ওয়ায়েস করনীর দাঁত ভাঙার গল্প লোকমুখে খুবই প্রসিদ্ধ। ঘটনাটি নিমণরূপ- ওহুদ যুদ্ধে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানদান মোবারক শহীদ হল তখন ওয়ায়েস করনী বিষয়টি জানতে পারলেন এবং যারপরনাই ব্যাথিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। এ ঘটনা শুনে তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি ভাবলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত মোবারক যখন শহীদ হয়েছে তো আমার এ দাঁতের কী অর্থ! তিনি নিজের একটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। পরক্ষণে চিন্তা করলেন, আমি যে দাঁত ভেঙেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হয়ত এ দাঁত ভাঙেনি অন্য দাঁত। তাই ভেবে তিনি নিজের আরেকটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। এভাবে তিনি নিজের সবগুলো দাঁত ভেঙে ফেললেন।
নবীজীর প্রতি উম্মতের ভালবাসা প্রকাশের চূড়ান্ত নযীর হিসেবে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এ ঘটনা বলে থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার কোনোই ভিত্তি নেই। মোল্লা আলী কারী রাহ. বলেন, এ ঘটনা প্রমাণিত নয়। (দ্র. আলমা‘দিনুল আদানী, আলবুরহানুল জালি ফী তাহকীকি ইনতিসাবিস সুফিয়্যাতি ইলা আলী, পৃ. ১৬৪-১৬৫) ওয়ায়েস করনী (উয়াইস আলকারানী) একজন বড় মাপের তাবেয়ী ও বুযুর্গ ছিলেন। ইয়ামানের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ৩৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ তার হয়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। তার বৃদ্ধা মা ছিলেন। মায়ের সাথে তিনি সদাচরণ করতেন। মায়ের সেবাযত্ন করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। ইয়ামানে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তার শ্বেত রোগ ছিল । সে আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তার রোগ ভাল করে দেন, কিন্তু তার শরীরের একটি স্থানে এক দিনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান সাদাই থেকে যায়। তোমাদের কেউ যদি তার সাক্ষাৎ পায় সে যেন তাকে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে বলে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২
ওয়ায়েস করনীর সাথে সাহাবীদের সাক্ষাতের ঘটনাও হাদীস শরীফে এসেছে। কিন্তু কোথাও এমন কিচ্ছার কথা নেই। সহীহ মুসলিমে এসেছে, ওমর রা.-এর সাথে ওয়ায়েস করনীর সাক্ষাত হলে তাকে সনাক্ত করার জন্য তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলে দেয়া সব আলামত জিজ্ঞাসা করেন। এ বর্ণনায় আছে ওমর রা. নবীজীর কথা অনুযায়ী তাকে নিজের জন্য ইস্তিগফার করতে বলেন, তিনি ওমর রা.-এর জন্য ইস্তিগফার করেন। পরবর্তী বছর হজ্বের মৌসুমে ওয়ায়েস করনী যে এলাকায় বসবাস করছিলেন সেখান থেকে এক ব্যক্তি এলে ওমর রা. তার (ওয়ায়েস করনীর) খোঁজ খবর নেন। (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!