❖প্রশ্ন : আজকাল কারো কারো মুখে শোনা যায় যে, শবে বরাত বলতে কিছু নেই, এ রাতের ফযীলত বিষয়ে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযূ বা যয়ীফ। তাই শবে বরাতকে ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জায়েয নয়। তাদের দাবী কি সঠিক? যদি সঠিক না হয় তাহলে হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।
❖উত্তর : না তাদের দাবী সম্পূর্ণ ভুল ও ভ্রান্ত। শবে বরাত অর্থাৎ ১৫ শা’বানের রজনী। যার ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
✏ ০১. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এর হাদীস-
صحيح ابن حبان - محققا (12/ 481)
5665 - أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَافَى الْعَابِدُ بِصَيْدَا، وَابْنُ قُتَيْبَةَ وَغَيْرُهُ، قَالُوا: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ الْأَزْرَقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو خُلَيْدٍ عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، وَابْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»
অর্থ : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।--সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৪, হাদীস-৫১২, আল ইহসান-৭/৪৭, মাওয়ারিদুয যমআন-৪৮৬, হাদীস-১৯৮০, মাজমাউ যাওয়াইদ-৮/৬৫, সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪, শোয়াবুল ঈমান-৩/৩৮২, হাদীস-৩৮৩৩, আল মু’জামুল কাবীর-২০/১০৮,১০৯, আততারগীব-২/২৪২ ইত্যাদি অসংখ্য কিতাব।
░▒▓█►হাদীসটির মান :
হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ
০১. ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.-৩৫৪) বলেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫।
০২. আহলে হাদীসদের মহাগুরু শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানী(১৪২০) বলেন-
سلسلة الأحاديث الصحيحة وشيء من فقهها وفوائدها (3/ 135)
1144 - " يطلع الله تبارك وتعالى إلى خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ".
حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة.
উক্ত হাদীসটি সহীহ, যা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর এক বড় জামাত বর্ণনা করেছেন এবং একটি হাদীস অন্য হাদীস এর সনদকে আরো মজবুত করে তুলে। সাহাবীদের থেকে বর্ণনাকারীগণ হলেন (০১) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) (০২) আবূ সালাবা আল খাসানী (রা.) (০৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (০৪) আবূ মূসা আল আশআরী (রা.) (০৫) আবূ হুরায়রা (রা.) (০৬) আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) (০৭) আউফ ইবনে মালেক (রা.) (০৮) হযরত আয়েশা (রা.)। সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪।
০৩. আল্লামা মুনজেরী (রহ.-৬৫৬) বলেন উক্ত হাদীসটি সহীহ। আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/৭৩, হাদীস-১৫৪৬।
০৪. আল্লামা হায়সামী (রহ.-৮০৭) বলেন-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد (8/ 65)
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالْأَوْسَطِ وَرِجَالُهُمَا ثِقَاتٌ.
উক্ত হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার মুজামুল কাবীর ও আওসাতে সংকলন করেছেন, এবং সংকলিত হাদীস এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাজমাওজ যাওয়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬০।
✏ ০২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এর হাদীস-
مسند أحمد (6/ 197)
6642 - حدثنا حسن حدثنا ابن لَهِيعة حدثنا حييُّ بن عبد الله عن أبي عبد الرحمن الحُبُلّي عن عبد الله بن عمرو، أن رسول الله -صلي الله عليه وسلم - قال: "يطَّلعُ الله عَزَّ وَجَلَّ إلي خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لعباده، إلا لاثنين: مشاحنٍ، وقاتِلِ نفسٍ".
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাত্রে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। এক. পরশ্রীকাতর। দুই. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যাকারী।
মুসনাদে আহমদ-৬/১৯৭, হাদীস-৬৬৪২, মাজমাউস জাওয়ায়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-৩/৩০৮, হাদীস-৪৮৯২। ইত্যাদি অসংখ্য কিতাব..।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
হাদীস এর সূত্রের মাঝে একজন বর্ণনাকারী হলেন ‘‘ইবনে লাহিয়া’’ কতক ইমাম তার সিকাহ বা নির্ভর হওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোশন করেছেন কিন্তু সঠিক সমাধান আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.), ইমাম আবূ হাফস ওমর ইবনে শাহিন (রহ.), আহমদ ইবনে সালেহ আল মিসরী, তাকে সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব আল মিসরী বলেন-الصادق البار ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে ইউসূফ ইবনে খেরাশ (রহ.) বলেন-يكتب حديثه হফেজ যাহাবী (রহ.) বলেন-ذكره في الكاشف ، وقال : العمل على تضعيف حديثه আর আল্লামা হায়সামী (রহ.) বলেন-رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ وَهُوَ لَيِّنُ الْحَدِيثِ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ وُثِّقُوا. অন্যত্র আল্লামা হায়সামী (রহ.) তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। নিন্মে তার দুটি দৃষ্টান্ত দেয়া হলো।
❐০১. নং হাদীস-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد (1/ 53)
163 - «وَعَنْ جَابِرٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ: أَمَرَ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - سُحَيْمًا أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ أَنْ " لَا يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ» ".
رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
❐০২. নং হাদীস-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد (1/ 155)
702 - وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: " «لَوَدِدْتُ أَنَّ بَيْنِي وَبَيْنَ أَهْلِ نَجْرَانَ حِجَابًا مِنْ شِدَّةِ مَا كَانُوا يُجَادِلُونَهُ» ".
رَوَاهُ الْبَزَّارُ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَحَدِيثُهُ حَسَنٌ.
❀ এছাড়াও ইমাম মুসলিম (রহ.) তার সহীহ মুসলিমে ‘‘ইববে লাহিয়ার’ সনদে বর্ণিত হাদীসকে উল্লেখ করছেন-
صحيح مسلم (1/ 435)
197 - (624) حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ سَوَّادٍ الْعَامِرِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، وَأَحْمَدُ بْنُ عِيسَى، وَأَلْفَاظُهُمْ مُتَقَارِبَةٌ، قَالَ عَمْرٌو: أَخْبَرَنَا، وَقَالَ الْآخَرَانِ: حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ مُوسَى بْنَ سَعْدٍ الْأَنْصَارِيَّ، حَدَّثَهُ عَنْ حَفْصِ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ قَالَ: " صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعَصْرَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَتَاهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا نُرِيدُ أَنْ نَنْحَرَ جَزُورًا لَنَا، وَنَحْنُ نُحِبُّ أَنْ تَحْضُرَهَا "، قَالَ: «نَعَمْ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقْنَا مَعَهُ، فَوَجَدْنَا الْجَزُورَ لَمْ تُنْحَرْ، فَنُحِرَتْ، ثُمَّ قُطِّعَتْ، ثُمَّ طُبِخَ مِنْهَا، ثُمَّ أَكَلْنَا قَبْلَ أَنْ تَغِيبَ الشَّمْسُ» وقَالَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَعَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ فِي هَذَا الْحَدِيثِ
উক্ত হাদীসটিকে উল্লেখ করেছেন। (আর মুসলিম এর সকল হাদীস সহীহ তার মাঝে কোন সন্দেহ নেই) অতঃপর ইমাম মুসলিম (রহ.) নিজ উস্তাদ আল্লামা মুরাদী (রহ.-২৪৮) এর উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন নিন্ম হাদীসটি আমি শুনেছি ইবনে ওহাব থেকে, তিনি ‘‘ইবনে লাহিয়া’’ থেকে, তিনি আমর ইবনে হারেস থেকে বর্ণনা করেছেন। প্রিয় পাঠক এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন “ইবনে লাহিয়া” কি প্রমাণযোগ্য কি না? সহীহ মুসলিম-১/৪৩৫, হাদীস-৬২৪।
❁প্রিয় পাঠক বৃন্দ উক্ত দুটি হাদীস দ্বারা আমরা স্পষ্ট যে, আহলে হাদীস ভাইদের নিন্ম দাবী-
❏‘‘শবে বরাত বলতে কিছু নেই, এ রাতের ফযীলত বিষয়ে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযূ বা যয়ীফ। তাই শবে বরাতকে ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জায়েয নয়।’’❏
এ দাবীটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা শবে বরাত/১৫ শা’বান ইবাদত করা কোন বেতআতী পন্থা নয়, বরং সহীহ হাদীস দ্বারা এই রাত্রি প্রমাণিত এবং এটি মহান আল্লাহ ক্ষমা করার এক মহা রাত্রি। অতএব মানুষের মাঝে মিথ্যাচার করার সুযোগ আর বাকী রইলো কোথা থেকে?
❀❖শবে বরাতের নামকরণ❁✪
হাদীস শরীফে এ রাতের কোন নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়নি। ليلة النصف من شعبان অর্থাৎ শা’বানের পঞ্চদশ রাত বলেই এর বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে।
মুলত : শবে বরাআত (شب براءت) শব্দটি ফারসী ভাষা হতে উদ্ভুত। শব (شب ) এবং বরাআত (براءت) এর সমন্বয়ে গঠিত। ‘‘শব’’ অর্থ রজনী বা রাত্রি। আর ‘বরাআত’ শব্দের অর্থ পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, পরিত্রাণ ইত্যাদি। এর রাতে যেহেতু অগণিত মানবের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং বহু জাহান্নামীদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়, এজন্যই রাত্রটি শবে বরাআত বা মুক্তির রজনী নামে পরিচিত। পরিভাষায় শবে বরাআত না বলে শবে বরাত বলা হয়।
❀❖একটি সন্দেহের অবসান❁✪
কেউ কেউ বলে থাকে যে, যেহেতু এ রাতের নাম ``শবে বরাত'' বলে হাদীসের কোথাও উল্লেখ নেই তাই তাকে শবে বরাত নামে নামকরণ করা বৈধ নয়। তাদের এ ধারণা নিতান্তই অমূলক। কারণ এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই যে, ``শবে বরাত'' শব্দটি ফারসী। তাহলে হুবহু এই ফারসী শব্দ আরবীতে কি করে আসবে ?
যদি এর কোন সমার্থবোধক শব্দ হাদীসে নাও পাওয়া যায় তাও কোন অসুবিধে নেই। কারণ এ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য রেখেই পরিভাষায় এ নামটির প্রসিদ্ধ ঘটেছে। হ্যাঁ, যদি একে শবে বরাত বলা কিংবা এ নামেই তাকে চিহ্নিত করাকে কেউ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করতো তাহলেই এর স্বপক্ষে প্রমাণাদি অন্বেষণের প্রয়োজন হতো। যেমন আমরা কারো বিরত্বের প্রতি লক্ষ করে বলে থাকি অমুক বাঘের ন্যায় তেমনি ভাবে উক্ত রাত্রির ফযিলতের প্রতি লক্ষে রেখে শবে বরাত বলা হয়।
❁✪আরেকটি সন্দেহের অবসান❁✪
কিছু লোক বলে থাকেন যে, শবে বরাত শিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক দেওয়া একটি নাম। তাই এ বরকতময় রাতকে শবে বরাত নামে অভিহিত করা মোটেও বৈধ নয়। আসলে এটিও একটি ভিত্তিহীন দাবী। যতক্ষণ না তারা এর স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে সক্ষম হবে যে, কোন শিয়া কবে এ নামটি রেখেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এ দাবী অগ্রাহ্য বলেই বিবেচিত হবে।
উপরন্ত আমরা তাদের এ কথা মেনেও যদি নেই যে, শিয়া সম্প্রদায়ই এ নামটি রেখেছে, তদুপরি তা অবৈধ হবার কোন কারণ হতে পারে না।
تخريج أحاديث বা হাদীস অন্বেষণের ধারায় কতিপয় প্রাচ্যবিদ একটি গ্রন্থ রচনা করে তার নাম দিয়েছে معجم المفهرس لألفاظ الحديث এখন যদি কারো মনে এ প্রশ্ন জাগে যে, যদিও এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ কিন্তু যেহেতু এর নামটি পাশ্চাত্য পণ্ডিত কর্তৃক রাখা হয়েছে তাই এমন ধর্মীয় পুস্তকের ক্ষেত্রে এ নামটি বৈধ নয়। তবে তা একটি ভুল ধারণা বলেই আখ্যায়িত হবে।
❁✪আরো একটি সন্দেহের অবসান❁✪
শবে বরাত সম্পর্কে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, (বরাআত) براءت শব্দটি মুল ধাতু হচ্ছে (তাবাররা) تبرا সুতরাং শবে বরাআত অর্থ, শবে তাবাররা’’ (شب تبرا) বা তাবাররার রাত্রি। কুরআন ও হাদীসের যত জায়গায় তাবাররা বা অনুরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, অসন্তুষ্টি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। সে হিসাবে শবে বরাত’’ অর্থ হয় অসন্তুষ্টির রাত। একটি পবিত্র রজনীর ক্ষেত্রে এমন নাম মোটেও শোভনীয় নয়।
তাদের এ ধরণাও যুক্তিহীন একটি দাবীমাত্র। (বরাআত) براءت শব্দটি কেবল (তাবাররা) تبرا বা অসন্তুষ্টি অর্থেই ব্যবহৃত হয় এমন নয় বরং পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি ও পরিত্রাণ ইত্যাদি অর্থেও শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। কুরআন ও হাদীসে এর একাধিক প্রমাণ রয়েছে। যেমন-
(১) সূরা ক্বামার এর ৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
{ أَكُفَّارُكُمْ خَيْرٌ مِنْ أُولَئِكُمْ أَمْ لَكُمْ بَرَاءَةٌ فِي الزُّبُرِ } [القمر: 43]
অর্থাৎ : তোমাদের মধ্যকার কাফেররা কি তাদের চেয়ে উত্তম? না তোমাদের মুক্তির সনদপত্র রয়েছে কিতাবসমূহে?
এ আয়াতে বরাআত (براءت ) শব্দটি মুক্তি অর্থে এসেছে।
(২) সূরা আহযাব এর ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَى فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا } [الأحزاب: 69]
অর্থাৎ : হে মুমিনগণ! মূসাকে (আ.) যারা কষ্ট দিয়েছে তোমরা তাদের মত হয়োনা। তারা যা বলেছিল আল্লাহ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে ছিলেন।
এখানে নির্দোষ প্রমাণ শব্দটি বরাআত (براءت ) শব্দের অনুবাদ।
(৩) বুখারী শরীফের تعدل النساء بعضهن بعضا অধ্যায় ২৬৬ নং হাদীসে বলা হয়েছে :
قال لها أهل الإفك ما قالوا ، فبرأها الله منه ـ
অর্থাৎ : অপবাদ আরোপকারীরা তার (হযরত আয়েশা রা.) ব্যাপারে যা বলার বলেছিল। আল্লাহপাক তা থেকে তাকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। এর কয়েক লাইন পর বলা হয়েছে :
فإن كنت بريئة فسيرئك الله ـ
অর্থাৎ : যদি তুমি পবিত্র আর নির্দোষ হয়ে থাকো তবে অতি সত্বর আল্লাহ পাক তোমার পবিত্রতা ঘোষনা করবেন।
এছাড়াও আরো বহু আয়াত ও হাদীসে এ শব্দটির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয় যাতে تبرا অসন্তুষ্টি ছাড়া অন্য অর্থে শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সে সকল স্থানে তাবাররা (تبرا ) এর অর্থ গ্রহণ করা সম্ভবই নয়। বরং জায়গা বিশেষে ক্ষমা, নির্দোষিতা, বিচ্ছেদ, অব্যহতি, পবিত্রতা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এ কথা বলা মোটেও শুদ্ধ নয় যে, কুরআন ও হাদীসের সর্বস্থনেই براءت বরাআত শব্দটি তাবাররা (تبرا ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
✪✿বি. দ্র. কয়েকটি পর্বে সংক্ষেপে এই বিষয়ের আলোচনা শেষ করবো, কেননা বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে প্রায় ২০০ এর অধিক পৃষ্ঠায় একটি পুস্তিকায় পরিণত হবে। শেষ পর্বে আপনাদের জন্য বিষেশ উপহার থাকবে আর তা হলো আহলে হাদীস ভাইদের কোন কোন ইমাম উক্ত রাত্রি পালন করা ও প্রামাণিত হওয়ার প্রবক্তা।
✔মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!