শবে বরাত সংক্রান্ত যতগুলো বর্ণনা পাওয়া যায়, তা থেকে সুস্পষ্টভাবে একথা নিশ্চয় প্রমাণিত হয় যে, এ রাতে আল্লাহ পাকের রহমত ও মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। ফলে সর্বস্তরের মুসলমান ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু কয়েক শ্রেণীর হতভাগা ও কপাল পোড়া এমন রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা রহমতপূর্ণ রজনীতেও ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ কৃতকর্ম থেকে খালেস নিয়তে তাওবা করে ফিরে আসবে। এমন লোকের তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১। মুশরিক ২। হিংসুক ৩। অন্যায়ভাবে হত্যাকারী-খুনি ৪। যাদুকর-গণক ৫। বাদ্য বাজনাকারী ৬। ব্যভিচারিনী।
>> শবে বরাত ও শাবান মাসের রোজা<<
এখানে দু’টি বিষয়। একটি হচ্ছে শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা। আরেকটি হল শাবান মাসে রোজা রাখা। দ্বিতীয় বিষয় সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন,
مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ؛ إِلَّا رَمَضَانَ،
وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ.
"রাসূল সা. রমযানের পর সবচেয়ে বেশি শাবান মাসে রোজা রাখতেন।
অন্য হাদীসে এর কারণ বর্ণিত হয়েছে।"
যেমন হযরত উসামা রা. বলেন,
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ؟ قَالَ: ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَب وَرَمَضَانَ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الْأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.
أخرجه أحمد (২১৭৫৩)، والنسائي (২৩৫৭)، وحسنه الضياء في المختارة (১৩১৯)
"আমি রাসূল সা, থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি অন্য কোন মাসে (রমযান ছাড়া) এত বেশি রোজা রাখেন না, যে পরিমাণ রোজা শাবান মাসে রাখেন? তিনি বললেন, এটি (শাবান) রজব ও রমজানের মাঝে এমন একটি মাস, যে মাসে লোকেরা (আমল) থেকে গাফেল থাকে। অথচ এ মাসে বান্দার আমলসমূহ আল্লাহ তাআলার কাছে পেশ করা হয়। আর আমি একথা পছন্দ করি যে, আমি রোযাদার থাকাবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।"
সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয়, শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা চাই এবং শাবানের ২৮-৩০ তারিখ ব্যতীত যে কোন দিন রোজা রাখা উত্তম।
আর প্রথম বিষয় তথা শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা সম্পর্কে “সুনানে ইবনে মাজাহ”য় বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَلِيّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ : إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا؛ فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ، أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ، أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ، أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
"হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুলল্লাহ সা. বলেছেন, পনের শাবানের রাত (শবে বরাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও। আর দিনের বেলা (পরের দিন) রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। কে আছ মুসিবতগ্রস্ত? আমি তাকে মুসিবত থেকে মুক্তি দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন।"
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম যুরকানী রাহ. (মৃ. ১১২২ হি.) বলেন
"فقوموا ليلها" أي: أحيوه بالعبادة وانصبوا أقدامكم لله قانتين، "وصوموا نهارها" استحبابا فيهما. (شرح الزرقاني على المواهب اللدنية بالمنح المحمدية ১০/৫৬১).
অর্থাৎ অর্ধ শাবানের রাতে ভালভাবে ইবাদত করা ও পরের দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব।
(সুনানে ইবনে মাজা হাদীস নং ১৩৮৮)
>> শবে বরাতে বিদআত ও কুসংস্কার<<
১। আতশবাজী ২। মসজিদ-মাজার আলোকসজ্জা ৩। হালুয়া-রুটি ও মিষ্টি-বিরিয়ানী বিতরণ
লিখেছেন
মাওলানা সাঈদ অাহমদ (দা.বা.)
উস্তাদ, দারুল উলূম হাটহাজারী।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!