✏ ০৩. হযরত আবূ সা’লাবা (রা.) এর
হাদীস-
شعب الإيمان (5/ 359)
3551 - أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو حَامِدِ بْنُ بِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْأَحْمَسِيُ، حَدَّثَنَا الْمُحَارِبِيُّ، عَنِ الْأَحْوَصِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنِ الْمُهَاصِرِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ مَكْحُولٍ، عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اطَّلَعَ اللهُ إِلَى خَلْقِهِ فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِ، وَيُمْلِي لِلْكَافِرِينَ، وَيَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتَّى يَدَعُوهُ "
❏ অর্থ : হযরত আবূ সা’লাবা (রা.) বলেন : রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মু’মিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। অপরদিকে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষপোষণকারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন। অর্থাৎ যতক্ষণ না তারা তা থেকে বিরত হয়ে তওবা করতঃ ক্ষমা প্রার্থনা করে। শোয়াবুল ঈমান-৫/৩৫৯, হাদীস-৩৫৫১, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৩, হাদীস-৫১১, আসসিলসিলাতুস সহীহাহ-৩/১৩৬, হাদীস-১১৪৪, আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী-২০/২২৩, হাদীস-৫৯০, আন নুযুল দি দারে কুতনী-১৫৯, হাদীস-৭৮ ইত্যাদি অসংখ্য কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে।
░▒▓█►হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি তার সমর্থিত বর্ণনার কারণে হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
উল্লেখ্য যে উক্ত হাদীস এর সূত্রে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ যার সিকাহ ও নির্ভর হওয়ার বিষয়ে জারাহ ও তাদিলের ইমামগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু সঠিক সমাধান হলো যা ইমাম দারে কুতনী বলেছেন-
وفيه الأحوص بن حكيم وهو ضعيف "انتهى
والأحوص بن حكيم: القول فيه قول الدارقطني:" يعتبر به إذا حدث عن ثقة "انتهى [التهذيب:1/168]، فمثله يحتج به في باب المتابعات والشواهد.
অর্থ : ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ যখন কোন নির্ভর বর্ণনাকারী থেকে বর্ণনা করেন, তখন তা গ্রহণযোগ্য আর ঐ ধরনের বর্ণনাগুলোর সমর্থিত বর্ণনা পাওয়া গেলে তা প্রমাণযোগ্য হয়ে থাকে। আত তাহযীব-১/১৬৮।
এখানে ইমাম দারে কুতনী (রহ.) এর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে পাওয়া গিয়েছে তাই ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ এর মত বর্ণনাকারী থাকলেও হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য হতে কোন বাঁধা বাকি রইলো না।
এছাড়াও ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল ইজলী (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন-لا بأس به তার মাঝে কোন সমস্যা নেই, ইমাম সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা বলেন-ثقة সে নির্ভরযোগ্য, ইমাম বুখারী (রহ.) এর উস্তাদ আলী ইবনে মাদীনি বলেন-صالح ، ومرة : ثقة সে সৎ আর কখনো বলতেন সে নির্ভরযোগ্য, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আম্মার আল মাওসেলী (রহ.) বলেন-صالح সে সৎ।
❏ প্রিয় পাঠক তাহলে এতগুলো জরাহ তাদিলের ইমাম তার বিষয়ে নন্দিত মন্তব্যের পরও কি কোন আহলে হাদীস ভাই তিনি প্রমাণযোগ্য নয় বলে দাবী করা যুক্তি যুক্ত হবে? নিশ্চয় না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক তাহকীক করে সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন
✏ ০৪. (ক) শবে বরাত যে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ রজনী তার দলীল কোরআন থেকে-
প্রথমত একটি বিষয় জানা প্রয়োজন যে, আমরা কসম করে থাকি মহান সত্ত্বা আল্লাহর নামে, আর সেই আল্লাহ নিজেই যদি তার কোন সৃষ্টিকে নিয়ে কসম করে, তাহলে তার মহত্ব কেমন হতে পারে?
❏আহলে হাদীস ভাইদের নয়নের শিরোমণী শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন-
مجموع الفتاوى (1/ 290)
فَإِنَّ اللَّهَ يُقْسِمُ بِمَا يُقْسِمُ بِهِ مِنْ مَخْلُوقَاتِهِ لِأَنَّهَا آيَاتُهُ وَمَخْلُوقَاتُهُ. فَهِيَ دَلِيلٌ عَلَى رُبُوبِيَّتِهِ وَأُلُوهِيَّتِهِ وَوَحْدَانِيِّتِهِ وَعِلْمِهِ وَقُدْرَتِهِ وَمَشِيئَتِهِ وَرَحْمَتِهِ وَحِكْمَتِهِ وَعَظْمَتِهِ وَعِزَّتِهِ فَهُوَ سُبْحَانَهُ يُقْسِمُ بِهَا لِأَنَّ إقْسَامَهُ بِهَا تَعْظِيمٌ لَهُ سُبْحَانَهُ.
....মহান আল্লাহ তার সৃষ্টির কোন কিছু নিয়ে কসম করা, তা ঐ জিনিষের মহান গুরুত্ব সন্মান ইত্যাদির উপর বুঝায়....। মাজমুউল ফাতাওয়া-১/২৯০।
❏ এখন দেখুন মহান আল্লাহ নিজেই পবিত্র কোরআনে শবে বরাত নিয়ে কসম করেছেন-
وقال العلامة الجرجاني رحمه الله (المتوفى: 471هـ) فى درج الدرر في تفسير الآي والسور (2/ 709)
2 - {وَلَيالٍ عَشْرٍ:} الظّاهر أنّهنّ ليالي (4) الأيام المعلومات، (5) ويجوز أن يكون المراد بهنّ ليلة الجائزة، وهي ليلة الفطر، وليلة المزدلفة، وهي ليلتا النّحر، وليالي منى، وهي ثلاث، وليلة النّصف من شعبان، وهي ليلة البراءة، وأربع ليال في العشر الأواخر من شهر رمضان اللّواتي إحداهن ليلة القدر.
(5) ينظر: تفسير ابن أبي حاتم (19233) عن ابن عباس، وتفسير الثعلبي 10/ 191، وتفسير السمعاني 6/ 217، والكشاف 4/ 749.
অর্থাৎ : পবিত্র কোরআনের সূরায়ে আল ফজরের শুরুতেই মহান আল্লাহ বলেন-শপথ দশ রাত্রির, উক্ত দশ রাত্রি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, কিন্তু আল্লামা জুরযানী (রহ.) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ সব রাত্রি যাতে পুরুস্কার ঘোষনা করা হয়েছে যেমন ..... শবে বরাত..। দারজুদ দুরার-২/৭০৯।
❏ উল্লেখ যে উক্ত দশ রাত্রির ব্যাখ্যায় কোন কোন মুফাসসের বলেন, যিলহজের দশ রাত্রি, আবার কেউ বা বলেন, মাহে রমজানের শেষ দশ রাত্রি ইত্যাদি বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
❏ বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরুককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-
مصنف عبد الرزاق الصنعاني (4/ 376)
8120 - عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى قَالَ: سُئِلَ مَسْرُوقٌ عَنِ {الْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ} [الفجر: 2] قَالَ: «هِيَ أَفْضَلُ أَيَّامِ السَّنَةِ»
{الْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ} এই আয়াত দ্বারা কি উদ্দেশ্য? তিনি বললেন বছরের সব উত্তম রাত্রিগুলো উদ্দেশ্য। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৪/৩৭৬, হাদীস-৮১২০। আর শবে বরাত বছরের একটি উত্তম রজনী তা আমরা হাদীস দ্বারা আলোচনা করেছি।
✏ ৪. (খ) মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আরোও বলেন-
تفسير ابن كثير (7/ 225)
حم (1) وَالْكِتابِ الْمُبِينِ (2) إِنَّا أَنْزَلْناهُ فِي لَيْلَةٍ مُبارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ (3) فِيها يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ (4)............. إِنَّهَا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ كَمَا رُوِيَ عَنْ عِكْرِمَةَ الخ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। সূরা আদ দুখান-১-৪।
উক্ত আয়াতে ‘‘বরকতময় রাত’’ নিয়ে মুফাসিরদের মাঝে মতানক্য রয়েছে, কেউ বলেন, সেই রাত্রি হলো লাইলাতুল কদর আবার কেউ বা বলেন, শবে বরাত। কিন্তু লাইতালুল কদর এটি অধিক গ্রহণযোগ্য মত। তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২২৫। আর এই ব্যাখ্যা আহলে হাদীসদের নয়নের শিরোমনি আব্দুর রহমান মুবারকপুরীও বলেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী:৩/৩৬৭)
❏ সারকথা হলো, পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাবিদগণ কোন না কোন ভাবে পবিত্র কোরআন থেকেও শবে বরাতের দিকে ইংঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যা তার মহত্বের প্রতি ইংঙ্গিত বহন করে।
✏ ০৫. হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
سنن الترمذي (2/ 108)
739 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا الحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: فَقَدْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَخَرَجْتُ، فَإِذَا هُوَ بِالبَقِيعِ، فَقَالَ: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ.
❏ অর্থ : হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একরাতে আমি রাসূল (সা.) কে বিছানায় পেলাম না। তাই (খোজার উদ্দেশ্যে) বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এ আশঙ্কা করছো যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করছিলাম, আপনি আপনার অন্য স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেন, শা’বানের পনের তারিখ রাতে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং ‘বনু কালব’ গোত্রের ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে দেন। তিরমিযী শরীফ: ১/১০৮, হাদীস-৭৩৯, ইবনে মাজা-১৩৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-১০/৪৩৭, ৪৩৮, হাদীস-৯৯০৭, মুসনাদে আহমদ-৬/২৩৮, সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৮, হাদীস-১১৪৪।
❀ ফায়দা : আরবের লোকেরা সাধারণতঃ বকরী পালন করে থাকত, প্রায় সকল গোত্রের লোকেরই বহু বকরীর মালিক ছিল, তম্মধ্যে ‘‘বনূ কালব’’ গোত্রের অধীনে সর্বাধিক বকরী ছিল। অত্র হাদীসে সেই ‘‘বনূ কালবের’’ সকল বকরীর গায়ের পশম অপেক্ষা অধিক পরিমাণ বান্দাহকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি হাসান (মুনকাতে) যা হানাফীদের নিকট প্রমাণযোগ্য। এই হাদীস এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য তার পাশাপশি তার সমর্থনে রয়েছে আরো একাধিক হাদীস।
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-
المواهب اللدنية بالمنح المحمدية (3/ 300)
وصحح ابن حبان بعضها وخرجه فى صحيحه، ومن أمثلها- كما نبه عليه الحافظ ابن رجب- حديث عائشة قالت: فقدت النبى- صلى الله عليه وسلم-
অর্থাৎ : ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদীসকে সহীহ বলেছেন এবং তার নিজ গ্রন্থে সংকলনও করেছেন। যেমন ইবনে রজব (রহ.) বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস। আমি একদা.......। (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ বিল মিনহীল মুহাম্মাদিয়া: ৩/৩০০)
এছাড়া ইমাম ইবনে মাজা (রহ.) তার সুনানে ইবনে মাজাতে, ইবনে আবী শাইবা তার মুছান্নাফে, ইমাম আহমদ তার মুসনাদে এছাড়া আরো অনেকেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউ হাদীসটিকে জাল বা অত্যাধিক দুর্বল বলেন নি। হাদীসটির বর্ণনাকারী ছিকাহ (বিশ্বস্ত) আর অন্য হাদীসের সহযোগিতায় হাদীসটি শক্তিশালী। এছাড়া আবু বকর (রা.) মু‘আজ বিন জাবাল (রা.) প্রমূখ প্রসিদ্ধ সাহাবী থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে হাদীসটি হাসান ।
❑ উল্লেখ্য যে ইমাম বুখারী (রহ.) (মুনকাতে) হাদীসকে যয়ীফ বলে থাকেন। তাই ইমাম তিরমিযী (রহ.) ও উক্ত হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) এর যয়ীফ বলে মন্তব্যটি নকল করেছেন-
سنن الترمذي ت بشار (2/ 108)
وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يُضَعِّفُ هَذَا الحَدِيثَ.
وقَالَ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ عُرْوَةَ، وَالحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ.
তিরমিযী-২/১০৮। অতএব উক্ত ক্ষেত্রে শুধু ইমাম বুখারী (রহ.) এর কথা অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে না। কেননা এটি মতানৈক্যধীন একটি বিষয়, যা অনেক ইমামদের নিকট গ্রহণযোগ্য। অতএব ইমাম বুখারী (রহ.) এর দোহাই দিয়ে উক্ত হাদীসকে যয়ীফ বলার সুযোগ কোথায়? যেখানে অন্য অন্য জারাহ তাদিলের ইমাম উক্ত হাদীসকে হাসান ও সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।
✏ ০৬. হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
شعب الإيمان (5/ 361)
3554 - أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ اللَّيْلِ يُصَلِّي فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ قُبِضَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ ذَلِكَ قُمْتُ حَتَّى حَرَّكْتُ إِبْهَامَهُ فَتَحَرَّكَ، فَرَجَعْتُ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، وَفَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ: " يَا عَائِشَةُ أَوْ يَا حُمَيْرَاءُ ظَنَنْتِ أَنَّ النَّبِيَّ خَاسَ بِكِ؟ "، قُلْتُ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ قُبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ، فَقَالَ: " أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ "، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: " هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ "
❏ অর্থ : হযরত আ’লা ইবনুল হারিছ (রাহ.) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হল, তাঁর হয়তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞাসা বললেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হল অর্ধ শা’বানের রাত। (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। শুআবুল ঈমান, বায়হাকী-৫/৩৬১, হাদীস-৩৫৫৪, জমউল জাওয়ামি-১/১৮৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-২/২৪২।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
ইমাম বায়হাকী নিজেই উক্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন-
قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ وَاللهُ أَعْلَمُ،
অর্থাৎ : উক্ত হাদীসটি (মুরসাল) সনদ অনেক উত্তম। অতএব হাদীসটি প্রমাণযোগ্য।
উল্লেখ্য যে কিছু কিছু ইমাম বলেছেন মুরসাল হাদীস প্রমাণযোগ্য নয়, তার সাথে আমাদের সালাফী ভাইগনও সুর মিলিয়ে হানাফীদের দলীলযোগ্য অনেক হাদীস এর ক্ষেত্রে আপত্তি উঠাতে চায়। যেমন উক্ত হাদীস এর ক্ষেত্রেও তারা বলে হাদীসটি মুরসাল তাই প্রমাণযোগ্য নয়?
❑ জবাব : ০১ : ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন উক্ত হাদীসটি মুরসাল কি না? তার মাঝেও সন্দেহ আছে। কেননা উক্ত হাদীস এর সূত্রে থাকা বর্ণনাকারী ‘আলা ইবনে হারেস’ যদি ‘‘মাকহুল’’ থেকে উক্ত হাদীস শুনে থাকে তাহলে হাদীসটি মুরসাল না। আর যদি না শুনে থাকেন তাহলে মুরসাল। শুআবুল ঈমান, বায়হাকী-৫/৩৬১, হাদীস-৩৫৫৪।
❑ জবাব : ০২ : আহলে হাদীস ভাইদের অনেক ইমামগণ, বিশেষ করে শায়খ আলবানী ও বর্তমানে কথিত শায়খ মতিউর রহমান মাদানীসহ আরো অনেকেই যখন নিজ মতবাদের দলীল পেশ করতে গিয়ে মুরসাল হাদীস আসে, তখন তাদের মুখ থেকে শুনা যায় যে উক্ত হাদীসটি প্রমাণযোগ্য। কেননা ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) সহ আরো কতক ইমাম মুরসাল হাদীসকে প্রমাণযোগ্য বলেছেন।
✏ দেখুন তার একটি দৃষ্টান্ত বুকের উপর হাত বাঁধার বিষয় নিয়ে-
سنن أبي داود (1/ 201)
759 - حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ، حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ يَعْنِي ابْنَ حُمَيْدٍ، عَنْ ثَوْرٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى، ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ»
_________
[حكم الألباني] : صحيح
হযরত তাউস (রহ.) রাসূল (সা.) এর থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনি ডান হাতকে বাপ হাতের উপর রেখে, তার বুকের উপর মজবুত করে বাঁধতেন, আর তখন তিনি নামাযে ছিলেন। আবূ দাউদ-১/২০১, হাদীস-৭৫৯।
উক্ত হাদীসটি সর্ব সম্মত ভাবে মুরসাল তারপরও হাদীসটিকে শায়খ আলবানী নিজেও সহীহ বলেছেন।
এখন বলুন আহলে হাদীস ভাইগণ উল্লেখিত মুরসাল হাদীস বা হানাফীদের প্রমাণের জন্য অন্য অন্য মুরসাল হাদীস সম্পর্কে কি বলবেন? বলারতো কিছু নেই আসুন, এই সব দৃষ্টান্ত থেকে নিজের দিলকে হাসাদ মুক্ত করুন। আর ঈমানকে বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করুন।
❀❖ উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে এ রাতের ফযীলত যেমন জানা যায় তদ্রূপ এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামায পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দুআ ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। মোটকথা, সহীহ হাদীস থাকা অবস্থায় শবে বরাতের ফযীলত ও গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা এবং এ সংক্রান্ত সকল রেওয়ায়েতকে মওযূ বা যয়ীফ বলা যে কত বড় অন্যায়, তা তো বলাই বাহুল্য। তাই মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করা তাওফীক দান করুন। আমীন
✔ বি. দ্র. আলোচনাটি কত পর্ব হয় এখনো বুঝা যাচ্ছে না। যাই হোক আলোচিত বিষয়টির মাঝে চলে আসছে অনেক যয়ীফ হাদীস (যা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর আসার আর আমাদের আহলে হাদীস ভাইগণ দুটিকেই নিজ সুবিধে ব্যতীত মানতে আগ্রহী নন। তাই তৃতীয় পর্বে আলোচনা হবে দুইটি বিষয় নিয়ে এক. সাহবাগণ আমাদের অনুসরণীয় কেন? দুই. যয়ীফ হাদীস নিয়ে আলোচনা।
✍ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!