ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর কারণে বিতর্কিত তিন মাওলানার ওয়াজ ও বয়ান ইউটিউব ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ
ইতিমধ্যেই তাদের বেশ কিছু অডিও এবং ভিডিও সরিয়ে ফেলেছে। আটককৃত জঙ্গিদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইর (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায়। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ সদর দফতর। তারাও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ইউটিউব থেকে এই তিন ব্যক্তির ওয়াজ ও বয়ান সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিতে চিঠি পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ইউটিউবকে চিঠি দিয়ে এসব বিতর্কিত ভিডিও সরানোর অনুরোধ করে। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিতর্কিত বক্তব্য সংবলিত তাদের বেশ কিছু অডিও এবং ভিডিও ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে তাদের সব বক্তব্যই অপসারণ করা হবে বলেও জানা গেছে।
বিতর্কিত এই তিন মাওলানা হচ্ছেন- আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানী, পিস টিভির বক্তা ও আহলে হাদিস আন্দোলনের নেতা মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের নেতা মাওলানা তারিক মনোয়ার। তাদের ওয়াজ মাহফিল বা বয়ান অবাধে পাওয়া যাচ্ছে ইউটিউবে। এই ইউটিউব থেকে তাদের বয়ান শুনে জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ওই তিনজনের আপলোড করা ভিডিও সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ইউটিউব কর্তৃক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কিছু ভিডিও অপসারণও করেছে। তবে এখনও কোনো কোনো সার্ভারে কিছু ভিডিও আছে। সেগুলোও সরানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর ২৮ জুন বিটিআরসি থেকে ইউটিউবকে চিঠি দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতিষ্ঠাতা জসীম উদ্দীন রাহমানী জঙ্গি মদদদাতাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সদ্য বাংলাদেশে সম্প্রচার নিষিদ্ধ হওয়া পিস টিভিতে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বয়ান করেন। তিনি আহলে হাদিস আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত আছেন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি চট্টগ্রাম এলাকায়। তবে তিনি দুবাইয়ে বেশি সময় থাকেন। বর্তমানেও তিনি দুবাই রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মাওলানা তারিক মনোয়ার বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইসলামবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাসহ ওয়াজ মাহফিল করেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অবস্থান করছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছে, তারা জসীম উদ্দীন রাহমানীর বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও তারেক মনোয়ারের বক্তব্যও তাদের অনুপ্রাণিত করেছে বলে তারা জানায়। ভয়ঙ্কর এসব জঙ্গিরা ইউটিউব থেকে এসব বক্তব্য শুনেছে।
পিবিআই বিষয়টি জানতে পেরেই ১২ জুন পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেয়। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতিপূর্বে যেসব জঙ্গি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, তাদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জঙ্গি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে তারা মাওলানা জসীম উদ্দীন রাহমানীর পাশাপাশি মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও তারিক মনোয়ারের বিভিন্ন ওয়াজ বয়ান (ইউটিউবে আপলোডকৃত) শুনে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করে। এ অবস্থায় ইউটিউব থেকে মাওলানা জসীম উদ্দীনের পাশাপাশি উল্লিখিত ব্যক্তিদের বক্তব্য অপসারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হল।’
পুলিশ সদর দফতর বিষয়টি জরুরিভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। ফলে এসব ভিডিও ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলতে ২৫ জুন বিটিআরসিকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই তিন ব্যক্তির ওয়াজ মাহফিলের ভিডিও অপসারণের জন্য ২৮ জুন বিটিআরসি চিঠি দেয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্টারনেটের বিভিন্ন পাতায়, ফেসবুকে, ইউটিউবে রয়েছে রাহমানীর শত শত ভিডিও। এমনকি ফেসবুকে তার কতগুলো ফ্যানপেজও রয়েছে। অন্যদিকে তারেক মনোয়ার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেন। তার সেসব অডিও-ভিডিও বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে। এসব ওয়াজে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা।
জসীম উদ্দীন রাহমানী এখন কারাগারে, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ইউসুফ দুবাইতে এবং ঢাকার তারেক মনোয়ার আমেরিকা সফরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!