'আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা' নামক ৪৫ খণ্ড বিশিষ্ট সুবিশাল গ্রন্থের একস্থানে রয়েছে :
ذهب جمهور الفقهاء من الحنفية والشافعية والحنابلة إلى ندب إحياء ليلة النصف من شعبان
"শবে বরাতে রাত্রি জাগরণ করা (ইবাদত করা) অধিকাংশ হানাফী, শাফেয়ী ও হাম্বালী ফকীহ ও মুফতী সাহেবের মতে মুস্তাহাব।"
(আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা ২/২৩৫)
>>> হানাফী মাযহাব<<<
* আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরী হানাফী রাহ. (মৃ. ৯৭০ হি.) বলেন :
ومن المندوبات: إحياء ليالي العشر من رمضان, وليلتي العيدين، وليالي عشر ذي الحجة، وليلة النصف من شعبان، كما وردت به الأحاديث وذكرها في الترغيب والترهيب مفصلة
"রমযানের শেষ দশ রাতে, দুই ঈদের রাতে, জিলহজের প্রথম দশ রাতে ও অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব।"
(অাল বাহরুক রায়েক, ইবনে নুজাইম ২/৯২-৯৩)
* এভাবে ফিকহে হানাফীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী আল-হাসকাফী (মৃ. ১০৮৮ হি.) 'দুররুল মুখতার' গ্রন্থে, আল্লামা হাসান ইবনে আম্মার আশ-শারাম্বুলালী হানাফী (মৃ. ১০৬৯ হি.) ‘মারাকীল ফালাহ’তে ও শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (মৃ. ১০৫২ হি.) ‘মা ছাবাতা বিস-সুন্নাহ’ কিতাবে এই রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করাকে মুস্তাহাব উল্লেখ করেছেন।
(দুররুল মুখতার মাঅা রদ্দুল মুহতারর ২/৪৬৯)
* নিকট অতীতের প্রখ্যাত মুহাক্কিক আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী রাহ. (মৃ. ১৩০৪ হি.) ‘আল-আসারুল মারফু’আহ’ গ্রন্থে লিখেন
لا كلام في استحباب إحياء ليلة البراءة بما شاء من العبادات، وبأداء التطوعات فيها كيف شاء ... وفي الباب أحاديث أخر أخرجها البيهقي وغيره على ما بسطها ابن حجر المكي في "الإيضاح والبيان" دالّةً على أن النبي أكثر في تلك الليلة من العبادة والدعاء، وزار القبور ودعا للأموات. فيعلم بمجموع الأحاديث القولية والفعلية استحباب إكثار العبادة فيها، فالرجل مخير بين الصلاة وبين غيرها من العبادات، فإن اختار الصلاة فكمية أعداد الركعات وكيفيتها مفوضة إليه، ما لم يأت بما منعه الشارع صراحة أو إشارة.
অর্থাৎ “শবে বরাতে জাগ্রত থেকে যে কোন নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা মুস্তাহাব, এতে কোনো মতানৈক্য নেই। অতঃপর এ সম্পর্কে কিছু হাদীস দলীল স্বরূপ পেশ করে বলেন,এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত ও দু’আ করতেন। কাজেই এসমস্ত (قولية وفعلية) হাদীস থেকে সমষ্টিগতভাবে এ কথা বুঝা যায়, এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করা মুস্তাহাব। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে। চাই সে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামায আদায় করুক বা অন্য কোনো ইবাদতে মশগুল থাকুক।
(অাল-অাসারুল মারফুঅা ফিল অাখবারিল মাওযুঅা ৮১-৮২)
>>>>মালিকী মাযহাব<<<
* আল্লামা ইবনুল হাজ মালিকী রাহ. (মৃ. ৭৩৭) ‘আল মাদখাল’ এ লিখেন
فهذه الليلة وإن لم تكن ليلة القدر فلها فضل عظيم وخير جسيم, وكان السلف - رضي الله عنهم - يعظمونها ويشمرون لها قبل إتيانها، فما تأتيهم إلا وهم متأهبون للقائها، والقيام بحرمتها على ما قد علم من احترامهم للشعائر على ما تقدم ذكره، هذا هو التعظيم الشرعي لهذه الليلة.
অর্থাৎ “শবে বরাত যদিও শবে কদরের মত ফযীলতপূর্ণ নয়, তবুও এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। সালাফ তথা পূর্ববর্তীগণ রাতটির যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন এবং এর আগমনের পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রাতটির আগমন ঘটলে তাকে বরণ করে যথাযথ মর্যাদা দিতেন।”
(অাল মাদখাল ইবনুল হাজ ১/২৯৯)
>>>>শাফেয়ী মাযহাব<<<<
* ইমাম শাফিয়ী রাহ. (মৃ. ২০৪ হি.) তাঁর ‘আল উম্ম’ কিতাবে লিখেন- بلغنا أنه كان يقال: إن الدعاء يستجاب في خمس ليال: في ليلة الجمعة، وليلة الأضحى، وليلة الفطر، وأول ليلة من رجب، وليلة النصف من شعبان.
অর্থ: তিনি বলেন- আমাদের কাছে এ খবর পৌঁছেছে যে, পাঁচ রাতে দু’আ কবুল হয়। জুমার রাতে, ঈদুল আযহার রাতে, ঈদুল ফিতরের রাতে, রজব মাসের প্রথম রাতে এবং অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
(আল উম্ম ২/৪৮৫)
* প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনুস সালাহ রাহ. (মৃ. ৬৪৩ হি.) এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁর ফতওয়াতে লিখেন-
وَأما لَيْلَة النّصْف من شعْبَان فلهَا فضيلة وإحياؤها بِالْعبَادَة مُسْتَحبّ، وَلَكِن على الِانْفِرَاد من غير جمَاعَة.
"অর্ধ শাবানের রাতের ফযীলত রয়েছে। তাই এ রাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। তবে জামা’আত সহকারে নয়। বরং একাকীভাবে করবে।"
* শাফিয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইবনে হাজার হায়তামী রাহ. (মৃত্যু ৯৭৪ হি.) তাঁর “ফাতাওয়া” গ্রন্থে শবে বরাত সম্পর্কীয় একাধিক হাদীস উলেখ করার পর বলেন-
والحاصل أن لهذه الليلة فضلا، وأنه يقع فيها مغفرة مخصوصة واستجابة مخصوصة، ومن ثم قال الشافعي - رضي الله عنه -: إن الدعاء يستجاب فيها.
"সারকথা হচ্ছে, এ রাতের ফযীলত স্বীকৃত। এ রাতে বিশেষ মাগফিরাত ও ইসতিজাবাত সুসাব্যস্ত। আর তাই ইমাম শাফিয়ী রাহ. বলেছেন- এ রাতে দু’আ কবুল হয়।"
>>>হাম্বলী মাযহাব<<<
* শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী রাহ. বলেন, শবে বরাতে একাকীভাবে নামায আদায় করা উত্তম।
(মাজমুঅাতুল ফাতাওয়া ২৩/৮০)
* হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. (মৃ. ৭৯৫ হি.) “লাতায়িফুল মা’আরিফ” গ্রন্থে এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। তাতে এক স্থানে লিখেন-
فينبغي للمؤمن: أن يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالى ودعائه بغفران الذنوب وستر العيوب وتفريج الكروب، وأن يقدم على ذلك التوبة؛ فإن الله تعالى يتوب فيها على من يتوب.
"অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির এ রাতে আলাহ তাআলার যিকির ও মাগফেরাতের দু’আ ইত্যাদিতে মশগুল থাকা উচিৎ। এর পূর্বে তাওবা করবে। কেননা আল্লাহ পাক এ রাতে তাওবাকারীর তাওবাকে কবুল করেন।"
(লাতায়িফুল মাঅারিফ, ইবনে রজব পৃ. ২৬৫)
* হাম্বলী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ শাইখ মানসুর ইবনে ইউনুস আল-বুহুতী রাহ. (মৃ. ১০৫১ হি.) লিখেন-
(وفي استحباب قيامها) أي ليلة النصف من شعبان (ما في) إحياء (ليلة العيد، هذا معنى كلام ابن رجب) (في) كتابه المسمى (اللطائف) في الوظائف.
"দুই ঈদের রাতের মত এ রাতেও জেগে থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব।"
(কাশশাফুল কিন অানিল ইকনা, শাইখ মানসুর ৩/১১২)
চলবে...
লিখেছেন
মাওলানা সাঈদ অাহমদ (দা.বা.)
উস্তাদ, দারুল উলূম হাটহাজারী।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!