Thursday, May 4, 2017

তথাকথিত আহলে হাদীস ও মির্জা কাদিয়ানী যে সব বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেন

গোমরাহীর প্রথম কাজ হলো কারো অনুসরণ না করা। কারণ কারো অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হলে নিজের মনমতে চলা দুঃসহ হয়ে পড়ে। সে কারণে প্রত্যেক বাতিলের কাছে তাকলীদ বা অন্যের অনুসরণটাই গাজ্বালা। চার ইমামের যে কোন ইমামের অনুসরণ করলে কেউ গোমরাহ পথের যাত্রী হতে পারে না। কিন্তু নিজে ইজতিহাদ করে নিজের মনমত ধর্ম পালনকারী শুধু গোমরাহ নয় ঈমান হারা হওয়ারই আশংকা।এ কারণে ইসলামের যে সকল ফিৎনা এসেছে তা দুপ্রকার।
১। প্রথম যারা সম্পূর্ণরূপে তাকলীদ বা অন্যের অনুকরণকে অস্বীকার করেছে। এর মধ্যে আহলে যাওয়াহের (যারা হাদীসের শুধু বাহ্যিক বা শাব্দিক অর্থের উপর চলতে অভ্যস্ত) সেরূপ বর্তমান যুগের গোমরাহী ফিৎনা যেমন গাইরে মুকাল্লিদ (তথাকথিত আহলে হাদীস), কাদিয়ানী ইত্যাদি রয়েছে।
২। যারা মখে তো তাকলীদের কথা খুব জোরে সুরে বলে কিন্তু কাজের বেলায় কিছুই নেই। এরূপ ফিৎনা যেমন ‍মুতাযিলা, বর্তমান যুগের বিদআতী, মমাতি, রাফেজী ইত্যাদি।
নতুন সৃষ্ট গোমরাহ দলগুলো নতুন তো কিছুই সৃষ্টি করতে পারে নি বরং পূর্বের ফিৎনাগুলোকে ইলামের লেভেল লাগিয়ে নতুন সূত্রে খুবই চিত্তাকর্ষক লেভেলে মুসলমানদের গোমরাহ বানানোর কাজে আত্মনিয়োজিত হয়েছে। এসকল গোমরাহ ফিৎনাবাজরা পূর্বের ঐসকল দলসমূহেরই তাকলীদ করছে যাদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে পূর্ব থেকে বহিস্কার করা হয়েছে এবং গোমরাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক! আমি আজ আপনাদের সামনে এমন কিছু বিষয় উপস্থাপন করব যে সকল বিষয়ের মধ্যে বর্তমান ফিৎনা ও পূর্বের ফিৎসমূহের উভয়ের মধ্যে মিল। বরং প্রত্যেকে একে অন্য থেকে অবিভাজ্য বরং শুধু নামের মধ্যে পার্থক্য।
১। তথাকথিত আহলে হাদীসরা যেমন তাকলীদ বা ইমামের অনুসরণের বিরোধিতা করতে গিয়ে শিরিক ও কুফর পর্যন্ত বলে যাচ্ছেন এবং এর উপর কিতাবাদীও রচনা করছেন সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও তাকলীদের বিরোধিতা করতো এবং এর উপর কিতাবাদী লেখছে।
(আল-কালামুল মুফীদ ফী ইসবাতিত্তাকলীদ ১৮৭)
২। যেমন তথাকথিত আহলে হাদীসদের মতে মুসাফির হওয়ার জন্য ৩ মাইল অতিক্রম বা ৯মাইল অতিক্রম করলে মুসাফির হয়ে যায়। (নামাযে নববী ২৪৩)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও কসরের মুদ্দাত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যাকে তোমরা পাঞ্জাবী ভাসায় ওয়ান্ডা বল সেখানে কসর হওয়া প্রয়োজন। বলা হল কসর পড়তে তো কিছু মাইলের তফাতের শর্ত রয়েছে। তিনি বলেন না, তোমরা যাকে ওয়ান্ডা বল সেখানে কসর পড়া যাবে। (সীরাতে মাহদী, মির্জা বশীর ৩/৫৩)
৩। তথাকথিক আহলে হাদীসগণ জাওরাব বা মৌজার কবারের উপর মসেহ করার মত দেন। (সালাতুর রাসূল ১০৬)
মির্জা কাদিয়ানীও জাওরাবের উপর মসেহ করার প্রতি একমত। বরং তিনি জওরাব জীর্ণ শীর্ণ হলেও মসেহ করার উপযোগী বলে মত দেন। (সীরাতে মাহদী ২/১২৭)
৪। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ সীনার উপর হাত বাধার পক্ষে। (সালাতুর রাসূল ৮৮)
মির্যা কাদিয়ানীও এক স্থানে লেখেন আমি কম বয়সে আমাদের আশ পাশে হানফীদের থেকে দেখ নাভীর নিচে হাত বাঁধতাম। কিন্তু আমার মন চাইনা আমি নাভীর নিচে হাত বাধি। (সীরাতে মাহদী ১০৩)
৫। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ এক হাতে মোসাফাহাকে আসল সুন্নাত বলে প্রচার করেনে। (তায়সীরুল বারী, ওয়াহীদুজ্জামান ৫/৬৯৮)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও এক হাতে মুসাফাহা করার পক্ষে ছিলেন। (সীরাতে মাহদী ৩/৬৩)
৬। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ সফর বা নিজ এলাকায় মৌসুমের সামান্য পরিবর্তনে দুই ওয়াক্তের নামাযকে একত্র করার পক্ষে। (নামায নববী ডাক্তার শফীক ২৪৭)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও জমা বাইনাস সালাতাইন তথা দুই ওয়াক্তের নামায এক ওয়াক্তে পড়ার পক্ষে ছিলেন। (সীরাতে মাহদী ৩/২২০)
৭। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ আমীন বিলজেহের (ফিৎনা বাধানোর জন্য) আমীন বড় আওয়াজে বলে থাকে। (সালাতুর রাসূল, সাদেক সিয়ালকুটী ১৯৫)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও আমীন বিলজেহেরের পক্ষে ছিল। (সীরাতে মাহদী ৩/৬৪)
৮। তথাকথিত আহলে হাদীসরা রফয়ে এয়াদাইন তথা হাত তুলার প্রতি জোর দেন। (সালাতুর রাসূল, সাদেক সিয়ালকুটী ১৯৫)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও রফয়ে ইয়াদাইনের পক্ষে ছিলেন। (সীরাতে মাহদী ২/৪৯)
৯। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ কেরাআত খালফুল ইমাম তথা ইমামের পিছে কেরাম পড়ার পক্ষে। (নামাযে নববী ডাক্তার শফীক ১৮৫)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও কেরাআত খালফাল ইমামের পক্ষে ছিল। (সীরাতে মাহদী ৩/৬৪)
১০। তথাকথিত আহলে হাদীসগণ হযরত ঈসা (আ.)কে শুলিবিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন। যেমন মাও: সলীম গাইরে ‍(মুকাল্লিদ) লেখেন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবীকে মেরাজ করিয়েছেন আর হযরত ঈসা আ.কে শুলির উপর চড়িয়েছেন। (মীযানুল মাতাকাল্লেমীন ১৩৬)
সেরূপ মির্জা কাদিয়ানীও হযরত ঈসা আ.কে শুলিতে ছড়ানোর মত পোষণ করেছেন। (কাশতীয়ে নূহ ৪৮)
মির্জা কাদিয়ানী আসলে একজন গাইরে মুকাল্লিদ :
১। স্বয়ং মির্জা কাদিয়ানীর বৌ এর স্বীকৃতি হলো মির্জা (তথাকথিত) আহলে হাদীস ছিলেন। (সীরাতে মাহদী ১/৫৭)
২। মির্জা কাদিয়ানীর শ্বশুরু ছিল গাইরে মুকাল্লিদ (সীরাতে মাহদী ১/৫৭)
৩। মির্জা কাদিয়ানী গাইরে মুকাল্লিদ হওয়ার কারণে মাওলানা নযীর হুসাইন দেহলভী তার বিয়ে পড়ান। (সীরাতে মাহদী ১/৫৮)
৪। মির্জা কাদিয়ানীর উস্তাদ ছিল মাওলবী ফজল আহমদ গোজরানাওয়ালী। তিনি ছিলেন গাইরে মুকাল্লিদ। আবার আরেক উস্তাদ ছিলেন সৈয়দ গোল। তিনি ছিলেন শীয়া। (সীরাতে মাহদী ১/২৫১)
৫। মির্জা কাদিয়ানী ও মুহাম্মদ হুসাইন বটালবী (গাইরে মুজাল্লিদ) সহচর ছিলেন। (সীরাতে মাহদী ১/২৫৮)
৬। মির্জা কাদিয়ানী গাইরে মুকাল্লিদ ছিলেন বিধায় হুসাইন বাটালবী তার বুরাহীনে কাতেয়াতে অভিমত লেখেন। (সীরাতে মাহদী ১/২৬৫)
৭। অধম (মির্জা কাদিয়ানী) এর কাছে আহলে হাদীস দল মৌলিকত্বের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের পাত্র। (সীরাতে মাহদী ২/২৯)
এরূপ বহু প্রমাণ আছে যা থেকে বুঝা যায় স্বয়ং মির্জা কাদিয়ানী আহলে হাদীস ছিলেন এবং আহলে হাদীসদের বহু বিষয় মির্জা কাদিয়ানীর সাথে মিলে যায়। প্রত্যেক বিজ্ঞ ব্যাক্তিই জানে উপমাহাদেশে ইংরেজ কর্তৃক সৃষ্ট দলসমূহে যেমন মির্জা কাদিয়ানী ছিল তেমনি তথাকথিত আহলে হাদীসও তাদের সৃষ্ট ছিল। উপরে উল্লেখিত বিষয়াদি থেকেও স্পষ্ট হয় তথাকথিত আহলে হাদীস ও মির্জা কাদিয়ানীর সাথে প্রগাঢ় সম্পর্ক্ ছিল

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!