নামাযের মধ্যে সাধারণতঃ ঘটে যাওয়া ভুল সমূহ
কাতারের ভুলসমূহ
১. দাগের উপরে বা দাগে আঙ্গুল রেখে দাগের পিছনে দাঁড়ানো৷ নিয়ম হলো দাগের আগে গোড়ালী রেখে উভয় পা কিবলামুখী সােজা করে দাঁড়ানো৷
২. কাতার ইমামের ডানে বাড়িয়ে ফেলা৷ অথচ নিয়ম হলো, ইমামের সোজাসুজি পিছনে একজন দাঁড়িয়ে তাঁর দু'দিক থেকে সমানভাবে কাতারে লোক দাঁড়াবে৷ কোন দিকে কাতার লম্বা করবে না৷ (আলমগীরী ১ : ৮৭)
৩. সামনের কাতারে খালি জায়গা রেখে পিছনের কাতারে বসে থাকা বা পিছের কাতারে দাঁড়ানো৷ নিয়ম হল সবচেয়ে সামনের যে কাতারে খালী পাওয়া যায় সেখানে চলে যাওয়া৷/শামী, ১ : ৫৭০)
৪. কাতারে মিলে মিলে না দাঁড়ানো এবং দু'জনের মাঝে এতটুকু ফাঁকা রাখা যার মধ্যে আর একজন দাঁড়াতে পারে৷(মাসায়িলে নামায, ৮৭ পৃষ্ঠা)
৫. শেষ কাতারে শুধু একজন দাঁড়ানো৷ নিয়ম হলো কেউ কাতারে একা হলে, সামনের কাতার হতে মাসআলা জানেন এমন একজন মুসুল্লীকে হাতে ধরে পিছনে নিয়ে আসবে, তিনিও সিনা ঠিক রেখে দু-এক কদম হেটে পিছের কাতারে আসবেন৷ মাসআলা জানেন এমন লোক না পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে একাই পিছনে দাঁড়াবে৷ (শামী. ১ : ৫৬৮)
৬. জামা'আত শুরু হওয়ার পর কাতারে দাঁড়িয়ে সুম্নাত পড়া৷ নিয়ম হলো ইকামত শুরু হয়ে গেলে একমাত্র
ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন সুন্নাত শুরু না করা৷ আর ফজরের সুন্নাত জামা'আত পাওয়ার শর্তে কাতারের পিছনে বা বারান্দায় পড়া৷ (আলমগীরী, ১ : ১০৮)
ইকামাতের সময় ভুল সমূহ
১. ইকামতের সময় বা তাহরীমা বাঁধার পূর্বে অনেকেই হাত বেঁধে দাঁড়ায়৷ অথচ এমনটি করা মাকরূহ৷ নিয়ম
হলো এ সময় হাত ছেড়ে রাখা৷ (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া. ৩
২. অনেকে ইকামাতের জবাব দেয় না৷ অথচ আযানের ন্যায় ইকামাতের জবাব দেয়াও মুস্তাহাব৷ (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৫২৮)
তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে ভুল সমূহ ১. অনেকে তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানোর সময় মাথা ঝুঁকায়, এটা নাজায়েয৷ সুন্নাত হলো মাথা
সোজা রেখে সিজদার জায়গায় নজর রাখা৷ (শামী ১
888)
২. তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষদের অনেকে চাদরের ভিতর থেকে হাত বের করে না৷ অথচ পুরুষদের জন্য চাদর থেকে হাত বের করে কান পর্যন্ত উঠানো মুস্তাহাব৷ তবে মহিলারা কাপড়ের ভিতর হতে হাত বের করবে না৷/শামী. ১: ৪৭৮)
৩. অনেকে হাতের তালু কিবলামুখী করে উঠায় না৷ বরং হাতের তালু কানমুখী করে দু'পার্শে উঠিয়ে বা হাতের আঙ্গুল
সমূহ বাঁকা করে নিয়ত বাঁধা৷ এরূপ করা ভুল৷
৪. হাতের কানের লতি পর্যন্ত উঠাতে হয়৷ অথচ অনেকে তড়িঘড়ি করে হাত সামান্য একটু উঠিয়েই নিয়ত বাঁধে৷
৫.আরবী নিয়ত বলতে গিয়ে অনেকে তাকবীরে উলা, আবার অনেকে রুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে৷ অথচ আরবীতে নিয়ত বলা জরুরী নয়৷ বরং আরবীতে নিয়ত বলা জরুরী মনে করলে বিদ'আত হবে৷ বাংলায় নির্দিষ্ট নামাযের ও ইমামের ইকতিদার নিয়ত করাই মুস্তাহাব আদায়ের জন্য যথেষ্ট৷ অধিকম্ভ শুধু অন্তরে নির্দিষ্ট নামাযের সংকল্প করার দ্বারাই নিয়ত করার ফরয আদায় হয়ে যায়৷ নিয়ত মুখে বলা ফরয নয়, মুস্তাহাব৷ সবচেয়ে মারাত্মক বিষয়
হলো, অনেকে আরবী নিয়ত পড়তে যেয়ে সেদিকে অর্থ না বুঝে এত বেশী মনোনিবেশ করে যে, নির্দিষ্ট নামায ও ইমামের ইকতিদার এরাদা বা সংকল্প অন্তরে উপস্থিত থাকেনা সেক্ষেত্রে নিয়ত ফরয এটা না পাওয়ায় তার নামায হয় না৷
৬. অনেকে তাকবীরে তাহরীমা ও অন্যান্য তাকবীরে 'আল্লাহ' শব্দ এর লামকে এক আলিফের চেয়ে বেশি লম্বা করে থাকে-এটা ভুল৷ এক আলিফকে এক আলিফই রাখতে হবে৷ বেশি লম্বা করা অনুচিত৷
৭. অনেক সময় ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পূর্বেই অনেকে তাকবীরে তাহরীমা বলে ফেলে৷ সে ক্ষেত্রে ইমামের আগে যদি মুক্তাদীর তাকবীর শেষ হয়ে যায়, তাহলে তার ইকতিদা ও নামায সহীহ হবে না৷ পুনরায় তাকৰবীর বলে তাহরীমা বাঁধতে হবে৷
৮. আল্লাহু আকবার' বলে হাত বাঁধার আগে অনেকে হাত দু'দিকে ছেড়ে দিয়ে ঝুলিয়ে তারপর বাঁধে৷ এরূপ না করে হাত উঠিয়ে সরাসরি বাঁধাই বাঞ্ধুনীয়৷
৯. ইমামের তাকবীরের পরে খামাখা তাকবীর বলতে দেরী করা৷ অথচ ইমামের তাকবীরের পর সাথে সাথেই তাকবীর বলতে হয়৷
কিয়াম অবস্থায় ভুল সমূহ
১. উভয় পায়ের মাঝে গোড়ালী ও আঙ্গুলের দিকে সমানভাবে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে আন্গুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা সুন্নাত৷ কিন্তু অনেকেই তা এভাবে রাখে না৷ বরং পায়ের আহঙ্গুলসমূহ উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে রাখে৷ এতে পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী থাকে না যা সুন্নাতের পরিপন্থী৷
২. অনেকে দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা ঝুঁকিয়ে রাখে৷ অথচ দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা সাজা রেখে সিজদার স্থানে নজর
রাখা সুম্নাত৷
৩. দাঁড়ানো অবস্থায় অনেকে দু'পায়ে সমান ভর না দিয়ে এক পায়ে ভর দিয়ে বেঁকে দাঁড়ায়৷ অথচ এভাবে দাঁড়ানো উচিত নয়৷
৪. অনেকে নাভি বরাবর বা নাভীর উপর হাত বাঁধে৷ অথচ হানাফী মাযহাবে নিয়ম হলো নাভীর নীচে হাত বাঁধা৷
৫. ইমামের সাথে নামায পড়ার সময় 'ছানা' না পড়া৷ অথচ একা হোক বা জামা'আতে হোক, সর্বাবস্থায় ছানা পড়া io, yo «ta ক্বিরা'আতে ইমামের ক্বিরা'আত শুরু হয়ে গেলে, ছানা পড়বে না৷ তাছাড়া মুক্তাদী আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহও পড়বে না৷
ক্বিরা'আত অবস্থায় ভুল সমূহ
১. অনেকে ইমামের পিছনে বিড়বিড় করে সূরা ফাতিহা বা অন্য কিছু পড়তে থাকে৷ অথচ মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা মুখে পড়া নিষেধ৷
২. অনেকের ধারণা অনুচ্চ স্বরে পড়লে মদ, গুন্নাহ, ইযহার, ইখফা ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য করার প্রয়োজন হয় না৷ এটা সঠিক নয়৷ বরং সব কিরাআতেই তাজবীদ জরুরী৷ তাই সিররী নামাযেও জাহরী নামাযের মত সময় ব্যয় করে তাজবীদসহ ক্বিরা'আত পড়া উচিত৷
৩. যােহরের নামাযে 'তিওয়ালে মুফাসসাল' (লম্বা ক্বিরা'আত) বা কমপক্ষে 'আওসাতে মুফাসসাল' (মধ্যম ক্বিরা'আত) পড়া সুন্নাত৷ অথচ অধিকাংশ ইমামগণ যােহরের নামাযে 'কিসারে মুফাসসাল, (ছোট সূরা) পড়ে থাকেন যা সুন্নাত পরিপন্থী৷
৪. অনেকে ক্বিরা'আত এত বেশি ধীরে পড়েন যার কারণে সুন্নাত পরিমাণ ক্বিরা'আত পড়া সম্ভব হয় উঠে না৷ অথচ নিয়ম হলো বেশি ধীরেও না পড়া, আবার বেশি তাড়াতাড়িও না পড়া; বরং মধ্যম গতিতে হদরের সাথে সুন্নাত পরিমাণ ক্বিরা'আত পড়া৷
তারাবীহ নামাযে অধিকাংশ হাফেযগণ এত দ্রুত ক্বিরাআত পড়ে থাকেন যে, তাদের পড়া বুঝাই যায় না৷ এমন দ্রুত পড়া কুরআন বিকৃত করার শামিল, যা নাজায়েয৷ এতে নামাযের সওয়াব হাসিল হওয়া তো দূরের কথা, নামায সহীহ হওয়ার ব্যাপারেই সন্দেহ রয়েছে৷
৫. অনেকে তিন রাক'আত বা চার রাক'আত বিশিষ্ট ফরয নামাযের সব রাক'আতেই সূরা মিলিয়ে থাকে৷ অথচ ফরযের শুধু প্রথম দু'রাকাআতে সূরা মিলাতে হয়৷ আবার অনেকে চার রাকাআত বিশিষ্ট সুন্নাত ও
নফরের মধ্যে শেষের দু'রাকা/আতের মধ্যে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে৷ অথচ সুন্নাত ও নফরের সব রাকা'আতেই সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো জরুরী৷
৬. অনেক ইমাম প্রথম রাকাআতকে দ্বিতীয় রাকাআত থেকে তিন আয়াত বা তার বেশি লম্বা করে থাকেন অথচ সুন্নাত হলো একমাত্র ফজরের নামায ব্যতীত অন্য চার ওয়াক্তে উভয় রাকা'আতে কিরাআতের পরিমাণ সমান রাখা এবং এক দু'আয়াতের বেশি না বাড়ানো৷
রুকু অবস্থায় ভুলসমূহ
১. অনেকে রুকুতে গিয়ে মাথা, পিঠ, কামর বরাবর করে না এবং পিঠ বিছিয়ে রাখে না এবং কেউ মাথা উঁচু করে রাখে, আবার কেউ মাথা নীচু করে রাখে, এসবই Stage) কেউ পিঠ গোল করে রাখে৷ অথচ মাথা, পিঠ, কামর বরাবর রাখা এবং পিঠ বিছিয়ে রাখা সুন্নাত!
২. অনেকে হাঁটু বাঁকা করে তা সামনে বাড়িয়ে রাখে৷ আবার কেউ এমনভাবে দাঁড়ায় যে, উপরের অংশ পিছের দিকে বাঁকা হয়ে থাকে৷ উভয় পদ্ধতিই পা সম্পূর্ণ সোজা না থাকায় ভুল৷ পা সম্পূর্ণ সােজা রাখা সুন্নাত৷ এর নিয়ম হল শরীরের ভার সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখা৷
৩. অনেকে রুকু অবস্থায় হাতের আনঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখে এবং হাতকে হাঁটুর উপর একেবারে হালকাভাবে রেখে দেয়৷ অথচ পুরুষদের জন্য নিয়ম হল আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা রাখা এবং উভয় হাত দ্বারা হাঁটুতে শক্তভাবে ধরা৷
৪. অনেকে কনুই বাঁকা করে রাখে, যা ভুল৷ রুকু অবস্থায় হাত সম্পূর্ণ সাজা রাখতে হয়৷
৫.অনেকে কোন রকম রুকুতে গিয়েই তাড়াতাড়ি আবার দাঁড়িয়ে যায়৷ অথচ নিয়ম হলো রুকুতে গিয়ে ধীরস্থিরভাবে কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়ে তারপর দাঁড়ানো৷
৬. অনেকে রুকু থেকে সোজা হয়ে হাত ছেড়ে স্থিরভাবে দাঁড়ায় না, বরং সামান্য মাথা উঁচিয়েই সিজদায় চলে যায়৷ এতে ইচ্ছাকৃতভাবে দু'টি ওয়াজিব (অর্থাৎ রুকু থেকে সম্পূর্ণ সােজা হওয়া এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা৷) তরক করায়
নামায নষ্ট হয়ে যায়৷ এমন নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব৷
সিজদা অবস্থায় ভুল সমূহ
১. অধিকাংশ লোকই দাঁড়ানো হতে সিজদায় যাওয়ার সময় বিনা ওযরে বুক ও মাথা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে সিজদায় যায়৷ এটা মারাত্মক ভুল৷ এতে এক রাকা'আতে দুই রুকু হয়ে নামায খেলাফে সুন্নাত হয়ে যায়৷ সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক ও মাথা সম্পূর্ণ সাজা রাখা উচিত৷
২. সিজদায় যাওয়ার সময় বা সিজদা থেকে উঠার সময় অনেকে তাকবীর এক আলিফ থেকে বেশি টানতে থাকে, এটা ভুল৷ তারতীলের সাথে এক আলিফ লম্বা করা উচিত৷
৩. অনেকে fromn fia দুই হাতের Sigarms ছড়িয়ে রাখে৷ অথচ সিজদায় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখা সুন্নাত৷ এরূপ অনেকে হাতের কান বরাবর রাখে না৷ বরং আগ-পাছ করে রাখে, এটাও
ভুল৷
৪. অনেকে সিজদায় উভয় পায়ের মাঝে দাঁড়ানোর ন্যায় চার আঙ্গুল ফাঁক রাখে না এবং আঙ্গুলসমূহ মুড়িয়ে কিবলা মুখী করে উভয় পা খাড়া করে রাখে না বরং উভয় গোডালী মিলিয়ে রাখে অথবা পায়ের
আঙ্গুলগুলোর মাথা পূর্ব দিকে করে রাখে যা সুন্নাতের খেলাফ৷
৫. অনেকে সিজদায় পা যমীন থেকে উঠিয়ে রাখে৷ অথচ সিজদা আদায় হওয়ার জন্য পা যমীনে লাগিয়ে রাখা জরুরী৷
৬. সিজদা অবস্থায় অনেকে উভয় উরু সোজা খাড়া রাখে না৷ বরং উপরাংশ পূর্বদিকে বা পশ্চিম দিকে বাঁকা করে রাখে যা ভুল৷ এই ভুল থেকে বাঁচার পদ্ধতি হলো সিজদার সময় হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে হাত রেখে উভয় হাতের মাঝে চেহারা রেখে সিজদা
করবে৷
৭. সিজদায় অনেক সময় পুরুষরা কনুই মাটির উপর বিছিয়ে রাখে বা কনুই হাঁটুর সাথে মিলিয়ে রাখে আবার অনেকে বাহু বা হাত পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখে৷ অথচ এসব অঙ্গ পৃথক রাখতে হয়৷ তবে মহিলারা জড়ুসড় ও সংকুচিত হয়ে এক অঙ্গের সাথে আরেক অঙ্গ মিলিয়ে সিজদা করবে৷
৮. মহিলারা অনেক সময় পুরুষদের মত পা খাড়া করে সিজদা করে৷ অথচ মহিলাদের সিজদা করার সময়
উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে কিবলামুখী করে বিছিয়ে রাখতে হয়৷
নামাযে বসা অবস্থায় ভুল সমূহ
১. অনেকে দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে না বসেই আরেক সিজদায় চলে যায়৷ অথচ এতে ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি ওয়াজিব (সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসা এবং বসার পর এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা) তরক করায় নামায নষ্ট হয়ে যায়৷ এমতাবস্থায় নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব৷
২. অনেকে দুই সিজদার মাঝে এবং তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ার সময় ডান পা খাড়া রাখে না, বরং বাঁকা করে রাখে৷ অথচ তা সুন্নাতের খেলাফ৷
৩. দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠার সময় বা মধ্যবর্তী বৈঠক হতে দাঁড়ানোর সময় অনেকে বিনা ওযরে হাত দিয় যমীনে ভর করে দাঁড়ায়৷ অথচ তা মাকরূহ৷
সালামের ভুল সমূহ ১. অনেকে উভয় সালাম ফিরানোর সময় কোন নিয়ত করে না৷ অথচ উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সময়
মুসল্পী, ফেরেশতা, নামাযী জিন ও ইমামের প্রতি সালাম করার নিয়ত করতে হয়৷
২. অনেকে 'আসসালামু' বলা শুরু করার সাথে সাথে চেহারা ডানে বা বামে ঘুরিয়ে ফেলে অথচ 'আসসালামু' বলা পর্যন্ত উভয় সালামে চেহারা কিবলার দিকে রাখতে হয়৷ তারপর 'আলাইকুম' বলার সময় চেহারা ঘুরাতে হয়৷ অনেকেই দ্বিতীয় সালাম কিবলার দিক হতে শুরু করে না৷ বরং ডান দিকে চেহারা থাকা অবস্থাতেই দ্বিতীয় সালাম শুরু করে দেয়, এটা ভুল৷ এমনিভাবে সালামের সময় বুক ফিরানো ভুল৷ বরং শুধু চেহারা এতটুকু ঘুরাবে, যেন পিছনের কাতার হতে চোয়াল দেখা
যায়৷
৩. ইমামের জন্য দ্বিতীয় সালামের আওয়াজ প্রথম সালামের আওয়াজের তুলনায় ক্ষীনস্বরে বলা সুম্নাত৷ কিন্তু অনেকেই তা পালন করেনা এবং উভয় সালামে
এক সমান আওয়াজ করে, যা ভুল৷
৪. ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শুরু করার সাথে সাথে উঠে পড়ে৷ অথচ ইমামের দ্বিতীয় সালাম সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পরই মাসবুকের জন্য দাঁড়ানো উত্তম৷
মুনাজাতের ভুল সমূহ
১. মুনাজাতের সময় অনেকে উভয় হাত কাঁধ থেকে উপরে উঠিয়ে রাখে৷ অথচ এ সময় উভয় হাত বুক বা কাঁধ বরাবর রাখাই নিয়ম৷
২. মুনাজাতের সময় অনেকে উভয় হাত অনেক বেশি ফাঁকা করে অথবা একেবারে মিলিয়ে রাখে৷ আবার কেউ কেউ দড়ি পাকানোর মত করতে থাকে৷ এসবই ভুল৷ নিয়ম হল, উভয় হাতের মাঝখানে দু'এক আন্দুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা৷
৩. অনেকে হাতের তালু চেহারামুখী করে রাখে৷ অথচ হাতের তালু আসমানের দিকে করে রাখা উচিত৷
৪.আল্লাহর হামদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ দ্বারা মুনাজাত আরম্ভ করা এবং হামদ ও দরূদ এবং আমীন দ্বারা মুনাজাত শেষ করা সুম্নাত৷ অথচ অনেকে এ নিয়ম ব্যতিরেকেই 'আল্লাহুম্মা আমীন' বলে মুনাজাত শুরু করে এবং 'বাহক্বে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে মুনাজাত শেষ করে৷ এরূপ সব সময় করতে থাকা বিদ'আত৷
৫. অনেকে ফরয নামাযের পর দু'আ, যিকির না পড়েই সালাম ফিরানোর সাথে সাথে সুন্নাত বা নফল পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যায়৷ এটাও সুন্নাতের খেলাফ৷ ফরয নামাযের পর কিছু সময় দু'আ-দরূদ, যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, এর ব্যতিক্রমকারীকে হযরত উমর রা. কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলেন এবং হযরত নবী কারীম ৪ হযরত উমর রা.-এর এ কাজকে সমর্থন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ফরয সুন্নাত ও নফল নামাযের মাঝে পার্থক্য না করায় বনী ইসরাঈলকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল৷ (আবু দাউদ, হাদীস নং- ১০০৭)
তবে মাগরিবের ফরয নামাযের পর সুন্নাত পড়তে অধিক সময় বিলম্ব করা অনুচিত৷ মনে মনে মুনাজাত করা মুস্তাহাব৷ কারো ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হলে আওয়াজ করে দু'আ করা জায়েয৷ অনেক ইমাম সাহেব মুনাজাত করে অবশিষ্ট নামাযের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন, এটা নাজায়েয৷
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!