হায়া ও লজ্জাশীলতাকে বলা হয়েছে ঈমানের অঙ্গ। মাহরাম ছাড়া আন্য নারী-পুরুষের মধ্যে ইসলাম কঠোরভাবে পর্দার বিধান ফরজ করেছে, যা পালন করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং যা তরক করা কবীরা গোনাহের কারণ।
কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে -
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ.
আর যখন তোমরা নবীর পত্নীগণের কাছে কোন প্রয়োজনীয় সামান চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; সেটাই তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। [আহযাব: আয়াত ৫৩]
যেহেতু প্রসঙ্গ ছিলো নবীগৃহের সেহেতু উম্মাহাতুল মুমিনিনের কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় মুমিনীন-মুমিনাত জন্যই এ হুকুম।
যেমন নিচের আয়াতে এসেছে-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا.
হে নবী! বলুন আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের নারীগণকে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [আহযাব: আয়াত ৫৯]
✍
এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে সমস্ত মুমিন নারীকে আদেশ করা হয়েছে যেন তারা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পর্দা রক্ষা করে বের হয়, যার একটি উপায় এই যে, যে চাদর দ্বারা সমস্ত শরীর ঢাকা হয়েছে তা দ্বারা (চক্ষু ছাড়া) পুরা চেহারাও ঢেকে নেবে। কারণ মুনাফিকরা পথেঘাটে নারীদের উত্তক্ত করতো। তাই আল্লাহ তা'আলা পর্দার এই হিকমত বয়ান করেছেন যে, মুমিন নারীরা যখন পর্দার সঙ্গে বের হবে তখন বখাটেরা বুঝতে পারবে যে, এরা শরীফ ও আবরুবতী নারী। তখন তাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা সমীহ সৃষ্টি করে দেবেন, ফলে তাঁরা পর্দাবতী নারীদের উত্তক্ত করার দুঃসাহস করবে না।
✍
পক্ষান্তরে বেপরদা অবস্থায় বের হলে শয়তান দুষ্টলোকের অন্তরে আরো বেশী করে কুপ্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে, ফলে নারীরা তাদের আরো বেশী উত্তক্তির শিকার হয়।
✍
বস্তুত পর্দাব্যবস্থা ইসলামের এমনই কল্যাণময় বিধান যা অমুসলিম চিন্তানায়কগণও এখন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা নারী-পুরুষ উভয়ের নৈতিক পবিত্রতার জন্য যেমন জরুরি তেমনি নারীর আবরু রক্ষার জন্যও অপরিহার্য।
✍
পাশ্চাত্যের নারীসমাজ, যাদের তথাকথিত স্বাধীনতার চাকচিক্য আমরা বিভ্রান্ত হই, লুণ্ঠিত সম্ভ্রম ও আবরু- মর্যাদা জন্য আজ শুধু আহাযারী করছে। ইসলামের পর্দাব্যবস্থা তাদেরকে এমনই মুগ্ধ করেছে যে, শুধু এ কারণে বহু নারী ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করেছে যে, পর্দার আড়ালে নিজেদের তারা শুধু নিরাপদই বোধ করছে না, সম্মানিতও বোধ করছে। পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশী।
✍
পর্দা সম্পর্কে মুমিন নর-নারী উভয়ের উদ্দেশ্যে কুরাআনের একটি সাধারণ নির্দেশ এই-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ. وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا.....
মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এটাই তাদের পবিত্রতার জন্য অধিকতর সহায়ক। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের কর্ম সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। আর বলুন মুমিন নারীদেকে, বলুন যেন তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে এবং নিজেদের শোভা প্রকাশ না করে, তবে যা এমনিতেই প্রকাশ পেয়ে যায়।
[ আন-নূর: আয়াত ৩০-৩১]
✍
বলা বাহুল্য যে, মানবসমাজ এবং বিশেষ করে মুসলিম সমাজ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আজ যে ভয়াবহ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার, সর্বোপরি নারীদের জান ও আবরু- ইজ্জতের যে মর্মান্তিক নিরাপত্তাহীনতা তার প্রধান কারণই হচ্ছে পর্দাহীনতা। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি যে বিধান দিয়েছেন তা অমান্য হয়ত করা যাবে, তবে এর খেসারত আমাদেরই দিতে হবে ।
✍✍✍
আল্লাহ তা'আলা সবাইকে সঠিক বুঝ ও সমঝ দান করুন। আমিন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!