপন করার অপকৌশল তিনি নিতেই পারেন। এ ব্যপারে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন অবস্থা পর্যবেক্ষন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে মূর্তি ছড়িয়ে দেয়ার মাষ্টার প্ল্যান তিনি হাতে নিয়েছেন। কারণ এটি একটি বড় মাপের ব্যবসা। একদিকে ভিনদেশি আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া, অন্যদিকে পকেট ভর্তি করার সুবর্ণ সুযোগ। ইতিমধ্যে তার মাধ্যমে দেশজুড়ে শত শত মূর্তি বানানো হয়েছে, এবং আরো সহস্রাধিক কাজ চলছে ।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!