অনেকে ‘সহীহ হাদীস’ বলতে বুঝে থাকেন ‘শুদ্ধ হাদীস’ কাজেই তাদের ধারণা, সহীহ হাদীস ছাড়া সব হাদীস অশুদ্ধ এ জন্য তারা বলে বেড়ান, “আমরা সহীহ হাদীস মানি, অন্যকোন হাদীস মানি না”
তাদের এ ধারণা সঠিক নয় তারা এ ব্যাপারে ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত আছেন আর এ ভ্রান্তির কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক গ্রহণযোগ্য হাদীসকে তারা মানতে অস্বীকার করে ফেলেন--যা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও ঈমানধ্বংসী কাজ
বস্তুত এখানে দু’টি আলাদা পরিভাষার ব্যাপার রয়েছে ফিক্বহের পরিভাষায় ‘সহীহ’ অর্থ শুদ্ধ যেমন, ফিক্বহী মাসআলায় বলা হয়, “রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে নামায সহীহ হয় না” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, এতে নামায শুদ্ধ হয় না
কিন্তু হাদীসশাস্ত্রে কোন হাদীসকে ‘সহীহ’ বলে ‘শুদ্ধ’ বুঝানো উদ্দেশ্য থাকে না কিংবা ‘সহীহ নয়’ বলে ‘অশুদ্ধ’ বুঝানো হয় না বরং সেখানে “সহীহ” শব্দ দ্বারা গ্রহণযোগ্য হাদীসের একটি প্রকারকে বুঝানো হয় এক্ষেত্রে ‘সহীহ’ শব্দটি ‘সালেম’ (নিরাপদ)-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়--যা হাদীসের সব ধরনের দুর্বলতা ও যাবতীয় অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়াকে বুঝায়
এভাবে সাধারণ দুর্বলতা ও অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়া হাদীসের মধ্যে হাসান হাদীসও রয়েছে--যা সহীহ প্রকারের পর গ্রহণযোগ্য প্রকারের হাদীস তেমনি জয়ীফ বা দুর্বল হাদীস-এর যদি মুতাবি‘রূপে সহীহ হাদীস থাকে কিংবা যদি কোন জয়ীফ হাদীস অনেক সূত্রে বর্ণিত হয় এবং তার দুর্বলতা সাংঘাতিক ধরনের না হয়, তখন সেই জয়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং তার নাম হয় সহীহ লি-গাইরিহী এমনি করে ‘মুরসাল’ হাদীসের রাবীগণ যখন সবাই ছিকা হন, তখন তাও গ্রহণযোগ্য হাদীসের অন্তর্ভু্ক্ত গণ্য হয় এভাবে ‘সহীহ’ শ্রেণীর হাদীস ছাড়াও অনেক হাদীস গ্রহণযোগ্য হাদীস বলে মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট বিবেচিত হয়--যার বিশেষ তাফসীল রয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয়, যেসকল লোক বলেন, “সহীহ হাদীস ছাড়া মানি না” তাদের এ কথা বলার কারণে সেই গ্রহণযোগ্য হাদীসগুলোকে প্রকারান্তরে তারা অস্বীকার করেন--যা খুবই মারাত্মক ব্যাপার
তাই “শুধু সহীহ হাদীস মানি” এ কথা বলা যাবে না বরং বলতে হবে--“গ্রহণযোগ্য হাদীস মানি” (যে হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কিরাম গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন) আর সেটা সহীহ শ্রেণীরও হতে পারে কিংবা হাসান শ্রেণীরও হতে পারে অথবা সহীহ লি-গাইরিহীও হতে পারে কিংবা তার চেয়ে নিম্নস্তরের হয়েও বিবেকগ্রাহ্য স্তরে পৌঁছে হাসান লি-গাইরিহীও হতে পারে
আর হাদীসের এ সবগুলো গ্রহণযোগ্য শ্রেণীর উপর ভিত্তি করেই ইসলামী শরীয়তের আহকামের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ আইম্মায়ে ফুকাহা শরয়ী মাসআলা নির্ণয় করেছেন যাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে মানা জরুরী অন্যথায় কেউ এ শরয়ী মাসআলাকে ইনকার করলে, তিনি এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে সেই মাসআলার সংশ্লিষ্ট হাদীসকে অস্বীকার করার কারণে মুনকিরে হাদীস (হাদীস অস্বীকারকারী) বলে সাব্যস্ত হবেন
(তথ্যসূত্র : আত-তাকয়ীদ, ২৩-২৫ ও ৪৫-৬১ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল মুগীস, ৭-৮ ও ৩২-৪৮ পৃষ্ঠা/ তাদরীবুর রাবী, ১ ম খণ্ড, ৬৩-৭৪ ও ১৫৩-১৭৮ পৃষ্ঠা/ যাফরুল আমানী, ২০৯-২২৪ পৃষ্ঠা/ আল-ইস্তিযকার, ১২৭ পৃষ্ঠা প্রভৃতি)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!