Tuesday, December 6, 2016

আল্লামা সুয়ূতি রহঃ এর বিরুদ্ধে মিলাদ পালনের জঘন্যতম অপবাদের জবাব

আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর বিরুদ্ধে মিলাদ পালনের জঘন্যতম অপবাদের জবাব
মিলাদিরা কথায় কথায় আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ)-কে মিলাদি বলে বলে তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করে থাকেন। আমি এখানে তথ্যবহ লেখার মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি তোলে ধরার চেষ্টা করব।
আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ)-কে মিলাদি সাজানোর জন্য এক বিদয়াতি “তোহফায়ে সুফিয়া ” নামক একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখতেছেন হাদিসে এসেছে
.
“নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর রাসূল (সাঃ) নিজেই নিজের আকিকা করেছেন। আল্লামা সুয়ূতি বলেছেন ‘আকিকা দুইবার হয় না। অথচ আব্দুল মুত্তালিব হুজুর (সাঃ) এর আকিকা দিয়ে ছিলেন। অতএব রাসূল (সাঃ) যে আকিকা দিয়েছেন এটা আসল আকিকা নয়, বরং এটি নিজের অস্তিত্বের শোকর আদায় স্বরূপ এবং উম্মতকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যেই ছিল। এতে বোঝা গেল, রাসূল (সাঃ) এর অস্তিত্ব ও জন্ম লাভের শোকর আদায় ও আনন্দ প্রকাশ করার জন্য একত্রিত হওয়া এবং খানা খাওয়ানো ও অন্যান্য নেক কাজের দ্বারা শোকর আদায় মুস্তাহাব”। (তোহফায়ে সুফিয়া ৩০ দ্রষ্টব্য)।
.
এ গেল আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর নাম ভেঙ্গে একখানা হাদিসের বিশ্লেষণ। এবার আমরা উপরোক্ত হাদিস এবং আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর বক্তব্য ব্যাখ্যা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) কর্তৃক উপরোক্ত বিশ্লেষণের সারাংশ হল-
.
১। আকিকা দু’বার দেয়া হয়েছে
.
২। প্রথমবার নবীজির (সাঃ) দাদা আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক দেয়ার বিষয়।
.
৩। দ্বিতীয়বার নবীজি (সাঃ) খোদ নিজে দেয়ার বিষয়।
.
৪। আকিকা দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল শুকর প্রকাশ করা। যেহেতু বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহপাক একমাত্র তাঁকেই রহমত স্বরূপ সৃষ্টি করিয়াছেন আর তা উম্মতের জন্য বিধান করা।
.
৫। ইছালে সাওয়াবের নিয়তে মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং অন্যান্য নেক কাজ করা।
.
আমরা ইতিমধ্যে আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর নামে উপরোক্ত হাদিসের এ কয়েকটি বিশ্লেষণ পেলাম। এবার আমরা পরবর্তী আলোচনায় ২টি উপায়ে মূল বিষয়টির ওপর কিছু আলোকপাত করব।
.
(ক) আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত মিলাদের রূপরেখার সাথে বর্তমান কালের মিলাদী রূপরেখার সামঞ্জস্যতা কোথায়?
.
আমাদের দেশে বর্তমানে চার ধরণের মিলাদ প্রচলিত রয়েছে
.
১। উঠা বসা মিলাদ (কিছুক্ষণ বসে থাকা অতপর হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়া। যাকে কিয়ামী মিলাদ বলে)। এ শ্রেণির মিলাদের রূপরেখা-
www.markajomar.com/?p=499
.
২। বসে বসে মিলাদ (এরা আরেক শ্রেণির চুপা ভণ্ড। এটাও এক ধরণের নতুন আবিস্কার)।
.
৩। গানে গানে মিলাদ। (কথিত মাআরেফাতি গানের তালে তালে নর নারী মিলে মিশে মিলাদ দেয়া)।
.
৪। ১২ ই রবিউল আউয়ালের দিন মিলাদুন্নবী পালনের নামে জৌলুশী মিছিল, শহরের বড় বড় অলি গলিতে তোরণ স্থাপন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশাল বিশাল সাঁকো নির্মাণ, পেষ্টুন আর রঙ বে-রঙ্গের ব্যানারে সর্বত্র ছেয়ে ফেলা ইত্যাদি নিত্য নতুন মনগড়া কাজের প্রবর্তন করা। যেখানে নেকী লাভ করার উদ্দেশ্য নিহিত। এটিও ব্যতিক্রমধর্মী চতুর্থ রকমের মিলাদুন্নবী পালন। যা বাস্তবতা বিবর্জিত।
.
ইতিহাস স্বাক্ষী-
.
খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রায় ৫৭৪ বছর পর, সাহাবাদের যুগের প্রায় ৪৯৪ বছর পর, তাবেঈনদের যুগের ৪৩৪ বছর পর, তাবে তাবেঈনদের যুগের ৩৮৪ বছর পর, ইমামে আযম আবু হানিফা রহঃ এর যুগের ৪৫৪ বছর পর, ইমাম শাফেয়ীর যুগের ৪০০ বছর পর, ইমাম মালেক এর যুগের ৪৩৫ বছর পর, ইমাম আহমদ এর যুগের ৩৬৩ বছর পর, ইমাম বুখারীর যুগের ৩৪৮ বছর পর, ইমাম মুসলিম এর ৩৪৩ বছর পর, ইমাম আবু দাউদ এর ৩২৯ বছর পর, ইমাম নাসায়ী এর ৩০১ বছর পর, ইমাম তিরমিযী এর ৩২৫ বছর পর, ইমাম ইবনে মাজা এর ২৯৫ বছর পর ইতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী ৬০৪ হিজরী মুতাবিক ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলিত মিলাদুন্নবী উদযাপন করার প্রথাটির আবিস্কার হয়।
.
আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) লিখেছেন :
.
ﻗﺎﻝ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ ﺭﺡ ﺍﻭﻝ ﻣﻦ ﺍﺣﺪﺙ ﺫﺍﻟﻚ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺯﻳﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﺣﺪ ﻣﻠﻮﻙ ﺍﻻﻣﺠﺎﺩ .
.
অর্থাৎ সর্বপ্রথম এ মিলাদী আমলের মনগড়া প্রচলন করেন ইবনে মুজাফফর আবু সাঈদ বিন যাইনুদ্দীন বিন আলী। যিনি একজন বড় বাদশাহ ছিলেন।”
.
আল্লামা সূয়ুতি (রহঃ) “আমালুল মাওলিদ ” তথা নবীজির (সাঃ) জন্ম উপলক্ষে কী কী আমল করতে হবে তা স্বীয় কিতাবের অন্য জায়গায় নিম্নরূপ বলেছেন :
.
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻼﻣﺔ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ ﻋﻨﺪﻱ ﺍﻥ ﺍﺻﻞ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﺍﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭ ﻗﺮﺃﺓ ﻣﺎ ﺗﻴﺴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﻻﺧﺒﺎﺭ ﺍﻟﻮﺍﺭﺩﺓ ﻓﻲ ﻣﺒﺪﺍﺀ ﺍﻣﺮ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﻣﺎ ﻭﻗﻊ ﻓﻲ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺎﺕ . ﺛﻢ ﻳﻤﺪﻟﻬﻢ ﺳﻤﺎﻁ ﻳﺄﻛﻠﻮﻧﻪ ﻭ ﻳﺘﺼﺮﻓﻮﻥ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺯﻳﺎﺩﺓ ﻋﻠﻲ ﺫﺍﻟﻚ ﻫﻮ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻳﺜﺎﺏ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺻﺎﺣﺒﻬﺎ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺗﻌﻈﻴﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﻔﺮﺡ ﻭ ﺍﻻﺳﺘﺒﺸﺎﺭ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ
.
অর্থাৎ , আমার দৃষ্টিতে মূলত নবীজির জন্ম উপলক্ষে আমল হল,(বিশেষ কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য করা ব্যতীত) লোকজন একত্রিত হওয়া এবং কুরআনের যে স্থান থেকে সহজ লাগে তা তেলাওয়াত করা এবং নবীজির নবুওয়াতের প্রথম দিকের জন্ম ইতিহাস শীর্ষক বর্ণিত হাদিস ও আয়াতে কারিমা পাঠ করা। অতপর দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া আর অনর্থক ব্যায় পরিহার করা।এ সব উত্তম বিদয়াত।”
লক্ষণীয় বিষয় হল, আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত পয়েন্টের কোনো একটির সাথে বর্তমান কালের চার ধরণের কোনো একটিরও কি মিল পাওয়া যায়? বিষয়টি আরেকটু ভাল ভাবে খেয়াল করে দেখুন। আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তাহলে বর্তমান কালের মিলাদিরা ব্যতিক্রমধর্মী কাজের আঞ্জাম দেয়া সত্তেও সেটিকে মিলাদুন্নবী নামে চালিয়ে দেওয়াটি অনাধিকার চর্চা করা নয় কি?
আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর বর্ণিত মিলাদ পালনের উপরোক্ত রূপরেখার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়েও তা প্রমাণ করতে সুয়ূতি (রহঃ) এর রেফারেন্স টেনে আনা তার চেয়েও মারাত্তক অন্যায় নয় কি? আমার ভাষায়, এগুলো তাদের স্পষ্ট ধোকাবাজি ও প্রতারণা বৈ কিছু না।
.
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে , নবীজি (সাঃ) হলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। তাঁকে আল্লাহপাক সকল নবী রাসুলের সর্দার ও ইমাম বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর শাফায়াত বিনে কোনো উম্মত বেহেশতে যেতে পারবেনা। কথিত আছে যাঁর অসিলায় এ পৃথিবী সৃষ্টি। তাহলে তাঁর সুভাগমণ উপলক্ষে সে মাস ও দিবসে ঈদ উদযাপন করলে ক্ষতি কী?
জবাব , প্রথমত আপনার প্রশ্নে উল্লিখিত সবকয়টি কারণের সাথে অবশ্য একমত। তবে “তাঁর সুভাগমণ উপলক্ষে সে মাস ও দিবসে ঈদ উদযাপন করলে ক্ষতি কী—তার জবাব দেয়ার আগে কয়েকটা বিষয়ে জ্ঞান রাখা আবশ্যক।
.
১। আপনি প্রশ্ন করেছেন যে, ঈদ উদযাপন করলে ক্ষতি কী? আমিও আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই যে, মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করলে সাওয়াব কী? সাওয়াব হবে যে তা আপনি কোন দলিলে নিশ্চিত হবেন ?
.
২। আপনাকে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করার অনুমতি দিল কে? আল্লাহ, রাসূল, সাহাবী, তাবেয়ী কিংবা সর্বজন স্বীকৃত কোনো মুজতাহিদ কি দিয়েছেন? অথচ এদের বাহিরে অন্য কাহারো মত ও পথ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
.
৩। হয়ত বলতে পারেন “ অনেক মুসলমান এ কাজটিকে ভাল এবং উত্তম মনে করেন তাই এটি করলে বৈধ হবে” এ প্রশ্নের বিস্তারিত তথ্যপূর্ণ জবাব এখানে দেখুন-
www.markajomar.com/?p=367
.
আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে যে, ভাল কাজ হলেই যে তা করার অনুমতি থাকবে এমনটি ঠিক নয় বরং ভাল কাজটি করার ব্যাপারে শরিয়তের দলিল-চতুর্থ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং সেটি কিভাবে করতে হবে তার পদ্ধতিও বর্ণিত থাকতে হবে। অন্যথা তা করার অনুমতি থাকবেনা।
.
যেমন, নামায, রোজা ইত্যাদি এ গুলো অবশ্য নেকির কাজ। কিন্তু তাই বলে আপনি ইচ্ছে মত তা করতে পারবেন না।
.
চার রাকাত নামাযের সাথে আপনার ইচ্ছে মত আরো দু রাকাত যোগ করে এক সাথে ছয় রাকাত পড়তে পারবেন না।
.
তদ্রুপ ঈদের দিনসহ সর্বমোট পাঁচ দিন রোজা রাখতে পারবেন না। যেহেতু শরিয়ত আপনাকে তা করতে অনুমোদন দেয়নি। অথচ সেগুলোও ভাল কাজ।
মূল আলোচনা-
.
আপনি প্রশ্ন করেছিলেন, নবীজির (সাঃ) সুভাগমণ উপলক্ষে শোকরিয়া স্বরূপ তাঁর জন্ম দিবসে ঈদ উদযাপন করলে ক্ষতি কী?
.
আপনার উল্লিখিত প্রশ্নটির জবাব উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছেন। সব চেয়ে যে বিষয়টা আপনাকে বলা অতিব জুরুরি তা হল, নবীজি (সাঃ) নিজের পবিত্র জন্মের শুকরিয়া আদায় করার জন্য ঈদ উদযাপন করেননি, বরং রোযা রেখেছেন। তাও বছরে এক দু’বার নয়, প্রতি সোমবারে।
আর বর্তমান কালের অশিক্ষিত মিলাদী খয়রাতিরা হাদিসের অপব্যাখ্যা করে রোযার পরিবর্তে ঈদ পালন করার কথা বলে। তাও প্রতি সোমবারে নয়, বরং সারা বছরে দু একবার। এ যেন মঙ্গল গ্রহের আজব প্রকৃতির আশেকে রাসূল!!
.
এখানে আসল রহস্যটি হল, রাসূল (সাঃ) এর হাদিসকে সঠিক ভাবে গ্রহণ করলে সারা বছর প্রায় অর্ধ শতাধিক রোযা রাখার কষ্ট স্বীকার করতে হয়। পক্ষান্তরে হাদিসের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহারের মাধ্যমে বছরে কয়েকবার কথিত ঈদ উদযাপন করে নিলে ক্ষুধা আর পিপাসার কষ্টের পরিবর্তে শিরনি জিলাপি খাওয়ার মহা ধুমধাম করা যায়।
যে জন্য এখন অনেকেই বলেন যে “বর্তমান কালের খয়রাতি মিলাদিরা নবীজির সাঃ জন্ম উপলক্ষে প্রতি সোমবারে রোযা রাখার বেলায় নেই (হ্যাঁ, আল্লাহপাকের মুষ্টিময় কিছু খাস খাস বান্দা প্রতি সপ্তাহের শনি রবি ও সোম তিন দিন রোযা রাখেন। যা প্রকৃত অর্থে মিলাদুন্নবী পালন), কিন্তু তারা মিলাদুন্নবী পালনের নামে শিরণী আর জিলাপি খাওয়ার মহা ধুমধাম নিয়ে ব্যস্ত।
.
প্রতি সপ্তাহের তিনটি রোযা রাখার প্রমাণ :
.
ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺴﺒﺖ ﻭ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺣﺪ ﺍﻛﺜﺮ ﻣﺎ ﻳﺼﻮﻡ ﻣﻦ ﺍﻻﻳﺎﻡ ﻭ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻧﻬﻤﺎ ﻳﻮﻣﺎ ﻋﻴﺪ ﻟﻠﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﻓﺎﻧﺎ ﺍﺣﺐ ﺍﺧﺎﻟﻔﻬﻢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ .
.
অর্থ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত দিন রোযা রাখতেন তন্মধ্যে অধিকাংশ সময় শনি ও রবিবার রোযা রাখতেন, আর বলতেন যে এ দুটি দিন হচ্ছে মুশরিকদের ঈদের দিন। তাই আমি দুদিন রোযা রাখার মাধ্যমে তাদের বিপরীত করা পছন্দ করি।”
.
একটু লক্ষ্য করুন, এ হাদিস দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, রোযা হচ্ছে ঈদের বিপরীত। অধিকন্তু মুসলিম শরিফের একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, নবীজি (সাঃ) নিজের জন্ম দিবস উপলক্ষে সোমবার রোযা রাখতেন, অথচ খয়রাতি মিলাদিরা রোযা বাদ দিয়ে ঈদ উদযাপন করে। এটা কি নবীপাকের বিপরীত করা হল না?
দুঃখের বিষয়, তারপরও এ খয়রাতি মিলাদিরা নিজেদের উপাধি ধারণ করে “আশেকে রাসূল”। এমন ব্যতিক্রম আশেকে রাসূল আপনি পাক ভারত আর বাংলাদেশের বাহিরে আর কোথাও পাবেন না।
.
নবীপাক (সাঃ) প্রতি সোমবার রোজা রাখার প্রমাণ-
.
ﺳﺌﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻓﻘﺎﻝ ﻓﻴﻪ ﻭﻟﺪﺕ ﻭ ﻓﻴﻪ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ . ﻭ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺸﻜﻮﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ ١ / ١٨٠ ﺑﺤﻮﺍﻟﺔ ﺍﻟﺘﺮﻣﺰﻱ ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺽ ﺍﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺗﻌﺮﺽ ﺍﻻﻋﻤﺎﻝ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭ ﺍﻟﺨﻤﻴﺲ ﻓﺎﺣﺐ ﺍﻥ ﻳﻌﺮﺽ ﻋﻤﻠﻲ ﻭ ﺍﻧﺎ ﺻﺎﺋﻢ .
.
অর্থ নবীজি (সাঃ)-কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলিলেন, এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনই আমার ওপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।
.
এবার আমরা জেনে নেব যে, আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) নিজ কিতাব “হুসনুল মাকসিদ ফি আমালিল মাওলিদ” এর ভেতর মিলাদুন্নবী উদযাপান সম্পর্কে আসলে আদৌ কিছু লিখেছেন কিনা!
.
তাঁর কিতাবের ইবারত-
.
ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ ﻋﻖ ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ ﻣﻊ ﺍﻧﻪ ﻗﺪ ﻭﺭﺩ ﺍﻥ ﺟﺪﻩ ﻋﺒﺪﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﻋﻖ ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻲ ﺳﺎﺑﻊ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﻭ ﺍﻟﻌﻘﻴﻘﺔ ﻻ ﺗﻌﺎﺩ ﻣﺮﺓ ﺛﺎﻧﻴﺔ . ﻓﻴﺤﻤﻞ ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻌﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻇﻬﺎﺭﺍ ﻟﻠﺸﻜﺮ ﻋﻠﻲ ﺍﻳﺠﺎﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭ ﺗﺸﺮﻳﻌﺎ ﻻﻣﺘﻪ ﻓﻴﺴﺘﺤﺐ ﻟﻨﺎ ﺍﻳﻀﺎ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﺸﻜﺮ
ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﺑﺎﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻭ ﺍﻃﻌﺎﻡ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭ ﻧﺤﻮ ﺫﺍﻟﻚ ﻣﻦ ﻭ ﺟﻮﻩ ﺍﻟﻘﺮﺑﺎﺕ ﻭ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﻤﺴﺮﺍﺕ . ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﺣﺎﻭﻱ ﺍﻟﻔﺘﻮﻱ
١ / ٢٣٦ .
অর্থাৎ আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেছেন নবী করিম (সাঃ) মদিনায় এসে নিজের আকিকা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে নবীজির (সাঃ) জন্মের সপ্তম দিবসে তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব আকিকা করেছেন। অথচ আকিকা দুবার দেয়া হয়না। (তিনি কিয়াস করে আরো বলেছেন) সুতরাং তাঁর এ কাজটির উদ্দেশ্য ছিল শুকরিয়া প্রকাশ করা। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা একমাত্র তাঁকেই বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং (আরেকটি উদ্দেশ্য হল) স্বীয় উম্মতের জন্যও তা বিধিবদ্ধ করা। সেহেতু আমাদের জন্য মুস্তাহাব হল লোকদের একত্রিত করা এবং খানা খাওয়ানো ও অনুরূপ নৈকট্যতার সকল পন্থায় এবং খুশি জাহির করার মাধ্যমে তাঁর জন্মের শুকরিয়া প্রকাশ করা ।”
[হাওয়ালা: হাবিউল ফাতওয়া ১/২৩৬]
.
আল্লামা সূয়ুতি (রহঃ) “আমালুল মাওলিদ ” তথা নবীজির (সাঃ) জন্ম উপলক্ষে কী কী আমল করতে হবে তা তিনি স্বীয় কিতাবের অন্য জায়গায় নিম্নরূপ বলেছেন :
.
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻼﻣﺔ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ ﻋﻨﺪﻱ ﺍﻥ ﺍﺻﻞ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﺍﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭ ﻗﺮﺃﺓ ﻣﺎ ﺗﻴﺴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﻻﺧﺒﺎﺭ ﺍﻟﻮﺍﺭﺩﺓ ﻓﻲ ﻣﺒﺪﺍﺀ ﺍﻣﺮ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﻣﺎ ﻭﻗﻊ ﻓﻲ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺎﺕ . ﺛﻢ ﻳﻤﺪﻟﻬﻢ ﺳﻤﺎﻁ ﻳﺄﻛﻠﻮﻧﻪ ﻭ ﻳﺘﺼﺮﻓﻮﻥ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺯﻳﺎﺩﺓ ﻋﻠﻲ ﺫﺍﻟﻚ ﻫﻮ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻳﺜﺎﺏ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺻﺎﺣﺒﻬﺎ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺗﻌﻈﻴﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﻔﺮﺡ ﻭ ﺍﻻﺳﺘﺒﺸﺎﺭ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ
.
অর্থাৎ , আমার দৃষ্টিতে মূলত নবীজির জন্ম উপলক্ষে আমল হল, (বিশেষ কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য করা ব্যতীত) লোকজন একত্রিত হওয়া এবং কুরআনের যে স্থান থেকে সহজ লাগে তা তেলাওয়াত করা এবং নবীজির নবুওয়াতের প্রথম দিকের জন্ম ইতিহাস শীর্ষক বর্ণিত হাদিস ও আয়াতে কারিমা পাঠ করা। অতপর দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া আর অনর্থক ব্যায় পরিহার করা। এ সব উত্তম বিদয়াত।” এ গেল আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) এর কিয়াস নির্ভর আমালুল মাওলিদ সম্পর্কিত কিছু বাণী।
.
আমাদের জানার বিষয় –
.
এবার আমাদের জানতে হবে যে, যে আমলটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা শরীয়ত কর্তৃত নির্ধারিত নয়, সেটিকে বিশেষ কোনো মাস বা দিবসের সাথে নির্দিষ্ট করলে (কোনো মাস বা দিবসকে উপলক্ষ্য করার দ্বারা) সঠিক হবে কিনা?
.
ফাতওয়ায়ে আজীজিয়্যাহ ১/১৯৯ -তে লেখা আছে যে, হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস আদ দিহলভী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়ে ছিল “রবিউল আওয়াল মাসে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে এর সাওয়াব হুজুরেপাক সাঃ এর রূহ মুবারকে পৌঁছালে কি জায়েজ হবে?”
.
তিনি উত্তরে বলেছেন : ﺟﻮﺍﺏ : ﺍﻧﺴﺎﻥ ﮐﻮ ﺍﺧﺘﯿﺎﺭ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺍﭘﻨﮯ ﻋﻤﻞ ﮐﺎ ﺛﻮﺍﺏ ﺑﺰﺭﮔﻮﮞ ﮐﻮ ﭘﻨﮩﭽﺎﮰ ﻟﯿﮑﻦ ﮐﻮﺉ ﻭﻗﺖ ﺩﻥ ﺍﻭﺭ ﻣﮩﯿﻨﮧ ﻣﻘﺮﺭ ﮐﺮﻧﺎ ﺑﺪﻋﺖ ﮨﮯ . ﺍﻟﺒﺘﮧ ﺍﮔﺮ ﮐﻮﺉ ﻧﯿﮏ ﮐﺎﻡ ﺍﯾﺴﮯ ﻭﻗﺖ ﻣﯿﮟ ﺧﺎﺹ ﮐﺮﮐﮯ ﮐﺮﮮ ﮐﮧ ﺍﺱ ﻭﻗﺖ ﻣﯿﮟ ﺛﻮﺍﺏ ﺯﯾﺎﺩۃ ﮨﻮﺗﺎ ﮨﮯ ﺗﻮ ﺍﺳﻤﯿﮟ ﻣﻀﺎﺋﻘﮧ ﻧﮩﯿﮟ . ﻣﺜﻼ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺮﯾﻒ ﻣﯿﮟ ﺍﻟﺦ
.
অর্থাৎ নিজের আমলের সাওয়াব কোনো বুজূর্গ ব্যক্তিকে বখশিশ করার অনুমতি মানুষের রয়েছে।তবে এর জন্য (শরীয়ত অনুমোদিত নয় এ রকম) কোনো মাস বা দিনকাল নির্দিষ্ট করা বিদয়াত।”
.
তিনি তাঁর বক্ষমান গ্রন্থ ‘তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া’ কিতাবে প্রচলিত মিলাদুন্নবী উদযাপনকে শিয়াদের মুহররম উদযাপনের সাথে তুলনা করে তার নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন “শিয়াদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।”
.
আরো লক্ষণীয় যে, আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক নবীজির সাঃ আকিকা দান সম্পর্কিত হাদিসটিকে “সফরুস সাআদাত” কিতাবে জয়িফ বা দুর্বল বর্ণনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং “বারাহিনে কাতেয়া” কিতাবে সেটিকে জাল বা বানোয়াট হাদিস বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
.
তথাপি আমরা সেদিকে যাচ্ছিনা। আমরা ধরে নেব যে এটি জয়িফ হলেও জাল নয়। তা সত্তেও হাদিসটির ওপর ভিত্তি করে আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) যা স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন, আমরা শুধু তাই আলোচনা করতে চাই।
.
(খ) আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) এর কিয়াস ও মুহাক্কিক আলেমগণের জবাব-
.
আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) এর কিয়াস নানা কারণে গ্রহণযোগ্য নয় এমনই বলেছেন মুহাক্কিক আলেমগণ। আমরা এখন তার কিয়াসের ভিত্তি ও উদ্ভাবিত মাসয়ালাগুলোর প্রতি একটু আলোকপাত করতে চাই।
.
প্রথমে তাঁর বিশ্লেষণধর্মী একটি বক্তব্যের খণ্ডন এবং তাঁর ভাষ্য,
.
ﺍﻥ ﺟﺪﻩ ﻋﺒﺪﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﻋﻖ ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻲ ﺳﺎﺑﻊ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﻭ ﺍﻟﻌﻘﻴﻘﺔ ﻻ ﺗﻌﺎﺩ ﻣﺮﺓ ﺛﺎﻧﻴﺔ
.
“নবীজির (সাঃ) দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তমতম দিবসে তাঁর পক্ষ থেকে আকিকা দিয়েছিলেন। আর আকিকা দুবার হয়না।”
.
১। খণ্ডন– এ ধরণের মন্তব্য উনি ছাড়া অন্য কেউ করেননি। কারণ, যদি নবীজির (সাঃ) দেয়া আকিকা সত্যিকারার্থে আকিকা নাই হয়, তাহলে তাঁর উম্মতের আকিকার হুকুম (বিধান) কী হবে? সুয়ূতি (রহঃ) এর কথা অনুপাতে উম্মতের আকিকা “সুন্নাতে আব্দুল মুত্তালিব” হয়, “সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ” হয় না। অধিকন্তু, আকিকা হল সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ। হাদিসে তার অনেক দলিল রয়েছে।
.
√ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসুল (সঃ) বলেন, ” পুত্র শিশুর পক্ষ থেকে আকীকার ক্ষেত্রে সমবয়সী দুটি খাসী এবং শিশুর পক্ষ থেকে একটি খাসী যবেহ
করবে।” (তিরমিযী) ।
.
√ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুল (সাঃ) বলেন, ” ইয়াহুদী সম্প্রদায় শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করে থাকে, কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে করে না। সুতরাং তোমরা পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি বকরী আর কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি বকরী যবেহ কর।” (যাদুল মা’আদ ২য় খন্ড, পৃঃ ১২) ।
.
উম্মে কুরয কা’বিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আকীকা সংক্রান্ত বিষয়ে রসুল (সঃ) এর নিকট তিনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি বকরী আর কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি বকরী যবেহ করবে। আর যবেহ করার এ প্রাণী খাসী হোক কিংবা বকরী, এতে কোন অসুবিধা নেই।” (তিরমিযী)।
.
অতএব সুয়ূতি (রহঃ) এর এ কিয়াস অগ্রহণযোগ্য। তিনি এ জায়গায় পদস্খলিত হয়েছেন।
.
দ্বিতীয়তে, তিনি যদি নিজের জন্মের শুকরিয়া স্বরূপ আকিকা দিয়েই থাকেন, তাহলে বিবেকের দাবি হল তাঁরই অনুকরণে তাঁর মতই “দমে শোকর” তথা শুকরিয়া জ্ঞাপন উপলক্ষে প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত করা। যাতে নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাহর মুতাবিক আমল হতে পারে। অবশ্যই আল্লাহর খাস খাস কিছু বান্দা কুরবানীর দিনে কুরবানীর একটি অংশ নবীজি (সাঃ) এর রূহ মোবারকে উৎসর্গ করে থাকেন। মাশাআল্লাহ।
.
প্রকৃতপক্ষে এরাই হলেন সত্যিকারের নবীপ্রেমিক। যাদের জন্য নবীজি শাফায়াত করবেন। যারা এঁদেরকে “ওহাবী” বলে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে তারাই নবীজির প্রকৃত দুশমন। যদিও তারা মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য সমাজে “সুন্নী” নাম ধারণ করে থাকেনা কেন!
.
সবাই শুনে বড়ই আশ্চার্য হবেন যে, আল্লামা সুয়তি রহঃ এর বিশ্লেষণটি যদি সঠিক ভাবে উপলব্ধি করা হয়, তাহলে বুঝতে সমস্যা হবেনা যে, তিনি তার বক্তব্যে “নবীপাক (সাঃ) নিজের সুভাগমণ উপলক্ষ্যে আকিকা দিয়েছিলেন বা তাঁর আকিকার উদ্দেশ্য ছিল হযরতের জন্মলাভ করা-ই” এ রকম কোনো কথা আদৌ উল্লেখ করেননি। আমি সুয়ূতি (রহঃ) এর বক্তব্যটি পুনরায় উল্লেখ করেদিলাম। দেখুন-
.
ﻓﻴﺤﻤﻞ ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻌﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻇﻬﺎﺭﺍ ﻟﻠﺸﻜﺮ ﻋﻠﻲ ﺍﻳﺠﺎﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭ ﺗﺸﺮﻳﻌﺎ ﻻﻣﺘﻪ ﻓﻴﺴﺘﺤﺐ ﻟﻨﺎ ﺍﻳﻀﺎ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﺸﻜﺮ
ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﺑﺎﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻭ ﺍﻃﻌﺎﻡ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭ ﻧﺤﻮ ﺫﺍﻟﻚ ﻣﻦ ﻭ ﺟﻮﻩ ﺍﻟﻘﺮﺑﺎﺕ ﻭ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﻤﺴﺮﺍﺕ . ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﺣﺎﻭﻱ ﺍﻟﻔﺘﻮﻱ
١ / ٢٣٦ .
.
অর্থাৎ সুতরাং তাঁর এ কাজটির উদ্দেশ্য ছিল শুকরিয়া প্রকাশ করা। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা একমাত্র তাঁকেই বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং (আরেকটি উদ্দেশ্য হল) স্বীয় উম্মতের জন্যও তা বিধিবদ্ধ করা। সেহেতু আমাদের জন্য মুস্তাহাব হল লোকদের একত্রিত করা এবং খানা খাওয়ানো ও অনুরূপ নৈকট্যতার সকল পন্থায় এবং খুশি জাহির করার মাধ্যমে তাঁর জন্মের শুকরিয়া প্রকাশ করা ।”
.
[হাওয়ালা: হাবিউল ফাতওয়া ১/২৩৬]
.
অতএব, এবার বুঝে থাকলে বলুন, বিদয়াতিরা সুয়ূতী রহঃ এর নাম ভেঙ্গে প্রচলিত মিলাদকে হালাল করার অপচেষ্টা কতটা জঘণ্য আর নির্লজ্জ হতে পারে!!
আর যদি ধরে নিই যে, উনি আকিকার হাদিসটির ওপর কিয়াস করে পূর্ব রকম বিশ্লেষণ করেছেন, তাহলে তখন বিদয়াতি ও ভাণ্ডারি সুন্নীদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর কী জবাব??
.
মুহাক্কিকগণ আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) এর উপরোক্ত কিয়াসের ওপর বহু অসঙ্গতির অভিযোগ এনে যে সব বক্তব্য রেখেছেন তা হল-
(ক)
ইসলামের চতুর্থ দলিল হল কিয়াস। যার মাধ্যমে মাসয়ালার সমাধান বের করার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা। তন্মধ্যে প্রথম শর্তটি হল ‘মকীস’ এবং ‘মকীস আলাইহী’ উভয়ের মধ্যে সঙ্গতি ও মিল থাকা। আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) পুনঃ আকিকার (মকীস আলাইহী) ওপর মিলাদ মাহফিলকে (মকীস) কিয়াস বা অনুমান করেছেন। ফলে উভয়ের মধ্যে বহু অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। যেমন-
১।
মিলাদ প্রথার জন্য দিবসকে উপলক্ষ্য বানানো হয় অথচ আকিকার জন্য কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য করা হয় না। কাজেই এ ধরণের একটিকে আপরটির ওপর অনুমান করা সঠিক হবেনা।
২।
মিলাদ প্রথায় লোক জমায়েত করার প্রচলন রয়েছে অথচ আকিকায় এসব করা হয় না।
৩।
মিলাদ প্রথায় লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানো প্রচলিত অথচ আকিকার ঘটনায় এসবের উল্লেখ নেই।
৪।
আকিকার সাথে বিজাতীয় কোনো সাদৃশ্যতা পাওয়া যায় না। অথচ মিলাদী প্রথায় খ্রিষ্টানদের যিশুখ্রিষ্টের বড়দিন পালন করার সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মিলাদী মৌলভি আব্দুস সামী সাহেব তিনি “আনোয়ারে সাতেয়া” পুস্তকে এ বিজাতীয় সাদৃশ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।
৫।
যদি আকিকার ঘটনাটি বাস্তবেও হয়ে থাকে তাহলে হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তো হাদিসটি জানতেন এবং আকিকার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তাবেয়িন এবং তাবে-তাবেয়িনগণ সেটি সাহাবিদের থেকে জেনেছেন। হাদিস বিশারদগণ একেকটি হাদিসকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। অসংখ্য মাসয়ালার সমাধান বের করেছেন। মজার ব্যাপার হল তাঁদের কারো থেকে আকিকার ঘটনা নির্ভর শোকর প্রকাশের নিয়ম ও তরিকা হিসেবে প্রচলিত মিলাদ প্রথার প্রবর্তন হয়নি। কাজেই প্রমাণিত হল যে, সাহেবে শরিয়াত হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সাঃ) এর তা উদ্দেশ্য ছিল না, যা আল্লামা সুয়ূতি (রহঃ) অনুমান করে বুঝেছেন।
.
এ সম্পর্কে স্বয়ং সুয়ূতি (রহঃ) নিজেই স্বীকার করে বলেছেন :
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻼﻣﺔ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ ﺭﺡ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻧﺺ ﻭ ﻟﻜﻦ ﻓﻴﻪ ﻗﻴﺎﺱ ﻋﻠﻲ ﺍﻻﺻﻠﻴﻦ . ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﺗﺼﻨﻴﻔﻪ “ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻤﻘﺎﺻﺪ ﻓﻲ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ”
.
অর্থাৎ মিলাদপ্রথার কোনো ভিত্তি নস তথা কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমায় নেই। তবে দুটি নীতিমালার সাথে অনুমান করে সাদৃশ্য মূলক সিদ্ধান্ত দেয়া যেতে পারে। [সূত্র, ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻤﻘﺼﺪ ﻓﻲ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ]
.
আর সে জন্যই সালফে সালেহীনগণ (ইসলামের আদিম সহজ সরল পন্থায় অবিচল নেককার লোকেরা) আকিকার ওপর কিয়াস করে প্রচলিত মিলাদ প্রথা উদ্ভাবন করেননি।
.
পরিশেষে বলছি, আকিকার ওপর প্রচলিত মিলাদ প্রথাকে কিয়াস করা সঠিক হবেনা। তবে কোনো দিবসকে উপলক্ষ্য না করে বিশুদ্ধ বর্ণনার আলোকে সদা সর্বদা যে কোনো মুহূর্তে নবীজির গুণগান করা এবং তাঁর মুজিজাপূর্ণ জন্মালোচনা করা
নিঃসন্দেহে সাওয়াব ও নেকির কাজ।
.
হাদিসে দরূদ পাঠকরার প্রতি খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একবার দরূদপাঠকারির ওপর দশটি রহমত নাযিল, দশটি গুনাহ মাফ ও আখেরাতে দশটি মর্তবা বুলন্দ হওয়ার ফজিলত বর্ণিত আছে। তাই আমাদের জন্য উচিত প্রচলিত বিদয়াতগুলো বাদ দিয়ে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা যে সমস্ত আমল প্রমাণিত সেগুলো আমল করার চেষ্টা করা।


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!