তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ফেসবুকের ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে নেতিবাচক দিকও। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেসবুক এখন নতুন এক নেশায় পরিণত হয়েছে।যা হতাশাব্যঞ্জক ও বিপদজনক! তারচেয়ে আরো দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে কিছু অসৎ ও অসাধু ব্যক্তি ফেসবুককে মন্দকাজের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা ফেকআইডি খুলে প্রতিনিয়ত মানুষকে ধোকাঁ দিচ্ছে। বিভ্রান্ত করছে। মানহানি করছে। পরস্পর বিবেদ লাগিয়ে দিচ্ছে। গীবত, অপবাদ, চরিত্রহনণ, হুমকি ধমকি প্রদানসহ নানা অপকর্মে ফেকআইডিগুলো ব্যবহার করছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাসূল (সাঃ)বলেন, من غش فليس منا যে ধোঁকা দেয় সে আমার অর্ন্তভূক্ত নয়।
যেসব কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ লোপ পায়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো গীবত, যা মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। তাইতো আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) মানুষকে এই নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ হে মুমিনগণ তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাকো। কতক ধারণা পাপের অর্ন্তভূক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরাতো সেটাকে ঘৃণাই করে থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু”- হুজুরাতঃ১২। রাসূল (সাঃ) বলেন, গীবত যিনা ব্যভিচারের চেয়েও বেশি জঘন্য ও ঘৃণ্য অপকর্ম” অন্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন, গীবত শ্রবণকারী গীবতকারীদের পাপের ভাগীদার। আলোচ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতিয়মাণ হয় যে, গীবত এমন এক জঘন্য অপকর্ম যা মানুষের ঈমান ও আমলকে ধ্বংস করে দেয়। বরবাদ করে দেয় তাদের ইহকাল ও পরকালকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, না জেনে না বুঝে আমরা সর্বদা এ জঘন্য অপকর্মে ভেসে চলেছি। বিশিষ্ট ও সাধারণ কেউই আমরা এ মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত নই। সমাজের সর্বস্তরের সকলে এ মহামারী রোগে এমনভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন যে, এটাকে এখন আর কেউ পাপকর্ম বলেই গণ্য করেন না। আমাদের অন্তর থেকে সে অনুভূতিটুকুও লোপ পেয়ে গেছে। বিবেকের ঘটেছে অপমৃত্যু। আর এজন্য আমাদের নেই কোন অনুতাপ, অনুশোচনা, নেই কোন তাড়না।
ইবনুল কায়্যিম (রাহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজেকে ভালোভাবে চিনতে পেরেছে, সে অন্যের দোষ-ত্রুটি বাদ দিয়ে নিজের সংশোধনে লেগে গেছে। খারাপ স্বভাবের মধ্যে খুবই ফালতু একটা স্বভাব হলো, মানুষের সমালোচনা করে বেড়ানো। প্রথমত, এর দ্বারা গীবত হয় এবং এর বিনিময়ে সমালোচনার শিকার হওয়া ব্যক্তি হাশরের মাঠে সমালোচনাকারীর নেকি নিয়ে নিবে। দ্বিতীয়ত, এর দ্বারা সমাজে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ ও ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়।
হাদিসে এসেছে, من ستر مسلماً ستره الله في الدنيا والآخرة যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। আল্লাহপাক আমাদেরকে পরনিন্দা, গীবত, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষসহ সকল খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখকঃ মাওলানা এরফান শাহ্
গ্রন্থকার ও কলামিস্ট
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।