Wednesday, August 8, 2018

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য প্রথম কোন গুনাহ থেকে বাচতে হবে

চোখের দৃষ্টি এমন একটি যন্ত্র, যার দ্বারা দুনিয়ায় যেমন ভাল কাজও করা যায় আবার মন্দ কাজও করা যায় ৷ দৃষ্টি এমন একটি শাণিত তীর যা নারী পুরুষের অন্তরে ভেদ করতে পারে ৷ প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা একটি অদৃশ্য জিনিস ৷ ইহা কখনো চোখে দেখা যায় না ৷ কিন্তু চোখের দৃষ্টিতে ভর করে অপরের অন্তরে যেয়ে পৌছায় ৷ দৃষ্টি লালসার আগুনের বাতাস স্বরূপ ৷ মানুষের মনে দৃষ্টি যেমন লালসার আগুন নিক্ষেপ করে ৷ তেমনি ইন্দনও যোগায় ! দৃষ্টিকে নিয়ন্তিত করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে ৷
কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন- "মু'মিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্তিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে ৷এ নীতি তাদের জন্য অতিশয় পবিত্রতাময় ৷ আর তারা যা কিছু করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত !" !সূরা-নূর-৩০ আয়াত

শুধু পুরুষদের জন্যই নয় এর সাথে সাথে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-"মু'মিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে ৷" (সূরা-নূর-৩১ আয়াত]

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্যে আলাদাভাবে স্রী এবং পুরুষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে | স্রীলোকের দৃষ্টি পুরুষের মনে বেশী আলোড়ন সৃষ্টি করে ৷ প্রেমের আবেগ ও উচ্ছাসের ক্ষেত্রে স্রীলোকের প্রতিকৃতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থার সৃষ্টি করে ৷ কারও সাথে চোখের বিনিময় হলে প্রথমে স্রীলোক কাতর হয়ে পড়ে; যদিও তারা মুখে কিছু বলে না ৷ এটা স্রীলোকের স্বাভাবিক দুর্বলতা ৷ বাস্তব দুনিয়ায় এর হাজার হাজার প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে৷
এ জন্যেই প্রথমে নারীর দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৷ কোন সুশ্রী, স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন যুবকের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে আর অমনি তার সমস্ত শরীরে প্রেমের ঝড় বইতে শুরু করে ৷ সে অবস্থায় কোন দুর্ঘটনা ঘটানো অস্বাভাবিক নয় ৷ ফলে ঐ স্রীলোকের বাহিরের আবরণ কলঙ্কমুক্ত থাকতে পারে কিন্তু মন হয়ে যায় ! স্বামীর অন্তর থেকে তার মন ঐ যুবকের দিকে আকৃষ্ট হয়ে সংসার জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে ৷ কখনও হয়তো স্বীলোক আত্মরক্ষা করতে পারল; কিন্তু তার অসতর্কতার জন্য কোন পুরুষের মনে প্রেমের আবেগ সৃষ্টি হয়েছে | তখন সে পুরুষ বেপরোয়া হয়ে যায় এবং স্বীলোককে বশ করার জন্য যত রকম উপায় আছে তা অবলম্বন করতে থাকে ৷ শেষ পর্যন্ত তার শিকারের জাল হতে নিজেকে রক্ষা করা স্রীলোকের পক্ষে সম্ভব হয় না, ফলে পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে উঠে ৷

হাফেজ আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম বলেছেন- দৃষ্টিই যে যৌন লালসার  বা পয়গাম বাহক ৷ কাজেই দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ ৷ যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মূলে ঠেলে দেয় ৷ মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদেই নিপতিত হয় দৃষ্টিই হল তার সব কিছুর মূল কারণ ; দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ যোগায় ৷ আকর্ষণ মানুষকে চিন্তায় নিমজ্জিত করে আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে লালসার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ! যখন কোন বাধাই থাকে না তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না ৷

নবী করীম (সা.) তার সাহাবাদের প্রশ্ন করলেন- মেয়েলোকের জন্য ভাল কি? এ প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল ৷ কেউ কোন জবাব দিতে পারল না ( হযরত আলী (বাং) সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৷ তিনি বাড়ি এসে হযরত ফাতিমা কে জিজ্ঞেস করলেন, এবং হযরত ফাতিমা জবাব দিলেন, "অন্য পুরুষেরা ভাদের দেখবেন! এটাই তাদের জন্য ভাল ও কল্যাণকর |" অন্য একটি বর্ণনায় হযরত ফাতিমা বলেন, "মেয়েরা
পুরুষদের দেখবে না আর পুরুষেরা মেয়েদের দেখবে না !" পুরুষদের দেখা মেয়েদের জন্য হারাম এবং মেয়েদের দেখা পুরুষদের জন্য হারাম ! মেয়েলোক মানব জাতির একটা প্রজাতি ৷
এ জন্য পুরুষের মতই মেয়েদের জন্য অপর প্রজাতি পুরুষের সঙ্গে দেখা দেয়া হারাম ৷ গায়রে মােহরমের প্রতি তাকানো হারাম হওয়ার মূল কারণ হল যৌন বিপর্যয়ের ভয় ৷ মেয়েদের ব্যাপারে এ ভয় অনেক বেশী ৷ কারণ যৌন উত্তেজনা যেরূপ মেয়েদের বেশী সে তুলনায় তাদের বুদ্ধি কম ! পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কারণেই বেশী যৌন বিপর্যয় ঘটে থাকে ৷
একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে  এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন! তখন নবী করীম (সা.) এর কাছে বসা ছিলেন তার সহধর্মিনী হযরত মায়মুনা ও উম্মে সালমা ৷ নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে উম্ম মাকতুমকে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আগে উম্মুল মুমিনীনদেরকে বললেন, তোমরা দুইজন উশ্মে মাকতুমের কারণে পর্দার আড়ালে চলে যাও ৷ তখন তারা দুইজন বললেন, হে আল্পাহর রাসূল! ইবনে মাকতুম কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে পারবেনা আর চিনতেও পারবে না ৷ তাহলে পর্দার আড়ালে যাওয়ার প্রয়োজন কি? তখন নবী করীম (সা.) বললেন, সে অন্ধ, কিন্তু তোমরা দুজনও কি অন্ধ নাকি? সে তোমাদের দেখতে না পেলেও তোমরাও কি তাকে দেখতে পাবে না ৷ শা !
এর অর্থ একজন পুরুষের পক্ষে ভিন্ন মেয়েলোক দেখা যে কারণে নিষেধ মেয়েলোকদের জন্য ভিন্ন পুরুষদের দেখার একই কারণ ৷ কাজেই ইহা সমান ভাবে সবার জন্য নিষিদ্ধ ৷
আল্লাহর বান্দা হিসেবে সঠিক জীবন যাপন করার জন্য দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই প্রয়োজন ৷ যার দৃষ্টি নিয়ন্তিত নয়, নারীর রূপ ও সৌন্দর্য দর্শনে যার চোখ অভ্যস্ত, তার পক্ষে আল্লাহ পাকের ইবাদাত করা সম্ভব হয় না৷
বর্তমানে আমাদের সমাজে পর্দাশীল অনেক মহিলা আছে, যারা মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয মনে করেন, অথচ তাদের এ ধারণা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত | কেননা মুখমণ্ডল মহিলাদের সবচেয়ে আকর্ষণকারী অংশ মুখমণ্ডল খোলা রাখা যদি জায়েযই হয়, তাহলে পর্দর বিধানের কোন প্রয়োজন ছিল না ৷ পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো ফেৎনা ফাসাদ দূর করা ৷ যেটা মুখমণ্ডল খুলে রাখলে আদৌ সম্ভব না ! সুতরাং সতর ঢাকার পাশাপাশি শরীরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ চেহারা আবৃত করে রাখতে হবে ৷
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক প্রেরণ করছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে, আর (উহা হলো) সৌন্দর্যের বস্ত্র ৷ আল্লাহ্ রাববুর আলামীন মানুষকে পোশাক দান করেছেন তাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য এবং এ পোশাক মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক ৷ পৃথিবীতে আল্পাহ অন্যান্য যে সকল জীব জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তাদের কারােই কোন পোশাক নেই ৷ অথচ সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ্ মানুষকে পোশাক দিয়েছেন ৷ জান্নাতে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পোশাক পরিহিত অবস্থায়ই ছিলেন ৷
কোরআনে এসেছে-
অতঃপর শয়তান তাদেরকে প্ররোচনা দিলো তাদের পোশাক খুলে তাদের গুপ্তাংগ প্রকাশ করে দেয়ার জন্য ৷ (সূরা আরাফ!
সুতরাং বুঝা গেল সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানবজাতিকে আল্লাহ পোশাক দিয়েছেন! যদি তাই না হবে, তাহলে শয়তান পোশাক খুলে ফেলার প্ররোচনা দিবে কিভাবে ৷ আরও স্পষ্ট হলো শয়তানের পোশাক খুলে ফেলার প্ররোচনা মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন ও অসম্মানিত, অপমানিত করার জন্যই ৷ কেননা পোশাকের মধ্যে সম্মান আর উলঙ্গ, বেহায়াপনা ও মাঝে অসম্মান আর অপমান ৷


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!