বনী ইসরাঈল সমূদ্র পার হবার পর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হযরত মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) উপর ন্যস্ত ছিল। এবং হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় ভ্রাতা হযরত হারূন (আঃ) কে বাইতুল কুরবান তথা কোরবানি ও উৎসর্গীত দ্রব্যের তত্ত্বাবধায়ক নির্ধারণ করলেন, অর্থাৎ আল্লাহর রাহে উৎসর্গের জন্য যে সব সামগ্রী আসবে, তা হযরত হারূন (আঃ) এর মারফত কুরবানগাহে রাখা হবে। সে সময় আসমানী আগুন এসে তা পুড়িয়ে ফেলতো। আর এটাই ছিল কোরবানি ও নজর- নেওয়াজ আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার নিদর্শন। এ বিষয়ে কারূনের হিংসা হল। সে বলল, আপনি নবীও আবার কওমের সরদারও, আর হারূন কুরবানগাহ’ এর তত্ত্বাবধায়ক হবে; কিন্ত কোন বিষয়ে আমার কোন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থাকবে না, তা কি করে সহ্য করা যায়? অথচ আমি তাওরাতের হাফেজ ও আলেম! হযরত মূসা (আঃ) বললেন এটা আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকেই নির্ধারিত, এ বিষয়ে আমার কোন কর্তৃত্ব নেই। আলস্নাহর পক্ষ থেকেই এই সিদ্ধান্ত্ম হয়েছে। কারূন তখন বলল, এটা অবশ্যই জাদু বলে ঘটেছে। এই কথার পর বনী ইসরাঈলের অনেক সর্দারকে বিভিন্ন প্রলোভন এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সে তার দল ভুক্ত করে নিল। এভাবেই উভয়ের মধ্যে সংঘাত শুরম্ন হলো।
এরপর আল্লাহ তা’য়ালা যখন যাকাত ওয়াজিব করলেন, তখন মূসা (আঃ) কারূনের নিকট এসে প্রতি হাজারে এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) যাকাত তলব করলেন। কারূন হিসাব করে দেখল, এতে তার প্রচুর অর্থ হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে সে চিন্তিত হয়ে বনী ইসরাঈলকে একত্র করে বলল, এতদিন যাবত মূসা যা বলেছেন, তা তোমরা মেনে নিয়েছ। কিন্তু সে তাতে সন্তষ্ট হয়নি। এখন সে তোমাদের মাল সম্পদ গ্রাস করার ফন্দি করছে। লোকজন বলল, আপনি আমাদের সর্দার, জ্ঞানী গুণী ও বুদ্ধিমান। সুতরাং আপনি যা বলেন আমরা তা মেনে নিতে প্রস্তত আছি।
কারূন নির্দেশ দিল যে, অমুক ব্যভিচারিণীকে নিয়ে এসো, তাকে তার চাহিদা মতো অর্থ সম্পদ দিয়ে তাকে একথা বলতে সম্মত করো যে, সে মূসার উপর তার সঙ্গে ব্যভিচারের অভিযোগ তুলবে। লোকজন যখন একথা শুনবে, তখন তার থেকে দূরে সরে যাবে, এবং তাঁর বিদ্রোহী হয়ে যাবে। ফলে আমাদের সবার জন্য তার গোলামী থেকে নিষ্কৃতি মিলবে। নরাধম কারূনের নির্দেশ মতে উক্ত ব্যভিচারিণীকে নিয়ে আসা হলো। তাকে প্রচুর অর্থের প্রলোভন দিয়ে এ বিষয়ে সম্মত করা হলো। কারূন এবং তার লোকজন বনী ইসরাঈলকে সমবেত করে মূসা (আঃ) এর নিকট গেল এবং বলল, এসব লোকজন সমবেতদ হয়েছে এদের উদ্দেশ্যে কিছু ওয়াজ-নছিহত করুন। হযরত মূসা (আঃ) বাইরে এসে ওয়াজ নছিহত শুরু করলেন। ওয়াজের মধ্যে শরীয়তের বিভিন্ন বিধি সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। তার মধ্যে চোরের সাজা হস্ত কর্তন, ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের সাজা ৮০ কোড়া, এবং ব্যভিচারী বিবাহিত ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন না হলে ১০০ কোড়া, আর বিবাহিত ও সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন হলে তাকে ‘সঙ্গেসার’ অর্থাৎ পাথর মেরে জীবনপাত করার বিধানও উল্লেখ করলেন। এ সময় কারূন দাঁড়িয়ে বলে উঠল, এ অপকর্ম যদি আপনি করেন তাহলে তার সাজা কি হবে? তিনি বললেন আল্লাহর বিধান সবার জন্য সমান। কারূন তখন বলল, আপনি অমুক মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছেন। হযরত মূসা (আঃ) বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে এসো ! যদি সে স্বীকার করে তাহলে সত্য হবে। সুতরাং উক্ত মহিলাকে হাজির করা হলো, হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেন, হে মহিলা ! সত্যিই কি আমি তোমার সাথে কখনো এ অপকর্ম করেছি, যা এরা বলেছে? আমি তোমাকে সেই সত্তার দোহাই দিচ্ছি, যিনি বনী ইসরাঈলেন জন্য সমুদ্রে রাস্তা করে দিয়ে ছিলেন এবং তাওরাত নাজিল করেছিলেন ! তুমি ঠিক ঠিক বলবে। উক্ত মহিলা তখন তাদের শিখানো কথা ভুলে গেল এবং বলল, এরা মিথ্যবাদী। কারূন আমাকে এ পরিমান অর্থ দিয়ে আপনার উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করতে বলেছিল। কারূন একথা শ্রবণে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে গেল। এবং মাথা নিচু করে ফেলল। অন্যান্য নেতারা নিশ্চুপ হয়ে গেল। সবাই তখন আল্লাহর আজাবের ভয়ে ভীত হয়ে গেল। হযরত মূসা (আঃ) সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। কেঁদে কেঁদে আরজ করলেন, হে আমার পরওয়ারদেগার! এ দুশমন আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে। আমাকে সে লাঞ্ছিত অপমানিত করতে চেয়েছে। যদি আমি সত্য রাসূল হয়ে থাকি, তাহলে আমাকে তার উপর ক্ষমতাবান কর। আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ওহী এলো, হে মূসা! মাথা উত্তোলন কর এবং জমিনকে নির্দেশ দাও যা তুমি চাও, সে তা পালন করবে। সুতরাং হযরত মূসা (আঃ) জমিন কে নির্দেশ দিলেন যে, কারূনকে গ্রাস করে নাও! সাথে সাথে মাটি কারূনকে গ্রাস করতে শুরু করল। আস্তে আস্তে সে মাটির মধ্যে দেবে যেতে লাগল। কারূন ‘মূসা! মূসা!’ বলে চিৎকার শুরু করল। অপরিসীম কান্নাকাটি করতে লাগল। এমনকি সে ৭০ বার মূসা বলে ডাকল। কিন্ত তার ডাকে কোনো উপকার হলো না। অবশেষে সে মাটির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল।
এ ঘটনার পর বনী ইসরাঈলের কতিপয় লোক মন্তব্য করল যে, হযরত মূসা (আঃ) কারূনের সম্পদ লাভ করার জন্য তাকে মাটির মধ্যে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন। একথা জানতে পেরে তিনি আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করলেন, হে আমার প্রভু কারূনের ধন ভান্ডারকেও মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দাও। ফলে তার সমস্ত ধন ভান্ডারও মাটির নিচে ধ্বসে গেল। আর এ ধ্বস কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!