Saturday, April 11, 2020

ইসলামী ইতিহাস ও অন্যান্য ইতিহাসের মধ্যে মৌলিক তফাৎ...গৃহবন্দিত্বের দিনলিপি-১

১) ইসলামী ইতিহাস কিছু নীতিমালার আলোকে সংকলিত একটি শাস্ত্র ৷ সাধারণ ইতিহাস তেমন কোনো নীতিমালার ভিত্তিতে সংকলিত নয় ৷

২) ইসলামী ইতিহাসে বর্ণনাগুলো নির্ভরযোগ্যতার মানদণ্ডে যাচাই করার জন্য বর্ণনাকারীর পরম্পরা তথা সনদ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ৷ বর্ণনাকারীদের নির্ভরযোগ্যতাই যে কোনো বর্ণনা গ্রহন কিংবা প্রত্যাখ্যানের মানদন্ড ৷ কিন্তু সাধারণ ইতিহাসে বর্ণনাকারীর পরম্পরা তথা সনদের দিকে কোন লক্ষ্যই রাখা হয়নি ৷ ফলে সাধারণ ইতিহাসের কোনো বিষয় গ্রহণ করা বা প্রত্যাখ্যান করার কোন নীতিমালা নেই ৷ কিছু মানুষের উপর অন্ধ বিশ্বাস আর কিছু মানুষের উপর অযথা অবিশ্বাস যে কোনো কথা গ্রহণ ও বর্জনের মূল নীতি ৷

৩) ইসলামী ইতিহাসের যে কোনো বর্ণনার সত্যাসত্য যাচাই করার উপায় রয়েছে ৷ রিজাল শাস্ত্রের সহায়তায় যে কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতা যে কেউ যাচাই করে দেখতে পারে ৷ পক্ষান্তরে সাধারণ ও পশ্চিমাদের লিপিবদ্ধ ইতিহাস যাচাই করার এমন কোন সূত্র নেই ৷

৪) ইসলামী ইতিহাসের বর্ননার নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের মানদণ্ডের পাশাপাশি এর যে কোনো বক্তব্য কমনসেন্স তথা সাধারণ জ্ঞানের বিবেচনায় গ্রহণ এবং বর্জন নীতি রয়েছে ৷ যে কথা ফিতরতের বিপরীত, সে কথা ইসলামী ইতিহাসে গ্রহনযোগ্য নয় ৷ অন্য অনেক ইতিহাসে সাধারণ জ্ঞানের আলোকে অগ্রহণযোগ্য অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে ৷

মুসলিম ও অন্যান্য জাতির ইতিহাসের গ্রহণযোগ্যতা আর অগ্রহণযোগ্যতার তারতম্য বুঝবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, পশ্চিমা ইতিহাসবীদগণ আজও ওল্ডটেস্টামেন্টকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স মনে করে ৷ হিন্দুরা রামায়ণের মত ইতিহাসকে তাদের গর্বের ধন মনে করে, যার মধ্যে সাধারণ জ্ঞানে ধরে না এমন অসংখ্য কাল্পনিক কথা রয়েছে ৷ পক্ষান্তরে মুসলমানদের নিকট ইবনে কুতাইবার লিখিত আল মাআরিফের মত ইতিহাসগ্রন্থ গ্রহণযোগ্য কিতাবের তালিকায় ঠাঁই পায় না ৷ বাগদাদের কাজী ওয়াকেদীর রচিত কিতাবের ওপরও চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখা হয় না ৷

সূত্র:
تاريخ امت مسلمة-ج١ ص٤٩
مولانا محمد اسماعيل ريحان

মন্তব্য :
আমার মনে হয় কি, আমাদের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে "রিজাল শাস্ত্র" ও সনদের কিছু বিষয় যদি কোনো উপায়ে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া যেত৷ আর আমাদের ইতিহাসের পন্ডিতদেরকে রিজাল ও সনদের উপর অন্তত কিছু জ্ঞান দিয়ে দেয়া যেত, তাহলে অনেক মিথ্যাচার, বিকৃত ইতিহাসের বেড়াজাল থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তি পেত ৷ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যবীদদের ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হত ৷ আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত মুসলিম উম্মাহর কল্যাণকামী কিছু মানুষকে কি এই বাস্তবতাটি বোঝানো যায় ? 
জাতীয় শিক্ষাকারিকুলামে এই সংস্কারের দাবি তোলা কি যুক্তিসঙ্গত নয়?

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!