একটি নাম। একটি আর্দশ। একটি চেতনা। একটি বিপ্লব। একটি ঐতিহ্য। একটি বাতিঘর। একটি আলোর মিনার। একটি ছায়াবীথি। একটি মহিরুহ। একটি প্রতিষ্ঠান। চলন্ত একটি বিশ্বকোষ। একটি জ্ঞানভাণ্ডার। একটি এলেমের জাহাজ। তিনি আজ কেবল একজন ব্যক্তি নন বরং একজন অনন্য যুগ নির্মাতা।
যার জীবনের প্রতিটি কথা হয় মুদ্রিত। প্রতিটি বয়ান হয় সংরক্ষিত। প্রতিটি লেকচার একেকটি জনপ্রিয় গ্রন্থ। যার পুরো জীবনটাই একটি মুদ্রিত রচনা সমগ্র। প্রতিটি বানী হয় উম্মাহর প্রেরণার উৎস। আমি প্রচার বিমূখ মনীষা আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দাঃবাঃ এর কথা বলছি।
তিনি মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন। আধুনিক ডিজেটাল যুগে এসেও ভিডিও ও সরাসরি ছবি তুলার মতো বিষয়ে তার চরম আপত্তি জানান। অনেকে বলে থাকেন, হযরত আপনি টিভি প্রোগ্রাম করলে জাকের নায়েক কেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেকচারার হিসাবে নন্দিত হয়ে উঠতেন। কিন্তু তিনি বলেন, 'আমিতো কাজ করি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। জনপ্রিয়তা মানুষের এখলাস ও তাকওয়াকে বিনষ্ট করে দেয়"। এই হলেন তিনি।
একেবারে সাদামাটা হবিগন্জের আঞ্চলিক ভাষা বাচন ভঙ্গিমা যার অবয়বজুড়ে । বাঙ্গালির চিরচায়িত পোষাক লুঙ্গি , সেন্ডেল , কাটা বেটে পান্জাবী আর কিস্তি টুপি পড়া একজন সহজ সরল.নিরহংকার মানুষ । দেখতে একেবারে সাদামাটা এক মৌলভী । মুখে পানের খিলি আর সহজ সরল চলন বলনে এক সুফি দরবেশ । এতোটা সাদামাটা আমার চোঁখে আর কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দেখিনি । এই সাদামাট সহজ সরল মুখলেছ মানুষটিকে আল্লাহ তায়ালা এক খাছ নেয়ামত দান করেছেন । তা হলো তার অপূর্ব বয়ান। যুগের তর্কবাগীশ।
মফস্বলে বেড়ে ওঠা এবং আজীবন গ্রামে থাকা এই বরেন্য আলেমের এলেমের রৌশনীতে আজ আলোকিত পুরো বাংলাদেশে । যারা তার বয়ান বক্তৃতা একবার শুনেছেন তাদের কাছে ওলীপুরীকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই । রাজধানী ঢাকা শহর সহ দেশের প্রতিটি জেলাতের তাফসির মাহফিলের তিনি মধ্যমনি। এমনকি দেশের সীসানা পেরিয়ে পাচ্য -পাশ্চাত্য তার বয়ান সমানভাবে সমাদৃত।
হবিগন্জের এক প্রত্যান্ত গ্রাম তার জন্মস্হান ওলীপুর আজ তার নাম নুরুল ইসলামকে ছাপিয়ে ঐতিহ্যের স্বারকে পরিণত হয়েছে। স্পষ্টভাষী এই মুফাসসিরে কোরআনের প্রোগাম ছাড়া যেন এদেশের কোরআনের মাহফিলগুলোই জ্যোতিময় হয়ে ওঠে না । অসুস্ততার ভিতর দিয়েও থাকে এতো প্রোগাম করতে হয় যে ওলীপুরীকে কোন মাহফিলে দাওয়াত করতে গেলে কমপক্ষে দেড় দুই বছর আগে নাম ডায়রিভূক্ত করতে হয়। এতে তার জনপ্রিয়তা সহজেই অনুমান করা যায় । আমার কাছে মনে হয় আল্লামা ওলীপুরীই এই মুহুর্তে বাংলাদেশের ইসলামি অঙ্গনে দলমতের
উর্ধ্বে সমালোচনা ও কোন প্রকার বির্তকমুক্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় আলেম ।
যা বিশ্বাস করেন তা অপকটে বলেন । কে কি বলল বা ভাবলো তিনি এসবের পরোয়া করেন না । যা সত্য তা বলে ফেলেন নিদ্ধিধায় নিসংকোচ ভাবে। আদর্শ নীতি নৈতিকতায় অবিচল এক সিংহ
পুরুষ । প্রচলিত সংকীর্ণ রাজনীতি আর সকল দলাদলী ও বির্তকের উর্ধ্বে তিনি এক বিশাল মহীরুহ । তিনি সকলের আর তার জন্য সবার দরজা উম্মোক্ত । আকাবিরদের এক মহান আমানতের মশাল তিনি ।
পথহারা মুসলিম উম্মাহর এক নির্লোভ
সিপাহসালার তিনি। আমাদের আলোর সুউচ্চ মিনার তিনি । যেন কুতুব মিনার । যার আগেও কেউ নেই পরেও কেউ নেই । মুজাহিদে জামান মাওলানা মুখলেছুর রহমান রায়ধরের চেয়ারম্যেন রহ এর হাতে গড়া এই ছাত্র তার প্রিয় উস্তাদ ও শায়খের মতোই সাহসের এক সুউচ্চ প্রাচীর।
হাফেজ্জি হুজুর আর শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের এই শাগরেদ তাদের মতোই উম্মাহর এক দরদী রাহবার। বাতিলের বিরোদ্ধে আপোসহীন সিপাহসালার। এখনো এদেশে মওদুদী মতবাদ ও তাগুতের বিরোদ্ধে যে কজন আলেম বজ্রকন্ঠে কথা বলেন তিনি তাদের অন্যতম।
তার নাম ব্যাবহার করে কোন কোন রাজনৈতিক দল টানাটানি করলেও তিনি কখনো রাজনীতির সাথে জড়ান নি। হকপন্থি ধারার যেকেউ তাকে সিরাত মাহফিল বা কোন সভা সেমিনারে ডাক দিলে তিনি হাজির হন নিদাদ্ধায়। দেওবন্দি সকলের তিনি সকল তাঁর। ফলে তিনি যেমন চরমোনাই মাহফিলে যান প্রতিবছর, তেমনি হাটহাজারীর সম্মেলন আলোকিত করেন, আবার মজলিসের সীরাত মাহফিলে বক্তৃতা করেন নিয়মিত, জমিয়তের যে কোন সভায় হাজির হন নিসংকোচে । এই হলেনন আমাদের ওলীপুরী। আমাদের আর্দশ।
যুগ সচেনতায় তিনি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। সময়ের সকল ফেৎনা সম্পর্কে তিনি সজাগ, সচেতন এবং আপন কওমকে সর্বদা সর্তক করতে এদেশে তার জুড়ি নেই। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে কথা বলেন অপকটে। এমনিভাবে জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়াতে সাক্ষর করেন নির্ভয়ে। যুগ সময়কে তিনি গভীর অন্তদৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করেন। তারপরঃ কোরআনের আলোকে যুগ সমস্যার সমাধানের পথ ও পাথেয় বলে দেন।
বাগ্মিতার পাশাপাশি তিনি একজন সুলেখক। তেজস্বী তার কলম। মাসিক মদীনার এক সময়ের জনপ্রিয় লেখক এই আলেমেদ্বীন লেখালেখির সুবাধে আমার পিতার ঘনিষ্ট বন্ধু । ফলে ওলীপুরীকে চিনি ও জানি সেই
শৈশব থেকেই। বাড়ির কাছের এই মনীষা সাড়া দেশের ও বিশেষ করে আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। কাছে থেকে জীবনে বহুবার দেখেছি এই বাহরুল উলুমকে। একজন বিদগ্ধ লেকখ হিসাবে তার অসংখ্য গ্রন্হাবলী এখন পাঠক প্রিয়তার শীর্ষে। কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড হবিগন্জ ও মাদরাসায়ে নুরে মদীনা সায়েস্তাগন্জ, তাঁর জীবনের অমর আরো দুটি কৃর্তি। একটির প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান অপরটির মুহতামিম।
খতীবে আজম,তরজুমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, দেওবন্দি চেতনার অন্যতম প্রধান ভাষ্যকার আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী হাফিজাললাহু জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করছে আল্লাহর দরবারে।
হে আল্লাহ, এই মহান বুযুর্গ আলেমকে নেক হায়াত দান করুন । আমাদের মাথার উপর তার সুবিশাল ছায়াকে দীর্ঘ করুন। আমিন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!